বি,এন ডেস্কঃ
গঠনতন্ত্রের বাইরে গিয়ে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিতে একাধিক
শিল্পীকে পূর্ণ সদস্যপদ দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ২০১৬-১৭ মেয়াদের
শাকিব-অমিত কমিটি থাকাকালীন এ অনিয়ম হয়েছে বলে জানা যায়। ২০১৭ সালের ৫ মে
নির্বাচনের ঠিক আগে ৮২ জনকে নতুন পূর্ণ সদস্যপদ দিয়ে ভোটাধিকার দেয়
শাকিব-অমিত কমিটি। এ অভিযোগ শিল্পী সমিতির বর্তমান কমিটির।
অভিযোগের প্রেক্ষাপটে শিল্পী সমিতির মিশা ও জায়েদ কমিটি (২০১৭-১৮)
দায়িত্ব নেওয়ার এক বছরের মাথায় ‘সদস্য যাচাই-বাছাই’ শুরু করেছে। গত ২৮
ফেব্রুয়ারি চিঠির মাধ্যমে ১২০ জন সদস্যকে ডাকা হয়। আগামী ১০ মার্চ আরও ১৪০
জনকে ডাকা হবে। কাজটি সমিতির উপদেষ্টামণ্ডলী ও কার্যকরী পরিষদ যৌথভাবে
করছে। সেখানেই শাকিব-অমিত কমিটির বিরুদ্ধে গঠনতন্ত্র লঙ্ঘন করে নতুনভাবে
পূর্ণ সদস্যপদ দেওয়ার অনিয়ম ধরা পড়েছে।
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির গঠনতন্ত্রের ৫ (ক) ধারায় আছে, ‘বাংলাদেশে
মুক্তিপ্রাপ্ত ন্যূনতম পাঁচটি পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রে অবিতর্কিত
গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করিলে তিনি পূর্ণ সদস্যের জন্য আবেদন করিতে
পারিবেন, কার্যকরী পরিষদে তাঁর আবেদন গৃহীত হইলেই তিনি পূর্ণ সদস্যপদ লাভ
করিবেন এবং তিনি ভোটাধিকারসহ কার্যকরী পরিষদের যেকোনো পদের জন্য যোগ্য
বলিয়া বিবেচিত হইবেন। পূর্ণ সদস্যপদের জন্য আবেদনকারীকে পেশাগতভাবে অবশ্যই
চলচ্চিত্র অভিনয়শিল্পী হইতে হইবে।’
গত বছর নতুন করে যে ৮২ জনকে পূর্ণ সদস্যপদ দেওয়া হয়েছে। তাঁদের মধ্যে
নায়িকা বুবলী, মিষ্টি জান্নাত, অধরা খান, ডি এ তায়েব, শান, প্রিন্স, শ্রাবণ
খান, শিল্পী সরকার, শরীফ চৌধুরী, তিতান চৌধুরীসহ অনেককেই গঠনতন্ত্র না
মেনে পূর্ণ সদস্য করা হয়েছে। যে সময় তাঁদের সদস্য করা হয়, সে সময় তাঁদের
কারও কারও একটি ছবিও মুক্তি পায়নি, কারোর একটি-দুটি করে ছবি মুক্তি পেয়েছে।
এখনো পর্যন্ত একটি ছবিও মুক্তি পায়নি নতুন নায়িকা অধরা খানের। তিনিও
শিল্পী সমিতির সদস্য। এ নিয়ে অধরা বলেন, ‘যে সময় আমি সদস্য হওয়ার জন্য
আবেদন করি, তখন চারটি ছবিতে চুক্তিবদ্ধ হয়ে দুটি ছবির শুটিংও করছিলাম। আমি
সদস্য হওয়ার জন্য ২৫ হাজার টাকা জমা দিয়ে আবেদন করেছিলাম। আবেদন গ্রহণ করে
সদস্য করা হয়েছে।’
মিষ্টি জান্নাতও দুটি ছবি মুক্তি পাওয়ার পর ২৫ হাজার টাকা দিয়ে সদস্যপদ
পাওয়ার কথা বলেছেন। তিনি বলেন, ‘গঠনতন্ত্রমতো হয়েছে কি না, জানি না।
আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সদস্যপদ দেওয়া হয়েছে।’
অনিয়মের অভিযোগ প্রসঙ্গে আগের শাকিব-অমিত কমিটি ও বর্তমান কমিটির
সহসভাপতি নাদির খান বলেন, ‘এটি বড় অনিয়ম হয়েছে। কমিটির সাধারণ সম্পাদকসহ
কয়েকজনের সিদ্ধান্তেই হয়েছে। এসব কাজে আমাকে স্বাক্ষর করতে বলা হয়েছে,
করেছি।’
সাবেক কমিটির কোষাধ্যক্ষ কমল পাটেগারও কাজটি নিয়মবহির্ভূত হয়েছে বলে
স্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘সেই সময় কারও কারও একটি-দুটি ছবি মুক্তি পেয়েছে।
আবার কেউ কেউ ছবির শুটিং করছিলেন। ছবির মূল নায়ক, নায়িকা হিসেবেই তাঁদের
পূর্ণ সদস্য করা হয়েছে। সমিতির ফান্ডে টাকা জমা দিয়ে তাঁরা পূর্ণ সদস্যপদ
নিয়েছেন। এটি করা হয়েছে কার্যকরী কমিটির সিদ্ধান্তে।’ কিন্তু এটি গঠনতন্ত্র
লঙ্ঘন নয় কি? তিনি বলেন, ‘আমি তো কোষাধ্যক্ষ। টাকা জমা নিয়ে রসিদ দেওয়া
আমার কাজ। এ বিষয়টি সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ভালো বলতে পারবেন।’
এ ব্যাপারে আগের কমিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অমিত হাসানকে একাধিকবার
ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি। সাবেক সভাপতি শাকিব দেশের বাইরে থাকায় তাঁর
সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
বর্তমান কমিটির সভাপতি মিশা সওদাগর বলেন, ‘এটা অন্যায়। গঠনতন্ত্রবিরোধী। যে টাকাটা নেওয়া হয়েছে, সেটাও নিয়মবহির্ভূত।’
নিয়মবহির্ভূতভাবে হওয়া পূর্ণ সদস্যদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে
কি না, জানতে চাইলে বর্তমান সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খান বলেন, ‘তাঁদের
সদস্যপদ বাতিল হবে। তা ছাড়া অনেকে আছেন, যাঁরা অন্য পেশায় চলে গেছেন,
তাঁরাও বাদ পড়বেন। যাঁরা শিল্পী সমিতির সদস্যপদের অপব্যবহার করছেন, তাঁদের
বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সব মিলে ২০০ জন বাদ পড়তে পারেন।’
0 মন্তব্যসমূহ