এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর মৃত্যুতে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগে নেতৃত্বশূন্যতা দেখা দিয়েছে। এতদিন দলের ব্যাপারে তার সিদ্ধান্তই ছিল শেষ কথা। মহিউদ্দিন চৌধুরীর মৃত্যুর শোক এখনো নেতাকর্মীরা বয়ে বেড়ালেও তার অনুপস্থিতিতে দলের হাল কে ধরবেন- এ নিয়ে আলোচনাও শুরু হয়েছে।
পরিস্থিতি এতই নাজুক যে, চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের পরবর্তী সভাপতির দায়িত্ব কে নেবেনÑ এমন প্রশ্নের জবাবে সব নেতাই বিব্রতবোধ করেছেন। তারা বলেছেন, এখনো কেউ মহিউদ্দিনবিহীন চট্টগ্রাম ভাবতে পারছেন না। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলেন, মহানগর আওয়ামী লীগের মহিউদ্দিন অনুসারী অনেক নেতা আছেন; কিন্তু নিরঙ্কুশভাবে নেতৃত্ব দেওয়ার মতো গ্রহণযোগ্যতা এককভাবে তাদের কারো নেই।
চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতির পর সহসভাপতি রয়েছেন ১০ জন। ধারণা করা হচ্ছে, এর মধ্যে যে কাউকে পরবর্তী সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে। তবে এর ব্যতিক্রমও হতে পারে। এ ধরনের নজির রয়েছে। ২০১৪ সালে এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীকে দ্বিতীয়বারের মতো চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি করা হয়। আর আ জ ম নাছির উদ্দীনকে করা হয় সাধারণ সম্পাদক। এর আগে আ জ ম নাছির মহানগর আওয়ামী লীগের সদস্যও ছিলেন না। সাধারণ সম্পাদক হওয়ার এক বছরের মধ্যেই মেয়র হন আ জ ম নাছির।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, মহিউদ্দিন চৌধুরীর অবর্তমানে চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নেতা হিসেবে আবির্ভূত হবেন মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। ফলে সংগঠন চালানোর ক্ষেত্রে তার সিদ্ধান্ত অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। তাকে অতিক্রম করে অন্য কেউ সভাপতি হবেন নাকি তিনিই ওই পদে হাল ধরবেন, সেটির জন্য আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে। প্রয়াত এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী সাধারণ সম্পাদক পদ থেকেই ২০০৫ সালে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি হয়েছিলেন।
চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ ৭৩ সদস্যের। নেতাদের ধারণা, মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারী কেউ একজনকে দলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে। বর্তমানে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগে নেতাভিত্তিক অনুসারী নেতাকর্মী রয়েছেন। এরমধ্যে প্রয়াত মহিউদ্দিন চৌধুরী ও আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারীরাই সবচেয়ে শক্তিশালী। এর বাইরে নগর আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ ও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) চেয়ারম্যান আবদুচ ছালামের নিজস্ব অনুসারী নেতাকর্মী রয়েছেন। আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব দেওয়ার ক্ষেত্রে জ্যেষ্ঠতা, দল পরিচালনার ক্ষেত্রে সক্ষমতা ও যোগ্যতার বিষয়গুলো অনেক বেশি গুরুত্ব পাবে। পরিবেশ-পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে দলকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য কোন নেতা কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারবেন, সেটিও বিবেচনায় থাকবে।
বিগত দিনের রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী সংগঠন পরিচালনার ক্ষেত্রে সবসময় একই ব্যক্তির ওপর নির্ভরশীল ছিলেন না। তিনি কখনো ডা. আফছারুল আমীন, কখনো খোরশেদ আলম সুজন কিংবা ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল আবার কখনো আবদুচ ছালামকে গুরুত্ব দিতেন। আবার তাদেরই কারো কারো সঙ্গে পরবর্তী সময়ে তার বিরোধ ও দূরত্ব তৈরি হয়। শেষ দিকে তিনি আলতাফ হোসেন বাচ্চুকেও গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় রাখার চেষ্টা করেছিলেন। তবে কোনো নেতাই নিজেকে পরিপূর্ণভাবে মেলে ধরতে পারেননি।
এ প্রসঙ্গে নগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি খোরশেদ আলম সুজন বলেন, তিনি (মহিউদ্দিন) ছিলেন বটবৃক্ষ। ফলে তার সামনে অন্যরা ছিলেন গৌণ। মহিউদ্দিন চৌধুরী এতো বড় মাপের ব্যক্তিত্ব ছিলেন যে, ১০-২০ নেতা দিয়েও সেই শূন্যতা পূরণ সম্ভব নয়। দল ও রাজনীতি নিয়ে তার কোনো দিন-রাত ছিল না। এখন কে দক্ষতা দিয়ে দলকে এগিয়ে নিতে পারবেন, সেটি সভানেত্রী ঠিক করবেন। আমরা এ নিয়ে এখনো ভাবতে পারছি না।
চট্টগ্রামের মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, মহিউদ্দিন ভাই-পরবর্তী সময়ে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের নেতৃত্বের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীই সিদ্ধান্ত নেবেন। এ মুহূর্তে আমাদের কাজ হচ্ছে সব ধরনের বিভক্তির ঊর্ধ্বে উঠে নিজেদের ঐক্যবদ্ধ রাখা।
চট্টগ্রাম মহানগর আওামী লীগের কোষাধ্যক্ষ ও সিডিএ চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম বলেন, মহিউদ্দিন ভাইয়ের চলে যাওয়া আমাদের জন্য অসীম শূন্যতা। এ অবস্থায় সবাই মিলে কীভাবে এ শূন্যতা পূরণ করা যায়, সেটিই সর্বোচ্চ চেষ্টার বিষয়।
সুত্রঃআমার দেশ
সুত্রঃআমার দেশ
0 মন্তব্যসমূহ