মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা,
আসসালামু আলাইকুম। আশা করি আপনি নিত্যদিনের অকল্পনীয় পরিশ্রমের পরেও মানুষের দোয়ায় ভালো আছেন। আপনাকে আমরা ভালোবাসি, শ্রদ্ধা করি । কারন ভালোবাসার শক্তি বড় শক্তি। সেই ভালবাসা শক্তি নিয়েই আপনার কাছে অধমের এই লেখনি। কারন আপনি দেশের প্রধানমন্ত্রী হলেও আপনাকে দূরের কেউ মনে হয়নি কখনো। এদেশের কোটি কোটি মানুষের হৃদয়ে আপনার স্থান । হৃদয়ের এই স্থানটি আবার অধিকাংশেরই স্থায়ী, অপরিবর্তনযোগ্য। কিন্তু সেটিই সয্য হচ্ছে না একটি মহলের। নানা কৌশলে তারা আপনার সিদ্ধান্তকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করছে। তারা প্রকৃত মুজিব আদর্শের সৈনিকদের ধ্বংস করার অপতৎপরতা চালাচ্ছে।
প্রিয় নেত্রী,
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে সাড়া দিয়ে যারা মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিল ও সংগঠটিত করেছে। যারা শত অত্যাচারের পরও আওয়ামীলীগকে বাঁচিয়ে রাখতে কাজ করেছে । আজ আপনার সেই সন্তানদের নাম ও নিশানা নিশ্চিহ্ন করা হচ্ছে। অথচ আপনি সেই সন্তানদের কথা ভেবে নির্ঘুম রাত কাটান।
মা, সারা দেশব্যাপী মাদক বিরোধী অভিযানকে যখন দেশের আবাল বৃদ্ধ বনিতা স্বাগত জানিয়েছেন। ঠিক তখনই আপনার এই সিদ্ধান্তকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে উঠে পড়ে লেগেছে প্রশাসনের ভেতর ঘাপটি মেরে থাকা একাত্তরের দূসররা। তারা ইয়াবা বিরোধী অভিযানের দোহাই দিয়ে আপনার সন্তানকে হত্যা করেছে। ২৭ মে গভীররাতে টেকনাফে এমনি একটি ঘটনা ঘটেছে। প্রশাসনকে ভুল তথ্য দিয়ে আজন্ম আওয়ামীলীগ পরিবারের অহংকার টেকনাফ যুবলীগের সাবেক সভাপতি ও পর পর তিন তিন বার নির্বাচিত কাউন্সিল’র একরামকে হত্যা করা হয়েছে । মাগো এমন চলতে থাকলে আওয়ামী লীগ তথা বাংলাদেশ নিঃশেষ হতে খুব বেশী সময় লাগবে না।
মা, আপনি তো আপনার সন্তানদের চিনেন। আপনি তো আমাদের সকল খবর রাখেন । আপনি বলেন, আপনার যেই সন্তান আজন্ম বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে ছড়িতে দিতে কাজ করেছে। আপনার যে সন্তান দু:সময়ের মধ্যেও টেকনাফ যুবলীগকে মডেল ইউনিটে পরিনত করেছিল। আপনার সেই সন্তান একরামুল হক কি ইয়াবার মত মরণ নেশার সাথে জড়িত থাকতে পারে। যার চাল চুলো নেই, থাকার জন্য বাড়ি নেই। পরিবার ও সন্তানদের লেখাপড়া চালানোর জন্য যাকে নির্ভর করতে হয় ভাইদের উপর, বন্ধুদের উপর। আওয়ামীলীগকে ভালবেসে জনগনকে সেবা করতে গিয়ে দেনার দায়ে যার সব শেষ তাকে বানানো হচ্ছে ইয়াবা গড়ফাদার! হায় সেলুকাস।
মাগো, আমি আমার কান্না রুখতে পারছি না। একরামের মৃত্যুতে আমার হৃদয়ে ক্ষণে ক্ষণে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। এ হত্যা মানতে পারছি না। কি করে রুখব বলুন। আমি যখন কক্সবাজার জেলা আওয়ামী যুবলীগের সাধারন সম্পাদক, তখন একরাম টেকনাফ যুবলীগের সভাপতি। তাই সাংগঠনিক কারনেই আমি তাকে কাছ থেকে চিনি। একরামের কাথা ভাবলেই চোখের সামনে চলে আসে তার দুই মেয়ের ছবি। কি হবে এখন তাদের ? কি ছিল তাদের বাবার অপরাধ ? তবে কি বর্তমান প্রতিহিংসার রাজনীতি কেড়ে নিল আওয়ামীলীগের দু”সময়ের কান্ডারিকে। তিনি দুঃসময়ে আওয়ামী লীগেরএকজন খাঁটি নির্লোভ যোদ্ধা ছিলেন। হয়তবো এইকারণেই মাদক বিরোধী অভিযান প্রশ্ন বিদ্ধ করতে শকুনের দৃস্টি এড়াতে পারেনি একরাম।
একরামের মৃত্যু আওয়ামী লীগের ত্যাগী বিশ্বত্বদের জন্যঅশনি সংকেত। একরামকে হত্যার মধ্য দিয়ে তবে কি টেকনাফকে আওয়ামীলীগ শূণ্য করার কাজ শুর হয়ে গেল। বড় ভয় হচ্ছে সাবরাং ইউপি চেয়ারম্যান ও যুবলীগ নেতা নুর হোসেন এবং টেকনাফ যুবলীগের সভাপতি নুরুল আলমের কথা ভেবে। তাদের দিকেও তো একটি মহলের কুদৃষ্টি রয়েছে। কিন্তু আমি জানি, মা , তুমি থাকতে ওরা কখনো এটি পারবে না।
মা, এখনো সময়, লাগাম টেনে ধর তাদের। যারা প্রকৃত মুজিব আর্দশের সৈনিকদের হত্যা করার পরিকল্পনা করেছে। মা শুনেছি, ২০০৮ সালে একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তার সঙ্গে একরামের ব্যক্তিগত দ্বন্দ ছিল। সেই সময় তার বিরুদ্ধে মাদকের মামলাও হয়েছিল। যদিও মামলাটিতে একরাম নির্দোর্ষ প্রমানিত হয়। সেই সূত্রে ২০১০ সালে নাম ওঠে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের প্রথম তালিকাতেও। কিন্তু ওইগোয়েন্দা কর্মকর্তার বদলির পর সেটা সংশোধন হওয়ায় নিরাপরাধ এ জনপ্রিয় কমিশনারের নাম বাদ পড়ে হাল নাগাদ সব তালিকা থেকে।
মা, একরামের পরিবার টেকনাফ আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা পরিবার। এখানকার মুক্তিযুদ্ধে সংগঠকও তারা। টেকনাফের প্রথম বনেদি মুসলিম শাসকও তার দাদা। পাহাড় কেটে নিজ টাকায় যিনিতৈরী করেছিলেন দমদমিয়া সড়ক।
মাগো , আপনার পুলিশ, র্যাব, বিজিবি কি তাদের দেখতে পায়না । যারা স্বীকৃত ইয়াবা ব্যবসায়ী। যাদের কাছে কালো টাকার পাহাড় রয়েছে। যারা শূন্য থেকে আকাশে ভাসছে, বাসের কন্ট্রাক্টর থেকেবিলাস বহুল বাসের মালিক, ঝুপড়ি থেকে ফ্ল্যাটের মালিক,,,লোকাল বাসের যাত্রীরা বিমানের নিয়মিত প্যাসেঞ্জার,গাছ চোর থেকে নোহা,কারের মালিক।
মা আপনার মাধ্যমেই প্রশাসনকে বলতে চাই , যদি সমাজ থেকে মাদক নির্মূল করতে চান। তবে প্রকৃত ইয়াবাকারবারীদের শেষ করুন। পারলে টেকনাফের সাইফুল করিম, এমপি বদির ভাই আবদুর রহমান ও আবদুর শুক্কুর, কক্সবাজার শহরের শাহাজাহান আনসারী ও কামাল আনসারী, লারপাড়ার আবুল কালাম কন্ট্রাকটার, পেকুয়ার মগনামার ওয়াসিমের মত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ে তালিকাভুক্ত ও সমাজ স্বীকৃত ইয়াবাকারবারীদের ক্রসফায়ার দিন। দয়া করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনাকে সিদ্ধান্তকে কলংকিত করবেন না। একরামের মত নিরাপরাধ ও জনপ্রিয় নেতাকে ক্রসফায়ার দিয়ে আওয়ামলীগ সরকার তথা জাতির জানিক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুরের কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গায়ে কালিমা লেপনের চেষ্টা করবেন না।
যদি একরামের রক্তের বিনিময়ে বাংলাদেশ ইয়াবা মুক্ত হয় তবে আমাদের কষ্ট কিছুটা হলেও লাঘব হবে। এই প্রত্যাশায় রইল ।
ইতি
মাহাবুবুর রহমান চৌধুরী, (পৌর মেয়র ), কক্সবাজার পৌরসভা। সাংগঠনিক সম্পাদক, কক্সবাজার জেলা আওয়ামীলীগ। সাবেক সাধারণ সম্পাদক- কক্সবাজার জেলা যুবলীগ ও কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগ।
0 মন্তব্যসমূহ