বি,এন ডেস্কঃ
আইনের সীমাবদ্ধতার কারণে মাদকের পৃষ্ঠপোষক, মদদদাতা তথা গডফাদারদের ধরতে পারছে না বলে দাবি করছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। প্রায় একই দাবি পুলিশেরও। সঙ্গে তারা রাজনৈতিক সদিচ্ছার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিচ্ছে।
কিন্তু বর্তমান মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনেই গডফাদারদের ধরার সুযোগ আছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট বিভাগের একাধিক কর্মকর্তা ও আইন বিশেষজ্ঞ।
তবে আইনটির সংশোধনীর খসড়া ওয়েবসাইটে দিয়ে রাখা হয়েছে অনেক দিন। কিন্তু প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া শেষে এখনো তা মন্ত্রিসভায় ওঠেনি। ফলে মাদক নির্মূলের দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা ও বাহিনীগুলো এই আইনের জন্য অপেক্ষা করতে থাকলে শিগগিরই গডফাদাররা আইনের আওতায় আসবে, এমন আশা কম।
আইনের সীমাবদ্ধতার কারণে মাদকের পৃষ্ঠপোষক, মদদদাতা তথা গডফাদারদের ধরতে পারছে না বলে দাবি করছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। প্রায় একই দাবি পুলিশেরও। সঙ্গে তারা রাজনৈতিক সদিচ্ছার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিচ্ছে।
কিন্তু বর্তমান মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনেই গডফাদারদের ধরার সুযোগ আছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট বিভাগের একাধিক কর্মকর্তা ও আইন বিশেষজ্ঞ।
তবে আইনটির সংশোধনীর খসড়া ওয়েবসাইটে দিয়ে রাখা হয়েছে অনেক দিন। কিন্তু প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া শেষে এখনো তা মন্ত্রিসভায় ওঠেনি। ফলে মাদক নির্মূলের দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা ও বাহিনীগুলো এই আইনের জন্য অপেক্ষা করতে থাকলে শিগগিরই গডফাদাররা আইনের আওতায় আসবে, এমন আশা কম।
এখন মাদকসংশ্লিষ্ট অপরাধে মামলা হয় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন
১৯৯০ অনুযায়ী। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. জামাল
উদ্দীন আহমেদ গতকাল সোমবার প্রথম আলোকে বললেন, প্রচলিত আইনে মাদক কারও
জিম্মায় থাকলেই কেবল তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার বিধান আছে। এতে করে
গডফাদারদের আইনের আওতায় আনা যাচ্ছে না। নতুন আইনে গডফাদারদের গ্রেপ্তারের
সুযোগ থাকবে।
আর পুলিশ সদর দপ্তরের মুখপাত্র সহেলী ফেরদৌস (সহকারী
মহাপরিদর্শক) প্রথম আলোকে বলেন, জিম্মায় না থাকলে গডফাদারদের সঙ্গে মাদকের
সম্পৃক্ততা খুঁজে পাওয়াটা কঠিন। এটা একটা প্রতিবন্ধকতা। তবে অন্য আইনে যে
তাদের ধরা যাবে না, বিষয়টা এমন নয়।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক ও পুলিশের
সাবেক মহাপরিদর্শক মো. এনামুল হকের সময়েই বিদ্যমান আইনটি করা হয়। তিনি
প্রথম আলোকে বললেন, সময়ের প্রয়োজনে আইন পরিবর্তন, পরিবর্ধন, সংযোজন ও
সংস্কার হতে পারে। তবে এখন যে অবস্থায় আইনটি আছে, সেখানেও গডফাদারদের আইনের
আওতায় আনার সুযোগ আছে। তাহলে আইনটি কি যথাযথভাবে কাজে লাগানো হচ্ছে না?
এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘যে আইনটি আছে সেটি কখনোই পুরোপুরি কার্যকর
করার চেষ্টা ছিল না। স্পৃহা বা আন্তরিকতা না থাকলে তার যথাযথ প্রয়োগ হবে
না।’
বর্তমান আইনে কমপক্ষে চারটি ধারায় গডফাদার, পৃষ্ঠপোষক ও
মদদদাতাদের ধরার সুযোগ আছে বলে মনে করছেন আইনবিদেরা। আইনের ৯ ধারায়
‘অ্যালকোহল ব্যতীত মাদকদ্রব্যের উৎপাদন ইত্যাদি নিষিদ্ধ’ অংশে বলা হয়েছে,
অ্যালকোহল ছাড়া মাদকদ্রব্যের চাষাবাদ, উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ, বহন,
পরিবহন, আমদানি, রপ্তানি, সরবরাহ, ক্রয়, বিক্রয়, ধারণ, সংরক্ষণ,
গুদামজাতকরণ, প্রদর্শন, প্রয়োগ ও ব্যবহার করা যাবে না বা এ জন্য কোনো
প্রচেষ্টা বা উদ্যোগ নেওয়া, অর্থ বিনিয়োগ কিংবা কোনো প্রতিষ্ঠান স্থাপন,
পরিচালনা বা এর পৃষ্ঠপোষকতা করা যাবে না। আইনের ২৫ ধারায় বলা আছে, অপরাধ
করতে কাউকে প্ররোচনা দিলে বা সাহায্য করলে বা কারও সঙ্গে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত
হলে বা এ জন্য কোনো উদ্যোগ বা প্রচেষ্টা নিলে অপরাধ যদি না-ও ঘটে,
প্ররোচনাকারী কমপক্ষে ৩ থেকে ১৫ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড এবং অতিরিক্ত
অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবে।
জানতে চাইলে আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন প্রথম আলোকে বলেন,
আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ইয়াবা কারও জিম্মায় পেতে হবে এমন কোনো কথা নেই।
যারা ধরা পড়ছে তারা মূলত বহনকারী। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করলেই তো গডফাদারদের
নাম বেরিয়ে আসে এবং তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যায়।
এমনকি মহাপরিচালক বা তাঁর অধীনে থাকা কোনো কর্মকর্তা মাদক
ব্যবসা করে অবৈধ অর্থসম্পত্তির মালিক হয়েছেন; মনে এমন বিশ্বাস জন্মানোই
যথেষ্ট বলে উল্লেখ করা হয়েছে আইনের ৪৬ ধারায়। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার যদি মনে
হয় কারও বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে হলে তাঁর ব্যাংক হিসাব বা আয়কর বা
সম্পদকর সম্পর্কীয় রেকর্ডপত্র পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা প্রয়োজন তা হলে
বিশ্বাসের কারণ লিখে তিনি ওই হিসাব পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার এবং প্রয়োজন মনে
করলে ওই ব্যাংক হিসাব নিষ্ক্রিয় করার অনুমতি দেওয়ার জন্য সেশন জজ আদালতে
আবেদন করতে পারবেন। এমনকি তদন্তকাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত ওই সম্পদ বিক্রি,
বন্ধক, হস্তান্তর বা অন্য কোনো ধরনের লেনদেন নিষিদ্ধ করার আদেশ দেওয়ার
জন্যও সেশন জজের আদালতে আবেদন করতে পারবেন।
কিন্তু মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো.
জামালউদ্দীন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, যথেষ্ট তথ্যপ্রমাণ ছাড়া কারও সম্পদের
ব্যাপারে খোঁজখবর নেওয়া যায় না। তবে তিনি দাবি করেছেন, তাঁর সময়ে
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর আইনের যথেষ্ট প্রয়োগ ঘটিয়েছেন।
বাস্তবে কখনো জনবল সংকট, কখনো অস্ত্র রাখার অনুমতি না থাকা,
কখনো আইনের সীমাবদ্ধতার কথা বলে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর নিজেকে
দুর্বল বলে উপস্থাপনের চেষ্টা করে।
আইনে যে জাতীয় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ বোর্ড গঠনের কথা বলা আছে,
সেটি বেশ শক্তিশালী। ওই বোর্ডের সদস্যরা হলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী,
পররাষ্ট্র, শিক্ষা, তথ্য, সমাজকল্যাণ ও মহিলাবিষয়ক, অর্থ, পরিকল্পনা,
স্থানীয় সরকার, ধর্ম, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী; আইন ও বিচার
মন্ত্রণালয় ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব, সরকার মনোনীত একজন সমাজসেবক,
লোকহিতৈষী, সাংবাদিক, চিকিৎসক বা মনোরোগ বিশেষজ্ঞ, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ
অধিদপ্তরের মহাপরিচালক। বোর্ডটি কাগজে-কলমে আছেও।
রাজনৈতিক সদিচ্ছা প্রয়োজন
পুলিশ সদর দপ্তরের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে
প্রথম আলোকে বলেন, যাদের মাদকের গডফাদার বলা হচ্ছে তাদের প্রত্যেকের
রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা রয়েছে। দল থেকে তাদের ডেকে কি সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে?
রাজনৈতিক সদিচ্ছা কেন প্রয়োজন তার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের একজন কর্মকর্তা বললেন, পল্টনে একটি অবৈধ
ক্যাসিনোতে ফেনসিডিল ও মদের আসর বসে—এমন সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে মাস
তিনেক আগে তাঁরা সেখানে অভিযান চালান। ক্যাসিনোটির মালিক যুবলীগের একজন
শীর্ষস্থানীয় নেতা। সব জানার পরও মালিকের নাম উল্লেখ না করেই থানায় মামলা
করতে বাধ্য হয়েছেন তাঁরা।
সম্প্রতি ঢাকার এক গডফাদারের সহযোগী আরশাদ নামে একজনকে পুলিশ
গ্রেপ্তার করে। তাঁকে ছাড়িয়ে নিতেও হোমরাচোমরারা যোগাযোগ করেছেন। এই যদি
অবস্থা হয়, তা হলে যে যার জায়গা থেকে সুবিধা নেবে বলে মন্তব্য করেন এই
কর্মকর্তা।
পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক এনামুল হক তাই বললেন, ‘সরকার
সম্প্রতি মাদকের পৃষ্ঠপোষকদের সাজা মৃত্যুদণ্ড করার কথা বলেছে। কিন্তু আইন
যদি কাজে লাগানো না যায়, যত কঠিন আইনই হোক না কেন সুফল পাওয়া যাবে না।
\প্রথম আলো
0 মন্তব্যসমূহ