মোহাম্মদ এরশাদঃ- একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সবরকম প্রস্তুতি শেষ করেছে ক্ষতাসীন আওয়ামী লীগ। এরইমধ্যে দেশি-বিদেশি একাধিক সংস্থার মাধ্যমে করা জরিপ, সাংগঠনিক ও গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্টের সমন্বয়ে ৩০০ আসনের প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করেছে দলটি। নির্বাচনে চার সম্ভাবনা মাথায় রেখে প্রার্থী তালিকা প্রস্তুত করেছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।”
এবারের প্রার্থী তালিকায় বড় ধরনের রদবদলের ইঙ্গিত মিলেছে। যার মধ্যে অনেক মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও সংসদ সদস্য বেফাঁস মন্তব্যের কারণে বা নিজের আত্মীয়স্বজনদের অপকর্মের কারণে মনোনয়ন তালিকা থেকে ছিটকে পড়তে যাচ্ছেন। আবার শারীরিক অসুস্থতার কারণেও বাদ পড়ছেন বেশ কয়েকজন সিনিয়র নেতা। শেখ হাসিনা তিনটি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।”
এ ছাড়া অন্যকোনো নেতা একাধিক আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন না। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ রেহানা, বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র সজীব ওয়াজেদ জয়, সায়মা ওয়াজেদ হোসেন পুতুল, রিদওয়ান মুজিব সিদ্দিকী ববি আগামী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন না। আওয়ামী লীগের একাধিক প্রভাবশালী নেতা, মনোনয়ন বোর্ডের একাধিক সদস্য এবং একাধিক গোয়েন্দা সূত্রে খোঁজখবর করে এমন তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে।”
একাধিক সূত্রে প্রাপ্ত তথ্য মতে, বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোট নির্বাচনে এলে এক ধরনের প্রার্থী; আর তারা অংশ না নিলে আরেক ধরনের প্রার্থী তালিকা রয়েছে শেখ হাসিনার হাতে।”
এরমধ্যে ১৪ দলীয় জোটের শরিকদের যেসব আসনে ছাড় দেয়া হবে, তারও তালিকা চূড়ান্ত করা হয়েছে। এরশাদের জাতীয় পার্টি আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট বাঁধলে তাদের কয়টি আসন ছাড় দেয়া হবে তার হিসাবও ঠিক করা হয়েছে।”
বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নিলে আওয়ামী লীগ জোটগতভাবে নয় এককভাবে নির্বাচন করবে এমন ছকও আঁকা রয়েছে। সেক্ষেত্রে দলের বিদ্রোহী প্রার্থীদেরও বাধা দেয়া হবে না। বিএনপি খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে অংশ নিলে কী হবে এবং বিকল্প অন্য কারো নেতৃত্বে অংশ নিলে প্রার্থী বাছাইয়ের কৌশলও আওয়ামী লীগের চূড়ান্ত।”
আওয়ামী লীগের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র মতে, শেখ হাসিনা আগামী সংসদ নির্বাচনে কোন আসনে কাকে নৌকার টিকেট দেবেন তার তালিকা চূড়ান্ত করে সংশ্লিষ্টদের সবুজ সংকেত দিয়েছেন। তবে বর্তমান কোনো সংসদ সদস্যকেই তিনি প্রার্থী না করার কথা বলেননি।।”।
এ অবস্থায় অনেক আসনে একাধিক প্রার্থী সবুজ সংকেত পাওয়ার কথা বলছেন। এবারকার মনোনয়ন ১৯৯৬ সাল এবং ২০০৮ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পাওয়া নেতাদের ব্যাপারে বিশেষ খোঁজখবর করা হয়েছে।”
একান্ত গোপনীয়তার সঙ্গে শেখ হাসিনা নিজে এসব তদারকি করছেন। বর্তমান এমপিদের বদলে যেসব আসনে পুরনো বা নতুন মুখ আসবে সেসব আসনে ওসব প্রার্থীদের আগামী মাসের শুরুতে সরাসরি মাঠে নামানো হবে বলে জানা গেছে। এরইমধ্যে তাদের তৃণমূলের পাশাপাশি অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ এবং হোমওয়ার্ক করতে বলা হয়েছে। এবার তরুণ প্রার্থীদের গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে।”
সূত্র মতে, আওয়ামী লীগ সরকারে ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে ১৭৩ থেকে ১৮৫ আসনে বিজয়ী হওয়ার লক্ষ্যে প্রার্থী নির্ধারণ করছে। যাতে মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রীদের মধ্যে প্রায় ২০ জন সুবিধাজনক অবস্থানে নেই।”
১৪ দলের শরিকদের জন্য ২০-২২টি আসন রয়েছে। আওয়ামী লীগ এবার ৭৫ আসনে তরুণ প্রার্থীর পাশাপাশি পেশাজীবী, ব্যবসায়ী, খেলোয়াড়, শিল্পীদের নাম রেখেছে বিবেচনায়।”
এক ডজন সাবেক সামরিক কর্মকর্তার নামও আছে আলোচনায়। দুজনের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে প্রার্থী করার খবরও রয়েছে।”
ঢাকার ২০টি আসনের মধ্যে ৪ জন সংসদ সদস্যদের কপাল পুড়ছে। মানিকগঞ্জের তিনটি আসনের মধ্যে এরশাদের সঙ্গে জোট হলে দুটি আর তা না হলে একটি আসনের প্রার্থী বদল হবে। চাঁদপুর, ফেনী, টাঙ্গাইল, কিশোরগঞ্জ, মাগুড়া, শরিয়তপুর, সুনামগঞ্জ ও নেত্রকোনার একাধিক আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বদল হচ্ছে।”
বর্তমান যেসব সংসদ সদস্যের প্রার্থিতা নিশ্চিতের খবর পাওয়া গেছে:
০১। পঞ্চগড়-২ : নূরুল ইসলাম সুজন।
০২। ঠাকুরগাঁও-১ : রমেশ চন্দ্র সেন।
০৩। ঠাকুরগাঁও-২ : দবিরুল ইসলাম।
০৪। দিনাজপুর-১ : মনোরঞ্জন শীল গোপাল।
-৫। দিনাজপুর-২ : খালিদ মাহমুদ চৌধুরী।
০৬। দিনাজপুর-৩ : ইকবালুর রহিম।
০৭। দিনাজপুর-৪ : আবুল হাসান মাহমুদ আলী।
০৮। দিনাজপুর-৫ : মুস্তাফিজুর রহমান ফিজার।
০৯। দিনাজপুর-৬ : শিবলী সাদিক।
১০। নীলফামারী-১ : আফতাব উদ্দিন সরকার।
১১। নীলফামারী-২ : আসাদুজ্জামান নূর।
১২। নীলফামারী-৩ : গোলাম মোস্তাফা।
১৩। লালমনিরহাট-১ : মোতাহার হোসেন।
১৪। লালমনিরহাট-২ : নুরুজ্জামান।
১৫। লালমনিরহাট-৩ : আবু সালেহ মোহাম্মদ সাঈদ দুলাল।
১৬। রংপুর-২ : আবুল কালাম মো. আহসানুল হক চৌধুরী ডিউক।
১৭। রংপুর-৪ : টিপু মুন্সী।
১৮। রংপুর-৫ : এইচ এন আশিকুর রহমান।
১৯। রংপুর-৬ : শেখ হাসিনা/শিরীন শারমিন চৌধুরী।
২০। গাইবান্ধা-২ : মাহাবুব আরা বেগম গিনি।
২১। গাইবান্ধা-৩ : ইউনুস আলী সরকার।
২২। জয়পুরহাট-১ : শামসুল আলম দুদু।
২৩। জয়পুরহাট-২ : আবু সাইদ আল মাহমুদ স্বপন।
২৪। বগুড়া-১ : আব্দুল মান্নান।
২৫। বগুড়া-৫ : মো. হাবিবুর রহমান।
২৬। চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ : গোলাম রাব্বানী।
২৭। চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ : গোলাম মোস্তফা বিশ্বাস।
২৮। চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ : মো. আব্দুল ওদুদ।
২৯। নওগাঁ-১ : সাধন চন্দ্র মজুমদার।
৩০। নওগাঁ-২ : শহীদুজ্জামান সরকার।
৩১। নওগাঁ-৪ : ইমাজ উদ্দিন প্রামাণিক।
৩২। নওগাঁ-৫ : আব্দুল মালেক।
৩৩। নওগাঁ-৬ : ই¯্রাফিল আলম।
৩৪। রাজশাহী-১ : ওমর ফারুক চৌধুরী।
৩৫। রাজশাহী-৩ : আয়েন উদ্দিন।
৩৬। রাজশাহী-৪ : এনামুল হক।
৩৭। রাজশাহী-৫ : আব্দুল ওয়াদুদ দারা।
৩৮। রাজশাহী-৬ : মো. শাহরিয়ার আলম।
৩৯। নাটোর-১ : আবুল কালাম।
৪০। নাটোর-২ : শফিকুল ইসলাম শিমুল।
৪১। নাটোর-৩ : জুনাইদ আহমেদ পলক।
৪২। নাটোর-৪ : মো. আব্দুল কুদ্দুস।
৪৩। সিরাজগঞ্জ-১ : মোহাম্মদ নাসিম।
৪৪। সিরাজগঞ্জ-২ : ডা. হাবিবে মিল্লাত।
৪৫। সিরাজগঞ্জ-৩ : গাজী ইসহাক
0 মন্তব্যসমূহ