বিএন ডেস্কঃ
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য পুরান ঢাকার
পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগারে প্রবেশ করেছেন মেডিকেল বোর্ডের পাঁচ সদস্য।
শনিবার বিকেল ৪টার দিকে তারা কারাগারে প্রবেশ করেন।
এর আগে বিকেল ৩টার দিকে মেডিকেল বোর্ডের সদস্য ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব
মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক
ডা. মো. আবদুল জলিল চৌধুরী এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আমরা মেডিকেল বোর্ডের
পাঁচ সদস্যই কারা অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শক (আইজি প্রিজন) ব্রিগেডিয়ার
জেনারেল সৈয়দ ইফতেখার উদ্দিনের কক্ষে বসে আছি। কারা কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে
এখনো যাওয়ার জন্য অনুমতি পাইনি। খালেদা জিয়া বোধ হয় এখনো প্রস্তুতি নেননি।
অনুমতি পেলেই আমরা সেখানে যাব।’
খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় গত বৃহস্পতিবার পাঁচ সদস্যের একটি মেডিকেল বোর্ড
গঠন করে সরকার। আবদুল জলিল চৌধুরী ছাড়া বোর্ডের অন্য সদস্যরা হলেন-
বিএসএমএমইউর কার্ডিওলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. মো. হারিসুল হক, অর্থোপেডিক
সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক আবু জাফর চৌধুরী, চক্ষু বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী
অধ্যাপক তারিক রেজা আলী এবং ফিজিক্যাল মেডিসিন ও রিহ্যাবিলিটেশন বিভাগের
সহকারী অধ্যাপক ডা. বদরুন্নেসা আহমেদ।
আরো পড়ুন : ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে বিএনপির বক্তব্য
নিজস্ব প্রতিবেদক ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১১:৪৭
নিজস্ব প্রতিবেদক ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১১:৪৭
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, শুধু গণমাধ্যমই
নয়, সরকারবিরোধী যেকোনো সমালোচনার পায়ে জিঞ্জির পরাতেই ডিজিটাল নিরাপত্তা
আইন পাস করার চক্রান্ত করছে সরকার। আসলে এই আইন করা হচ্ছে যাতে কেউ সরকারের
বিরুদ্ধে টু শব্দটিও উচ্চারণ করতে না পারে। এটি একটি ভয়ঙ্কর কালাকানুন।
আমি দলমত নির্বিশেষে সকল মানুষকে এই কালো আইনের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে
প্রতিরোধ গড়ে তোলার জোর আহবান জানাচ্ছি।
এছাড়া বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিপুল জনপ্রিয়তায় ঈর্ষা ও
বিদ্বেষের বশবর্তী হয়ে অবৈধ সরকারের প্রধামন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে জেলে
অন্তরীণ করে রেখেছে। এখন বেগম জিয়াকে তার ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের স্বাস্থ্য
পরীক্ষার সুযোগ না দিয়ে ক্ষমতাসীন দলের ডাক্তারদের দিয়ে মেডিকেল বোর্ড গঠন
দূরভিসন্ধিমূলক বলে মন্তব্য করেন রিজভী। আজ শনিবার সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে
তিনি এসব বলেন।
নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এই সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা আবুল খায়ের ভুইয়া, অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ, মো: মুনির হোসেন, তাইফুল ইসলাম টিপু, হেলেন জেরিন খান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
রিজভী বলেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে কারাবন্দি করা হয়েছে সম্পূর্ণ
অন্যায়ভাবে। সেজন্য দেশনেত্রীর মুক্তির দাবিতে দেশজুড়ে চলছে প্রতিবাদ,
বিক্ষোভ। বেগম জিয়ার বিরুদ্ধে সরকারের দেয়া মামলা জনগণ বিশ্বাস করে না।
সরকার তাই তার অসুস্থতাকে হিংসা চরিতার্থের টার্গেট করেছে। অর্থাৎ বিনা
চিকিৎসায় দেশনেত্রীকে শোচনীয় দূর্দশায় উপনীত করার লক্ষ্যে কৌশলী চক্রান্ত
চালাচ্ছে। বেগম জিয়ার পছন্দ মতো চিকিৎসকদের দ্বারা চিকিৎসা নেয়ার অধিকার
নেই। সরকারই ঠিক করে দিচ্ছে কারা হবেন বেগম জিয়ার চিকিৎসক। তাই সরকার
পরিবারসহ জনগণের দাবিকে পাত্তা না দিয়ে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় এমন
চিকিৎসকদের দিয়ে তার মেডিকেল বোর্ড গঠন করেছে। অর্থাৎ ক্ষমতাসীনদের অনুগত
চিকিৎসকরা বেগম জিয়ার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে প্রথমে শেখ হাসিনাকে রিপোর্ট
করবে, তারপরে শেখ হাসিনা যা বলে দিবেন সেই অনুযায়ী চিকিৎসা চলবে।
তিনি বলেন, বেগম জিয়াকে তার ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার
সুযোগ না দিয়ে ক্ষমতাসীন দলের ডাক্তারদের দিয়ে মেডিকেল বোর্ড গঠন
দূরভিসন্ধিমূলক। গুরুতর অসুস্থ ব্যক্তির চিকিৎসা নিয়ে এটি এক চরম তামাশা।
এর মাধ্যমে বেগম জিয়ার মানবাধিকার কেড়ে নেয়া হলো। বেগম জিয়ার স্বাস্থ্য
পরীক্ষায় তার ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার আশ্বাস দেয়ার পরও
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কথা রাখেননি। আওয়ামী লীগ দল হিসেবে প্রকৃতিগতভাবেই ডাবল
স্ট্যান্ডার্ড। দেশনেত্রীর চিকিৎসা নিয়ে ছিনিমিনি খেলার অপরিণামদর্শিতার
মাশুল একদিন তাদের দিতেই হবে।
রিজভী বলেন, সরকার ইচ্ছাকৃতভাবেই বেগম জিয়াকে গুরুতর শারীরিক অসুস্থতার
দিকে ঠেলে দিচ্ছে। সেজন্যই নিজ দলের অনুগ্রহভাজন ডাক্তারদের দিয়ে বেগম
জিয়ার চিকিৎসা জনমনে সন্দেহ ও শঙ্কার সৃষ্টি হয়েছে। সরকারের এই সিদ্ধান্ত
বিপজ্জনক। যদি হিংসাশ্রয়ী মনের সাধ মেটানোর চক্রান্ত করে দেশনেত্রীর ক্ষতি
করা হয় তাহলে সরকারের পরিণাম হবে ভয়াবহ। আমি আবারো দেশনেত্রী বেগম খালেদা
জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের মেডিকেল বোর্ডে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য জোর দাবি
জানাচ্ছি।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রসঙ্গে বিএনপির শীর্ষ এই নেতা বলেন, সকল
শ্রেণী-পেশার মানুষের মতকে উপেক্ষা করে বহুল আলোচিত ডিজিটাল নিরাপত্তা
বিলের ওপর প্রতিবেদন তৈরী করেছে সংসদীয় কমিটি, যা চলতি সংসদ অধিবেশনেই
পাশের জন্য পেশ করা হতে পারে। এই আইন পাশ করা হলে গণমাধ্যম ও সাংবাদিকদের
স্বাধীনতা হুমকির মুখে পড়বে। গণমাধ্যমকে সম্পূর্ণরুপে নিয়ন্ত্রণ করতেই এই
আইন করা হচ্ছে। শুধু গণমাধ্যমই নয়, সরকারবিরোধী যেকোনো সমালোচনার পায়ে
জিঞ্জির পরাতেই এই আইন। যাতে কেউ সরকারের বিরুদ্ধে টু শব্দটিও উচ্চারণ করতে
না পারে। এটি একটি ভয়ঙ্কর কালাকানুন।
রিজভী আরো বলেন, আইনে যেকোন মানুষকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তুচ্ছ অজুহাতে
গ্রেফতার করতে পারবে, গণমাধ্যম অফিসে যখন তখন সরকারী আইন প্রয়োকারী সংস্থা
হানা দিয়ে কম্পিউটার, ল্যাপটপ তল্লাশী করতে পারবে, সিজ করতে পারবে,
নেটওয়ার্ক বন্ধ করে দিতে পারবে, এমনকি গ্রেফতার করে নিয়ে যেতে পারবে। এই
আইনে কোনো অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করা যাবে না, অর্থাৎ সরকারের কোনো
দুর্নীতিই প্রকাশ করা যাবে না। যদি প্রকাশ করা হয় তাহলে গুপ্তচরবৃত্তির
অপরাধে অপরাধী হয়ে যাবে। এটা শুধু চরম উদ্বেগজনকই নয়, এটি সংবিধানের মূল
নীতির পরিপন্থী।
তিনি বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের খসড়া মন্ত্রীপরিষদে পাশ হবার পর
থেকে বিএনপি, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, নাগরিক সমাজ, সাংবাদিক সংগঠন, সম্পাদক
পরিষদ ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার প্রতিনিধিসহ বিবেকবান মানুষ’রা তীব্র প্রতিবাদ
করে আসছে। এরই মধ্যে গণমাধ্যমের প্রতিনিধিরা সরকারের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠকও
করেছেন। আইনমন্ত্রীসহ মন্ত্রীরা গণমাধ্যমের ওপর হুমকি হবে এমন আইন করবেন
না বলে তাদেরকে প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিলেন। কিন্তু তারা প্রতিশ্রুতির বরখেলাপ
করেছেন। কথা দিয়ে কথা না রাখাটা আওয়ামী লীগের একটি পরিচিত কৌশল। তারা
মানুষের মত প্রকাশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না। পূর্বেও সবকটি গণমাধ্যম
বন্ধ করে কেবলামাত্র তাদের গুনগান গাওয়ার জন্য সরকারী ৪টি গণমাধ্যম খোলা
রাখা হয়েছিল।
রিজভী বলেন, মুক্তচিন্তা, বাকস্বাধীনতা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও
গণমাধ্যমের স্বাধীন বিকাশের পথ ব্যাপকভাবে রুদ্ধ করতেই সরকার এই বাকশালী
আইন করতে যাচ্ছে। চিরায়ত গণতন্ত্রের স্বীকৃত হাতিয়ার প্রচার ও প্রতিবাদ।
প্রতিবাদের ভাষা কেড়ে নিতেই এই আইন পাশ করা হচ্ছে। সেই গণতন্ত্রকে চিরতরে
ধ্বংস করার জন্যই এই আইন পাশ করা হচ্ছে। হিংসা ও অত্যাচারের অনুসারিরা
কখনোই পরমত সহিষ্ণু গণতন্ত্রী হতে পারে না। রাষ্ট্রক্ষমতাকে আওয়ামীতন্ত্রের
কাছে মৌরসীপাট্টা করার জন্যই এই আইন পাশ করা হচ্ছে। আমি দৃঢ় কন্ঠে বলতে
চাই-এই কালো আইন পাশ করা যাবে না।
তিনি আরো বলেন, সরকারী জুলুমের তীব্র কষাঘাতে সারাদেশ বিরানভূমিতে পরিণত
হয়েছে। গোটা দেশকে ভুতুড়ে বাড়িতে পরিণত করার উদ্যোগ চলছে। একদিকে লাগামহীন
গ্রেফতারের উন্মাদনা, অন্যদিকে গায়েবী মামলার জলোচ্ছাসে সারাদেশ প্লাবিত।
বিরোধী দলের নেতাকর্মীরা গ্রাম থেকে শহরে ও শহর থেকে বন্দরে ছুটে বেড়াচ্ছে।
বিএনপি নেতাকর্মীরা ঘরছাড়া, গ্রাম ও শহর নেতাশুণ্য, কর্মীশুণ্য। তৃণমূলের
ওয়ার্ড থেকে জাতীয় পর্যায় পর্যন্ত বিভিন্ন কমিটিতে সভাপতি থেকে সর্বশেষ
সদস্য পর্যন্ত সবার বিরুদ্ধে অসংখ্য মিথ্যা মামলা দেয়া হচ্ছে। বিএনপিসহ
বিরোধী দলগুলোর সাধারণ সমর্থকরাও এই হামলার ছোবল থেকে রেহাই পাচ্ছে না।
মূলত: ভোটারশুন্য করার জন্যই অবৈধ সরকার বিএনপির ওপর আগাম আক্রমণ শুরু
করেছে।
তিনি আরো বলেন, বিএনপির নেতাকর্মীরা যাতে আন্দোলন বা নির্বাচনের কাজে
অংশগ্রহণ করতে না পারে সেজন্যই এই আগাম অভিযান। আগামী নির্বাচনে বিএনপির
এজেন্ট দেয়া দূরে থাক, প্রার্থীও যাতে খুঁজে না পাওয়া যায়, সেজন্য সরকার
মামলা-হামলার আগাম আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে। অবৈধ সরকার এখন উন্মাদের দশায়
পৌঁছেছে। এরা আত্মবোধহীন উন্মাদে নিজেদের পর্যবসিত করেছে। মানুষের ক্ষোভের
ধাক্কায় পালিয়ে যাবার পথ খুঁজতেই অবৈধ আওয়ামী সরকার বেসামাল হয়ে ভুয়া
মামলা ও গ্রেফতারকে কাজে লাগিয়ে টিকে থাকতে চাচ্ছে। খুন, গুম, লুটপাট,
দখলবাজি, মিথ্যা মামলায় মানুষকে হয়রানী করার বরপুত্র হলো আওয়ামী লীগ। শেখ
হাসিনার স্বনির্মিত এই পুলিশী রাষ্ট এখন উৎখাত করার জন্য মানুষ ঐক্যবদ্ধ।
রিজভী বলেন, শাসকদল পুলিশকে যেভাবে ব্যবহার করছে তা নজীরবিহীন। পুলিশী
আচরণ মনুষ্যত্বহীনতার চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। অবৈধ সরকারের মসনদ গুঁড়িয়ে
দিতে সমাজের ঐক্যবদ্ধ শক্তি সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। সরকারের পতনের
জন্য অত্যাচারিত মানুষ আজ গর্জে উঠছে। সরকারের সকল অনাচারের সমুচিত জবাব
দিয়ে জবাবদিহিমূলক সরকার প্রতিষ্ঠা করবেই জনগণ।
এছাড়া গতকাল গাজীপুরের কালিগঞ্জে দুজন নেতাকর্মীকে গ্রেফতার এবং ৩৭ জনের
বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করেছে। এরআগেও শ্রীপুর ও কালিয়াকৈরে বিএনপির
অসংখ্য নেতাকর্মীদের নামে মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। আমি দলের পক্ষ
থেকে নেতাকর্মীদের গ্রেফতার ও মিথ্যা মামলা দায়েরের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও
প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং অবিলম্বে নেতাকর্মীদের নি:শর্ত মুক্তি ও মিথ্যা
মামলা প্রত্যাহারের জোর দাবি করছি।
0 মন্তব্যসমূহ