‘চেয়ারম্যান বদরুদ্দিনের মদদে প্রকাশ্যে চলাফেরা করতাম’

বি,এন ডেস্কঃ
বাঁশখালীর উপকূলীয় ডাকাত জসিম উদ্দিন প্রকাশ জসিম্যাকে নিয়ন্ত্রণ করতেন স্থানীয় খানখানাবাদের চেয়ারম্যান মো. বদরুদ্দিন চৌধুরী। তাই সে আলোচিত বাঁশখালীর চাঞ্চল্যকর ১১ হত্যা, পুলিশের ওপর হামলা, ডাকাতি মামলাসহ অন্তত ৮টি মামলার ওয়ারেন্টভুক্ত পলাতক আসামি হয়েও গ্রামে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াতো। অস্ত্রের মহড়া দিয়ে ডাকাতি ছাড়াও নির্মিতব্য বেড়িবাঁধের কাজে চাঁদাবাজি সন্ত্রাসী ঘটনা ঘটিয়ে চলা তার সহজ ব্যাপার ছিল। যে কোন অপরাধ ঘটানোর পর পরিস্থিতি বেগতিক দেখলে সহজেই ইঞ্জিন বোট নিয়ে বঙ্গোপসাগরে গা ঢাকা দিত। পুরো বাঁশখালীজুড়ে ডাকাতি ১১ হত্যার জন্য জসিম্যার ভয়ংকর ভীতি প্রচার থাকলেও স্থানীয় চেয়ারম্যানের দেহরক্ষী হিসেবে প্রকাশ্যে চলাফেরা করতো। এছাড়াও বর্তমান চেয়ারম্যানের ভাই খানখানাবাদ ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুর সবুর
চৌধুরীও ১১ হত্যার আসামি। আব্দুর সবুর চৌধুরীর চেয়ারম্যান আমলেই ডাকাত জসিম ডাকাতিতে হাতেখড়ি নেয়। বাঁশখালীর সাধনপুরে ২০০৩ সালে শিশু নারী পুরুষসহ ১১ জনকে পুড়িয়ে হত্যার অভিযোগে খানখানাবাদের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুর সবুর চৌধুরী ডাকাত জসিম উদ্দিন প্রকাশ জসিম্যা গ্রেপ্তার হয়। এই নিয়ে এলাকায় স্বস্তি ফিরে আসায় গ্রামে গ্রামে মিষ্টি বিতরণ চলছে।
খানখানবাদ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. বদরুদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘আমি বিপুল ভোটে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি। ভালখারাপ প্রত্যেক মানুষের প্রতিনিধি। তবে আমি চেয়ারম্যান হয়ে খারাপ মানুষগুলোকেও ভাল করার চেষ্টা করছি। যার কারণে আমার মাত্র মাসের চেয়ারম্যান আমলে কোন ভয়াবহ অপরাধ হয়নি। তবে জসিমের সাথে পরিচয় আছে তবে সে আমার দেহ রক্ষী নয়।তিনি মামলার আসামিকে নিয়ে কেন ঘুরে বেড়াতেন ব্যাপারে বলেন, ‘মামলার আসামি পলাতক নাকি জামিনপ্রাপ্ত তা পুলিশের দেখার বিষয় আমার বিষয় নয়
খানখানাবাদ ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুর সবুর চৌধুরী বলেন, ‘আমি রাজনৈতিক কারণে ১১ হত্যার আসামি হয়েছিলাম। ডাকাত জসিমও ১১ হত্যার আসামি। তাই মামলাজনিত কারণে পরিচয় আছে। তাকে প্রশ্রয় দেয়ার মত কোন ঘটনা ঘটাইনি।
থানা পুলিশ জনতার কবল থেকে গ্রেপ্তারের সময় ডাকাত জসিম উদ্দিন প্রকাশ জসিম্যা স্থানীয় সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি বর্তমান চেয়ারম্যান বদরুদ্দিন ভাইয়ের সহযোগিতা পেয়েছি বলে ওয়ারেন্টভুক্ত হয়েও প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াতাম। তবে চেয়ারম্যানের সাথে থাকলেও বড় কোন অপরাধ ঘটাইনি। আমার অতীত রের্কডের কারণে আমাকে সবাই খারাপ বলে। আমি এখন ভাল মানুষ।
স্থানীয় বাসিন্দা জানে আলম, রহিমদাদ, আবু নবীসহ অনেকে বলেন, জসিম্যার কাছে ভারী অস্ত্র রয়েছে। সে এতদিন পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে অস্ত্রের মহড়া দিয়ে গ্রামে ঘুরে বেড়াতো। তাই গ্রামবাসীও ভয়ে মুখ খুলত না। গত শুক্রবার অস্ত্র ছাড়া দোকানে পেয়ে গ্রামবাসী তাকে আটক করতে সক্ষম হয়েছে। তাকে রিমান্ডে নিলে ব্যাপক অস্ত্র উদ্ধার হবে। ১১ হত্যা মামলার বাদী বিমল শীল বলেন, ‘ ডাকাত জসিম্যা আমাকেও হুমকি দিয়েছিল মামলা থেকে তার নাম বাদ দিতে। রকম ভয়াবহ কয়েকজন আসামির কারণে আমরা এখন এলাকাছাড়া।বাঁশখালী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. সালাহ উদ্দিন বলেন, ‘ডাকাত ১১ হত্যার আসামি জসিম্যার বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলো বিচারাধীন। তাই তাকে ওই মামলাগুলোতে গ্রেপ্তার দেখিয়ে চট্টগ্রাম কারাগারে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। এলাকার ওপর নজর রাখা হয়েছে। তাকে মদদদাতা ব্যক্তিদের ওপরেও নজরে রাখা হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ১৬ মার্চ শুক্রবার ১১ হত্যার অন্যতম আসামি ডাকাত মো. জসিম উদ্দিন প্রকাশ জসিম্যা (৩৮) কে উত্তেজিত জনতা গণপিটুনি দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করে। সে খানখানাবাদ ইউনিয়নের ডোংরা গ্রামের মৃত আব্দুর শুক্কুরের পুত্র। পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করার পর এলাকায় স্বস্তি ফিরে এসেছে। সে দীর্ঘদিন ধরে প্রকাশ্যে এলাকায় অস্ত্র মহড়া দিয়ে নানাভাবে মানুষকে ভয়ভীতি দেখিয়ে ডাকাতি, সন্ত্রাস চাঁদাবাজি করে আসছিল
সুত্রঃ দৈনিক পূর্বকোণ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ