বিএন ডেস্কঃ
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রার্থীদের
সাথে দুই রকম আচরণ করছেন নির্বাচন কমিশন। বিএনপির পক্ষ থেকে এরকম একটা
অভিযোগ থাকলেও বরবারই সেটা অস্বীকার করেছে কমিশন। এই অবস্থার মধ্যেই বিধি
ভেঙ্গে রোববার সরকার দলীয় প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণা চালিয়েছেন আওয়ামী লীগের
কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল ও খুলনা সিটি
করপোরেশনের নির্বাচিত মেয়র তালুকদার আবদুল খালেক। বিধি ভেঙ্গে এমন প্রচারণা
কেন? জানতে চাইলে তারা ‘সরি’বলেছেন। এমতবস্থায় প্রশ্ন হচ্ছে, সরি বললেই কি
বিধি ভাঙার বিচার শেষ হয়ে যায়?
নির্বাচন কমিশন শনিবার রাত ১২টা থেকে গাজীপুর সিটি করপোরেশন এলাকা থেকে
বহিরাগত ব্যক্তিদের চলে যাওয়ার নির্দেশনা দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে। ২৬ জুন
ভোটের দিন পর্যন্ত ওই এলাকায় বহিরাগত ব্যক্তিদের চলাফেরায় এই বিধিনিষেধ
বলবৎ থাকবে। ২২ জুন এ-সংক্রান্ত পরিপত্র জারি করে নির্বাচন কমিশন।
কিন্তু কমিশনের এই নির্দেশনা ভেঙে গাজীপুরে নির্বাচনী কর্মকাণ্ড
পরিচালনা করেছেন সরকারদলীয় নেতারা। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক
সম্পাদক মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল আজ নগরের হারিকেন এলাকায় মতবিনিময় সভা
করেছেন। সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্যও দিয়েছেন। অন্যদিকে, খুলনা সিটি করপোরেশনের
নির্বাচিত মেয়র ও খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি তালুকদার আবদুল খালেক
চালিয়েছেন নির্বাচনী প্রচার–প্রচারণা।
রোববার দুপুরে মতবিনিময় শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপ করেন মহিবুল হাসান।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন এলাকার বাসিন্দা বা ভোটার না হওয়া সত্ত্বেও সেখানে
অবস্থানের বিষয়ে সাংবাদিকেরা তাঁর কাছে জানতে চাইলে নওফেল বলেন, এ ধরনের
প্রজ্ঞাপনের বিষয়ে তার জানা নেই। আজ থেকেই যে আসা যাবে না, সেটা তিনি
জানতেন না। কাল সোমবার থেকে প্রচার-প্রচারণা বন্ধ—এটা তিনি জানতেন। এ সময়
সাংবাদিকেরা প্রজ্ঞাপনটি দেখালে তিনি বলেন, ‘সরি, আমি জানতাম না। দ্রুত চলে
যাচ্ছি। টাইম নিয়ে কনফিউজড ছিলাম। চলে যাচ্ছি, তা না হলে বিধি লঙ্ঘন হবে।’
আওয়ামী লীগের নেতা খালেক তালুকদার সভা করেন শহরের চৌরাস্তা এলাকায়। এ
ছাড়া আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলমের হারিকেন এলাকার বাসার
নিচে সংবাদ সম্মেলনে এসে উপস্থিত হন বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি ও আদালতের
আদেশে স্থগিত থাকা ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী
আতিকুল ইসলাম, শ্রমিক লীগ নেতা রায় রমেশ চন্দ্র। কিন্তু নির্দেশনার বিষয়টি
জেনে দ্রুত সেখান থেকে চলে যান তারা।
নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও আওয়ামী লীগ নেতাদের গাজীপুর
সিটি করপোরেশন এলাকায় নির্বাচনী প্রচারে আসা প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের মেয়র
প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘আমি সর্বক্ষণ নির্বাচনী প্রচারে ব্যস্ত
ছিলাম। আমি জানতামও না এই প্রজ্ঞাপনের ব্যাপারে। এই আইনের আর কোনো লঙ্ঘন
ঘটবে না। বহিরাগতদের আসার বিরুদ্ধে আমি ছিলাম সবচেয়ে সজাগ। কারণ, এখানে
সন্ত্রাসীরা যেন ভিড়তে না পারে, আমি প্রশাসনকে আগে অনুরোধ করেছিলাম।’
গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আজমতউল্ল্যা খানও বলেন, ‘খেয়াল
করিনি। গণমাধ্যম বিষয়টির দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। সে জন্য গণমাধ্যমকে ধন্যবাদ।
সুন্দর জিনিস আমাদের ধরিয়ে দিয়েছেন।’
সিইসির সাথে বৈঠকে বিএনপি
এদিকে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে আলোচনা করতে বিএনপির তিন
সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে. এম. নুরুল হুদার
সঙ্গে বৈঠকে বসেছে।
রোববার দুপুর ২টা ৫০ মিনিটে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন
খানের নেতৃত্বে দলের সদস্যরা বৈঠকে বসেছেন। প্রতিনিধিদলের বাকি দুই সদস্য
হলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান এবং বিএনপির চেয়ারপারসনের
উপদেষ্টা বরকত উল্লাহ বুলু।
আগামী মঙ্গলবার গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আজ সোমবার মধ্যরাতে এই ভোটের আনুষ্ঠানিক প্রচার শেষ হচ্ছে।
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের এবারের নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি
মনোনীত প্রার্থীসহ সাত প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তাঁদের মধ্যে
ছয়জন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মনোনীত ও একজন স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছেন।
আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন জাহাঙ্গীর আলম আর
বিএনপির প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন হাসান উদ্দিন সরকার।
এ ছাড়া গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ৫৭টি সাধারণ ওয়ার্ডের সাধারণ আসনের
কাউন্সিলর পদে ২৫৪ জন ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডের সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর
পদে ৮৪ প্রার্থী এ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এবারের নির্বাচনে
একটি ওয়ার্ডে সাধারণ আসনের কাউন্সিলর পদে একজন প্রার্থী বিনা
প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।
এবার গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে মোট
ভোটার সংখ্যা ১১ লাখ ৩৭ হাজার ৭৩৬ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার পাঁচ লাখ ৬৯
হাজার ৯৩৫ এবং নারী ভোটার পাঁচ লাখ ৬৭ হাজার ৮০১।
0 মন্তব্যসমূহ