আরবে এক স্কুল ছিল।
সেখানে সাতজন শিক্ষক ছিলেন। তাদের মধ্যে
একজন ব্যতীত সকলে সময়মত ছালাত আদায় করতেন। এ কারণে অন্যান্য শিক্ষকেরা তাকে
ঘৃণা করতেন। তারা সকলে তার থেকে দূরে থাকতেন। তারা তাকে বহুবার বুঝানোর
চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছেন। তাই তার সাথে অন্যান্য শিক্ষকদের মনোমালিন্য
লেগেই থাকত।
এরই মধ্যে ঐ স্কুলে একজন নতুন শিক্ষক নিয়োগ
দেওয়া হ’ল। তিনি অত্যন্ত চতুর ও মেধাবী ছিলেন। তিনি স্কুলে যোগদান করার পর
অনুভব করতে পারলেন যে, ছালাত আদায়কারী শিক্ষকদের সাথে বে-ছালাতি শিক্ষকের
সম্পর্ক ভাল নয়। বিরতির সময়ে তিনি দেখলেন যে, সকল শিক্ষক এক জায়গায় বসে
খোশ-গল্প করছে; কেউ নাস্তা করছে। কিন্তু সে একাই পৃথকভাবে এক জায়গায় বসে
আছে। তিনি তাকে ডাকার ইচ্ছা করলেন।
কিন্তু তিনি নতুন শিক্ষক। তাই তিনি নিজেই
তার কাছে গেলেন তার পাশে বসলেন এবং তার সাথে পরিচিত হ’লেন। সেদিন এভাবে পার
হয়ে গেল। পরের দিন তিনি তার পাশে গিয়ে বসলেন। কুশল বিনিময় হ’ল। লোকটি
সম্পর্কে তার জানা হয়ে গেল। তিনি তাকে বললেন, যেহেতু আপনার পরিবার এখন
বাসাতে নেই, তাই আমি আপনার সাথে অবস্থান করি, যতদিন আপনার ফ্যামিলি না
আসে। আমি ভাড়া পরিশোধ করে দিব। সেখানে বাসা পাওয়া সহজ ছিল না।
সে কিছুক্ষণ চিন্তা করে তার কথা মেনে নিল।
সে তাকে তার সাথে রাখতে সম্মতি প্রকাশ করল। কিন্তু সে একটি কথা খুব স্পষ্ট
করে বলল, দেখ! আমি ভাল লোক নই। আমি ছালাত আদায় করি না এবং ইসলাম থেকেও দূরে
থাকি। তিনি বললেন, ঠিক আছে সমস্যা নেই। আমরা কিছু দিন এক সাথে থাকব, যদি
আমরা একে অপরের সাথে মিলে মিশে থাকতে পারি তাহ’লে ভাল। অন্যথা আমি আলাদা
কোন বাসা দেখব।
পরের দিন থেকে তিনি তার সাথে থাকতে শুরু
করলেন। নতুন নিয়োগ পাওয়া শিক্ষক বলেন, আমিই তার খিদমত করা শুরু করলাম। আমি
পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ, খানা তৈরী ও অন্যান্য কাজও করতাম। নিজের কাপড়
ইস্ত্রি করার সময় তার কাপড়গুলোও ইস্ত্রি করে দিতাম। এখনো আমি তার সাথে
ছালাত এবং ধর্মীয় বিষয়ে কোন আলোচনা করিনি।
কিছুদিনের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক গভীর
হ’ল। আমার আচরণে সে খুবই প্রভাবিত হ’ল। আমি আরও বেশী তার খিদমতে নিয়োজিত
হ’লাম। আমি একদিন আছরের সময় চা বানিয়ে ফ্লাক্সে ভরে টেবিলের উপরে রেখে তাকে
ডাকলাম। আমরা দু’জনে চা গ্রহণ করছিলাম। হঠাৎ পার্শ্বের মসজিদে আছরের আযান
হ’ল। আমি চায়ের কাপ রেখেই ছালাতের জন্য উঠে গেলাম।
সে আমাকে উঠতে দেখে বলল, তুমি প্রত্যেক দিন
পাঁচবার মসজিদে যাও, এতে ক্লান্ত হও না? আমি বললাম, কখনো না? বরং আমি এতে
খুবই শান্তি ও তৃপ্তি অনুভব করি। তুমি চাইলে একবার পরীক্ষা করে দেখতে
পারো। সে বলল, ঠিক আছে চল। আমরা মসজিদে গেলাম। আমার সাথীর ওযূ ছিল না। সে
ওযূ করল, জামা‘আত শুরু হ’তে তখনও কিছু সময় বাকি ছিল। আমি গিয়ে তাহিয়্যাতুল
মসজিদ দু’রাক‘আত ছালাত আদায় করে প্রার্থনা করলাম, হে আল্লাহ! আমি তোমার
বান্দার সাথে কি কি আচরণ করেছি, তা তুমি জান। আর আজ তাকে মসজিদে নিয়ে
এসেছি। হে আমার রব! তাকে হেদায়াত দেওয়া তোমার দায়িত্ব।
ছালাত শেষে আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম, বন্ধু!
বলতো তোমার অবস্থা এখন কেমন? সে বলল, অতুলনীয় শান্তি ও পরিতৃপ্তি অনুভব
করছি। আমি বললাম, কিছুক্ষণ পর মাগরিবের ছালাত। আমি তোমাকে অনুরোধ করছি আগেই
ভাল ভাবে ওযূ করার জন্য। সে সম্মতি জানিয়ে মাথা ঝুকাল। আল্লাহ তাকে এভাবে
হেদায়াত দান করলেন। সে দ্বীনের বিষয়ে গভীর মনোযোগী হ’ল এবং আমাদের
বন্ধুত্বও গভীর হ’ল।
আমি তখন স্কুলের অন্যান্য শিক্ষকদেরকে
বললাম, আপনাদের ঐ আচরণ ঠিক ছিল না। দেখুন! উত্তম ব্যবহার, হিকমত এবং দো‘আর
মাধ্যমে আমি তাকে ইসলামের দাওয়াত দিয়েছি সে তা গ্রহণ করেছে। অতঃপর এই
শিক্ষক গতকাল পর্যন্ত ছালাত আদায় করত না। অথচ আজ সে পূর্ণ মুমিন ও মুছল্লী।
ইসলামের প্রচারক হয়ে গেছে। সরকার তাকে বেরুন দেশে প্রেরণ করেছে। সেখানে
তার হাতে বহু লোক মুসলমান হয়েছে।
মূলতঃ বহু লোক এমন আছে, যারা বন্ধুদের সাথে
ভাল আচরণ করতে জানে না। তারা যখন দেখে যে তার বন্ধু কোন অন্যায়ে লিপ্ত
হয়েছে, তখন তার উপর রেগে গিয়ে বিভিন্ন রকমের ফৎওয়া ঝাড়তে থাকে। যার ফলে
তারা শয়তানের প্ররোচনায় ভুল সিদ্ধান্ত নেয়।
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর শিখানো পদ্ধতিতে কোন
ব্যক্তিকে ভ্রান্ত পথ থেকে সঠিক পথে আনয়নের ক্ষেত্রে আবেগ প্রবণ হয়ে কোন
সিদ্ধান্ত গ্রহণ না করে, ধীরে ধীরে উত্তম ব্যবহারের মাধ্যমে অত্যন্ত
বুদ্ধিমত্তার সাথে হকের দিকে দাওয়াত দেয়া উচিত। যাতে করে যাকে দাওয়াত দেয়া
হয়, সে কোন জটিলতা অনুভব না করে এবং সুস্থ মস্তিষ্কে সত্য গ্রহণ করে। কোন
কারণে সে অপমানিত হ’লে সে তার অপমান বোধকে কাজে লাগিয়ে তার পূর্বের
অপকর্মেই লিপ্ত থাকবে। তার উপদেশ দাতা বন্ধুর সাথে সুসম্পর্ক আস্তে আস্তে
তিক্ততায় পরিণত হবে। ফলে নিজেদের মধ্যে শত্রুতা বৃদ্ধি পাবে। এজন্য আস্তে
আস্তে বুদ্ধিমত্তার সাথে কাজ করা সাফল্যের উপায়। পক্ষান্তরে তাড়াহুড়া করা
মুর্খতার কারণ
0 মন্তব্যসমূহ