ওয়াহেদ হাসান জীবনঃ
চট্রগ্রাম
নগরীর বাকলিয়া ওয়ার্ডের বগার বিল এলাকা দীর্ঘদিন ধরে সন্ত্রাসী ও
অপরাধীদের অভয়ারণ্য হিসেবে পরিচিত। সেই বগার বিল এখনো অপরাধীদের আঁখড়াই রয়ে
গেছে। সম্প্রতি যুবলীগকর্মী ফরিদ হত্যার পেছনেও রয়েছে বগার বিলকেন্দ্রিক
সন্ত্রাসী গ্রুপ। ফরিদ হত্যা ছাড়াও বাকলিয়ায় অধিকাংশ হত্যাকা- ও অপরাধের
মূলে বগার বিলভিত্তিক সন্ত্রাসী গ্রুপ জড়িত।
বগারবিল এলাকা থেকে রসুলবাগ আবাসিক এলাকা,
ডিসি রোড, সৈয়দ শাহ রোড, কালাম কলোনি, দেওয়ান বাজার, কালামিয়া বাজার
এলাকায় সহজে যাতায়াত করা যায়। এজন্য সন্ত্রাসীরা অপরাধমূলক কর্মকান্ডের
জন্য বগার বিল এলাকাকে বেছে নেয়। অনেকটা নীবর এলাকা হওয়ায় দিনদুপুরেও
চলাফেলা কঠিন হয়ে পড়েছে। এই পথে যাতায়াত করতে গিয়ে অনেকেই সহায়-সম্বল
খুইয়েছেন। সন্ধ্যা বা রাত নামলেই ভয়ংকর পরিবেশ বিরাজ করে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, সিটি কর্পোরেশনের
লাইট-বাতি না থাকায় সন্ধ্যা নামলে ভূতুরে পরিবেশ বিরাজ করে। তখন প্রকাশ্যে
শুরু ইয়াবা, গাঁজা, মদ, ফেনসিডিলসহ মাদক বেচাকেনা। চলে জুয়ার আসর।
অপরাধমূলক কর্মকা- ছাড়াও এলাকায় নতুন ভবন
নির্মাণ করতে গেলে সন্ত্রাসী গ্রুপের সদস্যদের চাঁদা গুণতে হয়। পুরো এলাকা
নিয়ন্ত্রণে রয়েছে একাধিক সন্ত্রাসী গ্রুপ। ফরিদ একাধিকবার জেল খেটেছেন।
২০১৩ সালের ২৯ জুন চাঁদার জন্য খুন করা হয় এক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীকে।
প্রকাশ্যে গুলি করে তাকে হত্যা করা হয়। নবী নামে এক সন্ত্রাসী তাকে গুলি
করে বলে অভিযোগ ছিল। সেই হত্যা মামলায় জেল খেটেছিলেন নবী। পরে জামিনে মুক্ত
হয়ে নবী সন্ত্রাসী কার্যক্রমে জড়িয়ে পড়ে।
ফরিদ হত্যার রেশ কাটতে না কাটতে কয়েকদিন
আগে চট্টগ্রাম কলেজের এক ছাত্রকে ছুরিকাঘাত করে সন্ত্রাসীরা। তিনি এখনো
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
রসুলবাগ আবাসিক এলাকার এ ব্লকের শেষ
প্রান্তে উঠতি বয়সী কিশোর গ্রুপ সক্রিয় হয়ে ওঠেছে। কিশোর দলের সদস্যরা
আড্ডা, ইভটিজিং, প্রকাশ্যে ইয়াবাসহ মাদক সেবনে জড়িয়ে পড়ছে। কথিত বড় ভাইদের
আশীর্বাদে এসব কিশোররা অপরাধী চক্রের সঙ্গেও জড়িয়ে যাচ্ছে। বড় ভাইদের ভয়ে
এলাকার কেউ তাদের বিরুদ্ধে কথা বলতে সাহস করছেন না। এসব কিশোর দলের সদস্যরা
চকবাজার ও বাকলিয়ায় বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এলাকায় ইভটিজিং করে চলেছে।
এতে উদ্বিগ্ন অভিভাবকেরা। রসুলবাগের ই-ব্লকের খালপাড় এলাকায় উঠতি বয়সের
সন্ত্রাসীর আড্ডা বেশি পরিলক্ষিত হয়। সবুজবাগ আবাসিক এলাকা সংলগ্ন বাকলিয়া
আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় এলাকায়ও উঠতি বয়সের কিশোর অপরাধীদের আড্ডা ও ইভটিজিং
চলে আসছে।
কিশোর-ছিঁচকে অপরাধী থেকে অতীতে
দাগী-দাপুটে ও বড় সন্ত্রাসীর উত্থান হয়েছে। সাম্প্রতিক নিহত ফরিদ হত্যার
দিনে সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে অস্ত্র উঁচিয়ে মহড়া দেয়। সন্ত্রাসী ফয়সালের
বিরুদ্ধে চকবাজার ও বাকলিয়া থানায় দুই ডজনেরও বেশি মামলা রয়েছে। প্রিমিয়ার
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ইমনকে প্রকাশ্যে হত্যার পেছনে বাকলিয়া সন্ত্রাসী
গ্রুপের একাধিক সন্ত্রাসী জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে।
এলাকাবাসী অভিযোগ, এলাকাটি বাকলিয়া ও
চকবাজার-দুই থানার অন্তর্ভুক্ত। এতে আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দুই থানার
টানাটানি চলে আসছে। এতে বাড়তি সুবিধা নিচ্ছে সন্ত্রাসীরা।
0 মন্তব্যসমূহ