বাঁশখালীর স্বপ্নের উপকূলীয় বেড়িবাঁধ স্থায়ী হবে তো ?

বাঁশখালীর উপকূলবাসীর দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্নের বেড়িবাঁধে নানাভাবে আঘাত হানছে অশনি সংকেত। ইতিমধ্যে কিছু কিছু এলাকায় বেড়িবাঁধের কাজ শেষ হতে না হতেই বসানো ব্লকগুলো দেবে যাওয়ায় স্থানীয় জনগণ নানাভাবে এই বাঁধের স্থায়িত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছে। তাছাড়া কাজ শুরুর পর থেকে বিশেষ করে খানখানাবাদের প্রেমাশিয়া অংশে কাজ শেষের পথে থাকলেও অপরাপর অংশে এখনো কাজ চলমান রয়েছে। তবে বৃষ্টির কারণে অধিকাংশ এলাকায় কাজ বন্ধ প্রায়।
এ বাঁধ কোন কারণে অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে নিম্নমানের হলে আর কখন ও নির্মান হবে কিনা তা নিয়ে চিন্তিত উপকুলবাসী । উপকূলবাসীর দাবি তাদের আশার আলোতে যেন কোন কালো ছায়া না পড়ে । সেই প্রেক্ষিতে বাঁধ নির্মাণ কাজ শুরু হওয়ার পর থেকে নানা ভাবে অনিয়মের কথা উঠে আসলে তা পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সভায় গুরুত্ব সহকারে আলোচনা করা হয় বলে জানা যায় । তাছাড়া বাঁধের তলদেশ ১৫০ ফুট দৈর্ঘ্য, উপরের প্রস্থ ১৪ ফুট,ও উচ্চতা ১৮ ফুট করার কথা রয়েছে ।
তা যদি যথাযথ ভাবে করা না হয় তাহলে বাঁধ ঠিকসই হবে না অনেকে অভিমত প্রকাশ করেন। ৩৪টি প্যাকেজে চলমান এ কাজের এখন ও পযর্ন্ত ৩৮ শতাংশ শেষ হওয়ায় বেড়িবাঁধে যে ব্লক দেওয়া হচ্ছে তাছাড়া ৫ লাখ ৭৮ হাজার ১৫৭টি জিও ব্যাগ প্রস্তুত করে তা বসানোর কথা থাকলে তাও এখনও পুরাপুরি করতে পারেনি।
বাঁশখালীতে সরকার মতায় আসার পর যে কয়েকটি বৃহৎ প্রকল্প রয়েছে তার মধ্যে সবচেয়ে বড় প্রকল্প হলো বাঁশখালীর উপকূলীয় বেড়িবাঁধ নির্মাণ। ২৫১ কোটি ২৯ লক্ষ টাকা ব্যয়ে এই বাঁধের (সী ডাইক) ঢাল সংর ণসহ ব্রীচ কোজিং ও পুনরাকৃতিকরণ ৯.৯০০ কি.মি, নদী তীর সংরক্ষণ কাজ ৩.৮৪৮ কি. মি., বাঁধ পুনরাকৃতিকরণ.০০০ কি.মি. কাজ করা হবে উক্ত টাকা ব্যয়ে। ২০১৫ সালের মে থেকে শুরু করে ২০১৮ সালের জুন পর্যন্ত এই কাজের মেয়াদ রাখা হলেও কাজ শুরশু হয়েছে সকল প্রক্রিয়া শেষে বিগত ২০১৬ সালের শেষ পর্যায়ে এসে। বাঁশখালীর সাধনপুর ইউনিয়নের ২১৭৯ মিটার নদীর তীর সংরক্ষণ কাজ পায় হাছান এন্ড ব্রাদার্স। অপরদিকে পুকুরিয়া ইউনিয়নের ১২৬৯ মিটার নদীর তীর ও সংরক্ষণ বাঁধের কাজ পায় ৮শ মিটার হাসান ব্রাদার্স, ৪৬৯ মিটার নিয়াজ ট্রেডার্স। অপরদিকে খানখানাবাদ এলাকায় ৪শ মিটার তীর সংরক্ষণ বাঁধের কাজ পায় হাসান ট্রেডার্স এবং ৪ হাজার ৫শ মিটার ঢাল সংরক্ষণ বাঁধ কাজ পায় তারা। বাহারছড়া ৫শ মিটার বাঁধের কাজ পায় হাছান ব্রাদার্স, গন্ডামারায় ১৪শ মিটারের মধ্যে ৯শ মিটার কাজ পায় আরাধনা এন্টার প্রাইজ এবং ৫শ মিটার পায় মশিউর রহমান চৌধুরী এন্টারপ্রাইজ। অপরদিকে ছনুয়া ৩২০০ মিটার বেড়িবাঁধ নির্মাণ কাজের মধ্যে ২৩শ মিটার মশিউর রহমান এন্টারপ্রাইজ এবং ৯শ মিটার পায় মোস্তফা এন্ড সন্স।
উল্লেখ্য, ২০১৫ সালের মে থেকে ২০১৮ সালের জুন পর্যন্ত এ প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয়েছে। ফোল্ডার নং ৬৪/১এ, ৬৪/১বি ও ৬৪/১সি এর সমন্বয়ে বাঁধের ঢাল সংরক্ষণসহ ব্রীজের কোজিং ও পুনরাবৃত্তিকরণ ৯.৯০০ কিলোমিটার নদীর তীর সংরক্ষণ কাজে ৩.৮৪৮ কিলোমিটার, বাঁধ পুনরাবৃত্তিকরণ ২.০০ কিলোমিটার, স্থায়ী পুনর্বাসন প্রকল্পের কাজ। জানা যায়, ২৫১ কোটি টাকার মধ্যে চলতি বছরে প্রায় ৯০ কোটি টাকা ছাড় দেওয়া হবে।
খানখানাবাদ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোঃ বদরুদ্দিন চৌধুরী বলেন, বর্তমান যেভাবে বহ্মকের মাধ্যমে বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হচ্ছে তাতে জোয়ার এবং ঢেউয়ের কারণে নিচের অংশ বারবার ভেঙে যাচ্ছে। তা থেকে রক্ষা করার একমাত্র উপায় ডাম্পিং ব্লক বা এলোমেলো ব্লক বসিয়ে এই ভাঙন থেকে রক্ষা করতে হবে। না হয় বাঁধ দীর্ঘস্থায়ী হবে না।
এ ব্যাপারে পাউবো উপবিভাগীয় কর্মকর্তা মোঃ নুরুল ইসলাম জানান বেড়িবাঁধের কাজ যাতে সুষ্ঠু এবং সিডিউল অনুসারে হয় তার জন্য প্রতিনিয়ত তদারকি করা হচ্ছে। তারপরেও যদি কোন রূপ সমস্যা হয় তা কাজ বুঝে নেওয়ার আগে যথাযথ সংস্কার করে বিল প্রদান করা হবে।
বাঁশখালীর সাংসদ মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী এমপি বলেন, বাঁশখালীবাসীর দীর্ঘদিনের স্বপ্নের এই বেড়িবাঁধ কোন অবস্থাতেই অনিয়ম এবং দুর্নীতি যাতে না হয় ইতিমধ্যে সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষসহ দুদক এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়কে অবহিত করা হয়েছে। তাদের নিজস্ব টিমের মাধ্যমে এ কাজ তদারকি করছে।

বাঁশখালীর উপকূলবাসীর স্বপ্ন বাস্তবায়নে স্থায়ী এ বেড়িবাঁধ কোন ত্রুটি ছাড়াই কাজের সমাপ্তি হবে এ আশা করছে সাধারণ জনগণ এবং এই বেড়িবাঁধ নির্মাণ কাজ চলার প্রেক্ষিতে চলতি বছরে বেশ কিছু বন্যায় উপকূলীয় জনগণ পানিতে থেকে রক্ষা পেয়েছে বলে তারা জানান। বর্তমানে বৃষ্টির কারণে বেড়িবাঁধ নির্মাণ কাজ অনেকাংশ বন্ধ থাকলেও অল্প কিছুদিনের মধ্যে পুরো দমে কাজ শুরু হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়। তবে বর্তমানে বসানো ব্লকগুলো ঢেউ এবং জোয়ারের তোড়ে যেভাবে দেবে যাচ্ছে তাতে উপকূলীয় জনগণ বেড়িবাঁধ নির্মাণে যেভাবে আশ্বান্বিত হয়েছিল সেভাবে শংকিত হয়ে পড়ছে বাঁধের স্থায়িত্ব নিয়ে।
সুত্র: দৈনিক আজাদী

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ