বয়সের ভারে নতজানু, থর থর কাঁপুনীতে যার চলাচল, জীবন সায়াহ্নের শেষপ্রান্তে এসেও বয়স্ক মানুষের মর্যাদার না পাবার যন্ত্রণা ছমুদা খাতুনের প্রশ্নের মধ্যে লুকিয়ে আছে। কবে তার নাম উঠবে সরকারি খাতায় বয়স্ক ভাতার তালিকায় সেই দিনক্ষণের অপেক্ষার প্রহর গুনছেন ৭৫ বছর বয়স্কা বৃদ্ধা এই মহিলা। শীলকূপ ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ডের মৃত আবদুল গফুরের মেয়ে ছমুদা খাতুন (প্রকাশ ছমুনি) ৫০ বছর পূর্বে স্বামী পরিত্যক্তা হয়ে আটচালা ঘরে কোনমতে দিনাতিপাত করছেন। জানা যায়, ১৯৪২ সালের আগে–পরে জন্ম নেয়া ছমুদা খাতুনের অল্প বয়সে বিয়ে হয়। ২ সন্তান জন্ম নেয়ার পরেই স্বামীর সংসার ভেঙ্গে যায়। এরপর হতে নিজের ২ ছেলেকে নিয়ে জীবন সংগ্রামের নতুন অধ্যায় শুরু হয়। বছরের পর বছর অতিকষ্টে ছেলেদের বড় করে বিয়েশাদী দিলেও লেখাপড়া না থাকায় ছেলেদের ভাল কোন রোজগারে নিয়োজিত করতে পারেনি। ছেলেরা অন্যের জমিতে খেটে বা কৃষিকাজ করে কোনমতে জীবন নির্বাহ করে চলছে। তাদের ‘নুন আনতে পানতা ফুরায়’ অবস্থা। নিজেদের অন্ন জোগাড় করতে যারা হিমসিম খাচ্ছেন প্রতিনিয়ত। বৃদ্ধা মায়ের অন্ন জোগান দেয়া ও সেবা করার সামর্থ্য তাদের নেই। বিগত ১০ বছরে স্থানীয় অনেক মেম্বার–চেয়ারম্যানের হাত ধরে বয়স্ক ভাতার তালিকায় তার নাম তুলতে ব্যর্থ হয়েছেন। তিনি এই প্রতিবেদকের কাছে প্রশ্ন রেখে জানতে চান– শুনেছি সরকার নাকি অসহায় বয়স্ক নারী পুরুষদের বয়স্ক ভাতা গ্রামাঞ্চলের সব এলাকায় দিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু আমার বেলায় বয়স্ক ভাতা দিতে অসুবিধা কোথায়? আমাকে উপেক্ষা করার কারণ কি? শীলকূপ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মহসিনের কাছে এ প্রসঙ্গ তুললে তিনি বলেন, শীলকূপ ইউনিয়নে বয়স্ক ভাতার তালিকায় কাদের নাম অন্তর্ভুক্ত হয়েছে জানি না। নতুনভাবে যাচাই–বাছাই করে প্রকৃত অসহায় বয়স্কদের তালিকা তৈরি হচ্ছে। ছমুদা খাতুনের কথা আমি শুনেছি। বিষয়টি আমি দেখব। উপজেলা সমাজসেবা অফিসার মোহাম্মদ আলমগীর বলেন, ইউনিয়ন পর্যায় থেকে তালিকা আসার পর যাচাই–বাছাই করে বয়স্ক ভাতা প্রদান করা হয়ে থাকে।
সুত্র: দৈনিক পূর্বকোণ
0 মন্তব্যসমূহ