চট্টগ্রাম নগরীর নামকরা বেসরকারি হাসপাতাল সিএসসিআরে সোমবার দিনগত রাত একটায় জন্মগ্রহণ করেছিল এক নবজাতক। যার বাবা-মা দুজনই সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক। কিন্তু সিএসসিআর হাসপাতালের দায়িত্বরত ডাক্তারদের অবহেলা মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিল ১০ঘণ্টা বয়সের ওই নবজাতককে।
দেহে প্রাণ থাকার পরও যথাযথ চিকিৎসাসেবা না দিয়ে জন্মের মাত্র দুইঘণ্টা পর মৃত্যু সনদ দিয়ে একটি প্যাকেটে করে ওই নবজাতককে দিয়ে গেল ৬১২ নম্বর ক্যাবিনে। ক্যাবিনে বসে নিজের বাচ্চার মৃত্যু সঠিক কিনা তা জানতে অস্থির মায়ের মন। প্যাকেট খুলে বাচ্চার মুখ দেখতেই বিস্মিত ডা.রিদওয়ানা কাউসার তুষার।
তিনি দেখলেন তার বাচ্চা দিব্বি নড়াচড়া করছে। ততক্ষণে বাচ্চার শরীর খুবই ঠান্ডা হয়ে গেছে। পরিবর্তন এসেছে গায়ের রংয়ে। বিষয়টি দ্রুত হাসপাতালের দায়িত্বরত চিকিৎসকদের জানানো হলো। কিন্তু তারা তাদের সিদ্ধান্তে অটল থাকলেন। বললেন বাচ্চা নড়াচড়া করছে না গায়ের মাংস নড়ছে।
এই অবস্থায় প্রসূতি নিজেই বাচ্চাকে নিয়ে গেলেন চাইল্ড কেয়ার হাসপাতালে। হাসপাতালের ওয়ার্মারে দেওয়ার পর শরীর স্বাভাবিক হলো। কিন্তু সেখানে বেড খালি না থাকায় নগরীর ম্যাক্স হাসপাতালে ওই বাচ্চাকে ভর্তি করা হয়েছে। বাচ্চাটি এখনো জীবিত।
ডা.রিদওয়ানা কাউসার বাংলানিউজকে বলেন, বাচ্চা ডেলিভারি হওয়ার পর গাইনি বিশেষজ্ঞ ডা.শাহেনা আক্তারকে বলতে শুনলাম বাচ্চা শ্বাস নিচ্ছে। তাকে দ্রুত এনআইসিইউতে (নিউনাটাল ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট) নিয়ে যাওয়া হোক। ডাক্তারের নির্দেশে এনআইসিইউতে নেওয়ার দুইঘণ্টা পর মৃত্যু সনদ দিয়ে একটি প্যাকেটে ভরে বাচ্চাকে ক্যাবিনে দিয়ে যায়।
তিনি বলেন, যেহেতু আমি নিজেও ডাক্তার তাই গাইনি বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের কথাটি আমার মনে পড়লো। ট্যাপ দিয়ে মোড়ানো প্যাকেটটি খুলে দেখতে চাইলাম। কিন্তু হাসপাতালের দায়িত্বরত লোকজন আমাকে বাধা দিলেন। তারপরও আমি জোর করে প্যাকেট খুলে দেখি বাচ্চা নড়াচড়া করছে।
আবারও এনআইসিইউতে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করার জন্য বললে সেখানে দায়িত্বরত ব্যক্তি বললেন, বাচ্চা মৃত। আমি বললাম, বাচ্চা নড়াচড়া করছে। তিনি বলেন, বাচ্চা না। শরীরের মাংস নড়ছে। আমি বললাম, পরীক্ষা করে দেখুন। কিন্তু তিনি পরীক্ষা করতে অস্বীকৃতি জানান।
এনআইসিইউতে দায়িত্বরতদের অবহেলার কারণেই এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে অভিযোগ করে আলীকদম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স’র ডেন্টাল সার্জন ডা. রিদওয়ানা বলেন, এনআইসিইউতে নেওয়া হলেও সেখানে বাচ্চার কোন পরিচর্যা করা হয়নি। কারণ তার নাক-মুখও পরিষ্কার করা হয়নি।
আক্ষেপের সুরে রিদওয়ানা বলেন, দেশের দ্বিতীয় রাজধানী চট্টগ্রাম। আর সিএসসিআর নামকরা হাসপাতাল। এখানেই যদি এই অবস্থা হয় তাহলে মানুষ কোথায় যাবে।
তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি তারা নবজাতকটিকে মৃত ঘোষণা করেনি। এ বিষয়ে দায়িত্বরত মেডিক্যাল অফিসার তানভির জাফর বলেন, আমরা আগেই বলেছিলাম। হাসপাতালে ওয়ার্মার খালি নেই। পাশের হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলেছিলাম। তবে হাসপাতাল থেকে মৃত্যু সনদ দেওয়া হলেও তা অস্বীকার করেছেন তিনি।
ডা.রিদওয়ানার স্বামী কক্সবাজার জেলা সদর হাপাতালের মেডিক্যাল অফিসার ডা.নুরুল আজম বাংলানিউজকে বলেন, দুইঘণ্টা ধরে ব্যবস্থা না নেওয়ায় বাচ্চার অবস্থার অবনতি হয়েছে। তারা যদি ব্যবস্থা নিতে না পারে সেটা আমাদের আগে জানালেই হতো। চারঘণ্টা আগে পরিচর্যা শুরু করা গেলে এ ধরনের সমস্যা হতো না।
ডাক্তার শাহানা অনেক আন্তরিক ছিলেন উল্লেখ করে ডা.রিদওয়ানা বলেন, বাচ্চা জীবিত আছে সেটাও বলেছিলেন। এনআইসিইউতে ভালভাবে পরিচর্যার নির্দেশ দেন। কিন্তু সেখানে দায়িত্বরতরা অবহেলা করেছে।
সিএসসিআর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নবজাতকের যথাযথ ব্যবস্থা না নিয়ে মেডিক্যাল ইথিকস মানেনি বলেও অভিযোগ করেন ডা. রিদওয়ানা।
"লেখাটি এত বেশি শেয়ার করবেন, যাতে করে সমাজের ছোট বড়,বৃত্তবানরা সজাগ হয়ে যাই,এবং ঐ কসাই খানাই যেন কেউ চিকিৎসা না নেয় সে ব্যাপারে সবাইকে পরামর্শ এবং সর্তক করুন,যাতে আর কোন নবজাতকের মৃত্যুর আগে মৃত্যু না ঘটে" সূত্র বাংলা নিউজ টোয়েন্টিফোর.কম।
0 মন্তব্যসমূহ