বিএন ডেস্কঃ
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন,
সাম্প্রতিক কোটা বিরোধী আন্দোলন প্রচ্ছন্নভাবে সরকারি চাকরিতে
মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের কোটার বিরুদ্ধেই আন্দোলন। শেখ হাসিনা মঙ্গলবার
মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানী ভাতা ইলেক্ট্রনিক পদ্ধতিতে সরাসরি (জিটুপি)
মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যাংক হিসাবে প্রদান কার্যক্রম উদ্বোধনকালে একথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানদের
প্রয়োজনীয় সংখ্যায় পাওয়া না গেলে সুপ্রিম কোটের একটি নির্দেশনার আলোকে তার
সরকার মেধা তালিকা থেকে শূন্য পদ পূরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’ প্রধানমন্ত্রী
বলেন, ‘আমরা আদালতের নির্দেশ অমান্য করতে পারি না এবং মুক্তিযোদ্ধাদের কোটা
বাতিল করতে পারি না। কাজেই আমরা কেবিনেট সচিবের নেতৃত্ব একটি কমিটি গঠন
করে দিয়েছি এই বিষয়টি দেখার জন্য।’
প্রধানমন্ত্রী তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবন
থেকে ভিডিও কনফারেন্সের সাহায্যে কক্সবাজার জেলার সুবিধাভোগী, প্রশাসন এবং
রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সাথে কথোপকথেনের মাধ্যমে ডিজিটাল পদ্ধতিতে
মুক্তিযোদ্ধাদের অ্যাকাউন্টে এই সম্মানী ভাতা প্রদান কার্যক্রমের উদ্বোধন
করেন।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী
আকম মোজাম্মেল হক অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব
অপরূপ চৌধুরী এই প্রকল্প এবং মন্ত্রণালয়ের কর্মকান্ডের ওপর একটি
প্রেজেন্টেশন অনুষ্ঠানে উপস্থাপন করেন। মুখ্য সচিব মোঃ নজিবুর রহমান
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন। অপরূপ চৌধুরী জানান, ২ লাখ ৩০ হাজার ৪৩৮ জন
গেজেটেড মুক্তিযোদ্ধার মধ্যে ১ লাখ ৮৬ হাজার ৪০৪ জন এই ডিজিটাল পদ্ধতি
সরাসরি তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে এই ভাতা পাবেন। প্রত্যেকে ১০
হাজার করে টাকা পাবেন। সঙ্গে বাংলা নববর্ষের ভাতাসহ দুই ঈদে দুটি উৎসব
ভাতাও থাকবে।
আরো পড়ুন: ইলেক্ট্রনিক পদ্ধতিতে ভাতা বিতরণ কার্যক্রমের উদ্বোধন প্রধানমন্ত্রীর
বাসস
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সামাজিক
নিরাপত্তা বলয় কর্মসূচির আওতায় সুবিধাভোগীদের ভাতাসমূহ ইলেক্ট্রনিক
পদ্ধতিতে (জিটুপি-গভমেন্ট টু পারসন) বিতরণ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেছেন।
আজ সকালে প্রধানমন্ত্রী তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফান্সের মাধ্যমে এই কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন।
আজ সকালে প্রধানমন্ত্রী তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফান্সের মাধ্যমে এই কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন।
এই কর্মসূচির আওতায় প্রবীণ, শারীরিক
প্রতিবন্ধী ও বিধবাসহ প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর প্রায় ৬৭ লাখ ভাতাপ্রাপ্ত মানুষ
প্রতিমাসের নির্দিষ্ট সময়ে মোবাইল ফোনে এসএসএম পাওয়ার পর সরাসরি ব্যাংক
থেকে তাদের প্রাপ্ত ভাতা তুলতে পারবেন।
সরকার চলতি অর্থবছর সমাজ কল্যাণ
মন্ত্রণালয়ের সামাজিক নিরাপত্তবলয় কর্মসূচির আওতায় ৪ হাজার ৩শ’ ১৭ কোটি
টাকা বেদে, হরিজন, চা শ্রমিক এবং দূরোরোগ্য ব্যাধি যেমন ক্যান্সার, কিডনী,
লিভার সমস্যায় আক্রান্তদের সহযোগিতার জন্য বরাদ্দ করেছে।
সমাজকল্যাণ মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ
অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব জিল্লার রহমান
প্রকল্পের অর্থ প্রদান সম্পর্কিত একটি প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করেন।
প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. নজিবুর রহমান গণভবন প্রান্তে অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন এবং গোপালগঞ্জ, নরসিংদী, কিশোরগঞ্জ এবং চাপাইনবাবগঞ্জের জেলা প্রশাসকগণ ভিডিও কনফারেন্সে অংশগ্রহণ করেন। এসময় আরো ৭টি জেলা অনুষ্ঠানের সঙ্গে সংযুত্ত ছিল।
প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. নজিবুর রহমান গণভবন প্রান্তে অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন এবং গোপালগঞ্জ, নরসিংদী, কিশোরগঞ্জ এবং চাপাইনবাবগঞ্জের জেলা প্রশাসকগণ ভিডিও কনফারেন্সে অংশগ্রহণ করেন। এসময় আরো ৭টি জেলা অনুষ্ঠানের সঙ্গে সংযুত্ত ছিল।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা চাই বাংলাদেশ হবে
দারিদ্রমুক্ত, ক্ষুধামুক্ত বাংলাদেশ। বাংলাদেশকে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে
আমরা গড়ে তুলবো। প্রতিটি গ্রামে মানুষ শহরের মতো সুবিধা পাবে।’
তিনি বলেন, সামাজিক নিরাপত্তার আওতায় সরকারি ভাতা দেওয়ার পদ্ধতিতে স্বচ্ছতা সৃষ্টি করা হচ্ছে। যাতে দরিদ্র মানুষের ভাগ্য নিয়ে আর কেউ ছিনিমিনি খেলতে না পারে। তাদের সম্পদ ও টাকা পয়সা কেউ কেড়ে নিতে না পারে।
তিনি বলেন, সামাজিক নিরাপত্তার আওতায় সরকারি ভাতা দেওয়ার পদ্ধতিতে স্বচ্ছতা সৃষ্টি করা হচ্ছে। যাতে দরিদ্র মানুষের ভাগ্য নিয়ে আর কেউ ছিনিমিনি খেলতে না পারে। তাদের সম্পদ ও টাকা পয়সা কেউ কেড়ে নিতে না পারে।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আগে ভাতার টাকা ব্যাংক ও
পোস্ট অফিসের মাধ্যমে যেত। এখন ডিজিটাল বাংলাদেশ। আজ আমরা সেই ডিজিটাল
পদ্ধতিতে যারা যা প্রাপ্য তার কাছেই পৌঁছে দেবো। কেউ আর কমিশন খেতে পারবে
না। সরাসরি টাকা আপনার হাতে পৌঁছে যাবে।’
তিনি বলেন, টাকা প্রাপকদের নামের একটি
ডাটাবেজ করে রাখা হবে, যাতে কেউ তাদের নিয়ে কোনরকম খেলা খেলতে না পারেন।
সরকারের পক্ষ থেকে ব্যক্তির কাছে অর্থাৎ ‘গভমেন্ট টু পারসন’ এই ভাতা পৌঁছে
যাবে।
সরকারি ভাতার ওপর নির্ভর করে কর্মবিমুখ না
হতে হতদরিদ্রদের আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, মানুষ যেন না
খেয়ে কষ্ট না পায় সে জন্য আমরা সহযোগিতা দিচ্ছি। পুরো সংসারের দায়িত্ব আমরা
নেব না। মানুষ যাতে পুরোপুরি ভাতার ওপর নিভর্রশীল না হয়, কর্মবিমুখ না হয়।
তিনি বলেন, এমন পরিমাণে ভাতা দেয়া হবে যা
দিয়ে আপনি খাদ্য কিনতে পারবেন। কিন্তু আপনাকে কাজ করতে হবে। শুধু ভাতার ওপর
নির্ভরশীল হলে চলবে না। যারা কর্মক্ষম তারা কাজ করবেন।
তিনি বলেন, বিএনপি জামায়াতের আমলে দুঃস্থ মানুষ সেবার বদলে বারবার নিগৃহীত হয়েছে। তখন সামাজিক ভাতা ১০০ টাকা দিলে মাঝখান থেকে ৫/১০ টাকা নিয়ে নিতো। এখানেও দুর্নীতি ছিলো। এমন ব্যবস্থা চালু করে যাচ্ছি যাতে মানুষকে আর ভোগান্তি পোহাতে না হয়।
তিনি বলেন, বিএনপি জামায়াতের আমলে দুঃস্থ মানুষ সেবার বদলে বারবার নিগৃহীত হয়েছে। তখন সামাজিক ভাতা ১০০ টাকা দিলে মাঝখান থেকে ৫/১০ টাকা নিয়ে নিতো। এখানেও দুর্নীতি ছিলো। এমন ব্যবস্থা চালু করে যাচ্ছি যাতে মানুষকে আর ভোগান্তি পোহাতে না হয়।
সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় ২০০৫
সালে ১৩ শতাংশ হতদরিদ্র মানুষ থাকলেও, ২০১৮ সালে ২৮ শতাংশ প্রান্তিক মানুষ
এখন সুবিধা পাচ্ছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী আগামী নির্বাচনের প্রসঙ্গ
টেনে বলেন, ‘সামনে নির্বাচন, ‘জনগণ যদি ভোট দেয় তাহলে আবার ক্ষমতায় আসবো।
না হলে আসবো না। এটা আল্লাহর উপরও নির্ভর করে, তিনি যদি চান। তবে, তাঁর
আগেই আমি আমার কাজগুলোকে সুরক্ষিত করতে চাই।’ ‘মানুষের সেবা করাই আমাদের
কাজ, মানুষের পাশে থাকাই আমাদের কাজ, ’বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে বঙ্গবন্ধু
হত্যার পর ছয় বছর প্রবাস জীবন শেষে ১৯৮১ সালে আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে
দেশে ফেরার সময়কার স্মৃতিচারণ করে বলেন, তখন সারাদেশে ছুটে বেড়িয়েছি।
দেখেছি হাড্ডিসার, কঙ্কালসার মানুষ ক্ষুধার তাড়নায়, চিকিৎসার অভাবে ধুঁকে
ধুঁকে মুত্যুবরণ করছে। এইসব দুর্ভাগা মানুষের জন্যই স্বাধীনতা, তাঁদের
কল্যাণের জন্যই ছিল আমার বাবার (বঙ্গবন্ধু) রাজনীতি। তাঁদের জন্যই তিনি
সারাজীবন জেল, জুলুম, অত্যাচার সহ্য করে গেছেন।
দেশেকে ভালবাসা, দেশের মানুষকে ভালবাসার
শিক্ষা তিনি বাবার কাছ থেকেই পেয়েছেন উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমার
জীবনের একটাই লক্ষ্য এদেশের মানুষের জন্য কিছু করা। তিনি সুষ্ঠুভাবে
দেশসেবার জন্য সকলের দোয়া প্রত্যাশা করেন।
নরসিংদী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, গোপালগঞ্জের
প্রান্তিক এলাকার সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় উপকারভোগীদের সঙ্গে
কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, উপকারভোগীদের ব্যাংক
হিসাবে টাকা পৌঁছার খবর তাদের মোবাইল ফোনে চলে যাবে এবং স্থানীয় ইউনিয়ন
পরিষদ থেকে তারা টাকা তুলতে পারবেন। যেসব দুঃস্থ মানুষ টাকা আনতে ব্যাংকে
বা ইউনিয়ন পরিষদে যেতে পারবেন না, তারা সমাজকল্যাণ অফিসকে জানালে বাড়িতে
টাকা পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা করা হবে।
ভাতা ভোগীরা মধুমতি, এনআরবি, ব্যাংক এশিয়ার মাধ্যমে এই টাকা উত্তোলন করতে পারবেন।
0 মন্তব্যসমূহ