ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলুন : মির্জা ফখরুল

বিএন ডেস্কঃ
ক্ষমতাসীন সরকারকে ফ্যাসিস্ট এবং দানব আখ্যা দিয়ে তাদের বিরুদ্ধে আবারো জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি শনিবার বিকেলে এক সমাবেশে এই আহ্বান জানিয়ে বলেন, পাকিস্তান আমলে আইয়ুব খানের বিরুদ্ধে ১২ বছর আন্দোলন হয়েছে। স্বৈরাচার এরশাদ সরকারের বিরুদ্ধে দীর্ঘ ৯ বছর আন্দোলন হয়েছে। সেস ময় একটি জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠা হয়েছিল বলেই তাদেরকে ক্ষমতা থেকে নামানো গেছে। আজকে তাই বর্তমান ফ্যাসিস্ট এবং দানব সরকারকে হটাতে জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। আমরা বিভিন্ন রাজনৈতিক দল শ্রেণিপেশার মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করার কাজ করছি। সবাইকে এই ঐক্য গড়ার কাজ করতে হবে। শনিবার বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবের কনফারেন্স লাউঞ্জে ‘বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের দাবিতে’ এক প্রতিবাদ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় মির্জা ফখরুল এসব বলেন।
সম্মিলিত পেশাজীবী সংগ্রাম পরিষদের উদ্যোগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাদা দলের ব্যানারে এই প্রতিবাদ সমাবেশ হয়। ঢাবি সাদা দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. আখতার হোসেন খানের সভাপতিত্বে সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বক্তৃতা দেন সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শওকত মাহমুদ, ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ডা. ফরহাদ হালিম ডোনার, ড. তাজমেরী এস ইসলাম, শিক্ষক কর্মচারী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান সেলিম ভুইয়া, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) মহাসচিব এম আবদুল্লাহ, ঢাবি সাদাদলের যুগ্ম আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মোর্শেদ হাসান খান, সাদা দলের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান খান, ড. আবু মূসা আরিফ বিল্লাহ প্রমুখ।
বিএনপির সহ প্রচার সম্পাদক কৃষিবিদ শামীমুর রহমান শামীমের পরিচালনায় সভায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- অধ্যাপক ড. এম ফরিদ আহমেদ, অধ্যাপক জাকারিয়া, ড. আশরাফুল ইসলাম চৌধুরী, ড. তাহমিনা আক্তার টফি, ড. মাহফুজুল হক, ড. আল মোজাদ্দেদী আলফেছানী, ইস্রাফিল প্রামানিক রতন, ড. দেবাশীষ পাল, অধ্যাপক এবিএম শহিদুল ইসলাম, অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম, ড. মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ, অধ্যাপক আলমগীর হোসেন, অধ্যাপক ড. আবুল কালাম আজাদ, অধ্যাপক গোলাম রব্বানী, অধ্যাপক ড. এমরান কাইয়ুম, অধ্যাপক আজহারুল ইসলাম, অধ্যাপক মো: জসিম উদ্দিন প্রমুখ, পেশাজীবী নেতৃবৃন্দের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- ডা. রফিকুল কবির লাবু সহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আজকে এই ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে ভেবে চিন্তে আন্দোলন করতে হচ্ছে। বিএনপি বিপ্লবী দল নয়। বিএনপির উদার গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল। নির্বাচনের মাধ্যমেই রাষ্ট্র ক্ষমতায় যেতে চায় বিএনপি। আমরা দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচী পালন করে সামনে এগিয়ে যেতে চেষ্টা করছি।
তিনি দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে হামলা-মামলা প্রসঙ্গে বলেন, আমাদের দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত ৭৮ হাজার মামলা ছাড়িয়ে গেছে। আসামী করা হয়েছে ১৮ লাখের বেশি নেতাকর্মীকে। দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া থেকে শুরু করে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের নামেও মামলা।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আজকে দেশের মানুষ এই সরকারের বিরুদ্ধে অতীষ্ঠ। মানুষের কোনো নিরাপত্তা নেই। কথা বলার স্বাধীনতা নেই। অর্থনৈতিক নিরারপত্তা নেই। এ অবস্থা চলতে পারে না। আজকে দেশের মানুষ পরিবর্তন চায়।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের সবচেয়ে বড় শত্রু হলো দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। এজন্যই তাকে মিথ্যা ও সাজানো মামলায় সাজা দিয়ে নির্জন কারাগারে বন্দি রাখা হয়েছে। যা অন্যায় এবং বেআইনি।
হতাশ হওয়ার কিছু নেই জানিয়ে মির্জা ফখরুল নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, আজকে হতাশ হওয়ার কিছুই নেই। এখন হয়নি তো সামনে হবে। এটা তো বিজ্ঞান। হতেই হবে। আমরা বিএনপি আগের চেয়ে আরো বেশি ঐক্যবদ্ধ। আমাদের মাঝে কোনো বিভেদ নেই। ঐক্যবদ্ধভাবেই আমাদের দলের নেত্রীর জন্য শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করে আসছি। আজকে এই আন্দোলনে শুধু বিএনপি নয় পেশাজীবীদেরকেও ভুমিকা রাখতে হবে। যারা বিগত আন্দোলনেও গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রেখেছেন।
প্রকৌশলী মাহমুদুর রহমান বলেন, ক্ষমতাসীন সরকার ফ্যাসিস্ট। তারা পুলিশ ও দলীয় গুণ্ডা দিয়ে বিরোধী দলকে নিপীড়নের মাধ্যমে দেশ চালাচ্ছে। বিচার বিভাগের মাধ্যমে অনেক কুকর্ম করেছে এই সরকার। ভোটাধিকার ও গণতন্ত্র হরণ করা হয়েছে কৌশলে। যে দেশে প্রধান বিচারপতিকে চোর আখ্যা দিয়ে দেশত্যাগ করানো হয় সেদেশে আবার বিচার বিভাগের স্বাধীনতা কীসের?
তিনি বিএনপি নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, যারা অন্যায় করেছে তাদের কাউকে ছাড় দেয়া যাবে না। চিহ্নিত করে রাখুন সবার বিচার করা হবে।
শওকত মাহমুদ বলেন, ফ্যাসিবাদ সরকারের কারণে দেশের মিডিয়ার একটি অংশ ফ্যাসিবাদ হয়ে গেছে। আজকে পেশাজীবীরা সঙ্কটে। গণমাধ্যম সঙ্কটে। বাংলাদেশে এখন স্বৈরতান্ত্রিক দেশ। খালেদা জিয়াকে জেলে নেয়ার পর তা পরিষ্কার হয়েছে। কিন্তু মানুষ কেবল সুযোগের অপেক্ষায় আছে।
এম আব্দুল্লাহ বলেন, আজকে দেশের গণমাধ্যম সঙ্কটে। দেশের চলমান সঙ্কটজনক পরিস্থিতিতে গণমাধ্যমের ভুমিকা আরো বেশি থাকা দরকার। বিএনপিকেও দুঃসময়ে গণমাধ্যমের পাশে দাঁড়ানোর কথা বলেন তিনি।
অধ্যাপক তাজমেরী ইসলাম বলেন, দেশের গণতন্ত্রের প্রতীক খালেদা জিয়া। তার মুক্তি মানে গণতন্ত্রের মুক্তি। তিনি কারাবন্দি মানে গণতন্ত্রও কারাবন্দি।
অধ্যাপক ড. ছিদ্দিকুর রহমান খান বলেন, বাংলাদেশ আজকে স্বৈরাশাসকের তকমা পাচ্ছে। এ ঘটনা আমাদের জন্য লজ্জাজনক। তিনি গণতন্ত্রের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তির জন্য আইনি লড়াইয়ের পাশাপাশি রাজপথে গণতান্ত্রিক আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানান।
সভাপতির বক্তব্যে আখতার হোসেন খান বলেন, আমরা সকল অন্যায় অপকর্মের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানাই। এই সরকার বিরোধী দলকে নিপীড়ন করেই চলেছে। কিন্তু অন্যায়ভাবে মামলা হামলা করে কেউ কোনোদিন ক্ষমতায় থাকতে পারেনি। আগামীতেও পারবে না।
সূত্রঃ নয়াদিগন্ত

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ