আজ খালেদা জিয়ার রায় : উত্তেজনায় কাঁপছে…

প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে টানা ১০ বছর ধরে চলা বহুল আলোচিত জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায় ঘোষণা হবে আজ বৃহস্পতিবার। রায়কে কেন্দ্র করে গত কয়েকদিনের বিভিন্ন কর্মকা সারাদেশে উদ্বেগউৎকন্ঠা ছড়িয়ে পড়েছে।
এতিমদের জন্য বিদেশ থেকে আসা কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলাটি ২০০৮ সালের জুলাই তদানীন্তন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে দায়ের করেছিল বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) দীর্ঘ তদন্তের পরে ২০০৯ সালের আগস্ট খালেদা জিয়া তার বড় সন্তান তারেক রহমানসহ জনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। অভিযোগপত্রে খালেদা জিয়া তারেক রহমান ছাড়া অন্য যাদের আসামি করা হয়েছে তারা হচ্ছেনপ্রাক্তন সাংসদ কাজী সালিমুল হক কামাল ওরফে ইকোনো কামাল ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের প্রাক্তন সচিব . কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমান।
এদিকে, রায়কে ঘিরে গত কয়েকদিন ধরেই বিএনপি শাসকদল আওয়ামী লীগের মধ্যে উত্তাপ বেড়েই চলেছে। রায় ঘোষণার তারিখ ঠিক হওয়ার পর থেকেই বেগম খালেদা জিয়া তার দলের জোটের বিভিন্ন স্তরের নেতাদের নিয়ে বৈঠকের পর বৈঠক করে তার বিরুদ্ধে সাজা হলে কি ধরনের প্রতিক্রিয়া জানাতে হবে তা ঠিক করে দিয়েছেন।
দলের নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, প্রথমদিকে বিএনপির সিদ্ধান্ত ছিল বিএনপি চেয়ারপারসনকে সাজা দেওয়া হলে ২০১৫ সালের মত আবার সহিংস আন্দোলনের পথে পা বাড়াবেন। কিন্তু, সরকারের তরফে পাল্টা প্রস্তুতি দেখে সহিংস কর্মসূচি থেকে সরে প্রতিবাদ, বিক্ষোভ হরতাল ডাকার প্রস্তুতি নেওয়া হয় বলে জানা গেছে। ইতিমধ্যে, সরকারের নির্দেশে গত কয়েকদিনে বিএনপির বিভিন্ন স্তরের কয়েক নেতাকে আটক করে পুলিশ। পুলিশী অভিযানের কারণে ঢাকাসহ গোটা দেশে উদ্বেগউৎকন্ঠাও ছড়িয়ে আছে।
অবস্থায় গতকাল বিকেলে এক সাংবাদিক সম্মেলনে খালেদা জিয়া জানালেন, তিনি যেকোনোও পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত রয়েছেন। খালেদা জিয়ার কথায়– ‘আমাকে জেল বা সাজার ভয় দেখিয়ে লাভ হবে না। খালেদা জিয়া কোনও অন্যায় করেনি। কোনও দুর্নীতিও করেনি। ন্যায়বিচার হলে আমি খালাস পাবো।
এদিকে, এই রায়কে ঘিরে আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকার কথা জানিয়েছে আওয়ামী লীগ বিএনপি। আইনকে শ্রদ্ধা জানিয়েই মামলার রায় পর্যবেক্ষণ করার কথাও বলেছেন দল দুটির নেতারা। কিন্তু দুদলই তলে তলে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচির প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে। সব কারণেই সারাদেশে আতঙ্কের ছায়া ঘিরে ফেলেছে। মুখে যাই বলুক না কেন, রায়কে ঘিরে বাংলাদেশের রাজনীতির মাঠ আবারও হয়ে উঠেছে উত্তপ্ত। যুদ্ধংদেহী অবস্থান নিয়ে নানা ঘোষণাও গত কয়েকদিন ধরে দিয়ে চলেছেন আওয়ামী লীগবিএনপির নেতারা। গত দুদিনে পুলিশের ব্যাপক তল্লাশির মুখে রায় ঘোষণার একদিন আগেই ফাঁকা হয়ে পড়েছে ঢাকার রাস্তাঘাট। ঢাকায় ঢোকার প্রতিটি পথেই কড়া তল্লাশি চলছে দুদিন ধরে। হোটেলমোটেলও বাদ যায়নি পুলিশের তল্লাশির তালিকা থেকে। সন্ধ্যা নেমে আসার পরেই দিন ঢাকা, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জেলা শহরে সীমান্তরক্ষা বাহিনী বিজিবিকে টহলকাজে নামানো হয়েছে। সরকারের এমন কড়া পদক্ষেপের মুখে বিএনপি সূত্রের খবর হচ্ছে, তারা বৃহস্পতিবার তেমন কোনও সহিংস কর্মসূচিতে জড়াবে না। এমনিতেই দলটির বহু নেতা কারাগারে। তারপরে আবার নতুন করে সহিংসতায় জড়ালে বাকি নেতাদেরও জেলে যেতে হতে পারে। দলীয় সূত্রর খবর হচ্ছেতাই দলটির চিন্তা ভাবনা হচ্ছে, পাল্টা শক্তি প্রয়োগের পরিবর্তে হরতাল আহবান করে সরকারের বিরুদ্ধে জনগণের সমর্থন আদায় করার।
দলটির নেতারা জানান, তাদের আরও আশঙ্কাখালেদা জিয়াকে জেলে রেখে তার নেতৃত্বাধীন বিএনপি ভেঙ্গে দিতে পারে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। গতকাল খালেদা জিয়ার বক্তব্যেও সেই কথা পরোক্ষভাবে উঠেও এসেছে। খালেদা জিয়া বলেছেন, ‘আমাকে আপনাদের থেকে বিচ্ছিন্ন করার চেষ্টা হলেও বিশ্বাস করবেন, আমি আপনাদের সঙ্গেই আছি।
আইনজীবীরা মনে করেন, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের দুই কোটি ১০ লাখ টাকা আত্মসাতের মামলায় খালেদা জিয়া দোষী সাব্যস্ত হলে তার সর্বোচ্চ যাবজ্জীবন কারাদহতে পারে। আশঙ্কায় খালেদা জিয়া গতকাল তার দলের নেতাকর্মীদেরনিয়মতান্ত্রিক শান্তিপূর্ণআন্দোলনের নির্দেশনা দিয়েছেন।
কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, আসলেই কি নিয়মতান্ত্রিক শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের পথে হাটবে বিএনপি ?
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের কথায়– “মামলা হচ্ছে আদালতের বিষয়, আদালতের অঙ্গণ থেকে মামলা কেন রাজনীতির মাঠে চলে এল? ওবায়দুল কাদের মামলার প্রসঙ্গ টেনে বলেন, এবারই প্রথম বিএনপি আগাভাগে জানিয়ে দিল রায় নেতিবাচক হলে বিএনপি তা মেনে নিবে না। কি অদ্ভুত যুক্তি তাদের!’ ওবায়দুল কাদের জানিয়েছেন, খালেদা জিয়ার রায় ঘিরে বিএনপিনাশকতামূলক কর্মকাঘটাতে সরঞ্জাম জমাকরেছে বলে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে দেশজুড়ে নিরাপত্তা বাহিনীকে কঠোর অবস্থানে থাকার নির্দেশ সরকার।
সারাদেশে ৪৩ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন
রাজধানীসহ সারাদেশে ৪৩ প্লাটুন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) মোতায়েন করা হয়েছে। গতকাল বুধবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাজধানী ঢাকায় ২০ প্লাটুন বিজিবি সদস্য টহল দিচ্ছে। এছাড়া বিভিন্ন জেলা শহরে ২৩ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।
বিজিবির জনসংযোগ কর্মকর্তা মোহসিন রেজা জানিয়েছেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে জেলা প্রশাসনের অনুরোধে বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। তিনি বলেন, এর আগে দেশের সাত জেলায় বিজিবি মোতায়েন করা হয়। এসব জেলায় জেলা প্রশাসনের অনুরোধে বিজিবি নামানো হয়। জেলাগুলোর মধ্যে সিরাজগঞ্জ, বগুড়া, নারায়ণগঞ্জ জয়পুরহাটে প্লাটুন করে, নাটোর লক্ষ্মীপুরে দুই প্লাটুন করে, নোয়াখালী চাঁদপুরে এক প্লাটুন করে বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে
সুত্রঃদৈনিক পূর্বকোণ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ