বি,এন ডেস্কঃ
প্রশ্ন ফাঁস এখন দেশের অন্যান্য সব সমস্যার মধ্যে অন্যতম। কোনভাবেই রোধ করা যাচ্ছে না এই চক্রকে। সব নিরাপত্তা বেষ্টনী ভেদ করে ফাঁস হচ্ছে প্রশ্ন। তবে এই প্রশ্নফাঁস রোধে চট্টগ্রামের এক তরুণ শিক্ষার্থী মো. রকিবুল ইসলাম আবিষ্কার করেছেন অভিনব এক পদ্ধতি। যার নাম দেয়া হয়েছে ‘কুইক ট্রেসিং প্রিন্ট’।
এ পদ্ধতির মাধ্যমে পরীক্ষা শুরুর কয়েক ঘণ্টা আগে থেকে পরীক্ষা কেন্দ্রেই ছাপানো যাবে প্রশ্নপত্র। শহর-গ্রামে, এমনকি বিদ্যুৎবিহীন প্রত্যন্ত অঞ্চলের পরীক্ষা কেন্দ্রেও পদ্ধতিটি ব্যবহার করে প্রশ্নপত্র প্রিন্ট করা সম্ভব। কম খরচে ও কম সময়ে করা যাবে কাজটি। আর এমন কাজটি করেছেন অনার্স চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মো. রকিবুল ইসলাম। তরুণ এই উদ্ভাবকের মতে, কেবল ট্রেসিং পেপার তৈরির সময় ও স্থান নিরাপদ করা গেলেই এর সুফল মিলবে। বিদ্যুৎ ছাড়া প্রশ্ন ফাঁসের এমন পদ্ধতি প্রশ্ন ফাঁস ঠেকাতে কার্যকর ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন শিক্ষাবিদসহ সংশ্নিষ্টরা।
এমন অভিনব পদ্ধতি উদ্ভাবন প্রসঙ্গে মো. রকিবুল ইসলাম বলেন, 'আমার ছোট ভাই এ বছর এসএসসির পরীক্ষার্থী ছিল। শুরুর দিকে সে ভালোভাবেই পরীক্ষা দিচ্ছিল। কিন্তু হঠাৎ দেখি, পরীক্ষা চলাকালীন প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনা ঘটছে। এতে সে হতাশ হয়ে পড়ে। একপর্যায়ে সে আমাদের বলে, এত কষ্ট করে পড়াশোনা করে কী লাভ হলো! আমার নৈর্ব্যক্তিক সঠিক হয় ২৫টা, আর যারা সারাবছর পড়েনি, তাদের হচ্ছে অনেক বেশি। তার এমন কথা আমার মনে দাগ কাটে। এ নিয়ে ভাবতে থাকি আমি। প্রশ্ন যাতে কোনো অবস্থাতেই ফাঁস না হয়, তা উদ্ভাবনে চিন্তায় পড়ে যাই। বিদ্যুৎ ছাড়াই প্রশ্নপত্র ছাপানোর উপায় বের করার চেষ্টা করি। এ নিয়ে অনেকের সঙ্গে যোগাযোগও করি। পরামর্শ ও আইডিয়া নিতে বিভিন্ন স্থানেও যাই। পরে কেবল কাগজ ও কালি দিয়ে বিদ্যুৎ ছাড়া একটি প্রশ্নপত্র বের করার উপায় বের করতে সক্ষম হই।'
এ পদ্ধতিতে পরীক্ষা শুরু হওয়ার এক ঘণ্টা আগে প্রশ্নপত্র প্রিন্ট করা যাবে বলে জানান রকিবুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘ধরুন নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্নপত্রের এক থেকে দশটি সেটের ট্রেসিং প্রিন্ট তৈরি করে তা কেন্দ্রে পৌঁছে দিল। পরীক্ষার দিন সকালে কিংবা আগের রাতে মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত নিল যে চট্টগ্রাম ২০ নম্বর কেন্দ্রে ৯ নম্বর সেটের প্রশ্নপত্র দিয়ে পরীক্ষা হবে। তাহলে ওই কেন্দ্রে দায়িত্বে থাকা কেন্দ্র সচিব ট্রেসিং পেপারের মধ্য থেকে ওই '৯ নম্বর' সেটের ট্রেসিং প্রিন্টটা নিয়ে গোপন কক্ষ থেকে ম্যাজিস্ট্রেট কিংবা প্রথম শ্রেণির গেজেটেড কর্মকর্তার উপস্থিতিতে কেন্দ্রের শিক্ষার্থী অনুযায়ী প্রশ্নপত্র প্রিন্ট করবে। শিক্ষার্থী বেশি হলে একাধিক মেশিনে একাধিক মানুষ দিয়ে এ পদ্ধতিতে প্রিন্ট করা যাবে।'
কেন্দ্রে প্রিন্ট করতে ফ্রেম থাকতে হবে। ফ্রেম বানাতে চার টুকরো কাঠ, একটা স্ট্ক্রিন কাপড় ও পেরেক লাগবে। প্রিন্ট করতে লাগবে কালি, একটা কাঠের তৈরি হাতল এবং একটা সাদা কাচের গ্লাস। প্রশ্নপত্রের ট্রেসিং প্রিন্টটা ফ্রেমের সঙ্গে সংযুক্ত করে কাগজের ওপর ছাপ দিয়ে যত কপি প্রয়োজন, প্রশ্নপত্র প্রিন্ট করা যাবে।
ট্রেসিং প্রিন্ট করার প্রক্রিয়া : সেটের নির্দেশনা পাওয়ার পর তৈরি করা ট্রেসিং প্রিন্টটা ফ্রেমের (ফ্রেমটি চার টুকরো কাঠ ও একটা স্ট্ক্রিন কাপড় দিয়ে তৈরি) সঙ্গে সংযোজন করতে হবে। সংযোজন করার পর একজন ব্যক্তি প্রতি এক ঘণ্টায় ৫০০ থেকে ৫৫০টি প্রশ্নপত্র প্রিন্ট করতে পারবে। একটি কেন্দ্রে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা যদি দুই হাজার হয়, তবে সেখানে চারজন মানুষ দিয়ে এক ঘণ্টায় এ পদ্ধতিতে প্রশ্নপত্র প্রিন্ট করা যাবে। রকিবুল ইসলাম জানান, পরীক্ষা শুরু হওয়ার ১০ দিন আগে থেকেও সরকার অটোমেশন কিংবা সফটওয়্যারের মাধ্যমে প্রশ্ন তৈরি করে ছাপাতে পারবে। এ জন্য ট্রেসিং পেপারে সেই প্রশ্ন প্রিন্ট দিতে হবে। প্রিন্ট করতে চারটা কাঠ দিয়ে একটি চতুর্ভুজ আকারে ফ্রেম বানাতে হবে। তারপর ফ্রেমের সাইজ অনুসারে একটি স্ট্ক্রিন কাপড় বানাতে হবে। পরে এতে সুপ্রিমা কেমিক্যাল দিয়ে শুকাতে হবে। শুকানোর পর দুটি লাইট দিয়ে একটা লাইটবক্সের ওপর ফ্রেমটার সঙ্গে ট্রেসিং প্রিন্টটা পাঁচ মিনিট ধরে রাখলে ট্রেসিং প্রিন্টারে ওই প্রশ্নপত্রের ছাপটা উঠে যাবে। এরপর লেমা (এক ধরনের কেমিক্যাল কালো রঙ) দিয়ে স্ট্ক্রিনটা ঢেকে দিতে হবে, যাতে পরিবহনের সময় কেউ ছবি তুলতে না পারে।
রকিবুল ইসলাম জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে অনার্স চতুর্থ বর্ষে হিসাববিজ্ঞান বিভাগে অধ্যয়ন করছেন। তিনি চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার শোভনদণ্ডী ইউনিয়নের রশিদাবাদ গ্রামের কাজী মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম (সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত) ও জয়নব বেগমের ছেলে। শিক্ষাবিদদের মতে, একজন শিক্ষার্থীর এমন উদ্ভাবন অবশ্যই প্রশংসার দাবিদার। এটি উৎসাহব্যঞ্জকও বটে। তার উদ্ভাবিত এ পদ্ধতিকে নীতিনির্ধারণের পর্যায়ে আহ্বান করা উচিত। সেইসঙ্গে তার পরামর্শ এবং ভাবনাগুলো বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে শেয়ার করার ব্যবস্থা করে দেওয়া উচিত।
-বাংলা
প্রশ্ন ফাঁস এখন দেশের অন্যান্য সব সমস্যার মধ্যে অন্যতম। কোনভাবেই রোধ করা যাচ্ছে না এই চক্রকে। সব নিরাপত্তা বেষ্টনী ভেদ করে ফাঁস হচ্ছে প্রশ্ন। তবে এই প্রশ্নফাঁস রোধে চট্টগ্রামের এক তরুণ শিক্ষার্থী মো. রকিবুল ইসলাম আবিষ্কার করেছেন অভিনব এক পদ্ধতি। যার নাম দেয়া হয়েছে ‘কুইক ট্রেসিং প্রিন্ট’।
এ পদ্ধতির মাধ্যমে পরীক্ষা শুরুর কয়েক ঘণ্টা আগে থেকে পরীক্ষা কেন্দ্রেই ছাপানো যাবে প্রশ্নপত্র। শহর-গ্রামে, এমনকি বিদ্যুৎবিহীন প্রত্যন্ত অঞ্চলের পরীক্ষা কেন্দ্রেও পদ্ধতিটি ব্যবহার করে প্রশ্নপত্র প্রিন্ট করা সম্ভব। কম খরচে ও কম সময়ে করা যাবে কাজটি। আর এমন কাজটি করেছেন অনার্স চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মো. রকিবুল ইসলাম। তরুণ এই উদ্ভাবকের মতে, কেবল ট্রেসিং পেপার তৈরির সময় ও স্থান নিরাপদ করা গেলেই এর সুফল মিলবে। বিদ্যুৎ ছাড়া প্রশ্ন ফাঁসের এমন পদ্ধতি প্রশ্ন ফাঁস ঠেকাতে কার্যকর ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন শিক্ষাবিদসহ সংশ্নিষ্টরা।
এমন অভিনব পদ্ধতি উদ্ভাবন প্রসঙ্গে মো. রকিবুল ইসলাম বলেন, 'আমার ছোট ভাই এ বছর এসএসসির পরীক্ষার্থী ছিল। শুরুর দিকে সে ভালোভাবেই পরীক্ষা দিচ্ছিল। কিন্তু হঠাৎ দেখি, পরীক্ষা চলাকালীন প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনা ঘটছে। এতে সে হতাশ হয়ে পড়ে। একপর্যায়ে সে আমাদের বলে, এত কষ্ট করে পড়াশোনা করে কী লাভ হলো! আমার নৈর্ব্যক্তিক সঠিক হয় ২৫টা, আর যারা সারাবছর পড়েনি, তাদের হচ্ছে অনেক বেশি। তার এমন কথা আমার মনে দাগ কাটে। এ নিয়ে ভাবতে থাকি আমি। প্রশ্ন যাতে কোনো অবস্থাতেই ফাঁস না হয়, তা উদ্ভাবনে চিন্তায় পড়ে যাই। বিদ্যুৎ ছাড়াই প্রশ্নপত্র ছাপানোর উপায় বের করার চেষ্টা করি। এ নিয়ে অনেকের সঙ্গে যোগাযোগও করি। পরামর্শ ও আইডিয়া নিতে বিভিন্ন স্থানেও যাই। পরে কেবল কাগজ ও কালি দিয়ে বিদ্যুৎ ছাড়া একটি প্রশ্নপত্র বের করার উপায় বের করতে সক্ষম হই।'
এ পদ্ধতিতে পরীক্ষা শুরু হওয়ার এক ঘণ্টা আগে প্রশ্নপত্র প্রিন্ট করা যাবে বলে জানান রকিবুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘ধরুন নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্নপত্রের এক থেকে দশটি সেটের ট্রেসিং প্রিন্ট তৈরি করে তা কেন্দ্রে পৌঁছে দিল। পরীক্ষার দিন সকালে কিংবা আগের রাতে মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত নিল যে চট্টগ্রাম ২০ নম্বর কেন্দ্রে ৯ নম্বর সেটের প্রশ্নপত্র দিয়ে পরীক্ষা হবে। তাহলে ওই কেন্দ্রে দায়িত্বে থাকা কেন্দ্র সচিব ট্রেসিং পেপারের মধ্য থেকে ওই '৯ নম্বর' সেটের ট্রেসিং প্রিন্টটা নিয়ে গোপন কক্ষ থেকে ম্যাজিস্ট্রেট কিংবা প্রথম শ্রেণির গেজেটেড কর্মকর্তার উপস্থিতিতে কেন্দ্রের শিক্ষার্থী অনুযায়ী প্রশ্নপত্র প্রিন্ট করবে। শিক্ষার্থী বেশি হলে একাধিক মেশিনে একাধিক মানুষ দিয়ে এ পদ্ধতিতে প্রিন্ট করা যাবে।'
কেন্দ্রে প্রিন্ট করতে ফ্রেম থাকতে হবে। ফ্রেম বানাতে চার টুকরো কাঠ, একটা স্ট্ক্রিন কাপড় ও পেরেক লাগবে। প্রিন্ট করতে লাগবে কালি, একটা কাঠের তৈরি হাতল এবং একটা সাদা কাচের গ্লাস। প্রশ্নপত্রের ট্রেসিং প্রিন্টটা ফ্রেমের সঙ্গে সংযুক্ত করে কাগজের ওপর ছাপ দিয়ে যত কপি প্রয়োজন, প্রশ্নপত্র প্রিন্ট করা যাবে।
ট্রেসিং প্রিন্ট করার প্রক্রিয়া : সেটের নির্দেশনা পাওয়ার পর তৈরি করা ট্রেসিং প্রিন্টটা ফ্রেমের (ফ্রেমটি চার টুকরো কাঠ ও একটা স্ট্ক্রিন কাপড় দিয়ে তৈরি) সঙ্গে সংযোজন করতে হবে। সংযোজন করার পর একজন ব্যক্তি প্রতি এক ঘণ্টায় ৫০০ থেকে ৫৫০টি প্রশ্নপত্র প্রিন্ট করতে পারবে। একটি কেন্দ্রে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা যদি দুই হাজার হয়, তবে সেখানে চারজন মানুষ দিয়ে এক ঘণ্টায় এ পদ্ধতিতে প্রশ্নপত্র প্রিন্ট করা যাবে। রকিবুল ইসলাম জানান, পরীক্ষা শুরু হওয়ার ১০ দিন আগে থেকেও সরকার অটোমেশন কিংবা সফটওয়্যারের মাধ্যমে প্রশ্ন তৈরি করে ছাপাতে পারবে। এ জন্য ট্রেসিং পেপারে সেই প্রশ্ন প্রিন্ট দিতে হবে। প্রিন্ট করতে চারটা কাঠ দিয়ে একটি চতুর্ভুজ আকারে ফ্রেম বানাতে হবে। তারপর ফ্রেমের সাইজ অনুসারে একটি স্ট্ক্রিন কাপড় বানাতে হবে। পরে এতে সুপ্রিমা কেমিক্যাল দিয়ে শুকাতে হবে। শুকানোর পর দুটি লাইট দিয়ে একটা লাইটবক্সের ওপর ফ্রেমটার সঙ্গে ট্রেসিং প্রিন্টটা পাঁচ মিনিট ধরে রাখলে ট্রেসিং প্রিন্টারে ওই প্রশ্নপত্রের ছাপটা উঠে যাবে। এরপর লেমা (এক ধরনের কেমিক্যাল কালো রঙ) দিয়ে স্ট্ক্রিনটা ঢেকে দিতে হবে, যাতে পরিবহনের সময় কেউ ছবি তুলতে না পারে।
রকিবুল ইসলাম জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে অনার্স চতুর্থ বর্ষে হিসাববিজ্ঞান বিভাগে অধ্যয়ন করছেন। তিনি চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার শোভনদণ্ডী ইউনিয়নের রশিদাবাদ গ্রামের কাজী মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম (সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত) ও জয়নব বেগমের ছেলে। শিক্ষাবিদদের মতে, একজন শিক্ষার্থীর এমন উদ্ভাবন অবশ্যই প্রশংসার দাবিদার। এটি উৎসাহব্যঞ্জকও বটে। তার উদ্ভাবিত এ পদ্ধতিকে নীতিনির্ধারণের পর্যায়ে আহ্বান করা উচিত। সেইসঙ্গে তার পরামর্শ এবং ভাবনাগুলো বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে শেয়ার করার ব্যবস্থা করে দেওয়া উচিত।
-বাংলা
0 মন্তব্যসমূহ