ব্যক্তিগত সহকারীর মাধ্যমে অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠান খুলে ও ভুয়া প্রকল্পের মাধ্যমে বাঁশখালী উপজেলা সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করছেন। এমনটাই অভিযোগ তুলেছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল্লাহ কবির লিটন। রবিবার (১২ নভেম্বর) চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন তিনি এ অভিযোগ করেন।
গত ৯ নভেম্বর বাঁশখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের দু’গ্রুপের সংঘর্ষের ঘটনার প্রেক্ষিতে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। ওই দিন অনুষ্ঠানে যাওয়ার পথে বাঁশখালী উপজেলা সাংসদ মোস্তাফিজুরের অনুসারীরা লিটন ও তার অনুসারীদের ওপর হামলা চালায়।
লিখিত বক্তব্যে আব্দুল্লাহ কবির লিটন বলেন, ‘সংসদ সদস্য ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোস্তাফিজুরের বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের কারণে বাঁশখালী কিছু দিন পর পর জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকার শিরোনামে পরিণত হয়। মোস্তাফিজুর টি. আর তালিকা, সরকারি প্রকল্পসমূহে লাগামহীন অর্থলুট এবং তার ব্যক্তিগত সহকারী তাজুলের মাধ্যমে শত শত অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠান এবং ভুয়া প্রকল্পের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করে যা জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দলের ত্যাগী নেতাকর্মীদের বাদ দিয়ে টাকার বিনিময়ে দলের আশ্রীতদের মনোনয়ন দেওয়ারও অভিযোগ আছে মোস্তাফিজুরের বিরুদ্ধে। জামায়াতের উপজেলা আমীরকে সঙ্গে নিয়ে শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ এবং জামায়াতের আমীরকে স্বাধীনতা দিবসে পুরস্কার দেওয়ার মতো ঘৃণ্য কাজও বাঁশখালীবাসী দেখেছে।’
ওই দিনের ঘটনার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীর বাড়ির কাছেই এই হামলার ঘটনা ঘটেছে। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী শসস্ত্র সন্ত্রাসী ও ভাড়াটিয়া ডাকাত নিয়ে চাচা রশিদ আহমদ এবং তার ব্যক্তিগত সহকারী তাজুল ইসলাম আমার গাড়ি বহর এবং নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালায়। সন্ত্রাসীরা রাস্তায় ব্যারিকেড দিয়ে চতুর্দিক থেকে গুলি বর্ষণ করে। পরে তারা মোস্তাফিজুরের বাড়ির দিকে চলে যায়।
তিনি হামলায় জড়িত সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার এবং বাঁশখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটিও বাতিলের দাবি জানান।
আব্দুল্লাহ কবির লিটন বলেন, ‘চট্টগ্রামের রাজনীতির ইতিহাসে নজিরবিহীন এ ঘটনার নিন্দা জানানোর ভাষা আমার জানা নেই। আওয়ামী লীগের সাংসদ হয়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপর এমন ন্যাক্কারজনক হামলায় আমরা তৃণমূল আওয়ামী লীগ পরিবার ধিক্কার জানাচ্ছি। ’
প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘৯ নভেম্বররের হামলার পরিকল্পনাকারী, নেপথ্যে মদদদাতা ও সশস্ত্র সন্ত্রাসী ও চিহ্নিত ডাকাতদের গ্রেফতার করে বিচারের মুখোমুখি করা হোক। ২৩ বছর আগে গঠিত বাঁশখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের অপুর্ণাঙ্গ কমিটি বাতিল করা হোক।’
প্রসঙ্গত, প্রয়াত আওয়ামী লীগ প্রেসিডিয়াম সদস্য আক্তারুজ্জামান চৌধুরী বাবুর স্মরণসভাকে কেন্দ্র করে বৃহস্পতিবার (৯ নভেম্বর) বিকালে বাঁশখালী পৌর সদরের অদূরে সরল ইউনিয়নের পাইরাং এলাকায় সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান এবং স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল্লাহ কবির লিটনের অনুসারীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে অন্তত ১৪ জন আহত হন। এই ঘটনায় সংসদ সদস্যের চাচা ও ইউপি চেয়ারম্যান রশিদ আহমদ চৌধুরীকে প্রধান আসামি করে লিটনের অনুসারী আনিসুল হক বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন। মামলায় ২২ জনের নাম উল্লেখ করে এবং আরও ২৫/৩০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়। ওই মামলায় দুই নম্বর আসামি করা হয়েছে সংসদ সদস্যের ব্যক্তিগত উপজেলা যুবলীগের সভাপতি তাজুল ইসলামকে।
সুত্রঃ বাংলা ট্রিবিউনে
0 মন্তব্যসমূহ