গাজী গোফরানঃ
প্রত্যেক মানুষের জীবনে, সমাজে ও পরিবারে একজন অভিভাবক প্রয়োজন হয়। সেই অভিভাবকের নেতৃত্বেই চলে একটি পরিবার, একটি সমাজ কিংবা একটি রাষ্ট্র। বিশ্বায়নের এই যুগে বর্তমান পৃথিবী একক নেতার অভিভাবকত্ব হারাচ্ছে। এখন আর সেভাবে গ্লোবাল লিডারশিপের ধারণাটি নেই। অতীতে স্নায়ুযুদ্ধের যুগে পৃথিবী দুই ভাগে বিভক্ত ছিল। সে সময় সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট ছিলেন বিশ্বের একটি অংশের নেতা আর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ছিলেন বিশ্বের আরেকটি অংশের নেতা। পরিবর্তির বিশ্ব পরিস্থিতিতে সেই প্যারাডক্স এখন ভেঙে গেছে। প্যারাডক্স ভেঙে যাওয়ার পরও কিছুদিন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন, বারাক ওবামা পর্যন্ত সময়টাতে মনে করা হতো বিশ্বে একক নেতৃত্ব আছে। কিন্তু এখন বিশ্বের আর কোনো নেতাকেই আর সেই প্রভাবশালী নেতা হিসেবে চিহ্নিত করা যায় না।
নেতৃত্ব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। নেতৃত্ব যে কত গুরুত্বপূর্ণ সেটি বোঝা যায় বিশ্বের বর্তমান বিশৃঙ্খল অবস্থা দেখে। আর সবচেয়ে বড় কথা পৃথিবীতে যে দেশগুলোই উন্নতি করেছে, উন্নয়নের পথে নির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জন করেছে, তারা একটি নেতৃত্ব ছাড়া সেই লক্ষ্য অর্জন করতে পারেনি। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, মহাত্মা গান্ধী না থাকলে ভারত স্বাধীন হতো না। পাকিস্তান যত উদ্ভট রাষ্ট্রই হোক না কেন, মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ না থাকলে সেই রাষ্ট্রের জন্ম হতো না। আর বঙ্গবন্ধু না থাকলে জন্ম নিত না বাংলাদেশ। কিন্তু বঙ্গবন্ধু হত্যার পর বাংলাদেশ অনেকগুলো সংকটের মুখোমুখি হয় যার মধ্যে মূল সংকট ছিল নেতৃত্বের সংকট। মাত্র কয়েক বছর আগে স্বাধীন হওয়া বাংলাদেশের তখন প্রয়োজন ছিল এমন একজন নেতা, এমন একজন কাণ্ডারি যিনি তাঁর মতো করে দেশটিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। সেই নেতা অবশ্যই মানবিক ভুল-ত্রুটির উর্ধ্বে হবেন না কিন্তু ভুল-ত্রুটি করার পরও সেই নেতার মানুষকে উজ্জীবিত করার, তরঙ্গায়িত করার, আবেগে উদ্বেলিত করে মানুষকে গন্তব্যের দিকে নিয়ে যাওয়ার ক্ষমতা থাকতে হবে। প্রকৃত নেতা হবেন হ্যামিলনের বংশীবাদকের মতো। জনগণ তাঁর বাঁশি শুনে সাগরে ডুবতে পারে, স্বর্গেও যেতে পারে। জনগণ কোথায় যাবেন তা নির্ভর করে সম্পূর্ণ নেতার ওপর। আমাদের সৌভাগ্য ’৭৫ এর হত্যাকাণ্ডের পর আমরা হ্যামিলনের বংশীবাদকের মতো একজন নেতা পেয়েছি। তিনি শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধু কন্যা আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। আজ তাঁর ৭২ তম জন্মদিন। ১৯৪৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর জন্মগ্রহণ করেন বাংলাদেশের উন্নয়নের অগ্রদূত শেখ হাসিনা।
নেতৃত্ব তৈরি হয় অনেকভাবে। নেহরু নিজ হাতে গড়ে-পিটে ইন্দিরা গান্ধীকে তৈরি করেছিলেন। পাকিস্তানে জুলফিকার আলী ভুট্টো তাঁর মেয়ে বেনজির ভুট্টোকে তৈরি করেছিলেন নেতা হিসেবে। রাহুল গান্ধীকে বেড়ে ওঠার সুযোগ দিয়ে গড়ে তুলছেন সোনিয়া গান্ধী। আবার অনেকে পরিস্থিতির কারণে বাধ্য হয়ে রাজনীতিতে আসতে হয়। যেমন রাজীব গান্ধীর কখনো রাজনীতিতে আসার কথা ছিল না। বিমান দুর্ঘটনায় তাঁর ভাই সঞ্জয় গান্ধীর মৃত্যু হয়, যাঁকে নেতা হিসেবে গড়ে তুলছিলেন তাঁদের মা ইন্দিরা গান্ধী। পরে ইন্দিরা গান্ধীর মৃত্যু হয় আত্মঘাতি হামলায়। তখনই রাজনীতিতে আসতে হয় রাজীব গান্ধীকে। একই ভাবে বেনজির ভুট্টোর মৃত্যুর পর আসেন বিলওয়াল ভুট্টো। এভাবে পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাঁরা নেতৃত্ব আসে তারা কতটুকু সফল হয় বা ব্যর্থ হয় তা নির্ভর করে তারা মানুষের হৃদস্পন্দন কতটুকু শোনে।
শেখ হাসিনার তো রাজনীতিই করার কথা ছিল না। স্বামী সংসার নিয়ে জীবন কাটানোর কথা ছিল তাঁর। স্বামীর জন্য তিনি বিদেশও চলে গিয়েছিলেন। কিন্তু ১৯৭৫ সালে স্বাধীনতা বিরোধী ষড়যন্ত্রকারীদের হাতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নিহত হওয়া এবং সেই হত্যাকাণ্ডে পুরো পরিবারকে হারানোর পর দেশের প্রয়োজনে রাজনীতিতে আসতে বাধ্য হন শেখ হাসিনা।
রাজনীতি ধাক্কা খেয়ে খেয়ে শিখেছেন শেখ হাসিনা। আর এভাবেই তিনি এমন এক জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছেন যেখানে তিনি একজন প্রকৃত অভিভাবকের প্রতিচ্ছবি। তাঁকে আমরা শুধু আওয়ামী লীগ নেতা বা কেবল একটি বিশেষ দলের প্রধান মনে করা উচিত না। তিনি বাঙালি জাতির নেতা। বাবা-মা আমাদের অভিভাবক। তারাই আমাদের ভালো চায়। শেখ হাসিনার বাঙালি জাতির জন্য নিজেকে একই ভাবে তৈরি করেছেন। জাতির অভিভাবকের স্থানে নিজেকে প্রতিস্থাপন করেছেন। শেখ হাসিনা না থাক দেশের উন্নয়ন, অগ্রগতি দূরের কথা, দেশের অস্তিত্বই হুমকির মুখে পড়বে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য এই জন্মদিনটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের জন্যই শেখ হাসিনার ক্ষমতায় থাকা উচিত। এদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রার জন্যই থাকা উচিত তাঁর। কারণ শেখ হাসিনা না থাকলে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রার অভিযাত্রা যে মুখ থুবড়ে পড়বে। তিনিই থাকুন আমাদের মাঝে এমন প্রত্যাশায় আমরা দীর্ঘায়ু কামনা করি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার।
0 মন্তব্যসমূহ