বিএন ডেস্কঃ
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের খসড়ায় ১১টি সংশোধনী এনে চূড়ান্ত প্রতিবেদন
সংসদে উপস্থাপন করেছে সংসদীয় কমিটি। বহুল আলোচিত এই আইনের অধীনে অপরাধে
কিছু জায়গায় শাস্তি কমানোর সুপারিশ করেছে কমিটি। ডিজিটাল নিরাপত্তা
কাউন্সিলের আইনমন্ত্রী ও ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিবকে অন্তর্ভুক্তের
সুপারিশ করা হয়েছে। সোমবার জাতীয় সংসদে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য-প্রযুক্তি
মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ইমরান আহমেদ প্রতিবেদনটি
উপস্থাপন করেন।
প্রতিবেদন উত্থাপনের সময় তা চূড়ান্ত করতে গণমাধ্যম প্রতিনিধিদের সঙ্গে
আলোচনার প্রসঙ্গ টেনে ইমরান আহমেদ বলেন, গণমাধ্যম প্রতিনিধিদের বক্তব্য
সন্নিবেশ করে প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনা হয়েছে। এই বিলটি পাস হলে এটি ডিজিটাল
বাংলাদেশ গড়ায় ভূমিকা রাখবে।
এরআগে মন্ত্রিসভা গত ২৯ জানুয়ারি ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮’ এর খসড়া
চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়। এরপর গত ৯ এপ্রিল তা সংসদে উত্থাপন করেন ডাক,
টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তফা জব্বার। খসড়া আইনটি সংসদে
তোলার পর তা পরীক্ষা করে প্রতিবেদন দিতে সংসদীয় কমিটিতে পাঠানো হয়। সংসদীয়
কমিটিকে প্রথমে চার সপ্তাহ সময় দেওয়া হলেও পরে দুই দফায় তিন মাস সময় বাড়িয়ে
নেয় তারা। তবে শেষ দফায় এক মাস সময় নিলেও একদিন পরেই বৈঠক করে প্রতিবেদন
চূড়ান্ত করে সংসদীয় কমিটি।
প্রতিবেদন চূড়ান্ত করার আগে সংসদীয় কমিটি দুই দফায় সম্পাদক পরিষদ,
টেলিভিশন মালিকদের সংগঠন অ্যাটকো, ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সঙ্গে বৈঠক
করে। তবে তাতেও উদ্বেগ প্রশমিত হয়নি। সংসদীয় কমিটিতে সম্পাদক পরিষদ খসড়া
আইনের ৮, ২১, ২৫, ২৮, ২৯, ৩১, ৩২, ৪৩ ধারার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আপত্তি
জানায়। আইনের ৮ ধারায় ছিল, ডিজিটাল মাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য-উপাত্ত ডিজিটাল
নিরাপত্তার ক্ষেত্রে হুমকি সৃষ্টি করলে ওই তথ্য-উপাত্ত অপসারণ বা
ক্ষেত্রমত, ব্লক করার জন্য বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনকে ডিজিটাল
নিরাপত্তা এজেন্সি অনুরোধ করতে পারবে।
ওই ধারায় বলা হয়েছে, যদি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে মনে হয় যে ডিজিটাল
মাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য দেশের বা দেশে কোন অংশের সংহতি, অর্থনৈতিক
কর্মকান্ড, নিরাপত্তা, প্রতিরক্ষা, ধর্মীয় মূল্যবোধ বা জনশৃঙ্খলা ক্ষুন্ন
করে বা জাতিগত বিদ্বেষ ও ঘৃণার সঞ্চার করে তাহলে বাহিনী ওই তথ্য-উপাত্ত
ব্লক বা অপসারণ করতে ডিজিটাল নিরাপত্তা এজেন্সির মাধ্যমে বিটিআরসিকে অনুরোধ
করতে পারবে। এই ধারায় পরিবর্তনের জন্য সম্পাদক পরিষদ সংসদীয় কমিটিতে
প্রস্তাব দিয়েছিল। তবে এখানে কোনো পরিবর্তন আনেনি কমিটি।
সংসদীয় কমিটির সুপারিশে এই আইনের প্রয়োগ সংক্রান্ত বিধানে শর্তাংশ যুক্ত
করে বলেছে, তবে শর্ত থাকে যে তথ্য অধিকার সংক্রান্ত বিষয়ের ক্ষেত্রে তথ্য
অধিকার আইন, ২০০৯ এর বিধানবলি কার্যকর থাকিবে।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, ‘সেসকল মহান আদর্শ আমাদের বীর
জনগণকে জাতীয় মুক্তি সংগ্রামে আত্মনিয়োগ ও বীর শহীদদিগকে প্রাণোৎসর্গ করিতে
উদ্বুদ্ধ করিয়াছিল জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্ম নিরপেক্ষতার
সেই সকল আদর্শ...’।
সংসদে উত্থাপিত বিলে ১৮ ধারায় কম্পিউটার, ডিজিটাল ডিভাইস, কম্পিউটার
সিস্টেমে বেআইনি প্রবেশে সর্বোচ্চ এক বছরের কারাদন্ড এবং তিন লাখ টাকার
বিধান ছিল। সংসদীয় কমিটি এখানে শাস্তি কমিয়ে ছয় মাস কারাদন্ড বা দুই লাখ
টাকা দন্ডের বিধান প্রস্তাব করেছে। বিলের ২১ ধারায় মুক্তিযুদ্ধ বা
মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বা জাতির পিতার বিরুদ্ধে প্রোপাগান্ডা বা প্রচারণার
দন্ডের বিধানের অংশে সংসদীয় কমিটি ‘জাতীয় সংগীত বা জাতীয় পতাকা’ যুক্ত করার
সুপারিশ করেছে। এখানে শাস্তি কমানোরও সুপারিশ করেছে সংসদীয় কমিটি। এখানে
আগে ১৪ বছরে জেল বা এক কোটি টাকা কিংবা উভয়দন্ডের বিধান ছিলো। সংসদীয় কমিটি
কারাদন্ড ১০ বছরের করার সুপারিশ করেছে।
২৫ ধারায় বলা ছিল, যদি কোনো ব্যক্তি ইচ্ছা করে ওয়েবসাইট বা অন্য কোনো ইলেট্রনিক বিন্যাসে এমন কোনো তথ্য প্রকাশ করে যা আক্রমণাত্মক, ভীতি প্রদর্শক বা কাউকে নীতি ভ্রষ্ট করে বা বিরক্ত করে; অপমান অপদস্ত বা হেয় করে; রাষ্টের ভাবমূর্তি বা সুনাম ক্ষুন্ন করতে বা বিভ্রান্ত করতে কোনো তথ্য সম্পূর্ণ বা আংশিক বিকৃত করে প্রকাশ বা প্রচার করে, তবে তা হবে অপরাধ। এই ধারার চারটি উপধারাকে ছোট করে দুটি উপধারা করার সুপারিশ করেছে সংসদীয় কমিটি। তবে মূল বক্তব্য প্রায় অপরিবর্তিত রয়েছে।
২৫ ধারায় বলা ছিল, যদি কোনো ব্যক্তি ইচ্ছা করে ওয়েবসাইট বা অন্য কোনো ইলেট্রনিক বিন্যাসে এমন কোনো তথ্য প্রকাশ করে যা আক্রমণাত্মক, ভীতি প্রদর্শক বা কাউকে নীতি ভ্রষ্ট করে বা বিরক্ত করে; অপমান অপদস্ত বা হেয় করে; রাষ্টের ভাবমূর্তি বা সুনাম ক্ষুন্ন করতে বা বিভ্রান্ত করতে কোনো তথ্য সম্পূর্ণ বা আংশিক বিকৃত করে প্রকাশ বা প্রচার করে, তবে তা হবে অপরাধ। এই ধারার চারটি উপধারাকে ছোট করে দুটি উপধারা করার সুপারিশ করেছে সংসদীয় কমিটি। তবে মূল বক্তব্য প্রায় অপরিবর্তিত রয়েছে।
২৮ ধারায় ধর্মীয় মূল্যবোধ বা অনুভূতিতে আঘাত করার বিধানে শাস্তি কমানোর
সুপারিশ করেছে সংসদীয় কমিটি। সংসদে উত্থাপিত বিলে ৭ বছরের জেল বা ১০ লাখ
টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডের বিধান ছিল। সংসদীয় কমিটি জেল কমিয়ে ৫ বছর করার
সুপারিশ করেছে। মানহানিকর তথ্য প্রচার নিয়ে ২৯ ধারায় পরিবর্তনের কথা
সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে দাবি করা হলেও সেখানে কোনো পরিবর্তন আনেনি সংসদীয়
কমিটি। বিলে ৩১ ধারায় আইন-শৃঙ্খলা অবনতি ঘটে এমন তথ্য প্রচারের বিষয়ে
পরিবর্তন করার দাবি জানায় সম্পাদক পরিষদ। এখানেও সংসদীয় কমিটি কোনো
পরিবর্তন আনেনি।
সংসদে উত্থাপিত বিলের ৩২ ধারা নিয়ে সাংবাদিক মহলের সবচেয়ে বেশি আপত্তি
ছিল। ওই ধারায় সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে কেউ যদি
বেআইনিভাবে প্রবেশ করে কোনো ধরনের তথ্য উপাত্ত, যে কোনো ধরনের ইলেকট্রনিক
যন্ত্রপাতি দিয়ে গোপনে রেকর্ড করে, তাহলে সেটা গুপ্তচরবৃত্তির অপরাধ হবে
এবং এ অপরাধে ১৪ বছর কারাদন্ড ও ২৫ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দন্ডর বিধান
রাখা হয়েছে। এখানে সংসদীয় কমিটি পরিবর্তন করার সুপারিশ করেছে।
কমিটির সুপারিশে বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি ‘অফিশিয়াল সিক্রেট
অ্যাক্ট-১৯২৩ এর আওতাভুক্ত কোনো অপরাধ কম্পিউটার, ডিজিটাল ডিভাইস,
কম্পিউটার নেটওয়ার্ক, ডিজিটাল নেটওয়ার্ক বা অন্য কোনো ডিজিটাল মাধ্যমে
সংঘটন করে বা করতে সহায়তা করেন, তা হলে তিনি সর্বোচ্চ ১৪ বছরের কারাদন্ড
বা ২৫ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
সংসদে উত্থাপিত বিলে এই আইনের অধীনে সংঘটিত অপরাধের জন্য বিনা পরোয়ানায়
তল্লাশি, জব্দ ও গ্রেফতারে পুলিশকে ক্ষমতা দেওয়া হয়েছিলো। সংসদীয় কমিটি
এখানে ডিজিটাল নিরাপত্তা এজেন্সির মহাপরিচালকের অনুমোদন সাপেক্ষে তল্লাশি,
জব্দ ও গ্রেফতার বিধান রাখার সুপারিশ করেছে।
0 মন্তব্যসমূহ