- আহত আরও তিনজনকে ঢাকায় আনা হলো।
- আহত ব্যক্তিদের মধ্যে পাঁচজন এখনো নেপালে আছেন।
- স্বামী ও মেয়ে কোথায় বার বার জানতে চাইছেন আলামুন নাহার অ্যানি
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের কেবিনে
তখন একজন নার্স, আলামুন নাহার অ্যানি আর তাঁর বাবা ও একজন আত্মীয়। অ্যানি
তাঁর বাবার কাছে জানতে চাইছেন তাঁর স্বামী ফারুক হোসেন প্রিয়ক ও মেয়ে
প্রিয়ন্ময়ী কেমন আছে, কোথায় আছে। অ্যানিকে বলা হলো, প্রিয়ক ও প্রিয়ন্ময়ীকে
চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে পাঠানো হয়েছে।
গতকাল শুক্রবার বিকেলে কাঠমান্ডুতে উড়োজাহাজ দুর্ঘটনায় আহত যে তিনজনকে ঢাকা
মেডিকেলে ভর্তি করা হয়েছে, অ্যানি তাঁদের একজন। অন্য দুজন হলেন মেহেদী
হাসান ও তাঁর স্ত্রী কামরুন নাহার। এই তিনজন আত্মীয়। বিমান দুর্ঘটনায় যে ৪৯
জন মারা গেছেন, তার মধ্যে প্রিয়ক ও প্রিয়ন্ময়ী আছে। প্রিয়কদের বাড়ি
গাজীপুরের শ্রীপুরে।
অ্যানিকে জানানো হয়নি যে উড়োজাহাজ দুর্ঘটনায় তাঁর স্বামী ও তাঁর মেয়ে মারা গেছে। তাই বারবারই মেয়ে আর স্বামীর কথা জানতে চাইছেন তিনি।
ইউএস-বাংলা উড়োজাহাজ দুর্ঘটনায় আহত এই তিন যাত্রীকে ঢাকা বিমানবন্দর থেকে
সরাসরি ঢাকা মেডিকেলে আনা হয় গতকাল বিকেল পৌনে পাঁচটায়। তাঁদের বার্ন
অ্যান্ড প্লাস্টিক ইউনিটের কেবিনে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এর আগে গত
বৃহস্পতিবার আহত আরেক যাত্রী শেহরিন আহমেদ এই ইউনিটে ভর্তি হন। এ নিয়ে
দুর্ঘটনায় আহত চারজনের ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসা হচ্ছে।
গতকাল আসা তিনজনকে প্রাথমিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও ভর্তি শেষে তাৎক্ষণিক সংবাদ
ব্রিফিংয়ের আয়োজন করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ব্রিফিংয়ে বার্ন ও প্লাস্টিক
সার্জারি ইউনিটের সমন্বয়কারী অধ্যাপক সামন্ত লাল সেন বলেন, ভর্তি হওয়া
যাত্রীরা আশঙ্কামুক্ত নন।
এ সময় কথা বলেন ওই তিন আহত যাত্রীর আত্মীয় এজাজ আহমেদ। এজাজ দুর্ঘটনার পর
নেপালে গিয়েছিলেন এবং একই সঙ্গে ঢাকায় ফিরেছেন। এজাজ বলেন, অ্যানি এখনো
জানেন না যে তাঁর স্বামী ও মেয়ে দুর্ঘটনায় মারা গেছে। অ্যানি পাঁচ মিনিট
পরপর তাঁদের কথা জানতে চাইছেন। অ্যানিকে জানানো হয়েছে তাঁর স্বামী ও মেয়েকে
চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে পাঠানো হয়েছে।
এজাজ আহমেদ আরও বলেন, উড়োজাহাজে মেহেদী হাসান ও কামরুন নাহার সামনের আসনে
ছিলেন। তাঁদের পেছনে ছিলেন অ্যানি, প্রিয়ক ও প্রিয়ন্ময়ী। দুর্ঘটনার পর
মেহেদী কামরুন ও অ্যানিকে নিয়ে বের হন। প্রিয়ক মেয়ে প্রিয়ন্ময়ীকে নিয়ে বের
হতে পারেননি।
ব্রিফিংয়ের পর চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মেহেদী হাসানের হাড়ে
চিড় ধরা পড়েছে। কামরুন নাহার দগ্ধ হওয়ার পাশাপাশি শরীরে তীব্র যন্ত্রণা
নিয়ে এসেছেন। তাঁর আরও পরীক্ষা হবে। দগ্ধ ও আঘাত দুটোই আছে আলামুন নাহার
অ্যানির।
গতকাল সন্ধ্যায় এসব রোগীকে দেখতে হাসপাতালে গিয়েছিলেন বেসামরিক
বিমানমন্ত্রী শাহজাহান কামাল। আহত ব্যক্তিদের দেখার পর অপেক্ষমাণ
সাংবাদিকদের তিনি বলেন, নেপালের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন দুর্ঘটনার তদন্ত
হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বিষয়টি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছেন। এ থেকে দুর্ঘটনার কারণ
বেরিয়ে আসবে। সবাই তা জানবে। তিনি বলেন, আহত রোগীদের ও নিহত ব্যক্তিদের
ডিএনএ পরীক্ষা শেষে দ্রুত দেশে পাঠানোর ব্যাপারে নেপালের প্রধানমন্ত্রী ও
সেনাপ্রধানের সঙ্গে তাঁর (বিমানমন্ত্রীর) কথা হয়েছে।
বিমানমন্ত্রী কথা বলার সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের
মহাপরিচালক আবুল কালাম আজাদ। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আহত ব্যক্তিদের মধ্যে
পাঁচজন এখনো নেপালে আছেন। তাঁদের একজন নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ)
আছেন। একজনকে আইসিইউ থেকে সাধারণ শয্যায় গতকাল স্থানান্তর করা হয়েছে। বাকি
তিনজন রোববার ঢাকায় আসবেন।
সূত্রঃ প্রথম আলো
0 মন্তব্যসমূহ