মোহাম্মদ বেলাল উদ্দিন, বিএন প্যানেল রিপোর্টারঃ
পূর্বে পাহাড় আর পশ্চিমে বিশাল জলরাশির বঙ্গোপসাগর। দক্ষিণে পেকুয়া ও পূর্ব নাতি উচ্চ শিলা সংলগ্ন সাতকানিয়া।বাঁশখালীর ভূ-ভাগ চিরে উত্তর দক্ষিণে প্রবাহিত স্রোতধারা উত্তরের শঙ্খ নদী হতে দক্ষিণ অভিমুখে কখনো কুমারী ছড়া,কোথাও ফাঁডি খাল কোথাও বা গর্দভী নদী আবার কখনো জলকদর নামে। বঙ্গোপসাগর সংলগ্ন কুতুবদিয়া প্রণালীতে গিয়ে মিশেছে। ৩৯৪ বর্গকিলোমিটারের বাঁশখালী যেন প্রাকৃতিক সৌন্দয্যের বেষ্টনীতে বেষ্টিত এই জনপদের সাথে সুদূর অতীতে স্থল পথে যোগাযোগ ছিল না বললেই চলে। ছোট খাট উন্নয়নে কিছুটা উন্নতি হয়েছে রাস্তাঘাটের। প্রান্তিক জনপদ বাঁশখালীতে রয়েছে ইকোপার্ক ,তারেক পার্ক, চাঁ-বাগান, ২৭কিলোমিটারের বিশাল সমুদ্র সৈকত, ঐতিহাসিক কাতেবী জামে মসজিদ, বখশী হামিদ মসজিদ, মলকা বানুর দীঘি ও মসজিদ,বদল মুন্সী জামে মসজিদ, ঝাউবাগান, লিচু বাগান, শুটকির চাঁতাল, লবণ মাঠ আরো কত কি!
যোগাযোগ ব্যবস্থার দিক দিয়ে খুবই অবহেলিত এই উপজেলাটি।বিশেষ করে জরাজীর্ণ রাস্তাঘাটের কারণে।এরপরেও প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেওয়া লোকে লোকারণ্য বাঁশখালীর পর্যটন স্পটগুলো।গতকাল বাঁশখালীর গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন স্পটগুলোতে গিয়ে এমন চিত্র চোখে পড়ে।দুঃখের বিষয় বাঁশখালীর সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসা পর্যটকরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন বাঁশখালীর জরাজীর্ণ রাস্তাঘাট দেখে।
রাউজানের উরকিরচর থেকে আসা আসা নাজনীন সোলতানা মিলু নামের এক স্কুলছাত্রী বাঁশখালী নিউজকে বলেন,"বাঁশখালীকে প্রকৃতি সাজিয়ে তুলেছে মহা সমারোহে।কিন্তু এখানকার যোগাযোগ ব্যবস্থা খুবই খারাপ।একবার আসলে আর আসতে মন চায়না খারাপ রাস্তাঘাটের কারণে।যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন হলে পর্যটকের কমতি থাকবেনা সম্ভাবনাময় এই উপজেলায়।"
বঙ্গোপসাগরের তীর ঘেঁষে ঝাউবাগানগুলো পর্যটকদের নজর কাড়ে।পর্যটকরা ঝাউবাগানের সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ।তারা একের এক তুলছে সেলফি।এই বাঁশখালীর সৈকতের স্বচ্ছ জলরাশিতে দাঁড়িতে সেলফি তোলার মজাই আলাদা।পড়ন্ত বিকেলে সূর্যাস্ত দেখতে বাঁশখালী সৈকতে পর্যটকের ঢল নামে।বাঁশখালীতে পর্যটকদের আকর্ষণ করার মত রয়েছে আরো একটি স্থান।সেটা হল বাঁশখালী ইকোপার্কের ঝুলন্ত সেতু।
বাংলাদেশের দীর্ঘতম ঝুলন্ত সেতু এই উপজেলার শীলকূপ ইকোপার্কে অবস্থিত।প্রায় ৬কোটি টাকা ব্যয়ে এই পার্ককে সাজানো হয়েছে তরে তরে।পাহাড়ের চূড়ায় ওঠে বঙ্গোপসাগরের জলরাশির ঢেউয়ের আছড়ানো উপভোগ করা যায় ওই পার্ক থেকে।শুধু তাই নয়,এই পার্কে রয়েছে চমৎকার দুটি লেক।বামের ছড়া ও ডানের ছড়া লেকে ঝর্ণা নহরে নৌকা ভ্রমণের মজাই আলাদা।বাঁশখালীর সৌন্দর্যের আরেক নাম বেলগাঁ চা-বাগান।বাংলাদেশের সবুজ চা পাতার গুণগত মানের দিক দিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা এই পার্কটি দেশের অন্যতম শিল্প প্রতিষ্ঠান সিটি গ্রুপের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হয়।হাজার বছরের ঐতিহ্য ও ইতিহাসের অঃশ ছনুয়া কাতেবী জামে মসজিদের অবস্থানও বাঁশখালীতে।কাতেব আউলিয়ার স্মৃতি বিজড়িত ছোট বড় মোট ২১টি গম্বুজ বিশিষ্ট এই মসজিদ।যেখানে হিন্দু-মুসলমানসহ প্রায় ধর্মালম্বীর মানুষ এই মসজিদে যায় মানত করতে।
এই মসজিদকে অনেকে গায়েবী মসজিদও বলে থাকে। দক্ষিণ বাঁশখালীর ছনুয়া ইউনিয়নের ছোট ছনুয়া গ্রামে পাথরঘাটা সমুদ্র সৈকতের অবস্থান।অসংখ্য নুড়িপাথর,কষ্টিপাথরে পরিপূর্ণ এই সৈকতটি পর্যটক মহলে দিন দিন পরিচিত লাভ করছে।দেশের একমাত্র বিনা টিকেটের তারেক পার্ক এই উপজেলায় অবস্থিত।দৈনিক পূর্বদেশ পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা মরহুম মাষ্টার নজির আহমদের কনিষ্ট পুত্র তারেক রহমান এটি প্রতিষ্ঠা করেন।এটি নাপোড়া অর্গানিক ইকো ভিলেজ তথা তারেক পার্ক নামে সমধিক পরিচিত।প্রায় ১৪কানি জায়গা জুড়ে বিস্তৃত এই পার্ক।কারু শিল্পের সুনিপূণ কারিগরদের দ্বারা সাজানো গোছানো এই পার্কটি প্রতিষ্ঠিত হওয়ার অল্প সময়ের মধ্যে পর্যটকের নজর কাড়ছে। উল্লেখ্য,এই পার্কে বেড়াতে কোনো টাকা পয়সা খরচ হয়না।
বাঁশখালীতে যেভাবে যাবেনঃ- মাত্র ৩০ টাকায় চট্টগ্রামের বহদ্দারহাট বাস টার্মিনাল থেকে বাঁশখালী বেঁলগাও চা-বাগানে যাওয়া যাবে।বেঁলগাও চা-বাগান ভ্রমণ করার পর যেতে পারেন ২০টাকায় বাঁশখালী সমুদ্র সৈকত।এভাবে রুটিন মাফিক ভ্রমণ করতে পারেন বাঁশখালীর সব পর্যটন স্পট।চট্টগ্রাম শহরের নতুন ব্রিজ ও বহদ্দারহাট থেকে প্রতি ১৫মিনিট পর পর একটি করে বাস ছাড়ে।ক্লোজ ডোর,বিআরটিসি,বাঁশখালী স্পেশাল সার্ভিস,বাঁশখালী সুপার সার্ভিস নামের বাস পাওয়া যাবে নতুন ব্রিজ ও বহদ্দারহাট টার্মিনালে।সতর্কতা:ভূলেও লোকাল বাসে করে বাঁশখালী যাবেন।লোকাল বাস অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করবে আপনার কাছ থেকে।যদি ওঠেন দর কষাকষি করে ওঠবেন।
0 মন্তব্যসমূহ