বিএন ডেস্কঃ
তিন শর্তে বিএনপি নির্বাচনে যাবে বলে জানিয়েছেন দলের মহাসচিব মির্জা
ফখরুল ইসলাম আলমগীর। শর্তগুলো হলো, নির্বাচনের আগে সংসদ ভেঙে দেয়া,
নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠন এবং বেগম জিয়াকে মুক্তি।
আজ বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন
(বিএফইউজে) ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) একাংশ আয়োজিত ‘সংবাদপত্রের
কালো দিবসের’ আলোচনা সভায় ফখরুল এসব কথা বলেন।
ফখরুল বলেন, দেশে এখন বাকশালের চেয়েও ভয়ংকর শাসন চলছে। দেশের বর্তমান
সঙ্কট থেকে উত্তরণের জন্য আবারো জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার আহ্বান জানান তিনি।
সভায় মির্জা ফখরুল বলেন, বর্তমান সঙ্কট থেকে উত্তরণের জন্য জাতীয় ঐক্য
খুব বেশী দরকার। খুব বেশী পয়েন্ট নয়। কয়েকটি পয়েন্টে আমরা সেই ঐক্য সৃষ্টি
করতে পারি। মির্জা ফখরুল দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, আগামী নির্বাচন
আপনাদেরকে আদায় করে নিতে হবে। আর আদায় করে নিতে হলে জনগণের কাছে যেতে হবে।
এর কোনো বিকল্প নেই। বর্তমান পরিস্থিতিতে দেশের গণমাধ্যমের অবস্থা আরো
ভয়াবহ বলে তিনি মন্তব্য করেন।
বিএফইউজের সভাপতি রুহুল আমিন গাজীর সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য দেন আমার
দেশ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমান, বিএফইউজের মহাসচিব এম
আব্দুল্লাহ, সাবেক সভাপতি শওকত মাহমুদ, ডিইউজের সভাপতি কাদের গনি চৌধুরী,
সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম প্রমুখ।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমরা সবার দ্বারে দ্বারে যাচ্ছি। আমরা
সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে যাচ্ছি। আমরা বলছি, আপনারা দেশটাকে বাঁচান।
আমরা মুরুব্বিদের কাছে যাচ্ছি। বলছি, আপনারা দেশের অভিভাবক হিসেবে দায়িত্ব
পালন করেন। দেশটাকে রক্ষা করেন।
তিনি বলেন, আমি অবশ্যই নির্বাচন চাই। কিন্তু এর আগে সংসদ ভেঙে দিতে হবে,
নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের আয়োজন করতে হবে এবং বেগম জিয়াকে মুক্তি
দিতে হবে। এই কথাগুলো আমরা বারবার বলেছি। কিন্ত তারা (আওয়ামী লীগ) কথা
বলবে না এবং আসবে না। বলছে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার হয়ে যাবে। বিএনপি না
আসলে কি হবে। অন্য দল আসবে। এটাই তো তারা (আওয়ামী লীগ) চায়।
তিনি বলেন, আমারা বুঝতে পারছি না আসলে কি আওয়ামী লীগ সরকার চালাচ্ছে, না
কি অন্য কেউ? তিনি আলোচনায় আসার জন্য সরকারের প্রতি আহবান জানান।
ইসির সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘কাউকে ছাড় দেয়া হবে না’ নির্বাচন
কমিশনারের এ বক্তব্যে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন,
গাজীপুরের এসপিকে সরানোর জন্য আমরা প্রথম দিন বলেছি। আর যেদিন জামায়াত
নির্বাচনের স্থগিতের ঘোষণা দিল ওই দিন জামায়াত প্রার্থীসহ নেতা-কর্মীদের
গ্রেফতার করা হলো। এছাড়া হাইকোর্ট থেকে যেদিন নির্বাচন স্থগিতের ঘোষণা আসলো
সেইদিন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমানসহ ২১৩ জনের বিরুদ্ধে
মামলা দেয়া হলো। এই হলো ইসির সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নমুনা!
নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এটা একটি কঠিন পথ। এটা মনে
করার কোনো কারণ নেই যে, এই পথ দিয়ে নির্বাচন হবে। আমরা ক্ষমতায় যাবো।
আপনাদেরকে আদায় করে নিতে হবে। আর আদায় করে নিতে হলে জনগণের কাছে যেতে হবে।
এর কোনো বিকল্প নেই।
মির্জা ফখরুল আরো বলেন, সাংবাদিক নেতারা সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে,
তারা সারা বাংলাদেশে যাবেন। আমরাও সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে, আমরা বাংলাদেশের সব
জায়গায় যাবো। মানুষকে বের করে আনার চেষ্টা করবো। মানুষকে জাগ্রত করার
চেষ্টা করবো।
তিনি বলেন, মাহমুদুর রহমানের সঙ্গে এখানে বসে অনেক কথা হচ্ছিল। তিনি
অনেক সময় হতাশায় ভোগেন, আমিও ভোগি। আমরা সবাই কম বেশী ভোগি। দলের অনেকে এসে
বলেন, স্যার কী হবে? হতাশ হয়ে যাই। আমি বলি, হতাশাই শেষ কথা হতে পারে না।
লড়াই করো। লড়াই করতে করতে একটা জায়গায় গিয়ে আমরা পৌঁছাবোই। বিএনপি
চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে আদালতকে ব্যবহার করে তাকে
আটকে রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন মির্জা ফখরুল।
সংবাদ পত্রের কালো দিবস প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ১৯৭৫ সালে ৪ টি পত্রিকা
রেখে সকল পত্রিকা বন্ধ করে দেয়া হয়। আর ওই সময়ের পরিস্থিতির চেয়ে এখনকার
পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ। কেনো ভয়াবহ? কারণ ওই সময় ঘোষণা দিয়ে পত্রিকা বন্ধ করে
দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু আজকে প্রতারণা করে, মানুষকে বোকা বানিয়ে এবং
গণতন্ত্রের আবরণে আরো বেশী করছে।
১৬ জুনের পরে সাংবাদিকরা ফল ও কাগজ বিক্রি করেছে উল্লেখ করে মির্জা
ফখরুল বলেন, আজকে আমাদের রাজনৈতিক কর্মীরা রিক্সা চালায়, তারা হকার হয়েছে
এবং অনেকে নাইট গার্ডের কাজ করে। এরকম অসংখ্য দেখতে পারেন আপনারা। কি ভয়াবহ
পরিস্থিতি!
বর্তমান দেশের পরিস্থিতি তুলে ধরে নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, কেউ
এসে প্রতিরোধ করবে না। আমাদেরকেই ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রতিরোধ করতে হবে। খালেদা
জিয়া বের হয়ে এসে যে বাঁশি বাজাবেন। সেই বাঁশিতেই হাজার হাজার লোক রাজপথে
নেমে আসবে। এটা আমরা বিশ্বাস করি এবং এটা ঘটবে।
সূত্রঃ ডি/এন
0 মন্তব্যসমূহ