গাজী গোফরানঃ
সেদিনের রক্তাক্ত ১৫ই আগস্ট না আসলে আজ হয়ত বাংলাদেশ পেত স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার কাণ্ডারিকে। তাঁর হাত ধরেই আজ বিশ্বের বুকে মাথা তুলে দাড়াতাম আমরা। কিন্তু ঘাতকের দল তা হতে দেয়নি। বন্দুকের গুলিতে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করেছে আমাদের স্বপ্নকে। সেই ছোট্ট শেখ রাসেলের জন্মদিন আজ।
সেদিনের রক্তগঙ্গা দেখে ভয়-আতঙ্কে পানি চেয়েছিলেন। ঘাতকরা এক ফোঁটা পানিও খেতে দেয়নি তাকে। যেতে চেয়েছিলেন পৃথিবীর মায়ের কাছে । ঘাতকরা মায়ের কাছে ফিরিয়ে দেয়ার কথা বলে বন্দুকের গুলিতে ঝাঝরা করে দিয়েছিল শিশু রাসেলের বুক। পৃথিবীর ইতিহাসে শিশু হত্যা মানবতাবিরোধী অপরাধ জেনেও ঘাতকরা শিশু রাসেলকে রেহাই দেয়নি। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট মানবতাকে স্তব্ধ করে দেয়া জঘন্যতম ওই হত্যাকাণ্ডে প্রাণ দিতে হয়েছিল শেখ রাসেলকে।
আজ বেঁচে থাকলে বড় বোন শেখ হাসিনার মতো আওয়ামী লীগের কোনো অঙ্গ সংগঠনের হাল ধরতে পারতেন তিনি। এমন বয়সেই বাবা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আওয়ামী লীগের কাণ্ডারি রূপে আবির্ভূত হন। হাল ধরেন উপমহাদেশের অন্যতম পুরনো দল আওয়ামী লীগের। বড় ভাই শেখ কামাল এমন বয়সের আগেই প্রতিষ্ঠা করেন মূল দলের অন্যতম শাখা সংগঠন আওয়ামী যুবলীগের।
শেখ রাসেল বেঁচে থাকলে আজ বড় ভাইয়ের হাতে গড়ে ওঠা আওয়ামী যুবলীগের মধ্যমণি হতে পারতেন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কনিষ্ঠ সন্তান শেখ রাসেলের জন্মদিন আজ। ১৯৬৪ সালের এই দিনে ধানমন্ডির ঐতিহাসিক বঙ্গবন্ধু ভবনে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিবের ঘরে জন্মগ্রহণ করেন শেখ রাসেল। পাঁচ ভাই-বোনের মধ্যে শেখ রাসেলই ছিলেন সবার ছোট।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে ঘাতকদের হাতে নির্মমভাবে শহীদ হন তিনিও। ওই সময় তিনি ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরি স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র ছিলেন। বাংলাদেশের ইতিহাসে ভয়াল ও শোকাবহ ১৫ আগস্টের ঘটনায় ভাগ্যক্রমে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার ছোট বোন শেখ রেহানা দেশের বাইরে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান। বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের অন্য সদস্যরা ওইদিন নির্মমভাবে নিহত হন।
‘একটি রাজনৈতিক বিচক্ষণ পরিবারে জন্ম নেয়া শেখ রাসেল বেঁচে থাকলে তার কাছে এমন নেতৃত্ব আশা করা অমূলক নয়’ এক সাংবাদিকের সঙ্গে কথা বলার সময় এমনই মন্তব্য করেন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক গোলাম রব্বানি তিনি বলেন, বেঁচে থাকলে শেখ রাসেল কি হতেন সেটা আলাদা বিষয়। কিন্তু এমন একটি পরিবারে জন্ম নেয়া যে কোনো ব্যক্তির কাছে দেশ-জাতির প্রত্যাশা অনেক বেশি থাকে।
তিনি আরো বলেন, বঙ্গবন্ধু পরিবারের অন্য সদস্যরা দেশকে যেভাবে ভালো বেসেছেন এবং বেসে যাচ্ছেন, তাতে শেখ রাসেলের জীবনেও এর ব্যতিক্রম ঘটতো না। ঘাতকরা দেশ থেকে আওয়ামী লীগের নাম চিরতরে মুছে দিতে চেয়েছিল, যার প্রমাণ শিশু রাসেল হত্যা। এমন হত্যাকাণ্ড কোনো সভ্য সমাজই সমর্থন করতে পারে না। তবে ষড়যন্ত্রকারীরাই ইতিহাসের আস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হয়েছেন।
শেখ রাসেলের জন্মদিন উপলক্ষে আজ সকাল ৮টায় বনানী কবরস্থানে রাসেলসহ ১৫ আগস্টে নিহত শহীদদের কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ, ফাতেহা পাঠ, মিলাদ ও দোয়া মাহফিলসহ নানা কর্মসূচির আয়োজন করেছে আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠন।
0 মন্তব্যসমূহ