দীর্ঘ হচ্ছে খালেদার মুক্তির অপেক্ষার প্রহর

বি,এন ডেক্স:
দীর্ঘ হচ্ছে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির অপেক্ষার প্রহর। কারাগারে যাওয়ার ১৮ দিনের মাথায় জামিনের শুনানি হলেও কোনো আদেশ দেয়া হয়নি। বিচারিক আদালতের মূল নথি আসার পর এ বিষয়ে আদেশ দিবেন হাইকোর্ট। আর নথি আসার এখনো আইনগত সময় রয়েছে ১৫ দিন। নানা কারণে এসময় আরো বাড়তে পারে বলে মনে করছেন আইনজীবীরা।
গতকাল রোববার দুপুরে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় এক ঘণ্টার বেশি সময় শুনানি করে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সহিদুল করিমের হাই কোর্ট বেঞ্চ। পরে তারা বিচারিক আদালতের মামলার নথি এলে তা দেখে আদেশ দেবেন বলে জানান।
গত ২২ ফেব্রুয়ারি একই বেঞ্চ খালেদা জিয়ার আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করে অর্থদণ্ড স্থগিতের আদেশ দেয়। সেই সাথে আদেশ পাওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে বিচারিক আদালত থেকে মামলার নথি পাঠাতে নির্দেশ দিয়েছিল এই বেঞ্চ।
সেই আদেশ নিম্ন আদালতে পৌঁছেছে গতকাল রোববার। সে নথি কবে হাইকোর্টে পাঠানো হবে তা নিশ্চিত করে বলতে পারছে না বিচারিক আদালতের পেশকার। ফলে খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য বিএনপি নেতাকর্মীদের অপেক্ষার প্রহর বাড়ছে। তিনি কবে মুক্তি পাবেনআদৌ মুক্তি পাবেন কি নাএসব প্রশ্ন নিয়ে তাদের মধ্যে আলোচনা চলছে।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে এতিমখানা দুর্নীতি মামলা ছাড়াও ৩৪টি মামলা রয়েছে দেশের বিভিন্ন আদালতে। সেসব মামলায় তাকে এখনো গ্রেপ্তার দেখানো হয়নি। গতকাল রোববার আরো দু’টি মামলার ধার্য তারিখ ছিল। জিয়া চ্যারিটেবল মামলায় খালেদাকে আদালতে হাজির করার আবেদন থাকলে তা করা হয়নি। অপরদিকে ১৫ আগস্ট ‘ভুয়া জন্মদিন পালনের’ মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা তামিলের প্রতিবেদন দাখিলের দিন ধার্য ছিল। আদালত আগামী ২৫ মার্চ এ দিন ধার্য করেন।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট্র মামলায় ঢাকার পঞ্চম বিশেষ জজ আখতারুজ্জামান গত ৮ ফেব্রুয়ারি সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেন। খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক রহমানসহ অপর পাঁচ আসামির প্রত্যেককে ১০ বছরের জেল এবং আসামিদের প্রত্যেককে ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার করে জরিমানা করা হয়।
মূল রায়সহ ১২২৩ পৃষ্ঠার আপিল আবেদনে ৪৪টি যুক্তি দেখিয়ে খালেদা জিয়ার খালাস চাওয়া হয়। আর ৮৮০ পৃষ্ঠার জামিন আবেদনের মধ্যে ৪৮ পৃষ্ঠাজুড়ে ৩২টি যুক্তিতে খালেদা জিয়ার মুক্তি চাওয়া হয়। কিন্তু জামিন আবেদনের কপি পেতে বিলম্বের কারণ দেখিয়ে দুদক শুনানির জন্য সময় চাইলে হাই কোর্ট রোববার দুপুরে শুনানির সময় ঠিক করে দেয়।
শুনানিতে দুই পক্ষের যুক্তি
বেলা ২টায় জামিন শুনানি শুরুর আগেই বিএনপিপন্থি বিপুল সংখ্যক আইনজীবী আদালত কক্ষে উপস্থিত হলে হইচই শুরু হয়। এ পরিস্থিতিতে বেঞ্চের সিনিয়র বিচারক দুই পক্ষের সিনিয়র আইনজীবী বাদে অন্যদের আদালত কক্ষের বাইরে চলে যেতে বলেন এবং পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে দশ মিনিট সময় দিয়ে এজলাস থেকে নেমে যান। পরে বেলা আড়াইটায় বিচারকরা বেঞ্চে ফেরেন এবং জামিন শুনানি শুরু হয়।
আদালতে খালেদা জিয়ার পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী। রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম এবং দুদকের পক্ষে খুরশীদ আলম খান শুনানি করেন।
খালেদা জিয়ার জামিনের আরজি জানিয়ে এ জে মোহাম্মদ আলী শুনানিতে বলেনমামলায় পাঁচ বছরের যে সাজা দেওয়া হয়েছেতা অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত সাজা। এই আদালতের রীতি এবং ক্ষমতা আছে সংক্ষিপ্ত সাজায় জামিন দেওয়ার। তাছাড়া তিনি একজন বয়স্ক নারী। তাই আমরা তার জামিন চাচ্ছি। এর বিরোধিতা করে দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেনসংক্ষিপ্ত সাজায় জামিন পেতে পারে এটা কোনো যুক্তি হতে পারে না। খালেদা জিয়া একজন বয়স্ক নারী এবং তিনি অসুস্থ বলে আসামিপক্ষ যুক্তি দেখালেও তার সমর্থনে কোনো মেডিকেল সার্টিফিকেট বা কাগজপত্র দাখিল করেন নি। ফলে তিনি জামিন পেতে পারেন না। বরং উচ্চ আদালত এ মামলায় বিচারিক আদালতের যে নথি তলব করেছেতা এলে পরে এ বিষয়ে আদেশ হতে পারে।
রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমও শুনানিতে খালেদা জিয়ার জামিনের বিরোধিতা করেন। তিনি বলেনখালেদা জিয়া নিম্ন আদালতে ১০৯ বার বিভিন্ন অজুহাতে সময় নিয়েছেন। মামলা বাতিল চেয়েঅভিযোগ থেকে অব্যাহতি চেয়েআদালত পরিবর্তন চেয়ে বা বিচারকের প্রতি অনাস্থা জানানোসহ নানা কারণে ২৬ বার উচ্চ আদালতে এসেছেন। মোট কথা নয় বছরের মত সময় লেগেছে মামলাটি শেষ হতে। ফলে আজকে যদি জামিন দিয়ে দেনতাহলে বলা যাচ্ছে না আদৌ এর আপিল শুনানি হবে কি না। দ্রুততম সময়ে আপিল শুনানি শুরুর তাগিদ দিয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেনঅত্যাধুনিক প্রযুক্তি রয়েছে। আপিল শুনানির জন্য এক মাসের মধ্যে পেপারবুক প্রস্তুত হতে পারে। যেমন বিডিআর বিদ্রোহ মামলার আপিলের ক্ষেত্রে প্রস্তুত করা হয়েছিল। আমাদের কোর্টের সে প্রযুক্তি আছে। তাই আমার আবেদন হচ্ছেজামিন না দিয়ে দ্রশুততম সময়ের মধ্যে আপিল শুনানি শুরু করা হোক।
শুনানি শেষে বিচারক বলেনজামিন বিষয়ে শুনানি শেষে হয়েছে। বিচারিক আদালতের নথি এলে পরে এ বিষয়ে আদেশ দেওয়া হবে।
খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের মধ্যে ব্যারিস্টার রফিকউলহকব্যারিস্টার মওদুদ আহমদসাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এএফএম হাসান আরিফ,ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকারঅ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেনসুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীনসম্পাদক ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন জামিন শুনানিতে উপস্থিত ছিলেন।
বিএনপি নেতাদের মধ্যে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরবিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন.মঈন খান ও মির্জা আব্বাস ও খায়রুল কবির খোকনকেও আদালতে দেখা যায়।
শুনানির পর দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান সাংবাদিকদের বলেনআদেশ পাওয়ার পনের দিনের মধ্যে বিচারিক আদালতকে নথি পাঠানোর যে আদেশ গত বৃহস্পতিবার হাই কোর্ট দিয়েছিলসে আদেশটি বিচারিক আদালত আজঞ্জ (রোববারপেয়েছে। নথি পাঠানোর জন্য প্রস্তুতিও শুরু হয়েছে। ঠিক কবে এ নথি উচ্চ আদালতে আসবে তা বলা যাচ্ছে না।
অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সাংবাদিকদের বলেনসাবেক রাষ্ট্রপতি হোসাইন মোহাম্মদ এরশাদকে পাঁচ বছরের সাজা দেওয়া হয়েছিল। সাড়ে তিন বছর পর তিনি জামিন পেয়েছিলেন। তাই আরেকজন সাবেক সরকার প্রধান কেন দুই মাসের মধ্যেই জামিনপ্রাপ্ত হবেন?
জিয়া চ্যারিটেবল মামলাএদিকে গতকাল রোববার জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়ার হাজিরার জন্য আবেদন করা হয়েছিল। কিন্তু তাকে আদালতে হাজির করা হয়নি।
ভুয়া জন্মদিন’ পালন মামলামিথ্যা তথ্য দিয়ে ১৫ আগস্ট ‘ভুয়া জন্মদিন’ পালন করার অভিযোগে দায়ের করা মামলায় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেফতারিসংক্রান্ত তামিল প্রতিবেদন দাখিল করেনি গুলশান থানা পুলিশ। প্রতিবেদন দাখিল না করায় ঢাকা মহানগর হাকিম খুরশীদ আলম প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আগামী ২৫ মার্চ নতুন দিন ধার্য করেছেন।
সূত্রঃ দৈনিক আজাদী

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ