এ বিষয়ে সাংবাদিক মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন কর্তৃক
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের বিরুদ্ধে দায়ের করা
অভিযোগের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নিমিত্ত সচিব, বেসামরিক বিমান
পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় ঢাকা বরাবর প্রেরণের কমিশনে সিদ্ধান্ত গৃহীত
হয়েছে।
প্রসঙ্গত, শৈবাল ও তৎসংলগ্ন কয়েকশত কোটি টাকা
মূল্যের জমি ওরিয়ন গ্রুপকে নামমাত্র মূল্যে বরাদ্দ দেওয়ার নানামুখী
অপতৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। জাতীয় পর্যটন সংস্থা বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের
মালিকানাধীন আবাসিক হোটেল হচ্ছে হোটেল শৈবাল। শৈবালের সঙ্গে হয়েছে
কক্সবাজার শহরের প্রথম অভিজাত খাবার হোটেল সাগরিকা রেস্টুরেন্ট। রয়েছে
পর্যটন বার। এছাড়া পর্যটন শহরের সর্ববৃহৎ ও আকর্ষণীয় দীঘিটি শৈবালের পাড়ে
অবস্থিত। রয়েছে নয়নাভিরাম বিশাল লেক ও সুইমিংপুল। শুধু তাই নয়, শৈবালের
চারপাশে সমুদ্রের বালুকাতট ও ঝাউবিথিসহ রয়েছে প্রায় একশত ৩০ একর মূল্যবান
জমি। মাত্র ৬০ কোটি টাকার বিনিময়ে এই হোটেল শৈবাল ও তৎসংলগ্ন ১৩০ একর
মূল্যবান জমি ৫০ বছরের জন্য বন্দোবস্ত দেওয়া হচ্ছে ওরিয়ন গ্রুপকে। ওরিয়ন
গ্রুপের নামে হোটেল ও তৎসংলগ্ন জমিতে সাইনবোর্ডও টাঙ্গানো হয়। সাইনবোর্ড
টাঙ্গানোর ঘটনাকে কেন্দ্র করে পর্যটন সংস্থার কর্মচারী ও ওরিয়ন গ্রুপের
কর্মীদের মধ্যে অপ্রীতিকর ঘটনাও ঘটে।
এদিকে, চেয়ারম্যান, দুর্নীতি দমন কমিশন বরাবর
মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিনের আবেদনে বলা হয়েছে, ১৯৬৫ সালে কক্সবাজার শহরে
সাগরিকা রেস্তরাঁ চালুর মধ্য দিয়ে কক্সবাজার পর্যটনে শৈবালের যাত্রা শুরু
হয়। সেই থেকে আজ পর্যন্ত রেস্তরাঁটি ভোজন রসিকদের মাঝে ব্যাপক সাড়া পায়।
পরে ১৯৮৫ সালে এখানে আবাসিক প্রতিষ্ঠান চালু করা হয়। চড়ায়-উৎরাই পেরিয়ে
পর্যটক ও স্থানীয়দের হোটেল শৈবাল বেশ সুনাম কুড়িয়েছে। আজও হোটেল শৈবাল
পর্যটন শিল্প বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলছে। হোটেল শৈবালের মোট জমির
পরিমাণ ১৩৫ একর। তারমধ্যে ১৩০ একর পিপিপি প্রকল্পের আওতায় হস্তান্তর করা
হবে বলে জানা গেছে। একইসঙ্গে ১৩০ একর জমি ছাড়াও হোটেল শৈবালের অত্যাধুনিক
তিন তলা ভবন, সাগরিকা রেস্তরাঁ ভবন, সুইমিংপুল ভবন, লাইভ ফিস রেস্তরাঁর
দোতলা ভবন, শৈবালের গলফ বার ভবনসহ মোট ১৪০ কোটি টাকার ভবনও হস্তান্তর করা
হবে ওরিয়ন গ্রুপের কাছে। পর্যটন এরিয়ার প্রাইম লোকেশনে হোটেল শৈবালের প্রতি
শতক জমির মূল্য নূন্যতম ৩৫ লাখ টাকা ধরা হলে ১৩০ একর জমির মূল্য দাঁড়ায়
প্রায় ৪ হাজার ৫৫০ কোটি টাকা। এছাড়া হোটেল শৈবালের ভবনসহ আশপাশের অন্যান্য
ভবনের মূল্য ১৪০ কোটি টাকা। কিন্ত পিপিপি প্রকল্পের আওতায় বিতর্কিত ওরিয়ন
গ্রুপকে মাত্র ৬০ কোটি টাকায় শৈবালের সমস্ত সম্পত্তি হস্তান্তরের খবরে
জনমনে বিরুপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। শৈবালের জমি ওরিয়ন গ্রুপকে
হস্তান্তরের জন্য পর্যটন করপোরেশনের বিভিন্ন পর্যায়ের কয়েকজন কর্মকর্তা
মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে ওরিয়ন গ্রুপকে পানির দামে মূল্যবান জমি দেওয়ার
যোগসাজশ করেছে।
বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের কর্মচারী ইউনিয়ন ও
অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের অধিকাংশ নেতাদেরও টাকা দিয়ে ম্যানেজ করা হয়েছে।
পুরো বিষয়টি নানা ধরনের অনিয়ম ও দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে করা হয়েছে। পর্যটন
করপোরেশনের কিছু অসাধু আমলা নিজেদের পকেট ভারি করে হোটেল শৈবালের হাজারো
কোটি টাকার জমি নামমাত্র মূল্যে দেওয়া হচ্ছে। তা সত্যিই দুঃখজনক। তা না করে
হোটেল শৈবালের বিদ্যমান ভবনগুলো সুরক্ষিত রেখে শুধুমাত্র খালি জায়গা
টেন্ডার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছে হস্তান্তব করা যেত।
বিতর্কিত ওরিয়ন গ্রুপ মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের নির্মাতা। যে ফ্লাইওভার ধসে
অনেক মানুষের প্রাণহানি হয়। তাছাড়া এই কোম্পানির কারণে ধ্বংস হয়েছে ওরিয়ন
ব্যাংক। হোটেল শৈবালের নথিটি দেশের অনেক মন্ত্রণালয়ে ছাড়পত্র পেয়েছে দ্রুত
গতিতে।
বর্তমানে হোটেল শৈবালের বিভিন্ন পয়েন্টে ওরিয়ন
গ্রুপের সাইনবোর্ড সাটানো হয়েছে। সাইনবোর্ড লাগাতে গেলে শৈবালের কর্মরত
কর্মর্কতাদের সঙ্গেও বাড়াবাড়ি হয়। হোটেল শৈবালের মতো ঐতিহ্যবাহী সরকারি
প্রতিষ্ঠান ও সম্পত্তি দেশের চিহ্নিত মাফিয়া চক্রের হাত থেকে রক্ষাসহ
ইজারায় অনিয়নের বিষয়টি তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জনস্বার্থে
আপনারা বরাবরে অত্র পত্রখানা দায়ের করিলাম।
0 মন্তব্যসমূহ