বিশেষ প্রতিনিধিঃ
মাত্র ২৫ বছর বয়সে প্রথম প্রতিবন্ধী ব্যক্তি হিসেবে আসন্ন একাদশ জাতীয়
সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-১৯ (সাভার, আশুলিয়া) আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) আইন ও বিচার বিভাগের ৪২ তম আবর্তনের
শারীরিক প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী ইদ্রিস আলী।
‘এবিলিটি ডিজএবিলিটি ডিপেন্ডস অন মেন্টালিটি’ এই স্লোগানে তিনি
নির্বাচনে লড়বেন। নির্বাচনে অংশ গ্রহণের এই বিষয়টি তিনি নিজেই নিশ্চিত
করেছেন।
তিনি জানান, ‘দেশের প্রথম কোনো প্রতিবন্ধী ব্যক্তি হিসেবে সংসদ সদস্য
(এম.পি) হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করব। বাংলাদেশ প্রথম দেখবে ২৫ বছরেই প্রথম
প্রতিবন্ধী ব্যক্তি হিসেবে। এবার ভিন্ন কিছু দেখবে দেশ আমরা প্রতিবন্ধীরাও
পারি।’
তিনি আরও জানান, ‘নির্বাচনী প্রচারণাতে প্রতিবন্ধী কর্মী থাকবে। পৃথিবীর
কোনো বাধা আর আমাদের বাধা নয়, বাংলাদেশের ইতিহাসে কনিষ্ঠ তরুণ সংসদ সদস্য
পদপ্রার্থী আমি। আমি হারলে আমি নিজে হারবো, আমি জিতলে তরুণরাই জিতবে।’
তিনি বড় হয়েছেন মাগুরা জেলাতে। আর এইচএসসি পাশ করেছেন ক্যান্টনমেন্ট
কলেজ, যশোর থেকে। এরপর তিনি ভর্তি হন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ও
বিচার বিভাগে। বর্তমানে এই বিভাগেই অধ্যয়নরত তিনি। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির
সময়ে তিনি প্রতিবন্ধী কোটা নন বরং মেধায় ২৪ তম স্থান অর্জন করেছিলেন আইন
অনুষদে।
তিনি সিআরপি প্রতিবন্ধী ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক ছিলেন। এ বছর তিনি
এশিয়া ইন্সপাইরেশন পুরস্কার-২০১৮ তে মনোনীত হয়েছেন। আগামী ২৮ শে নভেম্বর
শ্রীলংকার রাজধানী কলম্বোতে সে দেশের রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে পুরস্কার গ্রহণ
করবেন তিনি। প্রতিবন্ধী মানুষদের সচেতনতা বৃদ্ধিমূলক কাজের জন্য তিনি এ
পুরস্কার পাচ্ছেন।
এদিকে তার এই সাহসের প্রশংসা করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শ্রেণির
সদস্যরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ফেসবুক গ্রুপে তাকে ভাসানো হচ্ছে
প্রশংসার জোয়ারে। সবাই শুভ কামনা জানাচ্ছেন তার এই সাহসী সিদ্ধান্তের।
আবু হাসান নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘ইদ্রিস ভাইয়ের এই সাহসী সিদ্ধান্ত
অবশ্যই প্রশংসার দাবি রাখে। ওনাকে অভিনন্দন ও শুভ কামনা। আমি প্রতিবন্ধী
বুঝি না শুনতেও চাই না, মানুষ এটাই পরিচয়।’
নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়ে ইদ্রিস আলী বলেন, ‘৫০ জন নারীসহ ১ জন
(ক্রিকেটার) নাঈমুর রহমান দুর্জয়, ১ জন (ফুটবলার) আরিফ খান জয়, ১জন
(গায়িকা) মমতাজ, ১ জন (কবি) কবি রোজী, ১ জন (নাট্যকার) আসাদুজ্জামান নূর ও
তারানা হালিম যদি সংসদ সদস্য হতে পারেন। তাহলে একজন প্রতিবন্ধী ব্যক্তি
সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলে বা নির্বাচনে প্রার্থী হলে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের
প্রতিনিধিত্ব করলে বাংলাদেশ বিশ্ব দরবারে এগিয়ে যাবে। মুখ উজ্জ্বল হবে
বাংলাদেশের, প্রধানমন্ত্রীর, প্রধানমন্ত্রীর কন্যার সর্বোপরি বাংলাদেশের
মানুষের।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি একজন প্রতিবন্ধী ব্যক্তি হিসেবে দেশের উন্নয়েনে
আমিও সমান অবদান রাখতে চাই সমাজের বোঝা হিসেবে থাকতে চাই না। স্বতন্ত্র
প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করব তবে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের কোনো
রাজনৈতিক দল সময়ের দাবি বিবেচনা করে মনোনয়ন দিলে ভেবে দেখবো’
প্রসঙ্গত, বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে এ আসনটি এক সময় পরিচিত থাকলেও ২০০৮ সাল
থেকে এটি আওয়ামী লীগের দখলে। বর্তমানে এ আসনটির সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের
টিকেট পেয়ে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ডা. এনামুর রহমান। তিনি
সাভারে প্রতিষ্ঠিত এনাম মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের চেয়ারম্যান।
0 মন্তব্যসমূহ