বিএন ডেস্কঃ
দলের চেয়ারপারসন কারাবন্দী বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি ও
সুচিকিৎসার দাবিতে বৃহস্পতিবার সারাদেশের জেলা ও মহানগরে বিক্ষোভ কর্মসূচির
ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এই
ঘোষণা দিয়ে বলেন, বাংলাদেশে চলছে এক আজব শাসন। এখানে বিরোধী দল, বিরোধী মত ও
বিরোধী বিশ্বাসের মানুষরা দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ
অবৈধ ক্ষমতার শক্তিতে এখন দেশে দন্ডমুন্ডের কর্তা সেজে বসেছে। দেশের
সর্বজনপ্রিয় নন্দিত নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে শুধু অন্যায়ভাবে সাজাই দেয়া
হয়নি, এখন তার ওপর চলছে নানা কায়দায় অমানবিক নিষ্ঠুর নির্যাতন। তার শারীরিক
অসুস্থতার যাতে যথাযথ চিকিৎসা না হয় তার জন্য সরকার এমন কোনো ফন্দি নাই যা
আঁটছে না। তিনি সরকারকে বলেন, অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য ক্ষমতা থেকে
সরে গিয়ে তত্বাবধায়ক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করুন। নইলে লেট
ক্লিয়ারিং এর জন্য অনেক বেশি ডেমারেজ দিতে হবে।
আজ মঙ্গলবার সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে রিজভী এসব বলেন।
নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন,
চিকিৎসাকে বিলম্বিত করার জন্য মন্ত্রীদের দিয়ে নানা কাহিনী শোনানো হচ্ছে
মানুষকে। এখন শুধু কারা কর্তৃপক্ষই নয় এর সাথে যুক্ত হয়েছে সরকারের
বাণিজ্যমন্ত্রী, সেতু ও যোগাযোগমন্ত্রী, আইনমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
তারা এমন কথা বলছেন, যেন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বেসরকারি হাসপাতালে
চিকিৎসা হলে তাতে মনে হয় মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যাবে। বারবার কারাবিধির কথা
বলে মন্ত্রীরা বেগম জিয়াকে তার যথাযথ চিকিৎসা নিতে বিষয়টিকে গায়ের জোরে
আটকাতে চাচ্ছে। কারাবিধি নিয়ে মন্ত্রীদের কথায় মনে হয় তারা যেন ধর্মীয় বাণী
আওড়াচ্ছেন যেটির বরখেলাপ হলে মহাপাপ হয়ে যাবে।
রিজভী বলেন, বেগম খালেদা জিয়া ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে চান
এইজন্য যে, ইতিপূর্বে তিনি সেখানে চিকিৎসা নিয়েছেন। তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক,
উন্নতমানের পরীক্ষা নিরীক্ষার যন্ত্রপাতি-যেগুলো সুযোগ ইউনাইটেড হাসপাতালে
রয়েছে বলেই তিনি সেখানে চিকিৎসা করাতে চান। রোগী সাধারণতঃ আস্থাভাজন
চিকিৎসকের কাছেই যেতে চান। আস্থা তৈরি হয় চিকিৎসক কর্তৃক রোগীর আরোগ্য
হওয়া, এরপর সেই চিকিৎসকের কাছে বারবার ফলোআপ ইত্যাদির কারণে।
তিনি বলেন, অতীত অভিজ্ঞতার আলোকেই রোগী তার আস্থাভাজন চিকিৎসক ও
হাসপাতালের ওপর নির্ভরশীল হন। যেমন রাষ্ট্রপতি স্বাচ্ছন্দবোধ করেন
সিঙ্গাপুর অথবা লন্ডনে গিয়ে চিকিৎসা করার- রাষ্ট্রের যত টাকা খরচ হোক না
কেনো। কিন্তু দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া নিজ দেশেরই একটি হাসপাতালে
চিকিৎসা করাতে চাচ্ছেন যেখানে তার যথাযথ চিকিৎসা হবে বলে তিনি মনে করেন। আর
এই জন্যই রাষ্ট্রের কোনো টাকা লাগবে না - তার আত্মীয়-স্বজনরাই চিকিৎসার
ব্যয় বহন করবে বলে সুস্পষ্টভাবে জানিয়েছেন।
বিএনপির শীর্ষ এই নেতা বলেন, ১৮৯৪ সালে কারাবিধি যখন তৈরী হয় তখন
ইউনাইটেড বা স্কয়ার হাসপাতাল ছিল না। কিন্তু এখন বেসরকারি হাসপাতালে সেবার
মান উন্নতমানের বলেই মানুষ সেখানে ভিড় করে। সরকারি হাসপাতালে বিশেষজ্ঞ
ডাক্তার থাকলেও সেবার মান এত নিন্মমানের যে মানুষ জমি-জায়গা বিক্রি করে
হলেও বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসে। বিদ্যমান কারাবিধিতেই বর্তমান
প্রধানমন্ত্রী স্কয়ারের ন্যায় বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছিলেন, এ
বিষয়টি আইনমন্ত্রী, সেতুমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এড়িয়ে যান। কারণ শেখানো
বুলি ছাড়া মন্ত্রীদের করার কিছু নেই।
রিজভী বলেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন তিনি (বেগম জিয়া) রাজী হলে
সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে তাকে নেয়া যেতে পারে। অর্থাৎ সরকার তাকে হাতের
মুঠোর মধ্যে রাখার নিশ্চিত করতে চায় বলেই এর বাইরে চিকিৎসার ব্যবস্থা করাতে
চায় না। সেজন্যই আমরা বলেছি বেগম খালেদা জিয়ার অসুস্থতাকে আরো গুরুতর, আরো
বিপদজনক অবস্থার দিকে ঠেলে দেয়ার জন্যই সরকার গড়িমসি করছে।
দায়িত্বজ্ঞানহীন উক্তি, তথ্য সন্ত্রাসের আশ্রয় নিয়ে মন্ত্রীরা জনমনে
অপপ্রচারের দ্বারা বিভ্রান্তির সৃষ্টির অপপ্রয়াসে লিপ্ত রয়েছেন।
তিনি আরো বলেন, মানবতাবিরোধী অমানবিক নীতি যাদের রাজনীতি তারা জননন্দিত
নেত্রী বেগম জিয়ার গুরুতর অসুস্থতা নিয়ে তাচ্ছিল্য করবে এটাই স্বাভাবিক।
সহমর্মিতা, অন্যের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ, অন্যকে মর্যাদাদান, এদের ঐতিহ্যে নেই।
মনুষ্যত্বের সকল চিহ্ন এরা মুছে ফেলেছে। সেজন্য রাজনৈতিক বিরোধীদের ধরাতল
থেকে অদৃশ্য করা, বন্দুক যুদ্ধের নামে হত্যা করা, শারীরিক ক্ষতি, মিথ্যা
মামলা, নির্বিচারে গ্রেফতার, ব্যাপকভাবে নির্যাতন, নারকীয় অত্যাচার,
রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে সাজা, আটক, আইন ও শৃঙ্খলার নামে সংবাদপত্রের স্বাধীনতার
কন্ঠরোধ ইত্যাদির মাধ্যমে সরকার দেশ ও সারা দুনিয়ায় একটি অবৈধ কর্তৃপক্ষে
পরিণত হয়েছে। এত অত্যাচার, চক্রান্ত, সন্ত্রাস, খুন, বিশ্বাসঘাতকতা ও কূৎসা
রটনা সত্বেও সরকারের অনাচারের দিক থেকে জনগণের চোখকে ফেরাতে পারেনি তারা।
কিন্তু জনগণ জানে সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে বেগম জিয়াকে সুচিকিৎসা নিতে বাধা
দিচ্ছে। বেগম জিয়াকে শারীরিকভাবে নিশ্চল করার জন্যই সরকার মিথ্যা তথ্যের
ওপর ভিত্তি করে অন্যায়ভাবে সাজা নিয়ে কারাবন্দী করে রেখেছে। সরকার এক
দুরভিসন্ধিমূলক এজেন্ডা বাস্তবায়নের চেষ্টা করছে।
রিজভী বলেন, আমি সরকারের উদ্দেশ্যে বলতে চাই, এই মুহুর্তে বেগম খালেদা
জিয়াকে মুক্তি দিতে হবে। ইউনাইটেড হাসপাতালে তার যথাযথ চিকিৎসা দিতে হবে।
অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য ক্ষমতা থেকে সরে গিয়ে তত্বাবধায়ক সরকারের
কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করুন। নইলে লেট ক্লিয়ারিং এর জন্য অনেক বেশি ডেমারেজ
দিতে হবে।
কর্মসূচি:
এদিকে বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি ও সুচিকিৎসার দাবিতে আগামী ২১ জুন বৃহস্পতিবার সারাদেশে জেলা ও মহানগরীতে বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে বলে রিজভী সংবাদ সম্মেলনে জানান।
এদিকে বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি ও সুচিকিৎসার দাবিতে আগামী ২১ জুন বৃহস্পতিবার সারাদেশে জেলা ও মহানগরীতে বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে বলে রিজভী সংবাদ সম্মেলনে জানান।
সূত্রঃ ডি/এন
0 মন্তব্যসমূহ