বি,এন ডেস্কঃ
‘আমি আর কিছু চাই না, শুধু একবার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে চাই।
রহস্যটা জানতে চাই। কী ছিল আমার স্বামীর অপরাধ? কী অপরাধ করেছিল আমার অবুঝ
দুটি বাচ্চা? আমি কী অপরাধ করেছিলাম? কেন আমার নিরপরাধ স্বামীকে মিথ্যা
অপবাদ দিয়ে হত্যা করা হলো? একবার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে এই
প্রশ্নগুলোর জবাব চাই।’ কথাগুলো বলেছেন টেকনাফে মাদকবিরোধী অভিযানের সময় গত
বছর ২৬ মে র্যাবের কথিত ক্রসফায়ারে নিহত একরামুল হকের স্ত্রী আয়েশা বেগম।
গতকাল টেকনাফ শহরের কায়ুকখালীপাড়ার শ্বশুরালয়ের একটি কক্ষে বসে এই
প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপচারিতার সময় এক নিঃশ্বাসে নিজের কষ্টের কথাগুলো
বলছিলেন আয়েশা। এ সময় তার কণ্ঠ ধরে আসছিল। একপর্যায়ে যেন কথাই বলতে
পারছিলেন না। একরামুল ছিলেন টেকনাফ পৌরসভার তিন নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর।
পর পর তিনবার নির্বাচিত এলাকার মানুষের কাছে জনপ্রিয় এই জনপ্রতিনিধিকে
ইয়াবা ব্যবসায়ীর ‘তকমা’ দিয়ে গত বছর ২৬ মে বাসা থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করা
হয়েছে বলে বরাবর অভিযোগ করে আসছেন তার স্ত্রী আয়েশা বেগম ও পরিবারের অন্য
সদস্যরা। আজও এই কথিত ক্রসফায়ারের কোনো কূলকিনারা হয়নি। আদৌ এর কোনো
কূলকিনারা হবে কি না, তার পরিবার বিচার পাবেন কি না- এ নিয়ে অনিশ্চয়তা
থেকেই গেছে। কারণ এখনো এ-সংক্রান্ত মামলাটি আলোর মুখ দেখেনি। আয়েশা বেগম সে
রাতের ঘটনা বর্ণনা করে বলেন, ‘২৫ তারিখ সকাল ১০টা থেকে র্যাবের
কর্মকর্তারা এবং একটি গোয়েন্দা সংস্থার একজন কর্মকর্তা বারবার একরামুলকে
ফোন করছিলেন তাদের সঙ্গে দেখা করার জন্য। একটি জমি ক্রয়-সংক্রান্ত বিষয়ে
তারা একরামুলের সহযোগিতা চাইছিলেন। কিন্তু নানা ব্যস্ততার কারণে একরাম
তাদের সময় দিতে পারেননি। এ অবস্থায় দিনভর ফোন করছিলেন র্যাব ও একটি
গোয়েন্দা সংস্থার তৎকালীন কর্মকর্তারা।’ আয়েশা বলেন, ‘‘ওই দিন ছিল ১০
রমজান। ইফতারের বেশ পর তার স্বামী একরাম বাসা থেকে বের হয়ে সামনের মার্কেটে
যান মার্কেট কমিটির একটি সভায় অংশ নিতে। ওই মার্কেট কমিটির সভাপতি ছিলেন
তিনি। একপর্যায়ে বারবার ফোনের পরিপ্রেক্ষিতে ‘১০ মিনিটের মধ্যে ফেরত
আসছেন’- এ কথা ব্যবসায়ী সমিতির নেতাদের জানিয়ে তিনি মোটরসাইকেলে বের হন।’’
আয়েশা বলেন, ‘এর পরের কথা তো সবাই জানে।’ আয়েশা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন,
‘আমার নিরপরাধ স্বামীকে ধরে নিয়ে মেরিন ড্রাইভে গুলি করে হত্যা করা হয়। আজও
আমি স্বামী হত্যার কারণ জানতে পারিনি। আমার কাছে এখনো সবকিছু রহস্যই থেকে
গেছে।’ তিনি অভিযোগ করে বলেন, স্বামী হত্যার পর থেকে তাকে এবং পরিবারের
অন্য সদস্যদের নানাভাবে হুমকি দেওয়া হয়েছে বিষয়টি নিয়ে ‘চুপ’ থাকার জন্য।
বিশেষ করে মোবাইলে কথোপকথনের অডিও রেকর্ড সংবাদ সম্মেলন করে ফাঁস করে
দেওয়ার পর থেকেই তিনি হুমকির মধ্যে পড়ে যান। আয়েশার বক্তব্য, তিনি যখন
চট্টগ্রামে তার বাবার বাসায়, তখন তাকে বলা হয় এ নিয়ে বাড়াবাড়ি না করার
জন্য; তাহলে তাকেও শেষ করে দেওয়া হবে। একরামের স্ত্রী বলেন, চট্টগ্রামে
মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান তার সঙ্গে দেখা করে আশ্বাস দিয়েছিলেন,
স্বামী হত্যার সুষ্ঠু তদন্ত করা হবে এবং প্রধানমন্ত্রীকে বিষয়টি অবহিত করা
হবে। ওই সময়ই গণমাধ্যমে আর কোনো কথা না বলার জন্য তাকে (আয়েশা) বিভিন্নভাবে
বলা হয়।সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং সড়ক পরিবহন মন্ত্রীও তাকে ফোন
করেছিলেন জানিয়ে আয়েশা বলেন, তারা আমাকে আশ্বাস দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রীর
সঙ্গে দেখা করিয়ে দেবেন। কিন্তু গত আট মাসেও তিনি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে
দেখা করতে পারেননি। মন্ত্রীরাও আর কোনো ফোন করেননি।
আয়েশা গতকাল বলেছেন, তিনি একবারের জন্য হলেও প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎ
চান। তার কষ্টের কথাগুলো প্রধানমন্ত্রীকে জানাতে চান। তার স্বামী হত্যার
কারণ জানতে চান। তার সন্তানদের ভবিষ্যৎ কী হবে সে বিষয়ে জানতে চান।
আয়েশা বলেন, ‘আমার দুই মেয়ে তাহিয়াত হক ও নাহিয়ান হক একদম লেখাপড়া করতে চায়
না। বই খুলে বসলেই বাবার কথা মনে পড়ে যায়। তখন শুধুই কাঁদে। ঘুম থেকে উঠেই
তারা বাবার জন্য কাঁদে। আমি তাদের কোনো সান্ত্বনা দিতে পারছি না।’ তিনি
বলেন, ‘আমি শুধু স্বামী হত্যার বিচার চাই।’
আয়েশা বলেন, হত্যাকান্ডের পর র্যাবের দেওয়া বিবৃতিতে বলা হয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের তালিকাভুক্ত শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী ও ইয়াবা গডফাদার টেকনাফ পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. একরামুল হক কমিশনার (৪৬), পিতা মোজাহার মিয়া ওরফে আবদুস সাত্তার, নাজিরপাড়া, টেকনাফ পৌরসভা, টেকনাফ, কক্সবাজার। কিন্তু একরামুলের বাবার নাম মোজাহার মিয়া নয়, তার ঠিকানাও নাজিরপাড়া নয়। কারণ নাজিরপাড়া সদর ইউনিয়নের একটি গ্রাম। ক্রসফায়ারে একরাম নিহত হওয়ার পর র্যাব টেকনাফ থানায় একটি মামলা করে। সেই মামলা এখন অনেকটাই আড়ালে চলে গেছে। মামলার সর্বশেষ অবস্থা জানতে চাইলে টেকনাফ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) প্রদীপ কুমার দাস বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, মামলার তদন্ত চলছে। তবে কবে নাগাদ তদন্ত শেষ হবে সে বিষয়ে তিনি কিছু জানাতে পারেননি।
আয়েশা বলেন, হত্যাকান্ডের পর র্যাবের দেওয়া বিবৃতিতে বলা হয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের তালিকাভুক্ত শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী ও ইয়াবা গডফাদার টেকনাফ পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. একরামুল হক কমিশনার (৪৬), পিতা মোজাহার মিয়া ওরফে আবদুস সাত্তার, নাজিরপাড়া, টেকনাফ পৌরসভা, টেকনাফ, কক্সবাজার। কিন্তু একরামুলের বাবার নাম মোজাহার মিয়া নয়, তার ঠিকানাও নাজিরপাড়া নয়। কারণ নাজিরপাড়া সদর ইউনিয়নের একটি গ্রাম। ক্রসফায়ারে একরাম নিহত হওয়ার পর র্যাব টেকনাফ থানায় একটি মামলা করে। সেই মামলা এখন অনেকটাই আড়ালে চলে গেছে। মামলার সর্বশেষ অবস্থা জানতে চাইলে টেকনাফ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) প্রদীপ কুমার দাস বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, মামলার তদন্ত চলছে। তবে কবে নাগাদ তদন্ত শেষ হবে সে বিষয়ে তিনি কিছু জানাতে পারেননি।
বাংলাদেশ প্রতিদিন
0 মন্তব্যসমূহ