বি,এন ডেস্কঃ
ফেসবুকে বন্ধুত্ব গড়ে তুলে এক মাসের মাথায়
বুধবার সকালে চট্টগ্রামের পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকত থেকে তাসফিয়া নামে এক
স্কুলছাত্রীর লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। সানশাইন গ্রামার স্কুলের নবম শ্রেণির
ওই ছাত্রীর লাশ উদ্ধার ও রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনায় কিছু ক্লু খুঁজে পেয়েছে
পুলিশ। তবে তদন্তের স্বার্থে তা এখনই প্রকাশ করছে না তারা।
এই ঘটনায় তাশফিয়ার বন্ধু আদনানকে আটক করে
জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। আদনানও একই স্কুলের ১০ম শ্রেণির ছাত্র বলে জানা গেছে।
আদনানকে আটকের পর পতেঙ্গা থানা পুলিশের কাছে আদনান স্বীকার করেন, সে ফেসবুক
ভিত্তিক ‘গ্যাংস্টার রিচ কিডস গ্রুপ’র প্রধান।
তাশফিয়ার মৃত্যুরহস্য উদঘাটনে পুলিশ
বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে তাশফিয়ার বন্ধু আদনান মির্জার বাসায় অভিযান চালিয়ে
তাকে আটক করে। এই সময় আদনানের মোবাইলফোনসহ অন্যান্য ইলেক্ট্রনিকস ডিভাইজ
জব্দ করে, যা অনুসন্ধান করা হচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক, হোয়াটস
অ্যাপ, ইমোসহ আদনানের সব আইডি খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
তদন্তে থাকা চট্টগ্রাম নগর পুলিশের সহকারী
কমিশনার (কর্ণফুলী জোন) জাহেদুল ইসলাম জানান, তাশফিয়ার বন্ধু আদনানকে আটক
করে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে কিছু তথ্য পাওয়া গেলেও তদন্তের
স্বার্থে সব কিছু এই মুহূর্তে প্রকাশ করা যাচ্ছে না।
পুলিশ কর্মকর্তা জাহেদুল বলেন, ‘তাশফিয়া
সন্ধ্যা পর্যন্ত আদনান মির্জার সাথে থাকার ভিডিও ফুটেজসহ তথ্য আমরা পেলেও
সন্ধ্যার পর তাশফিয়া কীভাবে কার সাথে চট্টগ্রাম নগরী থেকে প্রায় ১৮
কিলোমিটার দূরে পতেঙ্গা নেভাল রোডে গেল এবং সেখানে গিয়ে কীভাবে সে নিহত
হলো, সেটা এখনো নিশ্চিত হতে পারিনি। সেই রহস্য উন্মোচনের চেষ্টা করছি
আমরা।’
উল্লেখ্য, পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকতের পাথরের
ওপর থেকে উদ্ধার হওয়া স্কুলছাত্রী তাসফিয়ার চোখেমুখে আঁচড়ের চিহ্ন ছিল।
ধারণা করা হচ্ছে, তাকে ধর্ষণের পর হত্যা করে লাশ ফেলে দেয়া হয়েছে।
পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য চমেক হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করে।
পুলিশ ও তাসফিয়ার পারিবারিক সূত্র জানায়,
এক মাস আগে আদনান মির্জা নামে এক তরুণের সঙ্গে ফেসবুকে পরিচয় ও বন্ধুত্ব হয়
তাসফিয়ার। এর সূত্র ধরেই আদনান মঙ্গলবার পবিত্র শবেবরাতের দিন বিকেল ৫টায়
তাসফিয়াকে ঘর থেকে কৌশলে বের করে।
বন্ধুত্বের মাসপূর্তি উদযাপনে চায়নিজ
রেস্টুরেন্টে খাওয়ানোর প্রলোভন দেয়। বিকাল পাঁচটার দিকে তাসফিয়া যখন বাসা
থেকে বের হচ্ছিল তখন তার (তাসফিয়ার) মা আছরের নামাজ পড়ছিলেন। নামাজ থেকে
উঠে তাসফিয়াকে না পেয়ে তাকে খোঁজাখুঁজি শুরু হয়।
সূত্র জানায়, আদনান নামে কোনো এক তরুণের
সঙ্গে তাসফিয়ার যে ফেসবুকে সম্পর্ক হয়েছে সে বিষয়টি কিছুদিন আগেই টের পায়
পরিবার। তাই সন্দেহবশত ফেসবুক আইডি থেকে নম্বর নিয়ে কৌশলে আদনানকে মঙ্গলবার
সন্ধ্যার দিকে তাসিফয়াদের বাসায় ডেকে আনা হয়।
এ সময় তাসফিয়ার বাবা-চাচারা আদনানকে চাপ
দেয় তাসফিয়া কোথায় তা জানাতে। না হয় আদনানের বাবাকে ডেকে বিচার দেয়া হবে
বলেও হুশিয়ার করা হয়। এ সময় আদনান তার পরিচিত বন্ধু-বান্ধবদের জানায় তাকে
আটকে রাখার বিষয়টি।
পরে মুরাদপুরের চিহ্নিত সন্ত্রাসী ফিরোজ ও
আকরামসহ কয়েকজন তাসফিয়াদের আদনান আর নিজাম আবাসিক এলাকার বাসায় এসে
আদনানকে ছেড়ে দেয়ার জন্য চাপ দেয়। একপর্যায়ে আদনান তাকে ছেড়ে দিলে তাসফিয়া
আধাঘণ্টার মধ্যেই ফিরে আসবে বলে জানায়।
একদিকে সন্ত্রাসীদের হুমকি, অন্যদিকে
তাসফিয়াকে ফিরে পেতে আকুল তাসফিয়ার পরিবার অদনানকে সরল বিশ্বাসে ছেড়ে দেয়।
কিন্তু এরপর থেকেই আদনান ফোন বন্ধ করে দেয়।
তাসফিয়ার পরিবার জানায়, আদনানের পরিবার
সম্পর্কে বা তার বাড়ি কোথায়, সে কী করে সে বিষয়ে তারা কিছুই জানে না। কেবল
ফেসবুক থেকে নম্বর নিয়েই তারা আদনানকে আটক করেছিল।
সূত্র জানায়, এরপর থেকে মঙ্গলবার
শবেবরাতের দিন এবাদত ছেড়ে তারা এখানে-সেখানে পাগলের মতো খুঁজে বেড়ায়
তাসফিয়াকে। কিন্তু কোথাও তার খোঁজ পাচ্ছিল না।
বুধবার সকালে পতেঙ্গায় অজ্ঞাত তরুণীর লাশ
উদ্ধার হওয়ার খবর পাওয়ার পর তাসফিয়ার বাবা-চাচারা পতেঙ্গা থানায় যান।
সেখানে গিয়েই তারা দেখতে পান তাসফিয়ার লাশ।
পতেঙ্গা থানার এসআই আনোয়ার হোসেন জানান,
সকালে সৈকতের ১৮ নম্বর ব্রিজের উত্তরপাশে পাথরের ওপর তরুণীর মৃতদেহ পড়ে
থাকতে দেখে স্থানীয় লোকজন। তারা পুলিশকে খবর দেয়। পরে তরুণীর লাশ উদ্ধার
করে ময়নাতদন্তের জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
পুলিশ জানায়, মঙ্গলবার রাতে গোলপাহাড়ের
মোড়ে অবস্থিত চায়না গ্রিল রেস্টুরেন্ট থেকে একটি ভিডিও ফুটেজ উদ্ধার করা
হয়। ওই রেস্টুরেন্ট থেকে তাসফিয়া ও আদনানকে একসঙ্গে বের হতে দেখা যায়। এ
সময় আদনানকে বিল দিতেও দেখা যায়। ওই ভিডিও ফুটেজটি ঠিক কোন মুহূর্তের তা
তদন্ত করে দেখছে পুলিশ।
তাশফিয়ার মৃত্যু রহস্যজনক উল্লেখ করে
পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ধারণা করা হচ্ছে, তাশফিয়া খুন হয়েছে। লাশের
শরীরের অন্যান্য স্থানে তেমন আঘাতের চিহ্ন পাওয়া না গেলেও মাথায় একটি
আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। তাই তার মৃত্যুরহস্য উদঘাটন করতে তাশফিয়ার বন্ধু এবং
ঘটনার আগে সর্বশেষ যার সাথে তাশফিয়া দেখা করেছিল সেই আদনান মির্জাকে আটক
করা হয়েছে। এই ঘটনায় আরো কেউ জড়িত বা সম্পৃক্ত আছে কি না, সেসব বিষয় খতিয়ে
দেখা হচ্ছে।
সুত্রঃ সিটিজি টাইমস
0 মন্তব্যসমূহ