মোহাম্মদ ছৈয়দুল আলম:
বাঁশখালী উপজেলার উপকূলে নির্মিতব্য বেড়িবাঁধের নির্মাণ কাজের জন্য তৈরীকৃত ব্লকগুলো নদীর পানিতে মিশিয়ে যাচ্ছে। ব্লব তৈরী কাজে নদী থেকে বালি উত্তোলন করে ব্লক তৈরীর ফলে, ব্লকগুলো মিশিয়ে যাচ্ছে বলে স্থানীয়দের অভিমত। বেড়িবাধ নির্মাণ কাজ শেষ না হতেই বেড়িবাঁধে বসানো নতুন ব্লক গুলো তলিয়ে যাচ্ছে সাগরের পানিতে। যার ফলে এলাকাবাসীদের মধ্যে শংকা দেখা দিয়েছে এই বাঁধ তাদের জীবন রক্ষার্থে কতটা কার্যকরী হবে।
বাঁশখালী উপকূলীয় এলাকাবাসীর দাবী দীর্ঘদিনের স্বপ্নের এ বেড়িবাঁধ নির্মাণ কাজ সুষ্ট তদারকির মাধ্যমে আধুনিক মানসন্মত ও টেকসই ভাবে নির্মাণ করার দাবী করেন স্থানীয় জনসাধারণ। কারণ এ বেড়িবাঁধে কোন কারণে অনিয়ম ও দুনীতির মাধ্যমে নি¤œ মানের হলেই আর কখনও নির্মান হবে কিনা তা নিয়ে চিন্তিত বাঁশখালীর উপকূলবাসী । উপকূলবাসীদের দাবী তাদের আশার আলোতে যেন কোন কালো ছায়া না পড়ে। সেই প্রেক্ষিতে বাধঁ নির্মান কাজ শুরু হওয়ার পর থেকে নানা ধরণের অনিয়মের কথা উঠে আসলে তা পানি সম্পদ মন্ত্রনালয়ের সভায় গুরূত্ব সহকারে আলোচনা করা হয় বলে জানা যায়। তাছাড়া বেড়িবাধেঁর তলদেশ ১৫০ ফুট দৈর্ঘ্য,উপরের প্রস্থ ১৪ ফুট,ও উচ্চতা ১৮ ফুট করার কথা রয়েছে । তা যদি যথাযথ ভাবে করা না হয় তাহলে বেড়িবাঁধ ঠিকসই হবে না বলেও অভিমত প্রকাশ করেন অনেকে। ৩৪টি প্যাকেজে চলমান এ কাজের এখনও পর্যন্ত ৩৮ শতাংশ শেষ হওয়ায় যথাসময়ে কাজের শেষ করতে পারবে কিনা তা নিয়ে সাধারণ জনগণ নানা ভাবে শংকা প্রকাশ করছে। ৫ লাখ ৭৮ হাজার ১৫৭টি জিও ব্যাগ প্রস্তুত করে তা বসানোর কথা থাকলে তাও এখনও পুরাপুরি করতে পারেনি। তার উপর চলতি মৌসুমে বন্যায় বেশ কিছু জিও ব্যাগ ভেসে যাওয়ারও অভিযোগ রয়েছে।
বাঁশখালীতে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর যে কয়েকটি বৃহৎ প্রকল্প রয়েছে তার মধ্যে সবচেয়ে বড় প্রকল্প হলো বাঁশখালীর চলমান নির্মাণধীন উপকূলীয় বেড়িবাঁধ। ২৫১ কোটি ২৯ লক্ষ টাকা ব্যয়ে এই বেড়িবাঁধের (সী ডাইক) ঢাল সংরক্ষণসহ ব্রীচ কোজিং ও পুনরাকৃতিকরণ ৯.৯০০ কি.মি, নদী তীর সংরক্ষণ কাজ ৩.৮৪৮ কি. মি., বেড়িবাঁধ পুনরাকৃতিকরণ-২.০০০ কি.মি. কাজ করা হবে উক্ত টাকা ব্যয়ে। ২০১৫ সালের মে থেকে শুরু করে ২০১৮ সালের জুন পর্যন্ত এই কাজের মেয়াদ রাখা হলেও কাজ শুরু হয়েছে সকল প্রক্রিয়া শেষে বিগত ২০১৬ সালের শেষ পর্যায়ে এসে। বাঁশখালীর সাধনপুর ইউনিয়নের ২১৭৯ মিটার নদীর তীর সংরক্ষণ কাজ পায় হাছান এন্ড ব্রাদার্স। অপরদিকে পুকুরিয়া ইউনিয়নের ১২৬৯ মিটার নদীর তীর ও সংরক্ষণ বাঁধের কাজ পায় ৮শ মিটার হাসান ব্রাদার্স, ৪৬৯ মিটার নিয়াজ ট্রেডার্স। অপরদিকে খানখানাবাদ এলাকায় ৪শ মিটার তীর সংরক্ষণ বাঁধের কাজ পায় হাসান ট্রেডার্স এবং ৪ হাজার ৫শ মিটার ঢাল সংরক্ষণ বাঁধ কাজ পায় তারা। বাহারছড়া ৫শ মিটার বেড়িবাঁধের কাজ পায় হাছান ব্রাদার্স, গন্ডামারায় ১৪শ মিটারের মধ্যে ৯শ মিটার কাজ পায় আরাধনা এন্টারপ্রাইজ এবং ৫শ মিটার পায় মশিউর রহমান চৌধুরী এন্টারপ্রাইজ। অপরদিকে ছনুয়া ৩২০০ মিটার বেড়িবাঁধ নির্মাণ কাজের মধ্যে ২৩শ মিটার মশিউর রহমান এন্টারপ্রাইজ এবং ৯শ মিটার পায় মোস্তফা এন্ড সন্স।
উল্লে¬খ্য, ২০১৫ সালের মে থেকে ২০১৮ সালের জুন পর্যন্ত এ প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয়েছে। ফোল্ডার নং ৬৪/১এ, ৬৪/১বি ও ৬৪/১সি এর সমন্বয়ে বাঁধের ঢাল সংরক্ষণসহ ব্রীজের কোজিং ও পুনরাবৃত্তিকরণ ৯.৯০০ কিলোমিটার নদীর তীর সংরক্ষণ কাজে ৩.৮৪৮ কিলোমিটার, বাঁধ পুনরাবৃত্তিকরণ ২.০০ কিলোমিটার, স্থায়ী পুনবার্সন প্রকল্পের কাজ। পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী ধীমান কৃষ্ণ চৌধুরী জানান, কাজের সুনির্দ্দিষ্ট মেয়াদের মধ্যে আমরা উপকূলীয় এলাকার কাজ সম্পন্ন করার জন্য জোর প্রস্তুতি চালিয়ে যাচ্ছি। বিশেষ করে খানখানাবাদের প্রেমাশিয়া মৌলভী পাড়া ও খানখানাবাদ এলাকার ছনুয়া গন্ডামারা সী-সাইড এলাকার কাজ শেষ করার জন্য সকল প্রস্তুতি চলছে। তবে এই পর্যন্ত কাজের জন্য ৯০ কোটি টাকা বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে।
এদিকে বাঁশখালীর সাংসদ মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী এমপি সম্প্রতি দুদককের গনশুনানিতে বেড়িবাধেঁর কাজের অনিয়ম রোধে তদন্ত কমিটি গঠন করে তদন্ত করার জন্য আহবান জানান। তিনি এ ব্যাপারে পানি সম্পদ মন্ত্রনালয়ের সভায়ও কাজের মান স্থায়ীত্ব নিয়ে তদারকি করার আহবানের প্রেক্ষিতে তাদের ও নিজস্ব ঠিমের মাধ্যমে কাজের মনিটরিং করা হচ্ছে বলে জানা যায়। তিনি বাঁশখালীর উপকূলীয় বেড়িবাঁধ যাতে নি¤œমানের এবং কোন অবস্থাতেই অনিয়ম দুর্নীতি না হয় সে ব্যাপারে উপকূলীয় স্থায়ী সববাসকারীরা হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
এদিকে বাঁশখালী উপকূলীয় এলাকা পরিদর্শন ও কাজের উদ্ভোধনকালে পানি সম্পদ মন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়াও বেড়িবাঁধ যাতে কোন অবস্থাতেই অনিয়ম এবং দুর্নীতির মাধ্যমে করা না হয় সে ব্যাপারে সতর্ক থাকার জন্য উপকূলীয় জনগণকে আহবান করেছিলেন।
এ ব্যাপারে পাউবো উপ-বিভাগীয় কর্মকর্তা মোঃ নুরুল ইসলাম জানান কাজে কোন ধরনের অনিয়ম করা হলে তা আমরা কোন অবস্থাতেই মেনে নেব না। তাছাড়া এ কাজ তদারকিতে প্রতিনিয়ত উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ মাঠ পর্যায়ে এসে তদারকি করছেন। জানা যায়, ২৫১ কোটি টাকার মধ্যে চলতি বছরে প্রায় ৯০ কোটি টাকা ছাড় দেওয়া হবে।
বাঁশখালীর উপকূলবাসীর স্বপ্ন বাস্তবায়নে স্থায়ী এ বেড়িবাঁধে কোন প্রকার ক্রটি ছাড়াই কাজের সমাপ্তি হবে এ আশা করছে সাধারণ জনগণের।
0 মন্তব্যসমূহ