বিএন ডেস্কঃ
এক সময়ের গর্বের ধন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) এখন একটি
মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছে। এই মৃত্যুপুরীর অবসান কে ঘটাবে? এই ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে আমরা গর্ব করি। অথচ এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের পিটিয়ে
থানায় নিয়ে যাওয়া যাচ্ছে। তারপর তাকে বিনা অপরাধে রিমান্ডে নিয়ে যাচ্ছে।
কথা বলার কেউ নেই।
আজ বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত শিক্ষক-শিক্ষার্থী
আয়োজিত মানবন্ধনে বক্তারা এমন মন্তব্য করেছেন। দুপুর সাড়ে ১২টায় ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে এ প্রতিবাদী মানববন্ধন অনুষ্ঠিত
হয়। কোটা সংষ্কার আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে
পুলিশ কর্তৃক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের
অধ্যাপক ড. ফাহমিদুল হককে লাঞ্ছিত করার প্রতিবাদে মানববন্ধনে বক্তারা একথা
বলেন।
মানবন্ধনে বক্তারা বলেন, এখন আর কোনো সময় নেই। দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে।
অনেকের ইচ্ছা থাকলেও আজকের মানবন্ধনে তারা আসতে পারেননি। তাই যে
কয়জন আসুক তাদের নিয়ে দাঁড়িয়ে পড়তে হবে। আমরা এখন বিপর্যয়ের মুখে আছি। এখন
আর মানববন্ধন বিবৃতির এগুলোর সময় নেই। এখন আমাদের সরাসরি কর্মসূচিতে যেতে
হবে। একজন হোক, দুজন হোক তাদের নিয়ে মাঠে থাকতে হবে।
মানবন্ধনে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. গীতি আরা নাসরীন
বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদালয়ের ঢোকার মুখে একটা তোরণ নির্মাণ করেছেন। যারা নাম
মুক্তি ও গণতন্ত্র তোরণ। এই তোরণ দিয়ে এই ইতিহাসের বুকে পা ফেলে যখন আপনারা
এইখানে ঢুকবেন, এখানে অপরাজেয় বাংলা দেখেন, শহীদ মিনার দেখেন প্রত্যেকটি
জায়গা এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্যেকটি সদস্যের সংগ্রামের চিহ্ন নিয়ে আছে।
এরকম একটি সময়ে আমরা আশ্চর্য হয়ে দেখি একটি আন্দোলন একটি দাবি এবং যে দাবির
যৌক্তিকতা শুধু আজকে নয়, বহুদিন ধরে বলা হচ্ছে। আমরা দেখেছি সরকার পর্যায়
থেকে একটা কমিটিও গঠন করা হয়েছে। দ্রুত ফলাফল দেয়ার জন্য।
তিনি বলেন, অভিভাবকদের কষ্টার্জিত অর্থে এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলো চলে।
এই দেশের দায়িত্ব, এই বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্ব হচ্ছে তাদের সন্তানদের
নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। তারা একটি যৌক্তিক দাবি নিয়ে দাঁড়াবেন শুধু তাদের
কথা বলতে চাইলেও তান সুযোগ হয়নি। সবাই দেখেছেন বিভিন্ন মিডিয়াতে। যে
ধরনের নৃশংসতা বর্বর আক্রমণ চালানো হলো। এর কোনো ব্যাখ্যা আমার কাছে নেই।
শুধুমাত্র হতভম্ব হয়ে যাওয়া ছাড়া এই ধরনের একটি নির্যাতন সবার চোখের সামনে
কিভাবে ঘটে।
অধ্যাপক নাসরীন বলেন, শুধু এই বিশ্ববিদ্যালয় নয়, অন্যান্য পাবলিক
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এই ধরনের ঘটনা ঘটছে। চোখের সামনে এই ধররেন বর্বর
আক্রমন চলছে তাতে উদ্বিগ্ন হয়েই অভিভাবক কিছু মানুষ মঙ্গলবার প্রেসক্লাবে
দাঁড়িয়েছিলেন। তাদের কনসার্ন সেখানে জানাতে গিয়েছেন। তাদের সেখানে বলা
হয়েছে আপনারা সেখানে দাঁড়াতেই পারবেন না। কবে থেকে এই দেশে একটি সাধারণ
মানুষ কথা বলতে পারবে না এ কথা বলা হয়। কবে থেকে এই পরিব্শে সৃষ্টি হয়েছে?
তিনি বলেন, শুধু শিক্ষক ফাহমিদুল হকের কথা বলছি না, প্রত্যেকটি
নাগরিকের এই অধিকার রয়েছে। উদ্বেগ প্রকাশ করার অধিকার সবার আছে। কিন্তু এই
উদ্বেগ প্রকাশ করতে গিয়ে তাদের কিভাবে নির্যাতন করা হয়েছে। তাদের সরিয়ে
দেয়া হয়েছে, লাঞ্ছনা করা হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, নিজেদের কথা স্পষ্টভাবে বলতে হবে। নিজেদের জায়গা
ফিরিয়ে আনেতে হবে। অত্যাচার নির্যাতনের তদন্ত চাই, বিচার চাই। সন্তানদের
উপর নির্যাতন না হয় এই জন্য কন্ঠ জোরালো করবেন।
অর্থনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. রুশাদ ফরিদী আমি গত কয়েকদিন ধরে
মানসিকভাবে অসুস্থ বোধ করছি, যে এই ঘটনাগুলো ঘটছে। এটা কেমন
বিশ্ববিদ্যালয়, এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে আমরা গর্ব করি? অথচ এই
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের পিটিয়ে পিটিয়ে থানায় নিয়ে যাচ্ছে। তারপর তাকে
বিনা অপরাধে রিমান্ডে নিয়ে যাচ্ছে। এগুলোর বিচার দাবি করছি।
মানবন্ধনে অন্যদের মধ্যে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড.
ফাহমিদুল হক, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তানজীমউদ্দিন
খান, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. সামিনা লুৎফা প্রমুখ উপস্থিত
ছিলেন।
0 মন্তব্যসমূহ