মোহাম্মদ বেলাল উদ্দিনঃ হাজার বছরের প্রাচীন ঐতিহ্য কাতেবী জামে মসজিদ বাঁশখালীর ছনুয়া ইউনিয়নের খুদুকখালী গ্রামের কাতেব পাড়ায় অবস্থিত।কথিত আছে যে,আশেপাশের বিভিন্ন ধর্মের মানুষ এই মসজিদে মানত করেন ও যাতায়াত করেন।এতে আশানুরূপ ফলও পাওয়া যায় বলে কথিত আছে।প্রফেসর ইমেরিটার্স ড.আবদুল করিমের "বাঁশখালীর ইতিহাস ও ঐতিহ্য" গ্রন্থ্যে তিনি উল্লেখ করেন,কোন লোক এই মসজিদে ঢুকে সত্য লুকায়িত করে যদি মিথ্যা শপথ করে;সাথে সাথে ঐ ব্যক্তি মৃত্যু কিংবা অন্য কোন বিপদের সম্মুখীন হবেন।
দৃষ্টিনন্দন ১৬টি ছোট গম্বুজ ও ৫টি বড় আকারের গম্বুজসহ মোট ২১টি গম্বুজ বিশিষ্ট এই মসজিদটি কাতেব শাহ্ আউলিয়ার স্মৃতি হয়ে আছে।
বিভিন্ন তথ্যসূত্রে জানা যায়,১২৫০ খ্রিষ্টাব্দের আগে হযরত কাতেব শাহ্ (র.) চট্টগ্রামে আসেন।ব্রিটিশ মানবহিতৈষী কাতেব আউলিয়া একজন সুফি সাধক ও ইসলাম প্রচারক ছিলেন।তার প্রতিষ্ঠিত দক্ষিণ বাঁশখালীর ছনুয়া ইউনিয়নের খুদুকখালী গ্রামের ঐতিহাসিক কাতেবী জামে মসজিদটি অতি প্রাচীন আমলের।তিনি চট্টগ্রাম নগরীর চেরাগী পাহাড় থেকে এসে এই মসজিদটি প্রতিষ্ঠা করেন।তার নাম থেকেই এই মসজিদের নামকরণ করা হয়।প্রাচীর বেষ্টিত মসজিদ কমপ্লেক্সটির পূর্ব পাশে রয়েছে একটি প্রবেশ পথ,দক্ষিণ পাশে রয়েছে কাতেব শাহ'র তৈরী করা কবরস্থানের জায়গা।ওই কবরস্থানে রয়েছে তার মাজার।মসজিদের ছাদটি প্রাচীন কারুকার্য অত্যন্ত প্রাচীন ও শক্ত প্রাচীর দিয়ে নির্মিত।মসজিদের পশ্চিম পাশে রয়েছে মুসল্লিদের জন্য অযুখানার ব্যবস্থা।
জানা যায়,১২৪০ খ্রিষ্টাব্দে তিনি খুদুকখালী আসেন।ধর্ম প্রচারের অংশবিশেষ এখানে অনেকদিন অবস্থান করার পর কাতেব পাড়ায় ইংরেজি সনের ১৩৮৮,বাংলা সনের ১২২৪ বঙ্গাব্দে মসজিদটি প্রতিষ্ঠা করেন।
ইতিহাসবিদদের মতে,মোগল ঐতিহাসিক শিহাব-উদ-দিন তালিশের আনুমানিক ১৬৬৬ খ্রিষ্টাব্দের একটি বিবরণে কাতেবী জামে মসজিদের উল্লেখ রয়েছে।কাতেব আউলিয়ার স্মৃতি বিজড়িত মসজিদ কমপ্লেক্সটির রয়েছে ছোটবড় মোট ১২টি গম্বুজ ও একটি মিনার।যেগুলো হাজার বছরের সাক্ষী হয়ে দাঁড়ানো।
কথিত আছে যে,এই মসজিদে অনেক সময় গায়েবী আজান হয়।তাই এটি গায়েবী মসজিদ নামেও সমধিক পরিচিত।প্রতিনিয়ত দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে বিভিন্ন ধর্মের মানুষ কাতেবী জামে মসজিদে আসে।তৎমধ্যে মুসলিম ধর্মালম্বীর লোকজন জিকির-আজকার,প্রার্থনা,ইবাদাত বন্দেগী করেন।কেউ মোমবাতি,হাদিয়া-নাজরানা দিয়ে যাচ্ছেন মসজিদের দানবাক্সে।আবার অনেকে মসজিদের পুকুর থেকে পানি নিয়ে নিয়ত করে খেয়ে রোগ থেকে মুক্তি পেতে আশা করেছেন।
মসজিদ কমিটি সূত্রে জানা যায়,কাতেবী জামে মসজিদের নামে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে জমি-জমা রয়েছে।বিদ্যুত না থাকার কারণে দীর্ঘদিন যাবত মুসল্লিদের নামায আদায়ে অসহনীয় দূর্ভোগ পোহাতে হতো।সম্প্রতি এই মসজিদে পল্লী বিদ্যুতের সংযোগ দেওয়া হয়েছে।এলাকার মুসল্লীদের দীর্ঘদিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে জনপ্রতিনিধিদের দেওয়া প্রতিশ্রুতি মতে তা বাস্তবায়ন করেছে বলে জানা গেছে।
দীর্ঘ কয়েক বছর যাবত এই মসজিদের মোতোয়াল্লীর দায়িত্ব পালন করছেন ছনুয়া সাম্বলী পাড়া এলাকার বিশিষ্ট সমাজসেবক মাওলানা কলিম উল্লাহ্।এ প্রতিবেদকের সাথে আলাপকালে তিনি বলেন,"আমি দীর্ঘদিন ধরে এই মসজিদের খেদমত করে যাচ্ছি।বিশেষ করে মসজিদের অবকাঠামো উন্নয়নে আমি সর্বাত্নক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।জায়গা সংকূলানের কারণে অনেক মুসল্লি মসজিদের মাঠে নামায আদায় করেন।এই দূর্ভোগ লাঘবে এই মসজিদটি আরো প্রশস্থ্য করে নির্মাণ করা জরুরি হয়ে পড়েছে।তাই বড় অংকের টাকা দরকার।মসজিদ ফান্ঠে এত টাকা নেই।এজন্য জনপ্রতিনিধি ও বিত্তবানদের এগিয়ে আসা উচিত।"ছনুয়া ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান এম.হারুনুর রশীদ এ প্রতিবেদককে বলেন,"এই মসজিদটি বাঁশখালীর অতি প্রাচীন একটি স্থাপনা।আমি ছনুয়ার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর এই মসজিদটি সংস্কার করি।বিদ্যুত সংযোগ দেওয়া হয়েছে।যা দীর্ঘ যুগ যুগ ধরে অযত্ন-অবহেলায় জরাজীর্ণ অবস্থায় ছিল।এই মসজিদের যেকোনো সমস্যায় আমি মসজিদ কমিটির পাশে থাকব।ইনশাআল্লাহ্।"
0 মন্তব্যসমূহ