মোহাম্মদ শফিক, বিশেষ প্রতিনিধি, কক্সবাজার ::
বিজয় দিবসের ছুটিতে পর্যটকদের পদভারে মুখরিত হয়ে উঠেছে দেশের পর্যটন রাজধানী কক্সবাজার। সমুদ্র সৈকত, বিপণি কেন্দ এবং বিনোদন স্পটগুলো এখন পর্যটকের কোলাহলে মুখর। আর লাখ লাখ পর্যটকের কক্সবাজার আগমনকে পুঁজি করে যথারীতি গলাকাটা ব্যবসা ফেঁদেছেন বেশিরভাগ ব্যবসায়ীরা। মুনাফালোভী হোটেল-মোটেল ও গেষ্ট হাউস মালিকরা কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে রুম ভাড়া চারগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। প্রায় সকল প্রকার পণ্যের দাব বাড়িয়ে দিয়েছেন রেষ্টুরেন্ট ব্যবসায়ীরাও। এতে চরম বেকায়দায় পড়তে হচ্ছে আগত পর্যটকদের। মূল্য নিয়ন্ত্রণ রাখার জন্য সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের আরো নজরধারী এবং ভ্রাম্যান আদালতের হস্তক্ষেপ কামাণা করেছেন আগত অধিকাংশ পর্যটকরা। তবে আইনশৃংখলা পরিস্থিতি নিয়ে তারা খুবই সন্তুষ্ট।
কক্সবাজারের হোটেল-মোটেল ব্যবসায়ীরা জানান, বিজয় দিবসের ছুটিতে ইতিমধ্যে চার শতাধিক হোটেলের প্রায় সমস্ত কক্ষ ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত আগাম বুকড হয়ে গেছে। এছাড়া শহরের ছোট-খাট আবাসিক হোটেলগুলোর ও একই অবস্থা। এমনকি হোটেল-মোটেল জুনের আশপাশের মানুষের খালি বাসা-বাড়িও ভাড়া নিয়ে থাকছে বিভিন্ন পর্যটক। প্রতিবছর ডিসেম্বর মাসে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা শেষে ছুটির দিনগুলোতে অবকাশ যাপনের জন্য কক্সবাজারে বেড়াতে আসেন। এভারেও তার বেতিক্রম নয়। থার্টিফাস্টনাইট উৎযাপন করতে দলে দলে অরো পর্যটক কক্সবাবারে ছুঁটে আসছেন।
ছুটিতে কক্সবাজারে বেড়াতে আসা পর্যটক ঢাকার কাওরন বাজারের হানিফ মিয়া, চটগ্রাম দক্ষিণ শাখার উত্তারা ব্যাংক এর ম্যানাজার, মোজাহিদুল ইসলাম, মুনির চৌধুরী, রাজধানীর সাউথ ইনির্ভাসিটির প্রভাশিকা খাইরুনেছা জানান, বিজয় দিবসের ছুটিতে কক্সবাজারে সাগরপাড়ে রাত কাটাতে বেশ ভালোই লাগছে। তবে যে কদিন এখানে থাকার ইচ্ছা ছিল তা হচ্ছে না। কারণ এখানে রুম আর বীচ দেখা ছাড়া শিশুদের বিনোদনের জন্য কিছুই নাই। এছাড়া হোটেল-মোটেলগুলোর ১হাজার টাকার রুম ৪-৫হাজার টাকা আদায় করছে। থাকা, খাওয়া, কেনাকাটা ও ভ্রমনে অতিরিক্ত অর্থ অদায়। এভাবে সব জিনিসের উপর চলছে নৈরাজ্য। এতে তাদের বাজেট এর সাথে ব্যয় এর সামঞ্জ হচ্ছে না। এব্যাপারে প্রশাসনকে আরও কঠোর নজরদারী বাড়ানোর আর্জি জানান তারা।
কক্সবাজার হোটেল-মোটেল গেস্ট হাউস মালিক সতিতির অর্থ সম্পাদক শফিকুর রহমান জানান, বিজয় দিবসের ছুটিতে চার শতাধিক হোটেল, গেস্ট হাউজ ও কটেজ পর্যটকে ভরে গেছে। ডিসেম্বরে ও জানুয়ারি মাস ভরপুর থাকবে পর্যটক। শীত মৌসুমে কক্সবাজারে পর্যটকের আগমন বেশি ঘটে বলে তিনি জানান। তবে তিনি আরো বলেন, সারা বছর তারা লোকসান দেয়। ডিসেম্বর থেকে তাদের ব্যবসা হয়। তার জন্য রুমসহ অন্যান্য কিছু দর একটু বাড়তী। তবে কেউ যদি পর্যটকদের কাজ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ পায় তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
কক্সবাজারের তারাকা হোটেল-সী-গাল এর সিইও রুমী ভোরের পাতাকে জানান, সীমান্ত রোহিঙ্গা আগমনের পর থেকেই আমাদের হোটেলে প্রচুর বিদেশী এনজিও কর্মকর্তা রয়েছেন। এছাড়াও তারাকা হোটেলগুলোসহ বিভিন্ন এর্পামেন্টেগুলোতেও বিদেশি পর্যটকসহ দেশিয় পর্যটক ভিড় করছেন। আর বিজয় দিবস থেকে থার্টিফাস্ট নাইট পর্যন্ত আমাদের হোটলে অনেক আগেই বুকড হয়ে আছে।
কক্সবাজার সৈকত কিটকট (চেয়ার-ছাতা) ব্যবসায়ীরা জানান, অন্যান্য বছরের মতো ডিসেম্বর মাস বিজয় দিবসের ছুটিতে সৈকতে পর্যটকের উপস্থিতি বেশ ভালো। আর পর্যটকেরা সমুদ্রের দৃশ্য উপভোগের জন্য চেয়ারে বসলে হকার কিংবা টোকাই যাতে উৎপাত করতে না পারে, সেদিকে নজরা রাখা হচ্ছে। এছাড়া ২৪ ঘন্টা ট্যুরিস্ট পুলিশের উপস্থিতি রয়েছে।
এদিকে কক্সবাজারের প্রাকৃতিক ঝর্ণা হিমছড়ি, ইনানি, রামু বৌদ্ধ মন্দির, রামকোট, ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক, মহেশখালী আদিনাথ মন্দির, কানাইরাজার সুড়ঙ্গ, কুদুম গুহা, টেকনাফের গেম রিজার্ভ, সোনাদিয়া দ্বীপ, সেন্টমার্টিন দ্বীপসহ বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্র এখন পর্যটকে মুখরিত। এতে করে দীর্ঘদিন ঝিমিয়ে থাকা পর্যটন শিল্প এখন পুরোধমে চাঙ্গা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বিশ্বের বৃহত্তম এই সৈকতটিতে পর্যটকদের উপচে পড়া ভিড়। সমুদ্র সৈকতে বিপুল সংখ্যক পর্যটক সাগর স্নানে ব্যস্ত। শিশুরা ব্যস্ত বালুরচরে। দেশি পর্যটকদের পাশাপাশি ছিল বিদেশি পর্যটকরাও। বাস কাউন্টারগুলো খুবই ভিড়। পর্যটকের আনাগোনায় হোটেল-মোটেল এর অলিগলি খুবই মূখরিত। সেন্টমার্টিনের চলাচলকারী জাহাজগুলো চলছে। সব মিলিয়ে চরম চাঙ্গাভাব বিরাজ করছে পর্যটন শিল্পে।
কক্সবাজার ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন (টুয়াক) প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এস এম কিবরিয়া খান জানান, পর্যটকদের জন্য আমরা সকল সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করেছি। পর্যটকদের উপলক্ষ করে অনেকদিন পর চালু হয়েছে সেন্টমার্টিনে চলাচলকারী জাহাজগুলো। এ কারণে বিগত সময়ের তুলনায় বেড়েছে পর্যটক। এছাড়া জাহাজগুলো অতিরিক্ত পর্যটক বহন করলে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের দ্বারা তাদেরকে অভিযাও চালাচ্ছি।
ককবাজারের জেলা প্রশাসক মো: আলী হোসেন জানান, জেলা প্রশাসন পর্যটকদেও নিরাপত্তার বিষয়টিকে অগ্রধিকার দিচ্ছি। কক্সবাজারে এসে পর্যটকরা যাতে বিড়ম্বনার শিকার না হন এবং হোটেল রেস্টুরেন্টগুলো অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করতে না পারে সেজন্য বেশ কয়েকজন ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে বিশেষ টিমও গঠন করা হয়েছে। এছাড়া ছিনতাই, বভাটেদেও উৎপাত ও ইভটিজিং প্রতিরোধে ভ্রাম্যমাণ আদালত সক্রিয় আছে।
কক্সবাজার পুলিশ সুপার ড. এ কে ইকবাল হোসেন বলেন, পর্যটকদের নিরাপত্তা ও স্বাচ্ছন্দ ভ্রমণ নিশ্চিত করতে নানা উদেদ্যাগ গ্রহন করেছে। দর্শনীয় স্থান ও বিপণিকেন্দও গুলোতেও পুলিশি টহল জোরদার করা হয়েছে। এছাড়া চুরি, ছিনতাই এবং ইভটিজিং ঠেকাতেও পুলিশ সর্তাবস্থানে রয়েছে। এছাড়া পর্যটকদের নিরাপত্তা জন্য যো কোন মূহুর্তে ফোন করার জন্য হট লাইনও খোলা হয়েছে।
0 মন্তব্যসমূহ