কোরবানির ঈদ সামনে রেখে বাজারে উড়ছে জাল নোট। জাল নোটের কারবারিদের
দৌরাত্ম্য নিয়ন্ত্রণে বিপাকে পড়েছে প্রশাসন। এসব নোট কারবারি বারবার আটক
হলেও আইনের ফাঁকফোকরের কারণে পার পেয়ে যাচ্ছে। ছাড়া পেয়ে আবার শুরু করছে
তাদের অপতৎপরতা। ফলে বেপারি, ক্রেতাসহ সর্বসাধারণের মধ্যে বিরাজ করছে জাল
নোট আতঙ্ক। তবে কোরবানির পশুর হাটে অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প স্থাপন, পশু
ব্যবসায়ীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, হাটে জাল নোট শনাক্তকরণ মেশিন স্থাপন
এবং যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক রাখতে ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছে
পুলিশ।
জাল নোট চক্রের অপতৎপরতা রোধ এবং জাল নোটের বিস্তার ঠেকাতে ঢাকার ২২টি অস্থায়ী পশুর হাটে জাল নোট শনাক্তকরণের জন্য ৪৭টি শনাক্তকারী মেশিন বসানো হবে। প্রতিটি হাটে থাকবে কোনো-না-কোনো ব্যাংকের জাল নোট শনাক্তকরণ বুথ। গত মঙ্গলবার এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
এতে বলা হয়েছে, জাল নোট শনাক্তকারী মেশিনের সহায়তায় অভিজ্ঞ কর্মকর্তাদের
মাধ্যমে হাট শুরুর দিন থেকে ঈদের আগের রাত পর্যন্ত বিরতিহীন বিনামূল্যে
নোট যাচাই সেবা দেয়া হবে। প্রতিটি হাটে ব্যাংকের নামসহ ‘জাল নোট শনাক্তকরণ’
উল্লেখ করে ব্যানার টানাতে হবে। যেখানে বাংলাদেশ ব্যাংকের শাখা আছে সেখানে
বাংলাদেশ ব্যাংক সরাসরি ব্যাংকগুলোর বুথ স্থাপনের দায়িত্ব নির্ধারণ ও
মনিটরিং করবে। যেখানে বাংলাদেশ ব্যাংকের শাখা নেই সেখানে সোনালী ব্যাংকের
চেস্ট শাখা এ কাজ করবে। নিরাপত্তার জন্য র্যাব, পুলিশের সাথে যোগাযোগ রক্ষা
করতে হবে।
প্রশাসনের তথ্যমতে গ্রেফতার করা হলেও তাদের ৮০ শতাংশই জামিনে মুক্তি পেয়ে পরবর্তী সময়ে আবারো নিয়োজিত হচ্ছে জাল নোটের চক্র। ঈদ এলেই তাদের সিন্ডিকেট সারা দেশে সক্রিয় হয়ে ওঠে। গোয়েন্দা সংস্থা ধারণা করছে, ঈদ সামনে রেখে সারা দেশে প্রায় ৫০ কোটি টাকার জাল নোট বাজারে ছাড়ার পরিকল্পনা করেছে এরা। গত শুক্রবার রাতে রাজধানীর লালবাগ থেকে ৭৫ লাখ জাল নোট ও জাল নোট তৈরিতে ব্যবহƒত বিভিন্ন সরঞ্জামসহ আটজনকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মো: আবদুল বাতেন বলেন, জাল নোট তৈরির মূলহোতা কাউসার। সে তার সহযোগী আলাউদ্দিনসহ লালবাগের চার নম্বর এমসি রায় লেনের একটি ফ্ল্যাট বাসা ভাড়া নিয়ে জাল নোট তৈরি করে আসছে। সজিব ও সালেহা জাল নোট তৈরির কাগজে জল ছাপ নিরাপত্তা সুতা স্থাপন করে। কাউসার তার বড় ভাইয়ের সাথে জাল নোট তৈরি করত।
তিনি বলেন, বেশির ভাগ জাল নোট কারবারিকেই গ্রেফতার করা হয়েছে। তারা জেলহাজতে আছে। এখনো যারা বাইরে আছে তাদেরকে গ্রেফতারে কাজ চলছে। উদ্ধার হওয়া জাল নোট আগের চেয়ে অনেক নিখুঁত উল্লেখ করে তিনি বলেন, উদ্ধার হওয়া জাল নোটে নিরাপত্তা সুতা স্থাপন করা হয়েছে। এসব নিরাপত্তা সুতা তারা কিভাবে জোগাড় করছে সে ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। সাধারণ চোখে বোঝা খুবই কঠিন যে, এটা জাল নোট। তবে অরিজিনাল টাকা কিছুটা খসখসে এবং জাল নোট বেশি মসৃণ বলে তিনি জানান।
গোয়েন্দা সূত্র জানায়, এক লাখ জাল নোট তৈরি করতে খরচ হয় প্রায় ১০ হাজার টাকা। পরবর্তী সময়ে তারা পাইকারি বিক্রেতার কাছে এক লাখ টাকার নোট ১৪ থেকে ১৫ হাজার টাকায় বিক্রি করে। পাইকারি বিক্রেতা প্রথম খুচরা বিক্রেতার কাছে বিক্রি করে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকায়। প্রথম খুচরা বিক্রেতা দ্বিতীয় খুচরা বিক্রেতার কাছে বিক্রি করে ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকায় এবং দ্বিতীয় খুচরা বিক্রেতা মাঠপর্যায়ে সেই জাল নোট ছড়িয়ে দেয় বিভিন্ন এজেন্টের মাধ্যমে।
গোয়েন্দাদের হাতে বিভিন্ন সময়ে গ্রেফতার জাল নোট কারবারি ও গোয়েন্দা সূত্র জানায়, জাল নোট তৈরির জন্য প্রথমে টিস্যু কাগজের এক পাশে বঙ্গবন্ধুর প্রতিচ্ছবি স্ক্রিনের নিচে রেখে গাম দিয়ে ছাপ দিত। এরপর ১০০০ লেখা এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের মনোগ্রামের ছাপ দিত। অতঃপর অপর একটি টিস্যু পেপার নিয়ে তার সাথে ফয়েল পেপার থেকে টাকার পরিমাপ অনুযায়ী নিরাপত্তা সুতা কেটে তাতে লাগিয়ে সেই টিস্যুটি ইতঃপূর্বে বঙ্গবন্ধুর প্রতিচ্ছবি জলছাপ দেয়া টিস্যু পেপারের সাথে গাম দিয়ে সংযুক্ত করে দিত। এভাবে টিস্যু পেপার প্রস্তুত করে বিশেষ ডট কালার প্রিন্টারের মাধ্যমে ল্যাপটপে সেভ করা টাকার ছাপ অনুযায়ী প্রিন্ট করা হতো। ওই টিস্যু পেপারের উভয় সাইট প্রিন্ট করা হতো এবং প্রতিটি টিস্যু পেপারে মোট চারটি জাল টাকার নোট প্রিন্ট করা হতো। এরপর প্রিন্টকৃত টিস্যু পেপারগুলো কাটিং গ্লাসের ওপরে রেখে নিখুঁতভাবে কাটিং করা হতো। পরে কাটিংকৃত জাল টাকাগুলো বিশেষভাবে বান্ডিল করে এটি চক্রের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হতো।
জাল নোট তৈরির কারিগর জাকির হোসেন নামে একজন বলেন, ২০১৫ সালে ঈদের ছুটিতে বাড়িতে গেলে জাল নোট কারবারি রফিকের সাথে তার পরিচয় হয়। একপর্যায়ে রফিক তাকে ভালো বেতনের প্রস্তাব নিয়ে নারায়ণগঞ্জে ডাকেন। সেখানে গিয়ে জাকির দেখতে পান জাল নোট তৈরি করতে হবে। প্রথমে ১০ হাজার টাকা বেতন, আর কাজ শেখা হয়ে গেলে বেতন ৩০ থেকে ৪০ হাজার হবে, এই শর্তে তিনি কাজ শুরু করে দেন। ২০১৫ সালেই রফিকসহ জাকির ডিবির হাতে ধরা পড়ে ছয় মাস জেল খাটার পর জামিনে বেরিয়ে আবারো একই কাজ শুরু করেন। রফিক এই কারখানার মূল হোতা ও মালিক। তার টিমে পাঁচজন কাজ করেন। বাইরে টাকাটা ছড়িয়ে দেয়ার জন্য আরো বেশ কয়েকটি টিম রয়েছে বলে জানান রফিক।
তিনি আরো বলেন, প্রায় ১০ বছর হলো এই ব্যবসার। রফিক এর আগে আরো দুইবার ধরা পড়েছিলেন। প্রতি ১০ লাখ টাকা বানাতে খরচ হয় মাত্র সাত হাজার টাকা। আর প্রতি এক লাখ টাকা বিক্রি হয় ১০ হাজার টাকায়। সেটি দ্বিতীয় ধাপে গিয়ে বিক্রি হয় ২২ হাজার টাকায়।
যেসব স্থানে থাকছে জাল নোট শনাক্তের মেশিন : ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ১০টি হাটের মধ্যে মিরপুর-গাবতলী গবাদি পশুর হাটে সোনালী, সীমান্ত, ঢাকা ও পূবালী ব্যাংক জাল নোট শনাক্তকরণ বুথ স্থাপন করবে। উত্তরা ১৫ নম্বর সেক্টরের প্রথম গোল চত্বরসংলগ্ন পশুর হাটে স্ট্যান্ডার্ড, শাহজালাল ইসলামী ও ইউনিয়ন ব্যাংক দায়িত্ব পালন করবে। খিলক্ষেত ৩০০ ফুট সড়ক ও দক্ষিণ পাশের বসুন্ধরা প্রাচীরসংলগ্ন হাটে ব্যাংক এশিয়া ও প্রাইম ব্যাংক, খিলক্ষেত বনরূপা আবাসিক প্রকল্পের খালি জায়গাসংলগ্ন হাটে ট্রাস্ট ও আইএফআইসি ব্যাংক, ভাটারা (সাইদনগর) পশুর হাটে যমুনা ও ব্র্যাক ব্যাংক, বসিলা পুলিশ লাইনসংলগ্ন হাটে অগ্রণী ও মেঘনা ব্যাংক, পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের খেলার মাঠে ওয়ান ও উত্তরা ব্যাংক, ইস্টার্ন হাউজিংসংলগ্ন হাটে সিটি ব্যাংক ও প্রিমিয়ার ব্যাংক, মিরপুর ডিওএইচএস-সংলগ্ন হাটে ব্যাংক আলফালাহ ও বেসিক এবং উত্তরখান মৈনারটেক শহিদনগর হাউজিংসংলগ্ন হাটে ইস্টার্ন ব্যাংক ও বিডিবিএল জাল নোট শনাক্তকরণ বুথের মাধ্যমে সেবা প্রদান করবে।
এ ছাড়া ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ১২টি কোরবানির পশুর হাটের মধ্যে খিলগাঁও রেলগেট-সংলগ্ন হাটে এবি ও স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক নোট যাচাইয়ে বুথ বসাবে। ব্রাদার্স ইউনিয়নের বালুর মাঠসংলগ্ন গোপীবাগ হাটে জাল নোট শনাক্তকরণ বুথ স্থাপন করবে এইচএসবিসি ও এনসিসি ব্যাংক। এ ছাড়া ধোলাইখাল ট্রাক টার্মিনাল-সংলগ্ন হাটে মিডল্যান্ড ও আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক, রহমতগঞ্জ খেলার মাঠে বাংলাদেশ কমার্স ও মার্কেন্টাইল ব্যাংক, ঝিগাতলা পশুর হাটে এক্সিম ও এনআরবি গ্লোবাল, কমলাপুর স্টেডিয়ামের পূর্ব পাশের হাটে এনআরবি ও এসবিএসি ব্যাংক, ধূপখোলা হাটে ডাচ্-বাংলা ও সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক, পোস্তগোলা হাটে রূপালী ও ইসলামী ব্যাংক, দনিয়া হাটে মধুমতি ও মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, মেরাদিয়া বাজারসংলগ্ন হাটে ফার্স্ট সিকিউরিটি ও কৃষি ব্যাংক, কামরাঙ্গীরচর হাটে ন্যাশনাল ও সাউথইস্ট ব্যাংক এবং শ্যামপুর বালুর মাঠসংলগ্ন হাটে জনতা, ইউসিবি ও ফারমার্স ব্যাংক জাল নোট যাচাইসংক্রান্ত সেবা প্রদান করবে।
জাল নোট চক্রের অপতৎপরতা রোধ এবং জাল নোটের বিস্তার ঠেকাতে ঢাকার ২২টি অস্থায়ী পশুর হাটে জাল নোট শনাক্তকরণের জন্য ৪৭টি শনাক্তকারী মেশিন বসানো হবে। প্রতিটি হাটে থাকবে কোনো-না-কোনো ব্যাংকের জাল নোট শনাক্তকরণ বুথ। গত মঙ্গলবার এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
প্রশাসনের তথ্যমতে গ্রেফতার করা হলেও তাদের ৮০ শতাংশই জামিনে মুক্তি পেয়ে পরবর্তী সময়ে আবারো নিয়োজিত হচ্ছে জাল নোটের চক্র। ঈদ এলেই তাদের সিন্ডিকেট সারা দেশে সক্রিয় হয়ে ওঠে। গোয়েন্দা সংস্থা ধারণা করছে, ঈদ সামনে রেখে সারা দেশে প্রায় ৫০ কোটি টাকার জাল নোট বাজারে ছাড়ার পরিকল্পনা করেছে এরা। গত শুক্রবার রাতে রাজধানীর লালবাগ থেকে ৭৫ লাখ জাল নোট ও জাল নোট তৈরিতে ব্যবহƒত বিভিন্ন সরঞ্জামসহ আটজনকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মো: আবদুল বাতেন বলেন, জাল নোট তৈরির মূলহোতা কাউসার। সে তার সহযোগী আলাউদ্দিনসহ লালবাগের চার নম্বর এমসি রায় লেনের একটি ফ্ল্যাট বাসা ভাড়া নিয়ে জাল নোট তৈরি করে আসছে। সজিব ও সালেহা জাল নোট তৈরির কাগজে জল ছাপ নিরাপত্তা সুতা স্থাপন করে। কাউসার তার বড় ভাইয়ের সাথে জাল নোট তৈরি করত।
তিনি বলেন, বেশির ভাগ জাল নোট কারবারিকেই গ্রেফতার করা হয়েছে। তারা জেলহাজতে আছে। এখনো যারা বাইরে আছে তাদেরকে গ্রেফতারে কাজ চলছে। উদ্ধার হওয়া জাল নোট আগের চেয়ে অনেক নিখুঁত উল্লেখ করে তিনি বলেন, উদ্ধার হওয়া জাল নোটে নিরাপত্তা সুতা স্থাপন করা হয়েছে। এসব নিরাপত্তা সুতা তারা কিভাবে জোগাড় করছে সে ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। সাধারণ চোখে বোঝা খুবই কঠিন যে, এটা জাল নোট। তবে অরিজিনাল টাকা কিছুটা খসখসে এবং জাল নোট বেশি মসৃণ বলে তিনি জানান।
গোয়েন্দা সূত্র জানায়, এক লাখ জাল নোট তৈরি করতে খরচ হয় প্রায় ১০ হাজার টাকা। পরবর্তী সময়ে তারা পাইকারি বিক্রেতার কাছে এক লাখ টাকার নোট ১৪ থেকে ১৫ হাজার টাকায় বিক্রি করে। পাইকারি বিক্রেতা প্রথম খুচরা বিক্রেতার কাছে বিক্রি করে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকায়। প্রথম খুচরা বিক্রেতা দ্বিতীয় খুচরা বিক্রেতার কাছে বিক্রি করে ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকায় এবং দ্বিতীয় খুচরা বিক্রেতা মাঠপর্যায়ে সেই জাল নোট ছড়িয়ে দেয় বিভিন্ন এজেন্টের মাধ্যমে।
গোয়েন্দাদের হাতে বিভিন্ন সময়ে গ্রেফতার জাল নোট কারবারি ও গোয়েন্দা সূত্র জানায়, জাল নোট তৈরির জন্য প্রথমে টিস্যু কাগজের এক পাশে বঙ্গবন্ধুর প্রতিচ্ছবি স্ক্রিনের নিচে রেখে গাম দিয়ে ছাপ দিত। এরপর ১০০০ লেখা এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের মনোগ্রামের ছাপ দিত। অতঃপর অপর একটি টিস্যু পেপার নিয়ে তার সাথে ফয়েল পেপার থেকে টাকার পরিমাপ অনুযায়ী নিরাপত্তা সুতা কেটে তাতে লাগিয়ে সেই টিস্যুটি ইতঃপূর্বে বঙ্গবন্ধুর প্রতিচ্ছবি জলছাপ দেয়া টিস্যু পেপারের সাথে গাম দিয়ে সংযুক্ত করে দিত। এভাবে টিস্যু পেপার প্রস্তুত করে বিশেষ ডট কালার প্রিন্টারের মাধ্যমে ল্যাপটপে সেভ করা টাকার ছাপ অনুযায়ী প্রিন্ট করা হতো। ওই টিস্যু পেপারের উভয় সাইট প্রিন্ট করা হতো এবং প্রতিটি টিস্যু পেপারে মোট চারটি জাল টাকার নোট প্রিন্ট করা হতো। এরপর প্রিন্টকৃত টিস্যু পেপারগুলো কাটিং গ্লাসের ওপরে রেখে নিখুঁতভাবে কাটিং করা হতো। পরে কাটিংকৃত জাল টাকাগুলো বিশেষভাবে বান্ডিল করে এটি চক্রের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হতো।
জাল নোট তৈরির কারিগর জাকির হোসেন নামে একজন বলেন, ২০১৫ সালে ঈদের ছুটিতে বাড়িতে গেলে জাল নোট কারবারি রফিকের সাথে তার পরিচয় হয়। একপর্যায়ে রফিক তাকে ভালো বেতনের প্রস্তাব নিয়ে নারায়ণগঞ্জে ডাকেন। সেখানে গিয়ে জাকির দেখতে পান জাল নোট তৈরি করতে হবে। প্রথমে ১০ হাজার টাকা বেতন, আর কাজ শেখা হয়ে গেলে বেতন ৩০ থেকে ৪০ হাজার হবে, এই শর্তে তিনি কাজ শুরু করে দেন। ২০১৫ সালেই রফিকসহ জাকির ডিবির হাতে ধরা পড়ে ছয় মাস জেল খাটার পর জামিনে বেরিয়ে আবারো একই কাজ শুরু করেন। রফিক এই কারখানার মূল হোতা ও মালিক। তার টিমে পাঁচজন কাজ করেন। বাইরে টাকাটা ছড়িয়ে দেয়ার জন্য আরো বেশ কয়েকটি টিম রয়েছে বলে জানান রফিক।
তিনি আরো বলেন, প্রায় ১০ বছর হলো এই ব্যবসার। রফিক এর আগে আরো দুইবার ধরা পড়েছিলেন। প্রতি ১০ লাখ টাকা বানাতে খরচ হয় মাত্র সাত হাজার টাকা। আর প্রতি এক লাখ টাকা বিক্রি হয় ১০ হাজার টাকায়। সেটি দ্বিতীয় ধাপে গিয়ে বিক্রি হয় ২২ হাজার টাকায়।
যেসব স্থানে থাকছে জাল নোট শনাক্তের মেশিন : ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ১০টি হাটের মধ্যে মিরপুর-গাবতলী গবাদি পশুর হাটে সোনালী, সীমান্ত, ঢাকা ও পূবালী ব্যাংক জাল নোট শনাক্তকরণ বুথ স্থাপন করবে। উত্তরা ১৫ নম্বর সেক্টরের প্রথম গোল চত্বরসংলগ্ন পশুর হাটে স্ট্যান্ডার্ড, শাহজালাল ইসলামী ও ইউনিয়ন ব্যাংক দায়িত্ব পালন করবে। খিলক্ষেত ৩০০ ফুট সড়ক ও দক্ষিণ পাশের বসুন্ধরা প্রাচীরসংলগ্ন হাটে ব্যাংক এশিয়া ও প্রাইম ব্যাংক, খিলক্ষেত বনরূপা আবাসিক প্রকল্পের খালি জায়গাসংলগ্ন হাটে ট্রাস্ট ও আইএফআইসি ব্যাংক, ভাটারা (সাইদনগর) পশুর হাটে যমুনা ও ব্র্যাক ব্যাংক, বসিলা পুলিশ লাইনসংলগ্ন হাটে অগ্রণী ও মেঘনা ব্যাংক, পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের খেলার মাঠে ওয়ান ও উত্তরা ব্যাংক, ইস্টার্ন হাউজিংসংলগ্ন হাটে সিটি ব্যাংক ও প্রিমিয়ার ব্যাংক, মিরপুর ডিওএইচএস-সংলগ্ন হাটে ব্যাংক আলফালাহ ও বেসিক এবং উত্তরখান মৈনারটেক শহিদনগর হাউজিংসংলগ্ন হাটে ইস্টার্ন ব্যাংক ও বিডিবিএল জাল নোট শনাক্তকরণ বুথের মাধ্যমে সেবা প্রদান করবে।
এ ছাড়া ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ১২টি কোরবানির পশুর হাটের মধ্যে খিলগাঁও রেলগেট-সংলগ্ন হাটে এবি ও স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক নোট যাচাইয়ে বুথ বসাবে। ব্রাদার্স ইউনিয়নের বালুর মাঠসংলগ্ন গোপীবাগ হাটে জাল নোট শনাক্তকরণ বুথ স্থাপন করবে এইচএসবিসি ও এনসিসি ব্যাংক। এ ছাড়া ধোলাইখাল ট্রাক টার্মিনাল-সংলগ্ন হাটে মিডল্যান্ড ও আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক, রহমতগঞ্জ খেলার মাঠে বাংলাদেশ কমার্স ও মার্কেন্টাইল ব্যাংক, ঝিগাতলা পশুর হাটে এক্সিম ও এনআরবি গ্লোবাল, কমলাপুর স্টেডিয়ামের পূর্ব পাশের হাটে এনআরবি ও এসবিএসি ব্যাংক, ধূপখোলা হাটে ডাচ্-বাংলা ও সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক, পোস্তগোলা হাটে রূপালী ও ইসলামী ব্যাংক, দনিয়া হাটে মধুমতি ও মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, মেরাদিয়া বাজারসংলগ্ন হাটে ফার্স্ট সিকিউরিটি ও কৃষি ব্যাংক, কামরাঙ্গীরচর হাটে ন্যাশনাল ও সাউথইস্ট ব্যাংক এবং শ্যামপুর বালুর মাঠসংলগ্ন হাটে জনতা, ইউসিবি ও ফারমার্স ব্যাংক জাল নোট যাচাইসংক্রান্ত সেবা প্রদান করবে।
0 মন্তব্যসমূহ