বি,এন ডেক্স:
জীবনানন্দ দাশ রূপসী বাংলা অসাধারণ কবিতাংশ লিখেছে ‘পৃথিবীর সব ঘুঘু ডাকিতেছে হিজলের বনে; পৃথিবীর সব রূপ লেগে আছে ঘাসে;পৃথিবীর সব প্রেম আমাদের দু’জনার মনে; আকাশে ছড়ায়ে আছে শান্তি হয়ে আকাশে আকাশে।’ ঝরা পাতার সময় পেরিয়ে পাহাড়ের নব পল্লবে মুখরিত সবুজ বৃক্ষরাজি। ধূসর সময় পেরিয়ে প্রকৃতিতে ঘন সবুজ । বৃক্ষের ডালে কচি পাতার আগমন। বসন্তের এই সময়ে চির সবুজ কিংবা পাতা ঝরা বনে চোখে পড়ে বসন্তের অচেনা অতিথি সবুজ ঘুঘু। খাগড়াছড়ির পাহাড়ি জনপথ দীঘিনালায় রাবার বাগান এলাকায় চোখে পড়ে অদ্ভুত সুন্দর এই সবুজ ঘুঘু। পাতা ঝরা গাছের ডালের মিষ্টি রোদে দেখা মিলল এই অচেনা অতিথি। বিপন্ন না হলেও সবুজ ঘুঘু সচরাচর দেখা মিলে না। রাবার বাগানে পাখি তেমন দেখা না গেলেও এই সবুজ ঘুঘুকে রাবার সংলগ্ন এলাকায় দেখা যায় । এটিকে বাঁশ ঘুঘু বা রাজঘুঘুও বলে। এটি কলাম্বিডি গোত্রের অর্ন্তভুক্ত। সমগ্র পৃথিবীতে এদের দেখা মিলে। তবে এটি ভারতের তামিলনাড়ুর প্রাদেশিক পাখি হিসেবে স্বীকৃত।
১৯৬৩ সালে প্রতিষ্ঠিত আর্ন্তজাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘের (আই.ইউ.সি এন) তালিকায় সবুজ ঘুঘু আশংকাযুক্ত প্রাণীদের তালিকায় না থাকলেও আমাদের দেশে খুব বেশী দেখা যায় না । শিকারীদের উৎপাত ও ক্রমশ বন ও পাহাড় ধ্বংসের কারণে আবাসস্থল কমেছে সবুজ ঘুঘুর। বাংলাদেশ ,নেপালসহ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের এদের দেখা মিলে। বাংলাদেশের ২০১২ সালে বন্যপ্রাণী আইনেও এ প্রজাতি সংর িত । সবুজ ঘুঘুর পিঠের দিক এবং ডানা ধাতব সবুজ বা পান্না রঙের। সূর্যের আলো পড়লেই ঝকঝক করে পুরো অংশটি। মাথা এবং ঘাড় ধূসরাভ। ঠোঁট লাল এবং পা ও পাতা সিঁদুরে লাল। পেটের দিক গোলাপী ধূসর বা উজ্জ্বল গোলাপী কপাল ভ্রু এবং কাঁধ সাদা। । স্ত্রী জাতীয় ঘুঘুর রঙ প্রায় পুরুষের মত হলেও কিছুটা তফাৎ আছে। সবুজ ঘুঘু দৈর্ঘ্যে কম–বেশি ২৫ সেন্টিমিটার এবং ওজন ১৩০ থেকে ১৩৫ গ্রাম। ফিকে, কপাল ও ভ্রু ধূসর, মাথা এবং ঘাড় বাদামী, কাঁধে সাদা পট্টি নেই বা অস্পষ্ট। পিঠের উপর সাদা ও কালো মোটা পট্টি। লেজ ও ডানার ডগা কালো। বাচ্চা দেখতে অনেকটা মায়ের মতো হলেও এদের ঠোঁট বাদামি–ধূসর, কপালে দুটো ধূসর দাগ, লেজের দিকটা লালচে–বাদামি, গলা ও দেহের নিচের অংশের পালকের প্রান্ত হলদে। তবে এদের আয়ুষ্কাল সাত বছর। এই প্রজাতির ঘুঘুদের চিরসবুজ,বাঁশবন ও পাতাঝরা বৃক্ষের বাসিন্দা। এরা মাটিতে পড়ে থাকা ফল,শস্য দানা,ছোট পোকা মাকড় বিশেষ করে উইপোকা খায়। সবুজ বনের নির্জন জায়গায় এরা খাবার খুজে বেড়ায় । সবুজ ঘুঘুরা খুব সকালে ও বেলা শেষের দিকে খাবার খুঁজে বেড়ায়। বেশীর ভাগ সময় এরা বৃক্ষ ডালেই সময় কাটায় । এরা খুব সতর্ক ও লাজুক স্বভাবের। কোনো রকম শব্দ পেলেই দ্র্রুতবেগে উড়ে যায় বনের ভেতরে খুব কম উচ্চতায় বেশ দ্রুত গতিতে উড়তে পারে। সবুজ ঘুঘ এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর ডিম দেয় । ঘুঘু হলদে রঙের ডিম পাড়ে। তা দেওয়ার পর বার দিন পর ডিম ফোটে ১২ দিনে। সবুজ ঘুঘু অত্যন্ত দৃষ্টি নন্দন পাখি এবং এরা পরিবেশ সহায়ক । বিভিন্ন পোকা মাকড় খেয়ে ফসলের উপকার করে। ঘুঘুরা আমলকি, বরই, হরিতকি, বহেরা, লটকনসহ প্রভৃতি ওষুধি বৃক্ষের চারা গজানোর উপযোগী করে ফলের বীজ বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে দেয়। যা থেকে পরবর্তীতে চারা গজায় । এছাড়া ঘুুঘু পাখি পরো ভাবে কার্বন স্টক বাড়িয়ে জলবায়ু উষ্ণতা বৃদ্ধি রোধে ভূমিকা রাখে। শিকারীদের উৎপাত কমাতে ঘুঘু শিকার বন্ধে শাস্তি মুলক বিধানঞ্জ ও সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে জেলার দীঘিনালার বিভিন্ন স্থানে উপজেলা প্রশাসনের প থেকে বিল বোর্ড লাগানো হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘লোকাল গভমেন্ট সার্পোট প্রোগ্রামের আওতায় উপজেলার বিভিন্ন স্থানে সচেতনামূলক কার্যক্রম চালানো হয়েছে। এতে ঘুঘু পাখি খাওয়ার অভ্যাস ত্যাগ করা,পাখি শিকার ও বেচা–কেনা বন্ধ এবং জীব বৈচিত্র্য সংর ণের আহ্বান জানানো হয়।
সূত্রঃ দৈনিক আজাদী
0 মন্তব্যসমূহ