মোহাম্মদ এরশাদঃ
এবারের জাতীয় ক্রিকেট লিগে রীতিমত দ্যুতি ছড়িয়ে যাচ্ছে চট্টগ্রামের ছেলে নাঈম হাসান। ক্রমশ যেন নিজেকে ছাড়িয়ে যাচ্ছেন এই তরুণ। আর কক্সবাজার ভেন্যুটা যেন নাঈমের জন্য বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে আছে। সৌভাগ্যের পরশ হয়েই যেন এই ভেন্যুটি এসেছে নাঈমের জন্য। দুর্দান্ত বোলিং করছেন নাঈম এই ভেন্যুতে। এবারের জাতীয় লিগের তৃতীয় রাউন্ডে ঢাকা মেট্রোর বিপক্ষে নিয়েছিলেন ক্যারিয়ার সেরা ৬ উইকেট। আর গতকাল থেকে শুরু হওয়া চতুর্থ রাউন্ডেই নিজেকে ছাড়িয়ে গেলেন ১৭ বছর বয়সী অফস্পিনার নাঈম হাসান। কক্সবাজারে এনসিএলের চতুর্থ রাউন্ডের ম্যাচে ঢাকা বিভাগের বিপক্ষে একাই নিলেন ৮ উইকেট। তার ক্যারিয়ার সেরা বোলিংয়ে ২৮৮ রানে গুটিয়ে গেছে ঢাকা বিভাগ। প্রথম দিনে আর ব্যাট করতে নামার সময় পায়নি নাঈমের চট্টগ্রাম। চলতি বছরের অনুর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের আগেই পাদপ্রদীপের আলোয় চলে এসেছিলেন নাঈম। ডাক পেয়েছিলেন শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজের স্কোয়াডেও। সেবার অভিষেক না হলেও আলোচনায় ঠিকই ছিলেন তিনি।
এনসিএলের গত মৌসুমে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অভিষেক হয়েছিল তার। সে মৌসুমে বল হাতে তেমন কিছু করতে পারেননি নাঈম। তবে চলতি মৌসুমে স্পিন ঘূর্ণি দেখাচ্ছেন এ তরুণ অফস্পিনার। কক্সবাজারের শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টসে জিতে আগে ব্যাট করতে নেমেছিল ঢাকা। তাদের প্রথম উইকেটটা নেন চট্টগ্রামের আরেক তরুণ সাখাওয়াত হোসেন । আর অষ্টম উইকেটপি নেন পেসার মোহাম্মদ ইফরান। বাকি ৮ উইকেটের সবকটাই যায় নাঈমের দখলে। ক্যারিয়ারে দ্বিতীয়বারের মতো পাঁচ উইকেট নেয়া নাঈম ৮ উইকেট নিতে খরচ করেন ১০৬ রান। তার সামনে অসহায় আত্মসমর্পণ করেন আব্দুল মজিদ, রকিবুল হাসান, নাদিফ চৌধুরীরা। চার নম্বরে বোলিং করতে এসে ৩৫ ওভার বোলিং করে ক্যারিয়ার সেরা এ বোলিং করেন নাঈম।
নাঈমের বোলিং তোপে পড়ার আগে ঢাকার ওপেনিং জুটি সাঈফ হাসান এবং আবদুল মজিদ মিলে যোগ করেছিলেন ৮২ রান। ৪১ রান করা সাঈফ হাসানকে ফিরিয়ে এ জুটি ভাঙেন শাখাওয়াত। এরপর শুরু নাঈম ভেল্কি। দ্বিতীয় উইকেটে আবদুল মজিদ এবং রাকিবুল হাসান মিলে যোগ করেন ৩৬ রান। ১৭ রান করা রাকিবুলকে ফিরিয়ে ধ্বংসযজ্ঞ শুরু করেন নাঈম। এরপর একে একে তুলে নিয়েছেন ৮টি উইকেট। তৃতীয় উইকেটে আবদুল মজিদ এবং শুভাগত হোম মিলে যোগ করেন ৩৩ রান। এজুটি ভাঙেন নাইম ৭২ রান করা মজিদকে ফিরিয়ে। দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৭২ রান করেন এই আব্দুল মজিদই। তার ১৩৪ বলের ইনিংসটিতে ৫টি চার এবং একটি ছক্কার মার ছিল। এরপর কিছুটা প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করেছিলেন শুভাগত হোম। দলের পক্ষে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৫৭ রান করে ফিরেন শুভাগত। তার ৯৬ বলের ইনিংসটাতে ৩টি চারের মার ছিল। এরপর নাঈমের ঘুর্ণিল মুখে দাড়াতে পারেনি কেউই। তারপরও শেষ দিকে তিনটি ছোট ইনিংসের ওপর ভর করে শেষ পর্যন্ত ২৮৮ নরানে থামে ঢাকা বিভাগ। দলের পক্ষে অন্যান্যের মধ্যে নাজমুল হোসেন মিলন ৩৫ ও শাহাদাৎ হোসেন রাজীব করেন ৩৪ রান। ২২ রান করে অপরাজিত থাকেন মাহবুবুল আলম অনিক। ১৭ রান আসে রাকিবুলের ব্যাট থেকে। চট্টগ্রাম বিভাগের পক্ষে নাঈম একাই নিয়েছেন ৮ উইকেট। ৩৫ ওভার বল করে ৪টি মেডেনসহ ১০৬ রান খরচ করেছেন নাঈম হাসান। যা এবারের জাতীয় লিগে এ পর্যন্ত সেরা বোলিং পারফরম্যান্স। আজ ঢাকার করা ২৮৮ রানের জবাবে নিজেদের প্রথম ইনিংসে ব্যাট করতে নামবে চট্টগ্রাম বিভাগ।
0 মন্তব্যসমূহ