মুহাম্মদ আনোয়ারুল হক খানঃ
চট্টগ্রাম শহর থেকে প্রায় বিশ কিলোমিটার দূরে রয়েছে আরেকটি সুন্দর
সমুদ্র সৈকত বাঁশখালী। ঝাউ গাছে ঘেরা দীর্ঘ একটি সমুদ্র সৈকত আছে এখানে।
শহরের বহদ্দার হাট থেকে বাসে এসে নামতে হবে মুনছুরিয়া বাজার। সেখান থেকে
রিকশায় সুমুদ্র সৈকত। বাসে যেতে সময় লাগে এক ঘণ্টার মতো।
অন্যান্য আকর্ষণঃ
চট্টগ্রামের বাঁশখালী নৈসর্গিক সৌন্দর্য ও নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক
দৃশ্যাবলীর এক মায়াবী রূপ। পাহাড়, সমুদ্র, নদী, খাল ও সমতল ভূমিবেষ্টিত
বাঁশখালীতে রয়েছে ২৫ কিলোমিটার বালুচর সমৃদ্ধ সৈকত, আট কিলোমিটার পাহাড়ি
হ্রদ ও প্রাকৃতিক চিড়িয়াখানা সংবলিত জীববৈচিত্র্যের সনি্নবেশন নিয়ে
হৃদয়ছোঁয়া বাঁশখালী ইকোপার্ক। এখানে রয়েছে ছোট বড় উঁচু-নিচু অনেক টিলা।
সেই টিলার নিচে প্রবাহিত হয় পানি। আরও সামনে পাহাড় বেয়ে দেখা যায়
দীর্ঘ ঝুলন্ত সেতু। অবাক চোখে তাকাই রাঙামাটি এবং বান্দরবানের মতো আরও একটি
কৃত্রিম ঝুলন্ত সেতু এখানে_ যে লেকের নাম ছড়া লেক। তার ওপরই নির্মিত
হয়েছে ৪০০ ফুট দৈর্ঘ্যের দেশের সর্ববৃহৎ আকর্ষণীয় ঝুলন্ত সেতু। সেতুতে
দাঁড়িয়ে উপভোগ করা যায় অপরূপ ‘ইকোপার্ক’-এর নৈসর্গিক সৌন্দর্যর্। মন
চাইলে পেডেল বোট, নৌকা বা ইঞ্জিনচালিত বোটে চড়ে লেকটি ঘুরে বেড়ানো যাবে।
পুরো লেকটি ঘুরে আসতে সময় লাগবে দুই ঘণ্টা। বিভিন্ন প্রজাতির পশুপাখি, জলজ
উদ্ভিদ, লেকের বিশাল জলরাশি, কাশফুলের দৃশ্য ও বন্যপ্রাণীর সুরেলা কোলাহলে
এক অনন্য অনুভূতির সৃষ্টি হয় এই পার্কে। সারি সারি পাহাড়ে উঠে খালি চোখে
দেখা যায় বঙ্গোপসাগরের অথৈ জলরাশি।
ঝুলন্ত সেতু পেরিয়ে দেখা যায় অনেক বড় টাওয়ার। পর্যটকদের সমুদ্র ও
বনাঞ্চল দর্শনের জন্য দুটি পর্যবেক্ষণ টাওয়ার নির্মিত হয়েছে। একটি পূর্ব
পাহাড়ে, অন্যটি পশ্চিম পাহাড়ে। পাহাড়ের চূড়ায় উঠে যে কেউ দেখতে পাবেন
কুতুবদিয়া চ্যানেল, বঙ্গোপসাগর আর বিকালে সূর্যাস্ত দেখার দুর্লভ মুহূর্ত।
এ ছাড়া দেখার আছে ব্রিটিশ যুদ্ধের গণ্ডামারার সাগরবক্ষে বিধ্বস্ত
যুদ্ধবিমান, সাধনপুরে কামানের মহড়ার দৃশ্য, ঈনশার ষাটগম্বুজ, বানীগ্রামের
শিবমন্দিরসহ বিভিন্ন পুরার্কীতি। পর্যটনশিল্প আরও প্রতিষ্ঠিত হলে
চট্টগ্রামের মানচিত্রে এলাকাটি হবে উন্নয়নের সূতিকাগার। বাঁশখালী
ইকোপার্কে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থাও রয়েছে। সৌন্দর্যের সমারোহের সঙ্গে এখানে
রয়েছে ‘খানখানাবাদ’ নামের বিশাল সমুদ্রসৈকত। এখানে জলকেলি করলে আপনি
পাবেন কঙ্বাজারের স্বাদ। আপনি কুড়াতে পারেন অসংখ্য শামুক। খেলতে পারেন
ছোট্ট শিশুদের সঙ্গে, যারা সমুদ্রে ভেসে আসা ছোট মরা মাছ ধরতে সদা অভ্যস্ত।
আমরা সবাই জানি শুধু সিলেটেই চা বাগানের সমাহার। কিন্তু চট্টগ্রামের
বাঁশখালীতে রয়েছে চান্দপুর বৈলগাঁও টি-এস্টেট। দক্ষিণ চট্টগ্রামের একমাত্র
চা-বাগান বাঁশখালীর চান্দপুর বৈলগাঁও চা বাগান। বৈলগাঁও চা বাগান ঘিরে
সৃষ্টি হয়েছে দারুণ সম্ভাবনা। বাগানের অপরূপ সৌন্দর্যের কারণে এখানে আসেন
অসংখ্য পর্যটক। অপরদিকে উৎপাদিত ক্লোন চা-পাতা বিদেশে রপ্তানি হয়ে অর্জিত
হচ্ছে বৈদেশিক মুদ্রা। ঊনবিংশ শতাব্দীতে তিন হাজার ৬৭২ একর জায়গার ওপর এ
চা-বাগান প্রতিষ্ঠিত হয়।
প্রকৃতির অপার দান, উঁচু-নিচু পাহাড়ের সবুজ ঘেরা এ বাগানটি আধুনিক পর্যটন
এলাকা হিসেবে গড়ে তোলা হলে এটিই হতে পারে অন্যতম বৃহৎ পর্যটনকেন্দ্র।
বৈলগাঁও টি-এস্টেট সাঙ্গু নদীর অববাহিকায় শান্ত জায়গায় অবস্থিত। প্রথমে
সাঙ্গু নদী, চাঁদপুর এবং পুকুরিয়া হয়ে যে কেউ আসতে পারবেন এই চা-বাগানে,
ছোট ছোট টিলায় চা-বাগান দাঁড়িয়ে আছে। এখানে যে বড় বড় গাছগুলো
দাঁড়িয়ে আছে তার নাম শ্বেতট্টী। যান্ত্রিক শহরের কালো ধোঁয়া কাটিয়ে
একটু সবুজ দেখতে চাইলে আপনি পুরো বাঁশখালীর সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন।
চট্টগ্রাম থেকে এখানে যাতায়াত ব্যবস্থা সহজ।
চট্টগ্রাম শহর থেকে বাঁশখালীর
দূরুত্ব মাত্র ৪৫ কিলোমিটার। বাসে যেতে প্রায় দুই ঘণ্টা সময় লাগে। বাস
ভাড়া জনপ্রতি ৫০ থেকে ৮০ টাকা। সিএনজি ভাড়া ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা। সময়
লাগবে প্রায় আড়াই ঘণ্টা।
0 মন্তব্যসমূহ