বি,এন ডেস্কঃ
টঙ্গী কলেজ সড়ক ধরে এগোতে থাকলে এখন আপনাকে অভ্যর্থনা জানাবে অজস্র পোস্টার। রাস্তার দুপাশে বেঁধে রাখা সাদা-কালো পোস্টার জানান দিচ্ছে, নির্বাচন এসে গেছে। মাথার ওপরে আকাশ দেখতে কষ্ট পেতে হয়। অথচ পাঁচ দিন আগেও চেহারাটা ছিল অন্য রকম। ২৬ জুন গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাচন। ১৬ জুন থেকে স্থগিত হয়ে যাওয়া এ নির্বাচনের প্রচার আবার শুরু হয়েছে। তাই সেজে উঠেছে দেশের সবচেয়ে বড় এ সিটি।
টঙ্গী কলেজ সড়ক ধরে এগোতে থাকলে এখন আপনাকে অভ্যর্থনা জানাবে অজস্র পোস্টার। রাস্তার দুপাশে বেঁধে রাখা সাদা-কালো পোস্টার জানান দিচ্ছে, নির্বাচন এসে গেছে। মাথার ওপরে আকাশ দেখতে কষ্ট পেতে হয়। অথচ পাঁচ দিন আগেও চেহারাটা ছিল অন্য রকম। ২৬ জুন গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাচন। ১৬ জুন থেকে স্থগিত হয়ে যাওয়া এ নির্বাচনের প্রচার আবার শুরু হয়েছে। তাই সেজে উঠেছে দেশের সবচেয়ে বড় এ সিটি।
কলেজ রোড, আউচপাড়া, সবজিবাজারের যেখানেই গেছি, সর্বত্র পোস্টারে ছাওয়া।
এসব পোস্টারের মধ্যে প্রধান দুই প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির হাসান উদ্দিন সরকার
বা আওয়ামী লীগের জাহাঙ্গীর আলমের পোস্টার কিন্তু বেশ কম। এই পোস্টারগুলোর
মধ্যে বেশির ভাগই ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থীদের।
যে অঞ্চলটি দিয়ে গতকাল মঙ্গলবার যাত্রা শুরু, সেটি সিটির ৫৪ নম্বর
ওয়ার্ডের মধ্যে পড়েছে। ওই ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ-মনোনীত প্রার্থী এম এম হেলাল
উদ্দিন। এখানে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মো. নাসির উদ্দিন মোল্যা।
তবে তিনি হেলালকে আওয়ামী লীগের বলতে রাজি নন। দল সুনির্দিষ্টভাবে কাউকে
মনোনয়ন দেয়নি বলেই দাবি নাসির উদ্দিনের। তবে হেলাল বললেন, ‘দল আমাকে মনোনয়ন
দিয়েছে। আমি নিজের জন্য যেমন, তেমনি সিটি মেয়র পদে নৌকা মার্কার ভোট
চাইছি। তবে দুর্ভাগ্যজনক, নাসির উদ্দিন দল করলেও তিনি নিজের ভোট চাওয়ার
পাশাপাশি ধানের শীষের ভোট চাইছেন।’
হেলালের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে নাসির বললেন, ‘ছাত্রজীবন থেকে ছাত্রলীগ করে
এসেছি। কলেজে ভিপি পদে নির্বাচন করেছি। হেলালের ভাইদের আমি ছাত্রলীগে
এনেছি।’ বিএনপির পক্ষে ভোট চাওয়া প্রসঙ্গে নাসিরের বক্তব্য, ‘আমার সব কর্মী
নৌকা মার্কার পক্ষে কাজ করছে। বিএনপির কোনো সমর্থক যদি আমাকে সমর্থন করে,
সেখানে আমার দোষ কোথায়?’
গাজীপুর সিটির কাউন্সিলর পদে শাসক দল এমন প্রার্থীজটে থাকলেও প্রধান
প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি কিন্তু ওয়ার্ডে একক প্রার্থী দিতে পেরেছে। তবে ১২টি
ওয়ার্ডে বিএনপি-সমর্থিত কোনো প্রার্থী নেই।
৫৪ নম্বর ওয়ার্ড ভোটারসংখ্যার নিরিখে সিটির দ্বিতীয় বৃহত্তম ওয়ার্ড।
এখানে বিএনপির প্রার্থী শেখ মো. আলেক। গতবার আওয়ামী লীগের এই দুই কাউন্সিলর
প্রার্থীর মাঝখান থেকে তিনি বিজয়ী হন। এবারও বিজয়ের আশাবাদী। বললেন,
‘তাদের দুই প্রার্থী। আমি স্বাভাবিকভাবেই কিছুটা সুবিধাজনক অবস্থায় আছি।’
মোট ৫৭ নম্বর ওয়ার্ড নিয়ে গাজীপুর সিটি করপোরেশন। আর নারী কাউন্সিলরদের
জন্য সংরক্ষিত ১৯ ওয়ার্ড। ৫৭ ওয়ার্ডের মধ্যে ৪৪ নম্বর ওয়ার্ডে আওয়ামী
লীগ-সমর্থিত প্রার্থী মাজহারুল ইসলাম বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ইতিমধ্যে
নির্বাচিত হয়ে গেছেন। বাকি যে ৫৬টি সাধারণ ওয়ার্ড আছে, সেগুলোর সব কটিতে
শাসক দল আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থী। গতকাল পাঁচটি ওয়ার্ড ঘুরে ৫৪ নম্বর
ওয়ার্ডের মতো দলটির প্রার্থীদের পারস্পরিক কাদা-ছোড়াছুড়ি লক্ষ করা গেছে।
সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ড মিলিয়ে ৭৬ জন কাউন্সিলর এখন গাজীপুর সিটি
করপোরেশনের পরিষদে। গত নির্বাচনে এ সিটিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আজমত
উল্লা খানকে লক্ষাধিক ভোটে হারিয়ে নির্বাচিত হন বিএনপির আবদুল মান্নান। তবে
পরিষদে ৭৬টি কাউন্সিলরের মধ্যে ৪০ জনই আওয়ামী লীগের। গত নির্বাচনে কোনো
ওয়ার্ডে একক প্রার্থী দিতে পারেনি দলটি। এরপরও বেশির ভাগ কাউন্সিলর ওই
দলের।
আজমত উল্লার বক্তব্য, ‘মূলত সময়ের অভাবে এটি সম্ভব হয়নি। যে চারজন প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আছেন, তাঁরা সবাই নিবেদিতপ্রাণ কর্মী, সন্দেহ নেই। মেয়র নির্বাচনে এর কোনো প্রভাব পড়বে না বলে আমার বিশ্বাস।’
৫৭ নম্বর ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের চার প্রার্থীর মধ্যে একজন নজরুল ইসলাম দলের প্রতি তাঁর আনুগত্য এবং মেয়র প্রার্থীর প্রতি তাঁর সমর্থনের কথা নিশ্চিত করতে এসেছিলেন জাহাঙ্গীর আলমের সিটির হারিকেনের বাড়িতে। জাহাঙ্গীর আলম তাঁর সব কথা শুনলেন, তবে কোনো মন্তব্য করলেন না।
গাজীপুর আওয়ামী লীগের এক নেতা বললেন, দল একজন করে মনোনয়ন দিলেও একাধিক প্রার্থী থেকে ভালো হয়েছে। কাউন্সিলর প্রার্থীরাই কেন্দ্রে ভোটার নিয়ে আসায় বড় ভূমিকা রাখেন। তাই এটি বরং ভালো।
গত মেয়র নির্বাচনে পরাজয়ে কাউন্সিলর পদে একক প্রার্থী না দিতে পারাটা
একটি কারণ বলে বিবেচনা করা হয়েছিল। এবারের নির্বাচনে একক প্রার্থী দেওয়ার
ব্যর্থতা কি নির্বাচনে প্রভাব ফেলবে? আওয়ামী লীগের প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম
অবশ্য মনে করেন, একাধিক প্রার্থী কোনো সমস্যা নয়। তিনি গতকাল প্রথম আলোকে
বলেন, ‘কোনো প্রার্থী দলের মেয়র প্রার্থীর বিরুদ্ধে আছেন বলে আমার মনে হয়
না। আজ (গতকাল) পথসভায় নেমে আমি বলে দিয়েছি, নিজেরা নিজেদের ভোট করেন, তাতে
কোনো অসুবিধা নেই। তবে কেউ কারও বিরুদ্ধে মিথ্যা কিছু রটাইয়েন না। এটা
সবাই মানবেন বলে আমার বিশ্বাস।’
তবে কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যে কোন্দল কিন্তু থেমে নেই। ৪৩ নম্বর
ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী আসাদুর রহমান কিরণ। তিনি সিটিতে
ভারপ্রাপ্ত মেয়র ছিলেন। গত নির্বাচনে দলীয় বিদ্রোহী প্রার্থী আজমেরি খান
টুটুলকে পরাজিত করেন তিনি। টুটুল এবারও প্রার্থী হয়েছেন। টুটুল বলেন,
‘আসাদুর রহমান তো জয় বাংলা আর ধানের শীষ বলে ভোট চাইছেন। মেয়র প্রার্থীর
কোনো কথা তাঁর মুখে নেই। আমার কাছে নৌকা মার্কা আগে।’
বিএনপি
তবে আসাদুর রহমান অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আজমেরি টুটুলের বাড়িতেই বিএনপি আছে। আমি অবশ্যই মেয়র পদে নৌকা মার্কার ভোট চাইছি।’
সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে দলীয় প্রতীক আছে। তবে কাউন্সিলর প্রার্থীরা এসব প্রতীক ব্যবহার করতে পারেন না। ওয়ার্ডে দলগুলো তাদের প্রার্থীদের সমর্থন দেয়। গাজীপুর সিটির কাউন্সিলর পদে শাসক দল এমন প্রার্থীজটে থাকলেও প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি কিন্তু বেশির ভাগ ওয়ার্ডে একক প্রার্থী দিতে পেরেছে। গাজীপুর জেলা বিএনপির জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি সালাউদ্দিন সরকার বললেন, ‘১২টি ওয়ার্ডে আমাদের দলীয় কোনো প্রার্থী নেই।’
তবে আসাদুর রহমান অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আজমেরি টুটুলের বাড়িতেই বিএনপি আছে। আমি অবশ্যই মেয়র পদে নৌকা মার্কার ভোট চাইছি।’
সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে দলীয় প্রতীক আছে। তবে কাউন্সিলর প্রার্থীরা এসব প্রতীক ব্যবহার করতে পারেন না। ওয়ার্ডে দলগুলো তাদের প্রার্থীদের সমর্থন দেয়। গাজীপুর সিটির কাউন্সিলর পদে শাসক দল এমন প্রার্থীজটে থাকলেও প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি কিন্তু বেশির ভাগ ওয়ার্ডে একক প্রার্থী দিতে পেরেছে। গাজীপুর জেলা বিএনপির জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি সালাউদ্দিন সরকার বললেন, ‘১২টি ওয়ার্ডে আমাদের দলীয় কোনো প্রার্থী নেই।’
স্থানীয় সরকার নির্বাচনে কাউন্সিলর প্রার্থীদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার
কথা স্মরণ করে সালাউদ্দিন সরকার বললেন, ‘এটা আমাদের একটি নেতিবাচক দিক।
সবখানে প্রার্থী থাকলে ভালো হতো।’
কোন ১২ ওয়ার্ডে প্রার্থী নেই, তা সুনির্দিষ্ট করে বলতে পারেননি সালাউদ্দিন সরকার।
কোন ১২ ওয়ার্ডে প্রার্থী নেই, তা সুনির্দিষ্ট করে বলতে পারেননি সালাউদ্দিন সরকার।
তবে বিএনপির মিডিয়া সেলের পক্ষ থেকে জানানো হয়, গাছার ৩৩, ৩৫, ৩৬ ও ৩৮
নম্বর ওয়ার্ডে, কোনাবাড়ীর ৮, ৯ ও ১০ নম্বর ওয়ার্ডে এবং কাশিমপুরের দুটি
ওয়ার্ডে দল-সমর্থিত প্রার্থী নেই।
বিএনপির গাজীপুর সিটি নির্বাচনে প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক এবং কেন্দ্রীয়
সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন ১২টি ওয়ার্ডে প্রার্থী না থাকার কথা
জানান। এর কারণ হিসেবে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘অনেক জায়গায় দলের যোগ্য
প্রার্থীদের নামে একাধিক মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে, যাতে তাঁরা নির্বাচন না
করতে পারেন। এ জন্য অনেকে প্রার্থী হতে আগ্রহী হননি।’
বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ফজলুল হক মিলন অবশ্য মনে করেন, প্রার্থী না থাকাটা কোনো সমস্যা সৃষ্টি করবে না।
/প্রথম আলো
0 মন্তব্যসমূহ