ঈদের দিন একা একা কাটল নাকীবের। তাই বুকের মাঝে হাহাকার। মন চায় ছুটে যেতে। মনে মনে বলেন, আঁত্তে বাঁশখালী যাইতু মনে কয় (আমার বাঁশখালী যেতে ইচ্ছে করে)। কিন্তু উচ্চ শিক্ষার জন্য বিদেশে আসা। জন্মভূমি ছেড়ে একা একা দূর দেশে থাকা। চাইলেই কি যাওয়া যায়?
প্রবাস জীবন অন্যরকম এক জীবন। আর প্রবাস জীবনে ঈদ তো আরো অন্যরকম। মা-বাবা, ভাই-বোন, আত্মীয়-স্বজনদের ছেড়ে থাকা, কষ্ট তো আছেই। বাঁশখালীর মো. সৈয়দনুর ইসলাম নাকীব থাকেন মালয়েশিয়ায়। তিনি লাইফ ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি কলেজে পড়েন। ঈদে ওখানেই ছিলেন। এবার কেমন কাটল তার ঈদ?
তিনি বললেন, প্রবাসীদের ঈদ একটু অন্য রকম। প্রবাসে অনেকেই আছেন, যাদের জন্য ঈদের দিনটা কষ্টের। ঈদের কথা ভাবতে গিয়ে স্মৃতিকাতর হন তিনি। ফজরের আজানের পর দল বেঁধে ছোটাছুটি, পুকুরে গোসল করা, মিষ্টিমুখ করে, নতুন জামা-কাপড় পরে ঈদগাহে যাওয়ার কথা মনে পড়ে তার। তিনি বলেন, এখানে নামাজ পড়তে যাওয়ার সময় পাশের বাড়ির কেউ ডাক দিয়ে বলে না, সেমাই খেয়ে যাও। নতুন জামা পরে সালাম করলে কেউ ঈদের সালামি নতুন টাকার নোট দেয় না।
নাকীব বলেন, প্রবাসে ঈদ মানে শূন্যতা, না পাওয়ার কষ্ট। পবিবার পরিজন ছাড়া ঈদ যে কত কষ্টের, একমাত্র প্রবাসীরাই তা বোঝে। সকাল হলেই ঈদ, এখনো আছি ডিউটিতে। শেষ রাতে গোসল সেরে সন্ধ্যা রাতের বাসি ভাত, বাসি
তরকারি খেয়ে ঈদের নামাজে যাওয়ার প্রস্তুতি। পূব আকাশে সূর্য ওঠার সাথে
সাথেই শেষ হয়ে যায় ঈদের নামাজ। এর মাঝে আসতে শুরু করবে দেশ থেকে আপনজনদের
মিসড কল আর এসএমএস।
তিনি বলেন, অসহনীয় এক একাকীত্ব দিনে-রাতে আমাকে জাগিয়ে রাখে। প্রবাস জীবনে কেউ দুঃখ পায় না, কারণ
দুঃখ পেতে আপনজনের প্রয়োজন হয়। আপনজন ছাড়া অন্য কেউ দুঃখ দিতে পারে না।
দুঃখ ও কষ্টের মাঝে যে বিশাল ব্যবধান তা প্রবাসীদের মতো অন্য কেউ অনুভব
করতে পারে না। প্রবাসীরা যা অর্জন করেন সেটা অর্থ কিংবা শিক্ষা যা-ই হোক না কেন, সেটা তার কষ্টের ফসল ছাড়া কিছুই নয়। জীবিকা ও জীবনের তাগিদে, সোনালি স্বপ্নের হাতছানিতে মানুষ প্রবাসী হয়। হাজার কষ্ট মেনে নিয়েও দেশে প্রিয়জনের মুখে হাসি ফোটাতে চায়।
বাঁশখালীর এই প্রবাসী বলেন, প্রবাসের
ব্যস্ত সময় বয়ে যাচ্ছে সময়ের নিয়মে। সময়ের সাথে জীবনের অনেক কিছুই হারিয়ে
গেছে। যার গেছে সেই জানে কীভাবে গেছে। আমি অন্তঃস্থল থেকে উপলব্ধি করি আমার
বাঁশখালীকে।
জীবনের খাতিরে আপনজন থেকে দূরে থাকলেও মনে
ভাস্বর অনেক স্মৃতি। কিছুদিন ধরে কাজের চাপে ছোট ভাই আব্দুনুর ও ছোট বোন
তাসমিনের সাথে ফোনে কথা হয়নি। হঠাৎ ছোট বোন নাছিমা কল রিসিভ করে মাকে দিল।
এত দূর থেকে মায়ের কণ্ঠ শুনতে যে কেমন লাগে, বিদেশে না থাকলে কেউ তা বুঝবে না।
তিনি বলেন, বন্ধু
হচ্ছে ছায়াদানকারী বৃক্ষের মতো। প্রবাস জীবনে বুঝেছি বন্ধুর উপস্থিতির
চাইতে তার অনুপস্থিতি বেশি উপলব্ধি করা যায়। এই প্রবাসে বন্ধু মিজান, আরিফ, শ্রদ্ধেয় লোকমান স্যার ও ওমর ফারুক ভাইয়া আমাকে অনুপ্রেরণা দেয়। আর নতুন বন্ধু এনামুল হক, তার
কাছে আমার অনেক ঋণ। প্রবাসে একাকী বন্ধুদের খুব অনুভব করি। আর অনুভব করি
দেশকে। দেশ তখন নতুন রূপে ধরা দেয়। দেশের জন্য এই টান বিদেশে না এলে বুঝতাম
না। শেষে অনুচ্চ কণ্ঠে বলেন, প্রিয় স্বদেশ, প্রিয় বাঁশখালী, আমি আসব। বিডিনিউজ।
0 মন্তব্যসমূহ