কোটা আন্দোলনের ২ নেতা কারাগারে

বিএন ডেস্কঃ
দুই দিনের রিমান্ড শেষে কোটা সংস্কার আন্দোলনের তিন নেতাকে শনিবার আদালতে আনা হয়। এদের মধ্যে দুজনকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। অপরজনের ব্যাপারে রোববার সিদ্ধান্ত দেবেন আদালত।
কারাগারে পাঠানো দুই নেতা হলেন, জসিমউদ্দিন (২১) ও মশিউর রহমান (১৮)। জামিন আবেদনের অপেক্ষায় থাকা ব্যক্তির নাম ফারুক হোসেন। শনিবার বিকেলে তাদের তিনজনকেই ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে উপস্থিত করা হয়।
আসামিপক্ষের আইনজীবী রেজাউল ইসলাম তাদের জন্য জামিন আবেদন করেন। কিন্তু আদালত জসিম উদ্দিন ও মশিউর রহমানের জামিন আবেদন খারিজ করেন। অন্যদিকে ফারুক হোসেনের শুনানির দিন কাল ধার্য করেন।
গত ৩ জুলাই এই তিনজনকে গ্রেপ্তার দেখায় পুলিশ। তারা তিনজনই কোটা সংস্কার আন্দোলনের ব্যানার সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক।
আরো পড়ুন :   কোটা সংস্কার আন্দোলনের আহবায়কের ফেসবুক আইডি বন্ধ!
বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক (প্রকাশ  ০৪ জুলাই ২০১৮)
কোটা সংস্কার আন্দোলনের আহবায়ক হাসান আল মামুনের ফেসবুক আইডি বন্ধ হয়ে গে‌ছে। বুধবার ভোরে অনেকবার চেষ্টা করা হ‌লেও তার আইডিতে ঢুকতে পাড়ছেন না বলে অভিযোগ করেছেন মামুন।
প্রসঙ্গত, চলমান কোটা সংস্কারের দা‌বি‌তে আন্দোলনের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন বাংলা‌দেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ প‌রিষ‌দের আহবায়ক হাসান আল মামুন, যুগ্ম আহবায়ক রাশেদ খাঁন, ফারুখ হাসান, নূরুল হক নূর, মাহফুজ খান প্রমু‌খ। এদের মধ্যে রাশেদ খাঁন ও ফারুখ হাসান গ্রেফতার হয়েছেন। অন্যদিকে নুরুল হক নূর আহত অবস্থায় চিকিৎসাধীন র‌য়ে‌ছেন। এছাড়াও রা‌শেদ খাঁনের সা‌থে মাহফুজ খান‌কেও তু‌লে নেয় ডি‌ভি পু‌লিশ। ত‌বে এখ‌নো মাহফু‌জের কো‌নো খোঁজ পাওয়া যায়‌নি ব‌লে আন্দোলনকারী‌দের পক্ষ থে‌কে অভি‌যোগ পাওয়া গে‌ছে।
এদিকে কোটা আন্দোলনকারী‌দের বর্তমা‌ন অবস্থায় নেতৃত্বের ভার এসে পড়ে হাসান আল মামুনের ওপর। ত‌বে এই আইডি থে‌কেই ফেসবুকে আন্দোলনের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন তি‌নি। ত‌বে আক‌স্মিকভা‌বেই তার ফেসবুক আইডি বন্ধ হয়ে যায়।
এ বিষ‌য়ে হাসান আল মামুন জানান, আজ ভোরবেলায় আমার আইডি ডিজেবল হয়ে গেছে। আমি ফেসবুকে ঢুকতে পারছি না। থানায় গিয়ে জিডিও করাও সম্ভব হ‌চ্ছে না।
আরো পড়ুন : কোটা বাতিল নিয়ে আওয়ামী লীগ কেন দ্বিধা-দ্বন্দ্বে
বিবিসি বাংলা, ০৪ জুলাই ২০১৮
কোটা সংস্কারের দাবিতে নতুন করে আন্দোলনে নামছে ছাত্র-ছাত্রীরা। বাংলাদেশে ছাত্রদের আন্দোলনের মুখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারি চাকুরিতে নিয়োগের কোটা পদ্ধতি বাতিলের ঘোষণা দিয়েছিলেন প্রায় আড়াই মাস আগে।
কিন্তু এ নিয়ে দৃশ্যত কোন অগ্রগতি না হওয়ায় আন্দোলনকারীরা আবার রাস্তায় ফিরে এসেছে। তাদের অভিযোগ সরকার বিষয়টি নিয়ে গড়িমসি করছে। এমনকি তাদের আন্দোলন দমনের জন্য দমন-পীড়নও শুরু করেছে।
কোটা ব্যবস্থা বাতিলের ব্যাপারে সরকারের অবস্থান আসলে কি? কবে, কখন, কিভাবে সরকার এই ব্যবস্থা বাতিল করবে, সেটা নিয়ে কেন এত অস্পষ্টতা?
পার্লামেন্টে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা সত্ত্বেও গত আড়াই মাসে কোটা বাতিলের ব্যাপারে সরকারি কোনো প্রক্রিয়া দৃশ্যমান ছিল না।
এই প্রেক্ষাপটেই গড়িমসির অভিযোগ করে আসছিলেন আন্দোলনকারিরা। এখন শিক্ষার্থীদের নতুন আন্দোলনের মুখে মন্ত্রীপরিষদ বিভাগের সচিবের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করেছে।
একই সাথে সরকার আন্দোলনের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে বলেই মনে হচ্ছে।
অন্যদিকে, মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারের জন্য কোটা রাখার পক্ষে সংসদে বক্তব্য আসায় ছাত্রদের মধ্যে পুরো বিষয়টি নিয়ে সন্দেহ তৈরি হয়েছে।
আওয়ামী লীগের এমন অবস্থানের পিছনে রাজনৈতিক বিবেচনা কাজ করছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।
তবে এসব অভিযোগ মানতে রাজি নন প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ. টি. ইমাম।
তিনি বলেছেন, `জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদ দাবি করেছেন যে, মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য কোটা রাখা হোক এবং তখন আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন যে, এটা পুনর্বিবেচনা করা যেতে পারে। তবে পুনর্বিবেচনা করে কিভাবে হবে বা কতটুকু, সেটাতো এই কমিটি দেখবে।'
‘একটি প্রশ্ন হলো, প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা কত এবং তারা এর থেকে উপকৃত হচ্ছেন কিনা এবং ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী যারা, তাদের জন্য কত অংশ আসবে? এগুলোওতো দেখা দরকার। সেজন্য এটার সমাধান সহজ নয়।’
আওয়ামী লীগের নেতাদের অনেকে আবার বলছেন, এই আন্দোলনে মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারের জন্য কোটা বাতিলের বিষয়কেই মুল টার্গেট করা হয়েছে বলে তারা এখন বিশ্বাস করেন।
তাদের সরকারই মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারের জন্য কোটার হার বাড়িয়েছিল। এখন তা আওয়ামী লীগের হাত দিয়েই বাতিল করার বিষয়টি তাদের জন্য রাজনৈতিকভাবে স্পর্শকাতর বিষয় বলে তারা মনে করেন।
কারণ হিসেবে তারা বলেছেন, বিষয়টাতে তাদের ভোটব্যাংকে সন্দেহ তৈরি হতে পারে। আর সেকারণে আওয়ামী লীগ নেতারা এখন রাজনৈতিকভাবে বক্তব্য তুলে ধরছেন।
কিন্তু এইচ টি ইমাম বলেছেন, বিরোধীদল বিএনপি যেহেতু এই আন্দোলন নিয়ে রাজনৈতিক বক্তব্য দিচ্ছে, সেকারণে তারাও একটা অবস্থান রাখছেন।
কোটা বিরোধী আন্দোলনের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ নেতারা যেমন রাজনৈতিক বক্তব্য দিচ্ছেন। একইসাথে দেখা গেছে, ছাত্রলীগের কিছু নেতা-কর্মী গত দু'দিনে ঢাকায় এবং রাজশাহীতে আন্দোলনকারিদের উপর হামলা করেছে। গ্রেফতারের ঘটনাও ঘটেছে।
আওয়ামী লীগের অন্যান্য সূত্রগুলো বলছে, এই আন্দোলন যাতে অন্যদিকে মোড় না নেয়, সে কারণেও তারা এর বিরুদ্ধে রাজনৈতিক অবস্থান রাখছে।
ছাত্রলীগের একজন সাবেক নেতা এনামুল হক শামীম বলেছেন,এই আন্দোলনের নেতাদের অনেকের ব্যাপারে তাদের মধ্যে এখন সন্দেহ তৈরি হয়েছে।
তবে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যারয়ের শিক্ষক নাসরিন সুলতানা মনে করেন, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে যেমন আওয়াম লীগের ভোটব্যাংক আছে। তেমনি আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা বঞ্চিত হলে সেখানেও ভোটের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগের জন্য ঝুঁকি রয়েছে।
আওয়ামী লীগ নেতারা অবশ্য সব ধরণের ঝুঁকির বিষয় বিবেচনায় রাখার কথা বলছেন এবং সে কারণে তারা কৌশলে এগুচ্ছেন।
ফলে তাদের এবং সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে কথা বলে এটা মনে হয়েছে যে,তারা একটা সিদ্ধান্ত দিতে অনেকটা সময় নেবেন।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ