গার্মেন্টসে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ১৫ বছরের মধ্যে সর্বনিন্ম

নিউজ ডেস্কঃ
তৈরি পোশাক খাতে রপ্তানি আয়ের প্রবৃদ্ধি সর্বনি¤œ পর্যায়ে নেমে গেছে। সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরে (২০১৬১৭) খাতে রপ্তানি আয় হয়েছে ২৮শ ১৫ কোটি ডলার। প্রবৃদ্ধির হিসাবে যার অংক দাঁড়ায় শূন্য দশমিক ২০ শতাংশ।
 
গত ১৫ বছরের মধ্যে আয়ের এই প্রবৃদ্ধি সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে আসার পেছনে পাঁচ কারণকে দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা। এগুলো হলো: গার্মেন্টস পণ্যের গড় মূল্য হ্রাস, বিশ্ববাজারে অর্থনৈতিক মন্দাভাব, ক্রেতাদের চাহিদা হ্রাস, ইউরোর অবমূল্যায়ন ডলারের বিপরীতে টাকার মান বেড়ে যাওয়া এবং পোশাক কারখানাসমূহে চলমান অবকাঠামোগত সংস্কার কার্যক্রম।
 
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) সূত্রে জানা যায়, সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরে গার্মেন্টস খাতে রপ্তানি আয় হয়েছে ২৮শ ১৫ কোটি ডলার। যা এর আগের অর্থবছরের তুলনায় মাত্র শূন্য দশমিক ২০ শতাংশ বেশি। আগের অর্থবছর (২০১৫১৬) খাতে রপ্তানি আয় হয়েছিল ২৮শ ০৯ কোটি ডলার। আলোচ্য অর্থবছরে গার্মেন্টস পণ্যের মধ্যে নিটওয়্যার পণ্যে রপ্তানি আয় হয়েছে ১৩শ ৭৬ কোটি ডলার, যা আগের অর্থবছরের চেয়ে শতাংশ বেশি। ওভেন পণ্যে আয় হয়েছে ১৪শ ৩৯ কোটি ডলার। আগের অর্থবছরে আয় হয়েছিল ১৪শ ৭৩ কোটি ডলার। খবর নিয়ে জানা যায়, ছোটবড় প্রায় সব বাজারেই গার্মেন্টস পণ্য রপ্তানি কমেছে। এর মধ্যে বৃহৎ তিন বাজার যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং কানাডায় বড় অঙ্কে রপ্তানি কমেছে। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে রপ্তানি আয় কমেছে শতাংশ। কানাডায় শতাংশ এবং যুক্তরাজ্যে কমেছে শতাংশ। উদীয়মান বা নতুন বাজার শ্রেণিতেও রপ্তানি আয়ের প্রবৃদ্ধি প্রায় ১৬ শতাংশ কমেছে। এরমধ্যে জাপানে রপ্তানি কমেছে শতাংশ, ভারতে শতাংশ মেক্সিকোতে ১৭ শতাংশ কমেছে।
 
গার্মেন্টস সংশ্লিষ্টরা জানান, আমদানি পর্যায়ে কাঁচামালের দর কিছুটা কম হওয়ার কারণেও রপ্তানি আয় কমে গেছে। এছাড়া গত এক বছরে বন্ধ হয়ে যাওয়া ১২শ কারখানা রপ্তানিতে সময়ে কোনো অবদান রাখতে পারেনি।
 
গার্মেন্টস পণ্য রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি হ্রাসের কারণ জানতে চাইলে গার্মেন্টস রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, বাংলাদেশী গার্মেন্টসের বড় বাজার যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপে এখনও মন্দাভাব বিদ্যমান। সে কারণে গার্মেন্টস পণ্যের চাহিদা দর কমছে। ডলারের বিপরীতে ইউরোর দর পতন এবং ব্রেক্সিটের মতো বড় কারণতো আছেই। পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রতিযোগিতায় থাকা দেশুগুলো বিভিন্ন হারে প্রণোদনা দিচ্ছে। স্থানীয় মুদ্রার দর কমিয়ে রপ্তানি খাতে সুরক্ষা দিচ্ছে। অথচ বাংলাদেশে টাকা শক্তিশালী করে রাখা হয়েছে। পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সব বাজারে রপ্তানির জন্য শতাংশ হারে প্রণোদনা দেয়া উচিত।
 
ইপিবির ভাইস চেয়ারম্যান বিজয় ভট্টাচার্যের মতে, গার্মেন্টস পণ্যের মূলহ্রাস, ইউরো পাউন্ডের দরপতনের কারণে তৈরি পোশাকে প্রবৃদ্ধি কম হয়েছে।
 
সম্প্রতি ঢাকায় পোশাক খাত নিয়ে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, ডলারের বিপরীতে ইউরোর দর পতন এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে যুক্তরাজ্যের বেরিয়ে যাওয়ার (ব্রেক্সিট) কারণে রপ্তানি আয় কমছে। গত ছয় বছর ধরেই পোশাক খাতে রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হচ্ছে না।
 
অবশ্য বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সিপিডির সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়ার জন্য আন্তর্জাতিক অর্থমন্দা পরিস্থিতিই বড় কারণ নয়। এর প্রমাণ হচ্ছে, বিদ্যমান পরিস্থিতির মধ্যেও আমাদের প্রতিযোগী দেশ ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়ার রপ্তানি বাড়ছে। প্রতিযোগিতা সক্ষমতায়ও পিছিয়ে পড়েছেন দেশের রপ্তানিকারকরা। ব্যবসা পরিচালন ব্যয় বেশি হওয়ায় উৎপাদন খরচও কমানো যাচ্ছে না। তিনি বলেন, ঘুরে দাঁড়াতে হলে উদ্যোক্তাদের প্রতিযোগিতায় সক্ষমতা এবং উৎপাদনশীলতা বাড়াতে হবে। এছাড়া গার্মেন্টস পণ্যে বৈচিত্র আনার উদ্যোগ নিতে হবে।
 
উল্লেখ্য, গার্মেন্টস খাতে এর আগে ২০০১২০০২ অর্থবছরে ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি হয়েছিল। সেসময় ৪৫৮ কোটি ডলার রপ্তানি আয়ে দশমিক ৬৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছিল

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ