বাঁশখালীর সরল গ্রামের সওদাগরের কন্যা মলকাবানু। আনোয়ারা উপজেলার শোলকাটা
গ্রামে বসতি স্থাপনকারী শাহ সুজার সেনাপতি ও পরবর্তীতে দক্ষিণ চট্টগ্রামের
প্রখ্যাত জমিদার শেরমস্ত খাঁনের ছেলে জমিদার জবরদস্ত খাঁ প্রকাশ মনুমিয়ার
সাথে মলকাবানুর বিয়ে হয়। সেই বিয়েকে কেন্দ্র করে মলকাবানুর লোকগীতি ও
জনশ্রুতি মানুষের মুখে মুখে আজও প্রচার রয়েছে।
অহংকারী জমিদার মনু মিয়া ও মলকাবানু নিঃসন্তান ছিলেন। স্বামীর মৃত্যুর পর মলকাবানু স্বামীর জমিদারভুক্ত বাঁশখালীর সরল গ্রামস্থ বাপের বাড়িতে চলে যান। মলকাবানু পরবর্তীতে আর বিয়ে করেননি। ফলে তাদের কোন বংশধর অবশিষ্ট নেই। একথা ঐতিহাসিকভাবেই নিশ্চিত।
আনোয়ারায় শ^শুর বাড়ি ও সরল ইউনিয়নের সরল গ্রামে বাপের বাড়িতে মলকাবানুর নামে দিঘি, বসতবাড়ি, মসজিদ ইত্যাদি স্মৃতির চিহ্ন রয়েছে। কালক্রমে মালকাবানুর আত্মীয়-স্বজনরা সহায়-সম্পত্তি ও দিঘির ২৪ একর জমি বিক্রি করে দেয়ায় দখলদার ব্যক্তিরা দিঘিটি ভরাট করে ফেলছে। তবুও দেশের বিভিন্ন কবি-সাহিত্যিক-বুদ্ধিজীবী সকলের আলোচনার কেন্দ্রেতে মলকাবানু ও মনু মিয়ার বিয়ে পালাগান ও পুরাতন কীর্তি দিঘি ও মসজিদ নিয়ে।
ইতিহাসবিদ প্রফেসর ড. আবদুল করিম বাঁশখালীর ইতিহাস গ্রন্থে মলকাবানুর পরিচয় বর্ণনা করতে গিয়ে জলদি গ্রাম নিবাসী মেরাজুল হক চৌধুরী নামক এক ব্যক্তির উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছেন, তিনি মলকাবানুর পিতার নাম বলতে না পারলেও মতরস্যাবলী নামক এই পরিবারের একজন খ্যাতনামা লোকের পরিচয় দিতে গিয়ে বলেছেন: মলকাবানুর চাচা বা ভাই কেউ ছিলেন। তবে তিনি মলকাবানু ও মনুমিয়ার একমাত্র কন্যা সন্তান হিসেবে তাজুন্নিসা নামক এক মহিলার পরিচয় প্রকাশ করেছেন। যা নিঃসন্তান মলকাবানু মনুমিয়ার পুরো ইতিহাসকেই পাল্টে দেয়। তিনি এই তথ্যের ভিত্তিতে এক বংশ তালিকাও প্রকাশ করেনÑমলকাবানু স্বামী মনুমিয়া, তাজুন্নিসা চৌধুরী (সরল গ্রাম থেকে খুরুসকুল), আশরাফ চৌধুরী (খুরুসকুল থেকে কক্সবাজার চৌফলদ-ি), মুজাফফর আহমদ চৌধুরী, মমতাজ আলী চৌধুরী, মোস্তাক আহম্মদ চৌধুরী।
উল্লেখ্য, যদি তাজুন্নিসা নামে মনুমিয়ার কোন সন্তান থাকতেন, তবে মলকাবানুর যে বংশ তালিকা দেওয়া হয়েছে তাতে তাজুন্নিসাকে মলকাবানুর অধঃস্তন পুরুষ না বলে মনুমিয়ার অধঃস্তন পুরুষ বলা হত এবং তাজুন্নিসা অবশ্যই মনুমিয়ার শোলকাটা গ্রামের সেই বিশাল বাড়িতেই বসবাস করতেন এবং মলকাবানু কিছুতেই স্বামীর বাড়ি ত্যাগ করতেন না। সুতরাং তাজুন্নিসা নামক মনুমিয়া ও মলকাবানুর কোন সন্তান থাকার প্রশ্নই ওঠে না। তারা ছিলেন নিঃসন্তান। তাদের কোন প্রজন্ম এ পৃথিবীতে এখন নেই।
গবেষক ইসহাক চৌধুরী কর্তৃক সংগৃহীত একটি প্রাচীন দলিল পটিয়া উপজেলার হুলাইন গ্রামের ‘আবদুচ সাত্তার চৌধুরী পুঁথিশালা’য় সংরক্ষিত আছে। ফারখতি (মুক্তিনামা) নামক ১৮২০ সালে একটি দলিলে দাতার নাম জমিদার রাণী মলকাবানুর স্বাক্ষর রয়েছে। এখানে উল্লেখ থাকা প্রয়োজন যে, আনোয়ারা উপজেলার বেলচুড়া, গুয়াপঞ্চক, চাতরীসহ ৮টি গ্রামের বেশ কয়টি প্রজাপরিবারকে ১৭৯৬ সালে দলিল মূলে কিছু জমি মলকাবানুর পিতা ও ভাইয়েরা সেবায়েত হিসেবে দান করেছিলেন। মলকাবানু ১৮২০ সালে সেবায়েত পরিবারগুলোকে পুনরায় উক্ত দলিলে পুনঃমঞ্জুরি দান করেন। দলিলে দেখা যায় মলকাবানুর পিতার নাম আনিচ এবং ভাইয়ের নাম সরফরাজ খাঁ ও ঈসা খাঁ সুর। নামেই বুঝা যায় সরফরাজ খাঁ ও ঈসা খাঁ সুর বিখ্যাত কোন ব্যক্তির নাম। ইতিহাস গবেষকদের দৃষ্টি আকর্ষণে দলিলটি সম্পর্কে এখানে আলোচনা করা হয়েছে। আরো উল্লেখ থাকে যে, উক্ত দলিলে মলকাবানুর স্বামীর নাম লেখা রয়েছে আবদুল হালিম।
ইতিহাস সম্পর্কে লেখকদের ধারণা জমিদার মনুমিয়ার মৃত্যুর পর তার স্ত্রী মলকাবানু বাঁশখালী থানার সরল গ্রামস্থ বাপের বাড়িতে চলে যান। মলকাবানু সরল গ্রাম থেকেই মনুমিয়ার বিশাল জমিদারীর প্রাপ্ত অংশ দেখাশুনা করতেন। সম্ভবত তিনি ঐ সময় আবদুল হালিম (দলিলের উল্লেখিত স্বামী) নামক কোন জমিদার বংশের ব্যক্তিত্ববান পুরুষকে পুনরায় স্বামী হিসেবে বরণ করে বাকী জীবন কাটান। তাজুন্নিসা হয়তো মলকাবানুর দ্বিতীয় সংসারে জন্মগ্রহণ করেন অথবা কোন সম্ভ্রান্ত পরিবারের কন্যা তাজুন্নিসাকে পালক হিসেবে গ্রহণ করেন। মলকাবানু ও মনু মিয়ার প্রথম জীবনে বিয়ে নিয়ে একটি তৎকালীন জারিসারি গানের লেখকরা মালকাবানু ও মনু মিয়াকে নিয়ে হাওলা লিখেছিলেন। পরবর্তীতে তা গানে প্রচার পায়।
চট্টগ্রামের গায়ক তোরাব উদ্দিন ১৮-১৯ শতকের লোক। মলকাবানুদের বাড়িতে গান করতেন। ঐ সময়ে দুই গায়ক করম আলী ও সিরাজ পালাগান করতেন। সরল গ্রামের জমিদার রাণী মলকাবানু ও জমিদার শেরমস্ত খাঁ প্রকাশ মনু মিয়ার বিয়ে নিয়ে ‘মলকাবানু হাঁলা’ রচনা করেন। মাস্টার আবদুল মান্নান চৌধুরীর উদ্ধারকৃত ‘মলকাবানু হাওলা’র অংশ বিশেষ তুলে ধরা হলোÑজলদী থানার মাঝেরে, এক সদাইগর রে/ সেইনা সদাইগরের কন্যা নামে মলখা বানুরে/
মলখা বানুর রূপরে ইন্দ্র ধনুর বরণ/ রেপরীরা নাচন করে মলখা বানুর সাথেরে/ মলখা বানুর সাত ভাই অভাইগ্যা মনু মিঞার কেহ নাই/ মলখার বিয়া হইব মনু মিঞার সাথেরে/ মনু মিঞার দেশেরে জোড়ের খাড়া বাজেরে/ যাইবরে মনু মিঞা হাউসের মলখার দেশেরে/ মনু মিঞা লইল সাজ মাথায় দিল সোনার তাজ/ যাইবরে মনু মিঞা হাউসের মলখা বানুর দেশেরে/ মলখা বানুর দেশে যাইতেরে বড় বড় দইরগ্যা আছেরে/ কেমতে যাইব মনু হাউসের মলখা বানুর দেশেরে/ মলখা বানুর দেশেরে নানান বাদ্য বাজেরে/ মলখার বিয়া হইল মনু মিঞার সাথেরে।
তথ্য সংগ্রহ : প্রফেসর ড. আবদুল করিম এর ইতিহাস ঐতিহ্য এবং বাঁশখালীর সাবেক নির্বাহী কর্মকর্তা সোনা মনি চাক্মার প্রসঙ্গ বাঁশখালী থেকে।
অহংকারী জমিদার মনু মিয়া ও মলকাবানু নিঃসন্তান ছিলেন। স্বামীর মৃত্যুর পর মলকাবানু স্বামীর জমিদারভুক্ত বাঁশখালীর সরল গ্রামস্থ বাপের বাড়িতে চলে যান। মলকাবানু পরবর্তীতে আর বিয়ে করেননি। ফলে তাদের কোন বংশধর অবশিষ্ট নেই। একথা ঐতিহাসিকভাবেই নিশ্চিত।
আনোয়ারায় শ^শুর বাড়ি ও সরল ইউনিয়নের সরল গ্রামে বাপের বাড়িতে মলকাবানুর নামে দিঘি, বসতবাড়ি, মসজিদ ইত্যাদি স্মৃতির চিহ্ন রয়েছে। কালক্রমে মালকাবানুর আত্মীয়-স্বজনরা সহায়-সম্পত্তি ও দিঘির ২৪ একর জমি বিক্রি করে দেয়ায় দখলদার ব্যক্তিরা দিঘিটি ভরাট করে ফেলছে। তবুও দেশের বিভিন্ন কবি-সাহিত্যিক-বুদ্ধিজীবী সকলের আলোচনার কেন্দ্রেতে মলকাবানু ও মনু মিয়ার বিয়ে পালাগান ও পুরাতন কীর্তি দিঘি ও মসজিদ নিয়ে।
ইতিহাসবিদ প্রফেসর ড. আবদুল করিম বাঁশখালীর ইতিহাস গ্রন্থে মলকাবানুর পরিচয় বর্ণনা করতে গিয়ে জলদি গ্রাম নিবাসী মেরাজুল হক চৌধুরী নামক এক ব্যক্তির উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছেন, তিনি মলকাবানুর পিতার নাম বলতে না পারলেও মতরস্যাবলী নামক এই পরিবারের একজন খ্যাতনামা লোকের পরিচয় দিতে গিয়ে বলেছেন: মলকাবানুর চাচা বা ভাই কেউ ছিলেন। তবে তিনি মলকাবানু ও মনুমিয়ার একমাত্র কন্যা সন্তান হিসেবে তাজুন্নিসা নামক এক মহিলার পরিচয় প্রকাশ করেছেন। যা নিঃসন্তান মলকাবানু মনুমিয়ার পুরো ইতিহাসকেই পাল্টে দেয়। তিনি এই তথ্যের ভিত্তিতে এক বংশ তালিকাও প্রকাশ করেনÑমলকাবানু স্বামী মনুমিয়া, তাজুন্নিসা চৌধুরী (সরল গ্রাম থেকে খুরুসকুল), আশরাফ চৌধুরী (খুরুসকুল থেকে কক্সবাজার চৌফলদ-ি), মুজাফফর আহমদ চৌধুরী, মমতাজ আলী চৌধুরী, মোস্তাক আহম্মদ চৌধুরী।
উল্লেখ্য, যদি তাজুন্নিসা নামে মনুমিয়ার কোন সন্তান থাকতেন, তবে মলকাবানুর যে বংশ তালিকা দেওয়া হয়েছে তাতে তাজুন্নিসাকে মলকাবানুর অধঃস্তন পুরুষ না বলে মনুমিয়ার অধঃস্তন পুরুষ বলা হত এবং তাজুন্নিসা অবশ্যই মনুমিয়ার শোলকাটা গ্রামের সেই বিশাল বাড়িতেই বসবাস করতেন এবং মলকাবানু কিছুতেই স্বামীর বাড়ি ত্যাগ করতেন না। সুতরাং তাজুন্নিসা নামক মনুমিয়া ও মলকাবানুর কোন সন্তান থাকার প্রশ্নই ওঠে না। তারা ছিলেন নিঃসন্তান। তাদের কোন প্রজন্ম এ পৃথিবীতে এখন নেই।
গবেষক ইসহাক চৌধুরী কর্তৃক সংগৃহীত একটি প্রাচীন দলিল পটিয়া উপজেলার হুলাইন গ্রামের ‘আবদুচ সাত্তার চৌধুরী পুঁথিশালা’য় সংরক্ষিত আছে। ফারখতি (মুক্তিনামা) নামক ১৮২০ সালে একটি দলিলে দাতার নাম জমিদার রাণী মলকাবানুর স্বাক্ষর রয়েছে। এখানে উল্লেখ থাকা প্রয়োজন যে, আনোয়ারা উপজেলার বেলচুড়া, গুয়াপঞ্চক, চাতরীসহ ৮টি গ্রামের বেশ কয়টি প্রজাপরিবারকে ১৭৯৬ সালে দলিল মূলে কিছু জমি মলকাবানুর পিতা ও ভাইয়েরা সেবায়েত হিসেবে দান করেছিলেন। মলকাবানু ১৮২০ সালে সেবায়েত পরিবারগুলোকে পুনরায় উক্ত দলিলে পুনঃমঞ্জুরি দান করেন। দলিলে দেখা যায় মলকাবানুর পিতার নাম আনিচ এবং ভাইয়ের নাম সরফরাজ খাঁ ও ঈসা খাঁ সুর। নামেই বুঝা যায় সরফরাজ খাঁ ও ঈসা খাঁ সুর বিখ্যাত কোন ব্যক্তির নাম। ইতিহাস গবেষকদের দৃষ্টি আকর্ষণে দলিলটি সম্পর্কে এখানে আলোচনা করা হয়েছে। আরো উল্লেখ থাকে যে, উক্ত দলিলে মলকাবানুর স্বামীর নাম লেখা রয়েছে আবদুল হালিম।
ইতিহাস সম্পর্কে লেখকদের ধারণা জমিদার মনুমিয়ার মৃত্যুর পর তার স্ত্রী মলকাবানু বাঁশখালী থানার সরল গ্রামস্থ বাপের বাড়িতে চলে যান। মলকাবানু সরল গ্রাম থেকেই মনুমিয়ার বিশাল জমিদারীর প্রাপ্ত অংশ দেখাশুনা করতেন। সম্ভবত তিনি ঐ সময় আবদুল হালিম (দলিলের উল্লেখিত স্বামী) নামক কোন জমিদার বংশের ব্যক্তিত্ববান পুরুষকে পুনরায় স্বামী হিসেবে বরণ করে বাকী জীবন কাটান। তাজুন্নিসা হয়তো মলকাবানুর দ্বিতীয় সংসারে জন্মগ্রহণ করেন অথবা কোন সম্ভ্রান্ত পরিবারের কন্যা তাজুন্নিসাকে পালক হিসেবে গ্রহণ করেন। মলকাবানু ও মনু মিয়ার প্রথম জীবনে বিয়ে নিয়ে একটি তৎকালীন জারিসারি গানের লেখকরা মালকাবানু ও মনু মিয়াকে নিয়ে হাওলা লিখেছিলেন। পরবর্তীতে তা গানে প্রচার পায়।
চট্টগ্রামের গায়ক তোরাব উদ্দিন ১৮-১৯ শতকের লোক। মলকাবানুদের বাড়িতে গান করতেন। ঐ সময়ে দুই গায়ক করম আলী ও সিরাজ পালাগান করতেন। সরল গ্রামের জমিদার রাণী মলকাবানু ও জমিদার শেরমস্ত খাঁ প্রকাশ মনু মিয়ার বিয়ে নিয়ে ‘মলকাবানু হাঁলা’ রচনা করেন। মাস্টার আবদুল মান্নান চৌধুরীর উদ্ধারকৃত ‘মলকাবানু হাওলা’র অংশ বিশেষ তুলে ধরা হলোÑজলদী থানার মাঝেরে, এক সদাইগর রে/ সেইনা সদাইগরের কন্যা নামে মলখা বানুরে/
মলখা বানুর রূপরে ইন্দ্র ধনুর বরণ/ রেপরীরা নাচন করে মলখা বানুর সাথেরে/ মলখা বানুর সাত ভাই অভাইগ্যা মনু মিঞার কেহ নাই/ মলখার বিয়া হইব মনু মিঞার সাথেরে/ মনু মিঞার দেশেরে জোড়ের খাড়া বাজেরে/ যাইবরে মনু মিঞা হাউসের মলখার দেশেরে/ মনু মিঞা লইল সাজ মাথায় দিল সোনার তাজ/ যাইবরে মনু মিঞা হাউসের মলখা বানুর দেশেরে/ মলখা বানুর দেশে যাইতেরে বড় বড় দইরগ্যা আছেরে/ কেমতে যাইব মনু হাউসের মলখা বানুর দেশেরে/ মলখা বানুর দেশেরে নানান বাদ্য বাজেরে/ মলখার বিয়া হইল মনু মিঞার সাথেরে।
তথ্য সংগ্রহ : প্রফেসর ড. আবদুল করিম এর ইতিহাস ঐতিহ্য এবং বাঁশখালীর সাবেক নির্বাহী কর্মকর্তা সোনা মনি চাক্মার প্রসঙ্গ বাঁশখালী থেকে।
সুত্রঃ দৈনিক পূর্বকোণ
0 মন্তব্যসমূহ