বিএন ডেস্কঃ
দলের চেয়ারপারসন কারাবন্দী বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার আরো অবনতি
হয়েছে জানিয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন,
বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দলীয় প্রশাসন যেমন অকর্মণ্য তেমনি
দুর্নীতিগ্রস্ত। সর্বত্রই ক্ষমতা-আশ্রিত গুণ্ডা-মাস্তানদের দাপট। আওয়ামী
লীগ সন্ত্রাস আর গুণ্ডামীকে নিজেদের জীবনাচরণে কর্মক্ষেত্রে সুপ্রতিষ্ঠিত
করেছে। আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে পার্বত্য চট্টগ্রামে আঞ্চলিক দলগুলোর
সশস্ত্র তৎপরতায় শক্তিমান চাকমাসহ ছয়জন নিহত এবং বেশ কিছু সংখ্যক
গুলিবিদ্ধ হওয়াসহ নরসিংদীতে রায়পুরা উপজেলার বাঁশগাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের
চেয়ারম্যান সিরাজুল হককে দিনে-দুপুরে গুলি করে হত্যা করা আওয়ামী দুঃশাসনের
এক ভয়ঙ্কর দৃষ্টান্ত।
আজ শনিবার সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, সরকারের পায়ের তলা থেকে
জনসমর্থন সরে গেছে এবং তারা বেআইনী অস্ত্রকে দেশব্যাপী ছড়িয়ে দিয়ে
দুর্বৃত্তদের মাথায় হাত রেখে দেশ চালাচ্ছে বলেই সারাদেশ খুনখারাপিতে ভরে
গেছে। সরকারের সৃষ্ট অশান্তির আগুনে ভেতরে ভেতরে সারাদেশের মানুষ দগ্ধ
হচ্ছে। এসমস্ত রক্তাক্ত ঘটনার জন্য সরকারই দায়ী। আমি দলের পক্ষ থেকে এসমস্ত
রক্তাক্ত ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি।
নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলনে রিজভী বলেন,
দলের চেয়ারপারসন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সর্বশেষ শারীরিক অবস্থার আরো
অবনতি হয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকে বার বার গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হলেও এখনো
তার চিকিৎসার ব্যবস্থা নেয়নি সরকার। আমরা বার বার বলছি বেগম খালেদা জিয়ার
পছন্দ অনুযায়ী ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়ার কথা। কিন্তু সরকার ও
কারাকর্তৃপক্ষ বিএনপি চেয়ারপারসনের চিকিৎসার বিষয়ে কোনো কর্ণপাতই করছে না।
উল্টো আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনাসহ তাদের দলীয় নেতা-কর্মীরা বেগম খালেদা
জিয়ার অসুস্থতা নিয়ে ইয়ার্কি-ঠাট্টা করছেন। এদের নিষ্ঠুর রসিকতায় দেশবাসী
বিস্মিত ও হতভম্ব।
তিনি বলেন, 'যারা হত্যা এবং লাশ নিয়ে খেলা করে তাদের কাছে মানুষের
জীবনের কিইবা দাম আছে? দেশনেত্রীকে মিথ্যা সাজানো ও জাল নথি তৈরির মাধ্যমে
সাজা দিয়ে বন্দী করে বিনা চিকিৎসায় ধূঁকে ধুঁকে কষ্ট দেয়াটাই হচ্ছে সরকারের
মুখ্য উদ্দেশ্য। এর পেছনে সরকার প্রধানের চরম প্রতিহিংসা কাজ করছে।
দেশনেত্রীর প্রতি সরকারের আচরণ চরম মানবধিকার লঙ্ঘন ও আইনের লঙ্ঘন। গতকালও
আমরা খবর পেয়েছি-তাঁর হাঁটু ও শরীরে প্রচণ্ড ব্যথাসহ নানাবিধ জটিল শারীরিক
সমস্যা তাকে আক্রান্ত করছে। স্যাঁতস্যাঁতে পরিবেশে পরিত্যক্ত রুমে থাকায়
এখন তিনি প্রায়ই জ্বরে ভুগছেন এবং কাঁশি ও কফ লেগেই আছে। স্যাঁতস্যাঁতে ও
ধূলাকীর্ণ এরকম অবস্থায় সাধারণত: নিউমোনিয়ার আশঙ্কা থাকে। তার চোখে যে
ব্যথা হচ্ছে সেটি এখনো সারেনি অর্থাৎ একই অবস্থাই আছে। কিন্তু সরকার তাকে
চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত করছে। উনার হাঁটুতে ফরেন বডি থাকা এবং পিঠে-ঘাড়ে ও
কোমরে প্রচন্ড ব্যথার জন্য বিশেষ ধরণের এমআরআই এর প্রয়োজন। কিন্তু তার
জন্য বিশেষ এমআরআই এর যে দাবি করা হয়েছিল সেটিকেও সরকার পাত্তা দেয়নি।'
রিজভী বলেন, 'কারা আইনে একজন বন্দীর সাথে প্রতিদিনই দেখা করার বিধান
রয়েছে, কিন্তু প্রতিদিন দুরের কথা, দেশনেত্রীর ঘনিষ্ঠ আত্মীয়স্বজনদের
যেখানে সপ্তাহে একদিন দেখা করতে দেয়া হতো সেখানে এখন ১০ দিন পর পর দেখা
করার আদেশ জারি হবে বলে শোনা যাচ্ছে। জুলুমশাহীর হিংস্র আচরণে দেশনেত্রীকে
জর্জরিত করার জন্যই কারাগারে আটকে রাখা হয়েছে। দেশনেত্রীর সঙ্গে সরকারের
এহেন আচরণে গোটা জাতি শুধু গভীরভাবে উদ্বিগ্নই নয়, মারাত্মকভাবে আতঙ্কিত।
আমি আবারো অবিলম্বে দেশনেত্রীকে তার পছন্দ অনুযায়ী ইউনাইটেড হাসপাতালে
চিকিৎসা দেয়ার জোর দাবি জানাচ্ছি। অন্যথায় দেশবাসী আর বসে থাকবে না।
নিজেদের দায়িত্ব নিজেরাই পালন করবে।'
তিনি সরকারের সমালোচনা করে আরো বলেন, 'গুম, খুন, বিচার বহির্ভূত হত্যা,
লুট, হরিলুট, চাঁদাবাজি, দখলবাজি, দ্রব্যমূল্যের দাম বৃদ্ধি, সমস্ত
ট্যাক্স, হোল্ডিং ট্যাক্স বৃদ্ধি, গ্যাস-বিদ্যূতের দাম বৃদ্ধি ও
নির্যাতন-নিপীড়নে বাংলাদেশের প্রতিটি ঘরে ঘরে যে ক্ষোভের আগুন জ্বলছে,
যেভাবে মানুষের বাক-স্বাধীনতা হরণ করে কালা বোবা বানানো হয়েছে, তা থেকে
বাঁচতে পুরো জাতি এখন ঐক্যবদ্ধ। প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে বলতে
চাই-অবিলম্বে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিন, তাকে তার পছন্দ
অনুযায়ী সুচিকিৎসার ব্যবস্থা নিন।'
দুই সিটি নির্বাচন প্রসঙ্গে রিজভী বলেন, গাজীপুর ও খুলনা সিটি নির্বাচনে
পুলিশি তাণ্ডব, গণগ্রেফতার এবং এলাকায় ভীতিকর পরিবেশ দিনকে দিন আরো
পরিব্যাপ্ত হচ্ছে। নির্বাচনী প্রচারণায় বাধা প্রদানসহ নানাভাবে হয়রানিও
করছে পুলিশ ও সাদা পোশাকের পুলিশ। খুলনা জেলা বিএনপির ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক
সাইফুল হাসান রবিসহ ১১ জন নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। রুপসা,
দিঘলিয়াসহ বিভিন্ন থানা ও উপজেলা বিএনপি নেতাকর্মীদের বাসায় বাসায় হানা
দিয়ে ধরপাকড়ের তাণ্ডব চালাচ্ছে পুলিশ। গতকাল গাজীপুরে বিএনপি ও শরীক দলের
নেতা-কর্মীদের গ্রেফতারসহ নেতা-কর্মীদের বাড়িতে বাড়িতে তল্লাশির নামে
ব্যাপক হয়রানি করা হয়েছে। গতকাল রাতে পুলিশি অভিযানের অংশ হিসেবে গাজীপুর
জেলা পুলিশ সুপার হারুন-অর-রশিদ টঙ্গী থানায় পুলিশ কর্মকর্তাদের নিয়ে
রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন। তিনি রাতে টঙ্গীতে অঞ্চল ভিত্তিক একটি সমিতির
কর্মকর্তাদের সাথেও গোপন বৈঠক করেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
বিএনপির শীর্ষ এই নেতা বলেন, মোঃ আকবর হোসেন ফারুক, সাংগঠনিক সম্পাদক,
যুবদল, টঙ্গী থানা ও সদস্য সচিব- ৫৬ নম্বর ওয়ার্ড, ধানের শীষের নির্বাচন
পরিচালনা কমিটি। (রাজনৈতিক মামলায় জামিনে আছেন)। শুক্রবার রাত সাড়ে ১২টায়
উত্তরার বাসা থেকে ডিবি পুলিশ গ্রেফতার করে। তার বাসা ঘেরাও করে মাইকিং করে
তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। রাজনৈতিক মামলায় জামিনে থাকা সত্ত্বেও গাজীপুর
মহানগর জামায়াতে ইসলামীর সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ আফজাল হোসাইন, গাজীপুর জেলা
জিয়া পরিষদের আহবায়ক আশরাফ হোসেন টুলু, কানাইয়া গ্রাম কমিটির বিএনপির
সভাপতি ও ধানের শীষের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহবায়ক আব্দুস সোবহানকে
গতকাল শুক্রবার রাতে পুলিশ তার গ্রামের বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে।
উল্লেখ্য, আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলমের বাড়ি কানাইয়া
গ্রামে। সদর থানা ছাত্রদলের আহবায়ক ইমরান রেজার ছোট ভাই ও গাজীপুর সদর থানা
ছাত্রদল নেতা রেজাউল করিম উজ্জল গ্রেফতার করে। গাজীপুর পৌর বিএনপির সভাপতি
মীর হালিমুজ্জামান ননী, টঙ্গী থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক
জাহাঙ্গীর আলম ভেন্ডারসহ বিভিন্ন নেতাকর্মীদের বাসা-বাড়িতে রাতব্যাপী
তল্লাশি ও হয়রানি চালায় পুলিশ। এছাড়া শুক্রবার সকালে বিএনপি’র কৃষি বিষয়ক
সম্পাদক সাবেক এমপি আবুল কালাম সিদ্দিকীকে কাশিমপুর এলাকায় ধানের শীষের
পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণায় বাধা দেয় পুলিশ।
রিজভী বলেন, 'বিএনপিসহ ২০ দলীয় জোটের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতাদের
নির্বাচনী প্রচারণায় জনতার ঢল দেখে আওয়ামী লীগ আইনশৃঙ্খলা-বাহিনীকে দিয়ে
হয়রানি শুরু করেছে। যতই দিন যাচ্ছে ততই আইনশৃঙখলা বাহিনী সরকারী দলের নৌকা
প্রার্থীর পক্ষে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। নির্বিচারে আক্রমণ করে বিএনপি
নেতাকর্মীদের রাতের ঘুম হারাম করে দিয়েছে।
তিনি বলেন, 'দুই দিন আগে নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংগঠন সুজনের পক্ষ থেকেও
সংবাদ সম্মেলন করে তাদের মাঠ জরিপের ফলাফল তুলে ধরতে গিয়ে দুই সিটিতে
সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। গণমাধ্যমেও ভোট নিয়ে ভীতি ও
শঙ্কার খবর প্রকাশিত হচ্ছে। গাজীপুরে সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রধান বাধা এসপি ও
খুলনায় পুলিশ কমিশনার। তাদের নির্দেশে দুই সিটিতে পুলিশি তাণ্ডব চলছে।
গণতন্ত্রকে নিরুদ্দেশ করার ফাইনাল কল দিতেই এই পুলিশ কর্মকর্তাদের দিয়ে
ভোটারদের ওপর দুরমুস চালানো হচ্ছে। সরকার নৌকার প্রার্থীকে জেতাতে সরকারের
প্রশ্রয়ে পুলিশ হয়ে উঠেছে স্বেচ্ছাচারী, অনিয়ন্ত্রিত ও বেপরোয়া। ভরাডুবির
ভয়ে সরকার অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন চায় না।'
রিজভী বলেন, 'আওয়ামী শাসন কখনোই ভোটাধিকার, নির্বাচন ও গণতন্ত্রের জন্য
স্বাস্থ্যকর হয়নি। গণমাধ্যমে একতরফা ফলাফল ঘোষণা করাই প্রধানমন্ত্রীর
অভিপ্রায়। নির্বাচন কমিশন যেখানে দুই সিটির নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করতে
পারেনি, ভোটারদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে সেখানে তাদের দিয়ে আগামী
জাতীয় নির্বাচন কিভাবে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে তা সহজেই অনুমান করা
যায়। আমি বিএনপির পক্ষ থেকে অবিলম্বে বিএনপিসহ বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের
গ্রেফতার ও হয়রানি বন্ধ করতে নির্বাচন কমিশনের প্রতি আহবান জানাচ্ছি।
অবিলম্বে গ্রেফতারকৃতদের মুক্তি দাবি করছি। একইসাথে সুষ্ঠু নির্বাচনের
স্বার্থে গাজীপুরের এসপি ও খুলনার পুলিশ কমিশনারকে প্রত্যাহারের জোর দাবি
জানাচ্ছি। অন্যত্থায় দুই সিটিতে অবাধ, সুষ্ঠু ও ভয়মুক্ত পরিবেশে নির্বাচন
অসম্ভব।'
সূত্রঃ ডিএন
সূত্রঃ ডিএন
0 মন্তব্যসমূহ