গাজী গোফরানঃ বহুল আলোচিত ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার রায়কে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত হয়ে উঠছে চট্টগ্রাম বাঁশখালী। আগামীকাল বুধবার (১০ অক্টোবর) বহুল চর্চিত এ মামলায় রায় দেবে আদালত।
এদিকে রায় বিপক্ষে গেলে প্রতিবাদে মাঠে থাকার ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। তবে দলটির নেতাকর্মীরা কিছুটা কৌশলী অবস্থান নিয়েছে। অন্যদিকে রায়কে কেন্দ্র করে যে কোনও ধরনের সহিংসতা মোকাবিলায় মাঠে থাকার ঘোষণা দিয়েছে চট্টগ্রাম দক্ষিণজেলা আওয়ামীলীগ নেতা আব্দুল্লাহ কবির লিটন।
বিএনপি যেন কোনও ধরনের নাশকতা সৃষ্টি করতে না পারে সেজন্য রায়ের দিন সকাল থেকেই বাঁশখালী বিভিন্ন পয়েন্টে অবস্থান নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাঁশখালী তৃণমূল আওয়ামীলীগ। এ রায়কে ঘিরে সব ধরনের নাশকতা মোকাবিলায় প্রস্তুত রয়েছে পুলিশও।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বাঁশখালী থানার ওসি বাঁশখালী নিউজকে বলেন, ‘বহুল আলোচিত এ রায়কে কেন্দ্র করে যাতে কোনও প্রকার নাশকতা ও বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি না হয় সে ব্যাপারে বাঁশখালী থানা পুলিশের পূর্ণ প্রস্তুতি রয়েছে। বাঁশখালীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে পোশাকে এবং সাদা পোশাকে পর্যাপ্ত পরিমাণ পুলিশ মোতায়েন থাকবে। কোনও পক্ষকেই কোনও ধরনের বিশৃঙ্খলা করতে দেয়া হবে না।’
এদিকে বহুল আলোচিত এ রায়কে কেন্দ্র করে বিএনপি প্রথম দিকে মাঠে থাকার ঘোষণা দিলেও এখন সে অবস্থান থেকে সরে এসে অনেকটা কৌশলী অবস্থান নিয়েছে বাঁশখালীর নেতারা। রায় পর্যালোচনা করেই বিএনপি কেন্দ্রীয় কর্মসূচি বাস্তবায়ন করবে বলে দলের নেতারা জানিয়েছেন।
আওয়ামী লীগের দলীয় সূত্রে জানা যায়, ১০ অক্টোবর একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায়ে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ দলটির শীর্ষ পর্যায়ের একাধিক নেতার সর্বোচ্চ শাস্তি হতে পারে। এমন কিছু হলে বিএনপি বাঁশখালীতে নাশকতা সৃষ্টি করতে পারে। এ কারণে তারা বাঁশখালীর বিভিন্ন পয়েন্টে অবস্থান নিতে শুরু করেছে। জনগণের জানমাল রক্ষায় মঙ্গলবার (৯ অক্টোবর) থেকে সকল নেতাকর্মীদের নিজ নিজ এলাকায় অবস্থান নিতে নির্দেশনা দেয় আব্দুল্লাহ কবির লিটন।
চট্টগ্রাম দক্ষিণজেলা আওয়ামীলীগের প্রভাবশালী নেতা আব্দুল্লাহ কবির লিটন এ প্রসঙ্গে বাঁশখালী নিউজকে বলেন, ‘১০ অক্টোবর নারকীয় বোমা হামলা মামলার বিচারিক রায় ঘোষণার দিনকে কেন্দ্র করে সম্ভাব্য যেকোনও নারকীয় তাণ্ডব ঘটানোর পুনরাবৃত্তি প্রতিরোধে বাঁশখালী তৃনমূল আওয়ামী লীগ জিরো টলারেন্স ভূমিকা পালনে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পাশে থাকবে। এক্ষেত্রে ষড়যন্ত্রকারীদের তিল পরিমাণ ছাড় দেয়া হবে না। জনগণের জানমাল রক্ষায় তাৎক্ষণিকভাবে যা কিছু করা প্রয়োজন সেই নৈতিক সাহস সঞ্চয় ও চেতনা ধারণ করে বাঁশখালী তৃনমূল আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা ৯ থেকে ১১ অক্টোবর পর্যন্ত রাজপথে থাকবে বলে ঘোষণা দেন আব্দুল্লাহ কবির লিটন।
চট্টগ্রাম দক্ষিণজেলা যুবলীগের প্রভাবশালী নেতা, আব্দুল্লাহ কবির লিটনের অনুসারী গাজী জাহেদ আকবর জেবু বলেন, ‘রায়কে ঘিরে বিএনপি অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারে। তাই জনগণের জানমাল রক্ষায় সেদিন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা মাঠে থাকবে। সবাই নিজ নিজ এলাকায় অবস্থান নেবে। এছাড়াও আমরা ১৭টি স্থান নির্ধারণ করেছি। একুশ আগস্টের গ্রেনেড হামলায় জড়িতরা সর্বোচ্চ শাস্তি পাবে বলে আশা করছি।’
তবে উল্টো অভিযোগ করে দক্ষিনজেলা বি.এন.পি সভাপতি জাফরুল ইসলাম চৌধুরী বাঁশখালী নিউজকে বলেন, ‘আগামীকাল গ্রেনেড হামলা মামলার রায় হতে পারে। এই রায়কে কেন্দ্র করে সরকারি দল অস্থিরতা তৈরির চেষ্টা করছে। রায় যাই হোক আমরা কেন্দ্রীয় কর্মসূচি বাস্তবায়ন করবো। আগামীকাল আমরা সমাবেশ করতে চেয়েছিলাম কিন্তু পুলিশ প্রশাসন অনুমতি দেয়নি।
তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ হলো সন্ত্রাসীদের দল। তাই তারা কাল রায়কে কেন্দ্র করে অস্ত্র ও লাঠি নিয়ে মাঠে থাকার ঘোষণা দিয়েছে। তাদের মধ্যে জনভীতি কাজ করছে। তাই তারা কাল সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করার প্রস্তুতি নিয়েছে। বিএনপি হলো ভদ্র মানুষের দল। আমরা অস্ত্র ও লাঠিতে বিশ্বাস করি না। আমরা আগামীকাল কোন কর্মসূচি রাখছি না।’
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম বাঁশখালী থানা বি.এন.পি সভাপতি মাষ্টার লোকমান বলেন, ‘কাল একুশে আগস্টের রায়কে কেন্দ্র করে আমরা ভীত নই। কারণ এই ন্যাক্কারজনক ঘটনার সাথে বিএনপি জড়িত নয় বরং আওয়ামী লীগই জড়িত। এই রায়কে কেন্দ্র করে তাদের কোনও অসৎ উদ্দেশ্যে থাকতে পারে। তাই তারা বাঁশখালীর বিভিন্ন পয়েন্টে অবস্থান নিতে চায়। বিএনপি জনগণের দল। এই রায় নিয়ে সরকার বিএনপির কোনও নেতৃবৃন্দকে সাজা দিলে বিএনপি জনগণকে সাথে নিয়ে প্রতিবাদ জানাবে।
0 মন্তব্যসমূহ