পিতা মুজিবের হাতে গড়া সংগঠনকি এখন তাঁহার মত আছে?

শান্তিনগর মোড়ে এক ঘন্টা যাবৎ দাঁড়িয়ে থেকেও গাড়ি না পেয়ে বাংলা মোটরের দিকে হেঁটে আসছিলাম আমি। পনেরো বিশজন যুবক সামনে থেকে মিছিল নিয়ে আসছে জয় বাংলা স্লোগানে।মিছিলটা সামনে আসতেই প্রত্যেকে আমাকে ঘিরে ফেলে!ব্যাস!যা হবার তাই হয়েছে।কলেজ পড়ুয়া একজন ছাত্রীকে এরা প্রত্যকে মিলে হ্যারেস করছে।অনেকেই সেটার ভিডিও ধারণ করছে।আমার কলেজ ড্রেসের বোতামগুলে ছিড়ে ফেলে আমার শরীরে হাত দিয়ে আমাকে থাপড়াইতেছে! আমার দুইটা হাত এতোগুলো হাত থেকে আমার শরীরকে রক্ষা করতে পারেনি! পরবর্তীততে একটি পুলিশ অফিসার এই মলেস্টিং চক্রে ঢুকে উদ্ধার করে আমাকে একটা বাসে তুলে দেয়।
 ঘটনাটা গতকালের!৭ই মার্চের স্লোগানে উজ্জীবিত নামধারী কিছু ছাত্রলীগই এই ঘটনা ঘটায় "অদিতি বৈরাগী" নামের এক মেয়ের উপর!
যেই ৭ ই মার্চ কিনা বাঙালি জাতির মুক্তির ডাক সেই দিনেই এরকম হীন কাজ সেই মুক্তির ডাক দাতার প্রতি অমর্যাদা নয়কি? 
একসময়ের বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের এক মূর্ত প্রতীকের নাম বাংলাদেশ ছাত্রলীগ।আজ ধরতে গেলে সেই সংগঠনটি তার সুনাম,ঐতিহ্য হারিয়ে সন্ত্রাসে পরিণত হচ্ছে।
ইতিহাস উল্টালেই বাংলাদেশ ছাত্রলীগ সংগঠনটার সোনালি অতীত খোঁজে পাবেন।একেবারে স্বর্ণের মত জ্বল জ্বল করছে এখনো সেই অতীত। সেই সুসংগঠিত, সুনামধারী সংগঠনটির বর্তমান অবস্হা আর অতীতের অবস্হার সাথে আকাশ-পাতাল বেশ কম!
কেনো জানেন? 
আজকাল এই সংগঠনে জড়িত কিছু কিছু নামধারী ছাত্র দেশের স্বার্থে বিন্দুমাত্র ভুমিকা না রেখে নিজ স্বার্থ রক্ষার জন্য উঠে পরে লেগেছে। ছাত্রলীগ নামটা বিক্রি করে পদে পদে জোর খাটাচ্ছে।  
ছাত্র সংগঠনের মূল কাজ কি? 
  দেশের ছাত্র সমাজের পক্ষে কাজ করা,একটি সুষ্ঠু সুন্দর ছাত্র সমাজ উপহার দেয়া,নীতি বিরোধী কাজ থেকে সর্বদা নিজেকে অব্যাহত রাখা।বিন্দু পরিমাণ নিজ স্বার্থকে প্রাধান্য না দিয়ে দেশের স্বার্থে,দেশের ছাত্র সমাজের উন্নয়নের লক্ষ্যে কাজ করে দেশকে একটা মেধাবী জাতিতে পরিণত করতে ভূমিকা রাখা। কিন্তুু চোখ বুলিয়ে দেখলেই বুঝতে পারবেন যে দেশের কোনো ছাত্র সংগঠনই সেই লক্ষ্য নিয়ে তেমনটা কাজ করছেনা। লক্ষ্য কেবল তাদের ক্ষমতা আর অর্থ। 
অথচ নিবন্ধন বহিতেই সেই নীতির সীমাবদ্ধতা রয়ে গেছে। বাস্তবে সেই নীতির বাস্তবায়ন আদৌ পর্যবেক্ষণ দেখিনা। যার কারণে দেশে নানান অস্হিতিশীলতা, অরাজকতা লেগেই আছে। হিসাব করলেই বুঝতে পারবেন দেশের প্রায় হীন কর্মকান্ডগুলোতে কোনো না কোনে ছাত্র সংগঠন জড়িত আছে। এর ফলাফল হিসেবে দেশের রাজনীতির প্রতি সাধারণ শিক্ষিত সমাজের একটা বড় ধরণের ঘৃণাবোধ চলে আসছে।
   ৭ ই মার্চের মতো এরকম ঐতিহাসিক দিনে জয় বাংলা স্লোগানে একটা কলেজ ছাত্রীকে শারীরিক নির্যাতন নিশ্চয় বড় ধরণের ঘৃণিত কাজ নয়কি? পিতা মুজিবের হাতে গড়া সংগঠন "বাংলাদেশ ছাত্রলীগের" অধঃপতনের নমুনা নয়কি?  
জয় বাংলা স্লোগানে রাজপথ কাঁপালেই যেমন দেশপ্রেমী হওয়া যায়না তেমনি বঙ্গবন্ধুর স্লোগান দিলেই কেবল মুজিব প্রেমী হওয়া যায়না। দেশকে ভালোবাসলে যেমন দেশের স্বার্থকে প্রাধান্য দিতে হয়,দেশের মানুষকে সুরক্ষায় রাখতে হয় তেমনি বঙ্গবন্ধুকে ভালোবাসতে হলে বঙ্গবন্ধুর নীতি চর্চা করে কিছুটা হলেও নিজের মাঝে ধারণ করতে হয়।
"ফিরে আসুক অতীতের সোনালি রাজনীতি। নিপাত যাক রাজনীতির নামে সন্ত্রাসবাদের।"
লেখকঃ সব্যসাচী ইমন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ