মাদ্রাসার জেডিসি পরীক্ষা কেন্দ্র বাতিল বাঁশখালীতে

বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে বাঁশখালী গুনাগরী আহমদিয়া ডলমপীর (র.)) আলীম মাদ্রাসার জেডিসি পরীক্ষা কেন্দ্র (কোড–৯৩৩) বাতিল করেছেন মাদ্রাসা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক প্রফেসর মো. নজমুল হুদা।

গত ৪ অক্টোবর বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের স্মারক নং বামাশিবো/পরী/জেডিসি–১৭/১২৮৫ মূলে বিষয়টি জেলা প্রশাসক চট্টগ্রামকে অবহিত করেছেন। এদিকে কেন্দ্রটি বাতিল হওয়ায় শিক্ষার্থীদের অভিভাবকেরা স্ব^স্তি প্রকাশ করেছেন।

জানা যায়, বাঁশখালী উপজেলায় মাদ্রাসা বোর্ডের অধীনে দীর্ঘদিন থেকে ৩টি জেডিসি পরীক্ষা কেন্দ্র রয়েছে। কয়েকমাস পূর্বে গুনাগরী আহমদিয়া ডলমপীর (র) মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মৌ. আবদু রহিম নিজ মাদ্রাসায় জেডিসি পরীক্ষা কেন্দ্র স্থাপনের জন্য ৩টি মাদ্রার প্যাডে স্বাক্ষর এবং তারিখ পরিবর্তন করে সম্মতিপত্র মাদ্রাসা বোর্ডে প্রেরণ করেন। এ ঘটনা জানাজানি হলে কেন্দ্র–২ সচিব পুকুরিয়া চাঁদপুর কিউএইচআরডিইউ আলীম মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মৌ. হাফেজ আহমদ এ ব্যাপারে লিখিতভাবে মাদ্রাসা বোডে অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগ পত্রে কদমরসুল হামেদিয়া দাখিল মাদ্রাসা, কোকদ–ী ইসলামীয়া দাখিল মাদ্রাসা, পশ্চিম বাঁশখালী দারুল ইসলাহ দাখিল মাদ্রাসা ও যাতানুরাইন ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ ও পরিচালনা কমিটির সাথে যোগাযোগ করে নিশ্চিত হন যে পরীক্ষা কেন্দ্রের জন্য বোর্ডে দেওয়া সম্মতিপত্রে স্বাক্ষর ও তারিখ তাদের নয়। এ ব্যাপারে মাদ্রাসা অধ্যক্ষ মৌ. হাফেজ আহমদ লিখিতভাবে জেলা প্রশাসক চট্টগ্রামকে অভিযোগ দায়ের করলে তদন্তে থলের বিড়াল বেরিয়ে আসে। তদন্তে সম্মতিপত্রে অনিয়ম প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয় বলে বাঁশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (বদলিকৃত কাজী চাহেল মো. তস্তুরী) গত ২৯ আগস্ট তদন্তের রির্পোট প্রদান করেন। জেলা প্রশাসক থেকে মাদ্রাসা কেন্দ্র স্থাপন নিয়ে পূর্ণ তদন্ত রির্পোটে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) আরিফুর রহমান মৃদুল ও মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ইসতিয়াক আহমদ তদন্ত প্রতিবেদনে জাাল স্বাক্ষর ও তারিখ পরিবর্তন করে কেন্দ্র স্থাপনের পাঁয়তারার কথা উল্লেখ করেন।

বাঁশখালী থেকে মাদ্রাসা পরীক্ষা কেন্দ্র স্থাপন নিয়ে অনিয়মের তদন্ত রিার্পেট পাওয়ার পর জেলা প্রশাসক মো. জিল্লুর রহমান চৌধুরী স্মারক নং০৫.৪২.১৫০০.৬০৩.৫১.০০৩.১৭.৮৫১ (২৬/০৯/১৭) মূলে বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যনের কাছে প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে কেন্দ্রটি বাতিলের জন্য অনুরোধ করেন। এতে ডলমপীর মাদ্রাসার অধ্যক্ষ কর্তৃক ভুয়া সম্মতিপত্র দাখিল করা হয়েছে বলে উল্লেখ করেন। অনিয়মের তদন্ত রির্পোটসহ জেডিসি পরীক্ষা কেন্দ্রটি বাতিলের জন্য সুপারিশ করেন। বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক প্রফেসর মো. নজমুল হুদা জেলা প্রশাসকের নির্দেশ পাওয়ার পর তদন্তকালীন সময়ে জাল স্বাক্ষর ও তারিখ ভুয়া প্রমাণিত হওয়ায় বাঁশখালী–৪ নামের জেডিসি কেন্দ্রটি বাতিলের জন্য নির্দেশ দেন।

মাদ্রাসা শিক্ষার্থীর অভিভাবক আবদুল কাদের বলেন, ভুয়া কাগজপত্র সৃষ্টি করে পরীক্ষা কেন্দ্র দাবি করেছিল একটি প্রতিষ্ঠান। শিক্ষার্থীরা জানে চাঁদপুর মাদ্রাসায় পরীক্ষা কেন্দ্র। তদন্তেও ভুয়া প্রমাণিত হয়েছে।

বাঁশখালী পুকুরিয়া চাঁদপুর কিউএইচআরডিইউ আলীম মাদ্রাসার পরিচালনা কমিটির সভাপতি মো. খোরশেদ আলম বলেন, ভুয়া স্বাক্ষর, প্যাড, সিল জালিয়াতসহ অপকর্মের জন্য অধ্যক্ষ আবদুর রহিমকে আইনের আওতায় আনা প্রয়োজন। যাতে ভবিষ্যতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এ ধরনের ন্যাক্কারজনক ঘটনা কোন প্রতিষ্ঠানপ্রধান করতে না পারে।

বাঁশখালী মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার ইসতিয়াক আহমেদ বলেন, তদন্তকালে ৪টি মাদ্রাসার প্রধানদের (অধ্যক্ষ) সম্মতিপত্রের ভুয়া স্বাক্ষর, সাল, সিল ঘষামাজা করে এবং তারিখ পরিবর্তন করে মাদ্রাসা বোর্ডে পরীক্ষা কেন্দ্রের জন্য আবেদন করে। অভিযোগ পাওয়ার পর তদন্তে জালিয়াতির প্রমাণ পাওয়া যায়।
সুত্র: দৈনিক পূর্বকোণ