কালীপুরের লিচু বিদেশেও পরিচিত

ব্রিটিশ শাসন আমল থেকে বাঁশখালী উপজেলার কালীপুরের লিচু ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেছে। কালীপুরের লিচু মধুমাসের মধু ফল হিসাবে সবার কাছে সমাদৃত। লাল টসটসে সুস্বাদু এই লিচু ছোট বড় সবার কাছে প্রিয়। চট্টগ্রাম ও প্রার্বত্য চট্টগ্রামে বর্তমানে লিচু ফলন হলেও বাঁশখালীর কালীপুরের লিচু উত্তরাঞ্চল রাজশাহী, দিনাজপুরের লিচুর চেয়ে কদর বেশি। বাঁশখালী পাহাড়ী এলাকায় এই লিচু চাষ হয়ে থাকে। প্রতি বছর বৈশাখ মাসের ১২ তারিখ আব্দুল জব্বারে বলী খেলার সময়ে প্রথম বাঁশখালীর লিচু বাজারে আসে।
১৯৫০ সালের পরবর্তী সময়ে বাঁশখালীর কালীপুরের পাহাড়ী এলাকায় স্থানীয় জমিদারগণ লিচুর কলম, চারা রোপণ করে আবাদ শুরু করে। কলিকতা ও বোম্বে থেকে কলম, চারা রোপণের জন্য আনা হয় বলে বোম্বে লিচু, কলিকতার লিচু, চায়না-৩, চায়না-১, জাতের লিচু বীজ বপন করার মাধ্যমে চাষাবাদ করে। স্থানীয় কালীপুরের জমিদার এমতাজুল হক চৌধুরী বাগান, মাবিয়া বাপের বাগান, লালু মিয়ার বাগান, সামশু মিয়ার বাগান, কাজী সাহেবের বাগান, দুবাই জাফর আহমদের বাগানের লিচুর সুনাম এখনো মানুষের মুখে মুখে।
বাঁশখালী উপজেলার পাহাড়ী এলাকায় চাম্বল, পাইরাং, পুইছড়ি, সাধনপুর, গুনাগরী, জলদী এলাকায় লিচু কলমের মাধ্যমে বিস্তিৃতি লাভ করেছে বাগানের। উপজেলার ৪০কিলোমিটার এলাকা জুড়ে প্রায় ৭০টি বাগানের ৫০ হাজার লিচু গাছ রয়েছে। কালীপুরের এমতাজুল হক চৌধুরীর বাগানটি এলাকার মধ্যে সবচেয়ে লিচু বাগানের মধ্যে পুরাতন। এ বাগানটি ১৯৫৯সালে মরহুম এমতাজুল হক চৌধুরী ৫০০ চারা গাছ রোপণের মাধ্যমে পাহাড়ী এলাকায় ১০০ একর জমিতে চাষাবাদ শুরু করেন। ৭০সালের দিকে একইভাবে কাজী সাহেবের বাগান, মাবিয়া বাপের বাগান, সামশু মিয়ার বাগান তৈরী করেন। বর্তমানে কালীপুরে পেয়ারা আকৃতির লিচুর আবাদ রয়েছে। কালীপুরে রেজিস্ট্রি অফিসে ও হাকিমীয়া মাদ্রাসার সামনে ৪০টি লিচু গাছ বড় আকারে লিচু ফলনে পাইকারী ব্যবসায়ীদের কাছে কদর খুব বেশী। লিচু ব্যবসায়ী মোহাম্মদ হারুন জানান, প্রতি বছর কালীপুরের লিচুর জন্য ব্যবসায়ীরা ট্রাক, বাসযোগে দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যায়। রাজশাহী, দিনাজপুরের লিচুর চেয়ে বাঁশখালীল কালীপুরের লিচুর কদর খুব বেশী। আত্মীয়Ñস্বজনদের মৌসমী ফল হিসাবে লিচু উপহার দিয়ে থাকে।
বৈশাখ জ্যৈষ্ঠ মাসে কালীপুর এলাকায় লিচুর ম ম গন্ধে রাস্তাঘাট লিচু বেচা কেনার ধুম পড়ে যায়। কালীপুরের লিচু ক্রয় করতে চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন ব্যবসায়ীরা ভিট জমায়। মৌসমী ফল হিসাবে প্রথম পর্যায়ে ২৫০ থেকে ৩০০টাকায় বিক্রি হয়। কালীপুর গ্রামে গ্রামে বৈশাখ মাসে লিচুর উৎসব চলে। কালীপুরের লিচু সংগ্রহ করে জমিদাররা বিদেশেও আত্মীয়-স্বজনদের কাছ পাঠায় বলে প্রচার রয়েছে। গাছ সুস্থ ও সবল হলে ১৫/২০বছর বয়সী লিচু গাছে ফলন ভালো হলে অন্তত ৫ হাজার লিচু উৎপাদন সম্ভব। একটি গাছে ৩০/৩২হাজার ফল ধরে।
পাহাড়ী অঞ্চলে লিচু গাছের ফলন বেশী হওয়ায় গত বছরে নতুনভাবে চারা রোপণ করতে শুরু করেছে। চিকিৎসকদের মতে লিচুতে ভিটামিন সি বেশি থাকায় রোগ প্রতিরোধে ক্ষমতা বাড়ায় ও পুষ্টি অভাব দূর করেন। এইজন্য লিচুর চাহিদা খুব বেশি।
লিচু বাগানের মালিক কালীপুরর সাবেক চেয়ারম্যান নেজাম উদ্দিন চৌধুরী ১৯৫০সালের দিকে এলাকায় লিচু বাগান তৈরী শুরু হয়। ৫শতাধিক চারা রোপণ থেকেই প্রথম পর্যায়ে কলিকতা ও বোম্বের লিচু চারার আবাদ হয়। বড় আকারে লিচু ফলন হওয়াই বাঁশখালীর লিচু সবার কাছে পরিচিত লাভ করে। বাঁশখালীতে ২শতাধিক লিচু বাগানের মধ্যে ১৫/২০টি বাগানের লিচু খুবই সুস্বাদু । দাম বাজারে উচ্চ মূল্যে। বর্তমানে কৃষকরা লিচু চাষ করে ব্যবসায়িক সফল হয়েছে।
কৃষি কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম বলেন বাঁশখালীতে কালীপুরের লিচু ফলন বিক্রি শুরু হয় বৈশাখ মাসে। ৩মাস বাজারে এই লিচু বিক্রি হয়। কৃষকরা সরকারীভাবে সহয়তা বেশি ফলন আরো বাড়ানো সম্ভব। তিনি লিচুতে ভিটামিন ঔষুধ প্রয়োগে স্বাদ ও পুষ্টি বাড়ে বলে জানান।
সুত্রঃ দৈনিক পূর্বকোণ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ