চাকুরীতে প্রবেশের বয়স ৩৫ করার জন্য যৌক্তিক আন্দোলন শুরু হয়েছিল ২০১২ সালে। সেই থেকে অদ্যবদি পর্যন্ত সুষ্ঠু ও গণতান্ত্রিকভাবে এ আন্দোলন চলে আসছে। একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে কিছু পর্যবেক্ষণ ও ব্যাক্তি অনুভূতি :
১। সরকার এই দেশকে বিশ্বের উন্নত দেশের ন্যায় ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে অবিরাম কাজ করে যাচ্ছে অথচ উন্নত বিশ্বে চাকরিতে প্রবেশের ক্ষেত্রে কোন বাধ্যবাধকতা নেই এ কথাটা মানতে নারাজ।
২। চাকুরী পাওয়া তো দূরের কথা, মাত্র ত্রিশ বছর বয়সেই চাকুরীতে আবেদন করার যোগ্যতাটাই কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। অথচ ৭০/৮০/৯০ বছরেও এমপি, মন্ত্রী হওয়া যায়।
৩। বিশ বছর কত সাধনা, কত ত্যাগের মাধ্যমে অর্জিত সাটিফিকেট পরবর্তী ৪/৫ বছরেই অচল নোটের মত বাতিল হয়ে যাচ্ছে। ফলে যুবকদের মধ্যে বাড়ছে হতাশা ও আত্নহত্যার প্রবণতা।
৪। ভার্সিটি পাশ করা কত পার্সেন্ট তরুন তরুণী মামা- খালু কিংবা কোটা ছাড়া নিদিষ্ট সময়ের মধ্যে খুব ভাল চাকুরী পেয়েছে? পার্সেন্টটা হয়তো খুব বেশী হবে না ।
৫। সরকারি চাকুরির মত প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানগুলো ও ৩০ চায় আর সাথে তো আছে অভিজ্ঞাতার খড়গ । মনে হচ্ছে চাকুরিপ্রার্থী মায়ের পেট থেকে বের হয়েই অভিজ্ঞাতার বিদ্যাসাগর হয়ে বসে আছে । বেকার যুবকেরা যাবে কোথায় ? চাকুরী না পাওয়ার হতাশা থেকে গত তিন- চার বছরে প্রায় ডজনের উপরে তরুণ তরুণী আত্নহত্যা করেছে, অথচ এদের উপরই হয়তো নির্ভরশীল ছিল তাদের পরিবারগুলো। হাজার হাজার টাকা খরচ করে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করেছে একটি সুন্দর ভবিষ্যতের স্বপ্নে বিভোর হয়ে। তা পূর্ণ হয়নি তাদের শুধুমাত্র ৩০ নামক প্রতিবন্ধকতার কারণে।
৬। চাকুরী না পাওয়ার হতাশা থেকে ২০১৪ - ২০১৮ সালে অাত্নহত্যা কারীদের কয়েকজন ( বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত খবর অনুসারে)
★ সৈকত রন্জন মন্ডল, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় (জাগো নিউজ, 22/09/2018)
★ তানবীর রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (মানবজমিন, 02/04/2018)
★ বাদল বিশ্বাস, গোপালগঞ্জ (ইত্তেফাক, 22/08/2017)
★ হুমায়ুন কবির, মণিপুর, মিরপুর, ঢাকা (বাংলাদেশ প্রতিদিন, 11/04/2016)
★ আশিক ইবনে মাহমুদ, মিরপুর, ঢাকা ( বাংলাদেশ প্রতিদিন, 11/04/2016)
★ফারজানা বিনতে করিম, চ্ট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ( sylhet news 24 . com, 18/077/2014)
★ তারেক আজিজ সোহাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ( যুগান্তর, 18/03/2016)
★ রাকিবুল ইসলাম, কাফরুল, ঢাকা ( দ্যা বাংলা টাইমস, 13/01/2016)
★ এমদাদুল আলম সবুজ, ছাগলনাইয়া, ফেনী (নয়া দিগন্ত, 23/02/2018)
৭। যৌক্তিক কোটা সংস্কার আন্দোলনে ও একটা অংশ ঘোর বিরোধী ছিল তথাপি সরকার জনগনের মতামতকে প্রাধান্য দিয়ে কোটাপ্রথা বাতিল করেছে ( সেই জন্য ধন্যবাদ জানাই সরকারকে) । কিন্তু ৩৫ এর পক্ষে সরকারের মন্ত্রী, এম পি, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, বিরোধীদল সহ সকল শ্রেণী পেশার মানুষ। সবচেয়ে বড় কথা দেশের সর্বোচ্চ পদে আসীন ব্যাক্তি মহামান্য রাষ্ট্রপতি ৩৫ এর পক্ষে। তাহলে কোন সে অজানা উদ্ভট কারণ যার জন্য ৩৫ এর গেজেট প্রকাশিত হচ্ছে না?
৯। মন্ত্রীপরিষদ দুই দুই বার সুপারিশ করেছে , জনপ্রশাসন মন্ত্রনালয় সুপারিশ করেছে, এমপিরা সংসদে বারবার অনুরোধ করেছে ৩৫ এর জন্য, রাষ্ট্রপতি সম্মতি দিয়েছে । সবধরণের যুক্তি তথ্য উপস্হাপনের পরেও ৩৫ হচ্ছে না কেন?
১০। ৩৫ করে দেওয়া মানে তো আর চাকুরী দেওয়া না। আবেদনের সুযোগ দেওয়া মাত্র। সরকার দারিদ্রতা আর বেকারত্ব দূর করতে কাজ করে যাচ্ছে একটি স্বাবলম্বী দেশ ও জাতি গড়ার প্রত্যয়ে। শিক্ষিত বেকার যুবকদের উপেক্ষা করে, বয়সের জেল খানায় বন্দী করে কী ভাবে বেকারত্ব দূর করা যায় ? কুড়ে ঘরে বসে নাসার স্পেসশিপ এ ছড়ার কথা কল্পনা করা যায় মাত্র। ২০ বছর ধরে কষ্টার্জিত সাটিফিকেট কে যদি ৩০ বছর এ শিকল পরিয়ে দেয়া হয় তাহলে বেকারত্ব দূর করার সপ্ন দেখা অলীক স্বপ্ন নয় কী?
১১। কিছু কিছু সার্কুলার আসে ৬/৭ বছর পর পর আবার কিছু কিছু চাকুরীর পরীক্ষা হয় ৩/৪ বছর পর । সেশন জট তো আছেই ( আমাদের ব্যাচের এক বছরের মাষ্টার্স শেষ করতে প্রায় ত্রিশ মাস লেগেছিল) । বয়স তো আর বসে থাকে না, তাহলে চাকুরী না পাওয়ার জন্য শিক্ষিত বেকার যুবকটার কী দোষ? নিজেকে ব্যার্থ ভেবে লজ্জায়, ক্ষোভে, দুঃখে, সমাজের কটু কথা থেকে বাঁচতে, রাষ্ট্রযন্ত্রের চালকদের উপর একরাশ অভিযোগ আর ঘৃণা নিয়ে, পরিবার পরিজন ত্যাগ করে আত্নহননের পথ বেছে নেয়।
পরিশেষে এটাই বলব, সরকার শিক্ষিত বেকার যুবকদের কষ্ট বুঝুক, দেশ ও দেশের জনগনের মতামত কে প্রাধান্য দিক । উন্নত বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হলে চাকুরীতে বয়সসীমা বাড়ানোর কোন বিকল্প নেই। তাই অবিলম্বে চাকুরীতে প্রবেশের বয়স ৩৫ করা হোক, যদিও অনেক আগেই এটা করা উচিত ছিল। কোন মুখোশের আড়ালে কিংবা বক্তৃতার মঞ্চে নয়, বরং সত্যিকার অর্থে জনগণ বান্ধব হয়ে সরকার দেশ ও জাতিকে এগিয়ে নিয়ে যাক বিশ্ব দরবারে নতুন পরিচয়ে। "ভিশন ২০৪১" পূরনের মাধ্যমে যেন বিশ্ব মঞ্চে আমরা মাথা উচু করে বলতে পারি - " ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত, বেকারমুক্ত, স্বাধীন ও সার্বভৌম একটি উন্নত জাতির দেশ। বাংলাদেশ ।।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার সরকারে কাছে এটাই প্রত্যাশা।
লেখক : হোসেন সোহরাওয়ার্দী, সাবেক শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।
0 মন্তব্যসমূহ