শংখ নদীর ওপর নির্মিত তৈলারদ্বীপ সেতু দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ের পর
ইজাদারমুক্ত হওয়ার কথা থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। উচ্চ আদালতের নির্দেশের
পরেও আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে জোরপূর্বক আদায় হচ্ছে টোল। সেতুটি
ইজারামুক্ত করার দাবি জানিয়ে আসছিলেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক)
সাবেক মেয়র ও সাবেক সংসদ সদস্য মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী।
শুক্রবার (২ মার্চ) সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, তৈলারদ্বীপ সেতুর উত্তর
পার্শ্বে হাতে লাঠিসোটা নিয়ে কিছু তরুণ যুবক জোরপূর্বক আদায় করছে টোল।
কাউকে দেওয়া হচ্ছে টোলের রশিদ, আবার কেউকে দেওয়া হচ্ছে বকুনি। ছাপানো
রঙ্গীন টোলের রশিদ দেওয়া হলেও নেই কোন আদায়কারীর স্বাক্ষর বা সড়ক বিভাগের
কোন সিল। রঙ্গীন টোলের রশিদের ইজারাদার মেসার্স এস.এফ.আর. এন্টারপ্রাইজ
লেখা থাকলেও নেই কোন রশিদ বই নং ও রশিদ ক্রমিক নং। টোল আদায়কারীরা প্রত্যেক
গাড়ি থেকে জোরপূর্বক ইচ্ছা অনুযায়ী টাকা আদায় করছে।
এক সিএনজি ড্রাইভার বলেন-‘ভাই আমি কাল ৭ টার সময় পারাপার করছি ১০ টাকা
দিয়ে। আর দুপুর ১১টার দিকে আমি ১৫ টাকা দেব কেন বলাতেই উত্তেজিত হয়ে গাড়ি
পাশে দাঁড় করিয়ে দেওয়া হয় এবং ড্রাইভারকে লাঠির ভয় দেখায়। আর কোন প্রাইভেট
গাড়ি, পর্যটকবাহী গাড়ি ও অন্যাকোন রোডের গাড়ি পারাপারে দিকে দ্বিগুন ও
তিনগুন টোল মাসুল। এই অবস্থা করে টোল আদায় করছে তারা। তাদের এই অবস্থায়
সু-সজ্জিত লাঠিসোটা দেখে সাধারণ মানুষের প্রতিবাদের ভাষা নেই। ৪০ লাখ
মানুষের যোগাযোগের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ‘তৈলারদ্বীপ সেতুতে’
(আনোয়ারা-বাশঁখালীর সংযোগস্থল) অনাকাঙ্গিত ও অন্যায্য টোল আদায় করা হচ্ছে।
এ নিয়ে হাইকোর্টের তরফে একটি আদেশ আসে। আদেশে সেতুতে টোল আদায়ে টেন্ডার
প্রক্রিয়ার যাবতীয় কার্যক্রম ৬ মাসের জন্য স্থগিত করেছিলেন হাইকোর্ট। এ ৬
মাসের স্থগিতাদেশ শেষ হলে সম্প্রতি আরো ৬ মাসের স্থগিতাদেশ নেয়া হয় আদালত
থেকে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই আর টেন্ডারে যেতে পারছে সড়ক ও জনপথ, দোহাজারি সড়ক
বিভাগ।
তার ওপর তৈলারদ্বীপ সেতুতে অযাচিত টোল আদায় মানুষের যন্ত্রণা ও হয়রানির কারণ হয়ে আছে দীর্ঘ একযুগের বেশি সময় ধরে। এ অবস্থায় সেতুতে টোল আদায় প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ বাতিল হওয়া উচিৎ।
তার ওপর তৈলারদ্বীপ সেতুতে অযাচিত টোল আদায় মানুষের যন্ত্রণা ও হয়রানির কারণ হয়ে আছে দীর্ঘ একযুগের বেশি সময় ধরে। এ অবস্থায় সেতুতে টোল আদায় প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ বাতিল হওয়া উচিৎ।
এ নিয়ে সাবেক মেয়র সর্বশেষ গত ১৩ আগস্ট ২০১৭ সওজ দোহাজারী সড়ক বিভাগ,
চট্টগ্রাম-এর নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ তোফায়েল মিয়া স্বাক্ষরিত একটি
চিঠি বর্তমান ইজাদারকে দেয়া হয়। এ চিঠিতে বলা হয়েছে,
পটিয়া-আনোয়ারা-বাঁশখালী-টইটং সড়কের ২৩তম কিলোমিটার শংখ নদীর ওপর তৈলারদ্বীপ
সেতুতে পারাপারকারী যানবাহন হতে মাশুল আদায়ে মেসার্স রাজ্জাক
এন্টারপ্রাইজকে এক বছরের জন্য ইজাদার নিয়োগ করা হয়। কার্যাদেশ মোতাবেক টোল
আদায়ের মেয়াদ ২০ আগস্ট ২০১৭ রাত ১২টায় শেষ হচ্ছে। তাই সেতুটি ২০ আগস্ট ২০১৭
রাত ১২টা ১ মিনিটে উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী সওজ, সড়ক উপ-বিভাগ, পটিয়ার নিকট
হস্তান্তরের জন্য বলা হয়।
প্রসঙ্গত: টোলমুক্ত সেতু প্রতিষ্ঠায় হাইকোর্টে রিট আবেদন করেছিলেন
মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী। রিটের প্রেক্ষিতে আদালত সেতুর টেন্ডারে ৬ মাসের
স্থগিতাদেশ দিয়েছিলেন। একই রুলও দেয়া হয়েছিল। কিন্তু সরকারের সংশ্লিষ্ট
বিভাগ সেই রুলের জবাব দাখিল করেননি হাইকোর্টে।
শংখ নদীর ওপর নির্মিত দোহাজারি সেতু, চন্দনাইশ সেতু, সাতকানিয়া ডলু সেতু ও খোদারহাট সেতুতে কোন টোল আদায় করা হয় না। ব্যতিক্রম শুধু তৈলারদ্বীপ সেতু।
শংখ নদীর ওপর নির্মিত দোহাজারি সেতু, চন্দনাইশ সেতু, সাতকানিয়া ডলু সেতু ও খোদারহাট সেতুতে কোন টোল আদায় করা হয় না। ব্যতিক্রম শুধু তৈলারদ্বীপ সেতু।
সুত্রঃ নিউজ ভিশন ৭১
0 মন্তব্যসমূহ